সমাজবিজ্ঞান

স্বাধীনতা কি | স্বাধীনতা কাকে বলে | স্বাধীনতা বলতে কি বুঝায়

1 min read

সাধারণত ব্যক্তির নিজের ইচ্ছামতো কোনকিছু করা বা না করার ক্ষমতাকেই স্বাধীনতা বলা হয়।

অধ্যাপক লাক্ষীর মতে, “স্বাধীনতা হল সামাজিক ঐসব অবস্থার উপর হতে বিধিনিষেধের অপসারণ যা বর্তমান সমাজব্যবস্থায় মানুষের সুখ- স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য অপরিহার্য।

 হার্বাট স্পেন্সার বলেল, “স্বাধীনতা বলতে খুশিমতো কাজ করাকে বুঝায়, যদি উক্ত কাজ দ্বারা অন্যের অনুরূপ স্বাধীনতা উপভোগ বাধার সৃষ্টি না হয়।”

সুতরাং, স্বাধীনতা বলতে অপরের অধিকারে হস্তক্ষেপ না করে নিজের অধিকার ভোগ করাকে বুঝায় ।

স্বাধীনতার ইংরেজি প্রতিশব্দ Liberty ল্যাটিন শব্দ Liber থেকে গৃহীত, যা Libertinus হতে উদ্ভূত। এর অর্থ a freed man বা মুক্তিপ্রাপ্ত ক্রীতদাস। আবার স্বাধীন শব্দটি ভাঙলে স্ব+অধীন পাওয়া যায়। অর্থাৎ নিজের অধীনে থাকার নামই স্বাধীনতা।
স্বাধীনতার সংজ্ঞাঃ সাধারণত অপরের কাজে কোনােরূপ হস্তক্ষেপ না করে নিজের কাজ সম্পাদন করার অধিকারকে স্বাধীনতা বলে। অন্যভাবে বলা যায়, স্বাধীনতা হলাে অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ না করে নিজের অধিকার পরিপূর্ণভাবে ভােগ করা। সুতরাং বলা যায়, অপরের অধিকার বা কার্যাবলির ওপর হস্তক্ষেপ না করে স্ব-ইচ্ছানুসারে কার্য করার অধিকারকে স্বাধীনতা বলে।
প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন রাষ্ট্রচিন্তাবিদ বিভিন্নভাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে কতিপয় সংজ্ঞা প্রদান করা হলাে-
বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী হার্বার্ট স্পেন্সর (Herbert Spencer) বলেন, “স্বাধীনতা বলতে ‘খুশিমত’ কাজ করা বুঝায়, যদি উক্ত কাজ দ্বারা অন্যের অনুরূপ স্বাধীনতা উপভােগে বাধার সৃষ্টি না হয়।”
টি এইচ গ্রিন (T. H. Green) বলেন, যা উপভােগ করার এবং সম্পন্ন করার যােগ্যতা উপভােগ ও সম্পাদন করার ক্ষমতাকে স্বাধীনতা বলে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সিলি (Seely)-এর মতে, অতি শাসনের বিপরীত ব্যবস্থাই হলাে স্বাধীনতা। (“The opposite of over government”)
আর্নেস্ট বাকার (Ernest Barker)-এর মতে, “প্রত্যেকের স্বাধীনতার প্রয়ােজনীয়তা সকলের স্বