যে ১০ টি খাবার খাওয়া আপনার জন্য অপরিহার্যঃ
মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত খাবার খাওয়ার প্রয়োজন হয়।
পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার খেলে মানুষ সুস্থ থাকে। আর সুস্থ দেহে সুন্দর মনের বসবাস।
সুন্দর মন মানুষ কে প্রফুল্ল রাখে যার ফলে সে জীবনের প্রতিটি পযার্য়ে সাফল্য লাভ করতে সক্ষম হয়।
এখন,আলোচনা করবো দৈনন্দিন খাবার গুলোর পাশাপাশি যে খাবার গুলো মানুষের অবশ্যই খাওয়া প্রয়োজন।
খেজুরঃ
শরীরের আয়রণের ১১ ভাগ পূরণ করে এই খেজুর ফল।খেজুর ফলটি অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। ভিটামিন,ক্যালসিয়াম,আঁশ,আয়রণ,জিংক,পটাশিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম,ফসফরাস সবগুলো উপাদান এই খাবারের মধ্যে রয়েছে। যা শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শক্তিরও একটি ভালো উৎস খেজুর।
এই খাবারে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়,উচ্চ রক্তচাপ কমায়,হৃদ স্পন্দনের হার ঠিক করে।
খাবারের মধ্যে লিউটেন,জিক্সাথিন রয়েছে যা চোখের রেটিনা কে ভালো রাখে।
খাবার টি হজম শক্তি ও রুচি বাড়ায়, ক্যান্সারের মতো রোগ থেকে বাঁচায়,দেহের দূর্বলতাও দূর করে।খেজুরে ভেজানো পানি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
🥛দুধঃ
পুষ্টিগুণে ভরপুর খাবার হলো দুধ। প্রত্যেক মানুষের প্রতিদিন অন্তত এক গ্লাস দুধ খাওয়া প্রয়োজন।
দুধ খেলে শরীরে সেরোটোনিন হরমোনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এই হরমোনটি ব্রেইন ক্যামিকেল নামে পরিচিত।
এর কারণে মানুষের মন ভালো থাকে,নিজেকে উৎফুল্ল মনে হয় যার কারণে একে হ্যাপি হরমোনও বলা হয়।
খাবার টি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে,শরীর,হাড় ও দাঁতের সামর্থ্য বৃদ্ধি করে। মানুষের চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়ায়।
এই খাবার খাওয়ার কারণে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা কমে এবং খাবারটি অন্যান্য খাবারের বিষাক্ত উপাদানের ক্ষতি কাঁটায় যা মানুষের দেহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
🥃মধুঃ
মধু সুস্বাদু এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার।
খাবার টি আপনার শরীর কে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।মধু দেহের তাপ ও শক্তি যোগায়।খাবার হজমে সহায়তা করে। মধু তে ডেক্সট্রিন থাকে তা সরাসরি মানুষের রক্তে প্রবেশ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে কাজ করে।
এজন্য পেটের বিভিন্ন রোগ দূর করতে খাবার টি খাওয়া প্রয়োজন।
কালোজিরাঃ
কালোজিরা মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের মহা ঔষধ। খাবার টি চুল পড়া,মাথা ব্যথা,অনিদ্রা, মাথা ঝিমঝিম করা,সৌন্দর্য রক্ষা,অবসন্নতা, দূর্বলতা,অলসতা, আহারে অরুচি ইত্যাদি সকল ধরণের সমস্যা দূর করতে সক্ষম।
খাবার টি ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে,স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে,ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী ইত্যাদি সকল ধরণের রোগের সমাধান খাবার টির মধ্যে রয়েছে।
🧆বার্লিঃ
এটি গমের মতো এক ধরণের খাবার।
বার্লি ওয়াটারের ভেতরের ফাইবার ও রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।
খাবার টি পাকস্থলী ও অন্ত্রে কোলেস্টেরলের শোষণ আটকায়।বার্লি ওয়াটারের মধ্যে ভিটামিন “বি” নিয়াচিন থাকে যা অস্টিওপোরেসিস প্রতিরোধ করে।
খাবার টি হৃদরোগ এবং অধিক রক্তচাপ, ওজন কমায়।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ডায়াবেটিস রোগিদের জন্য খাবার টি অনেক উপকারী।
🍐লাউঃ
এই খাবার টি রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
খাবারে ভিটামিন-সি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে যা হার্টের জন্য উপকারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়াও ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে।আপনার ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে সাহায্য করে।
সহজলভ্য এই খাবার শরীর কে ঠান্ডা রাখে এবং রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নয়ন ঘটায়। এই খাবার অবশ্যই আপনার খাওয়া উচিত।মাছের সাথে লাউ দিয়ে ঝোল তরকারি রান্না করলে খাবার টি খেতে অনেক সুস্বাদু হয়।
🍉তরমুজঃ
এই সুস্বাদু খাবারের ৯৬ শতাংশই পানি। এটি প্রচন্ড গরমে শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করে।
খাবার টি পেশির ব্যথা দূর করে,মরণব্যাধি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
এছাড়াও হৃদরোগ, হাঁপানি, মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ ইত্যাদি রোগের সমাধানে কাজ করে।খাবার টি বৃক্ক বা কিডনির জন্যও উপকারী।
🥒শসাঃ
খাবার টি সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় মেদ কমানোর খাবার হিসেবে। কিন্তু, এটি অনেক উপকারী খাবার।
শরীরের পানিশূন্যতা দূর করে,দেহ থেকে বিষাক্ততা দূর করে,ত্বক বান্ধব খনিজের সরবরাহ করে। খাবার হজম ও মানুষের ওজন হ্রাস করে।
তাছাড়াও খাবার টি চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি করে,মুখ পরিষ্কার রাখে,মাথার চুল ও নখ সতেজ রাখে।
যাদের মাথা ব্যথা করে তারা এটি বেশি করে খাবেন এটি মাথা মাথা ধরা থেকে নিষ্কৃতি দেয়।মানুষের কিডনিও সুস্থ রাখে।
নিজেকে সুন্দর, সতেজ,আকর্ষণীয় রাখতে খাবার টি অবশ্যই খাওয়া উচিত।
🍈ত্বীন এবং জয়তুনঃ
ত্বীন হচ্ছে ডুমুর জাতীয় ফল।এর অনেক প্রজাতি রয়েছে।আমাদের দেশেও এর একটি প্রজাতি রয়েছে।
খাবারটি মায়ের বুক দুধ উপাদনে সাহায্য করে,উচ্চ রক্তচাপ এবং স্নায়বিক সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে,জরায়ু ক্যান্সারের প্রতিষেধক হিসেবেো কাজ করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এছাড়াও আরও ত্বকের,চুলের,বৃক্কের বিভিন্ন ধরণের রোগের জন্য উপকারী।
জয়তুনঃ
জয়তুনে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে যা ক্যান্সার বিস্তারের বিরুদ্ধে মেমব্রেন কে তরতাজা রাখে।খাবার দুটি শরীরের ত্বকের সুরক্ষায় ব্যাপক কার্যকরী।
দাঁতের ক্যাভিটি,দৃষ্টিভ্রম,রগ ফুলে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো রোগের উপশম হিসেবে এই খাবারটি কাজ করে।এছাড়াও খাবারটি যৌন উদ্দীপনা বৃদ্ধি করে।টিউমারের মতো রোগ কে ধ্বংস করে দেয়।
কিসমিসঃ
এই শুকনো খাবারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে। খাবারটিতে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা সহজেই রোগ থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে।
কিসমিসে রয়েছে প্রচুর আয়রণ পটাশিয়াম,ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম এবং ফাইবার। এই খাবার শরীরে শক্তি যোগায় এবং রক্ত উৎপাদনে সহায়তা করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য, ক্যান্সার প্রতিরোধ,রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
খাবার টি ভালো ঘুম হতেও সাহায্য করে।আর আমাদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ,ঘুমের অভাবে নিচের সমস্যাগুলো দেখা দেয়ঃ
১) ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়ায়।
২) রক্তের শর্করার নিয়ন্ত্রণ কে প্রভাবিত করেযার কারণে ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
৩) টিকার কার্যক্ষমতা কমে যায়।
৪) রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়।
৫) ঠান্ডা বেশি লাগে।
৬) বোধশক্তি, স্মৃতিশক্তি কমায়।
উপরোক্ত সমস্যা গুলো সমাধানে ভালো ঘুম প্রয়োজন।আর কিসমিস খেলে ঘুম ভালো হয়। সেজন্য অবশ্যই খাবার টি সকলের খাওয়া উচিত।
তিন ধরণের খাবার খাবেন নাঃ
১) খুব গরম খাবার।
২) বাসি খাবার
৩) দুর্গন্ধযুক্ত খাবার খাবেন না। যেমনঃ সিগারেট, গাঁজা ইত্যাদি।
উপরোক্ত ১০ খাবার খেলে আপনার রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।খাবার গুলো খেলে এবঙ সাথে তিনটি খাবার পরিহার করলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকবেনা।কারণ,উপরের প্রায় বেশিরভাগ খাবার গুলোতেই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং শেষের তিনটি খাবার ক্যান্সারে সৃষ্টির কারণ।উপরের খাবার গুলো আপনার চোখ,নখ,চুল,ত্বক সবকিছু ঠিক রাখতে সহায়তা করবে।শরীরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে।এছাড়াও প্রায় সকল ধরণের উপকার এই খাবার গুলো খাওয়ার মাধ্যমে পেয়ে যাবেন।সারাদিন শুধু ভাত না খেয়ে ভাতের সাথে এই খাবার গুলো খেতে চেষ্টা করুন।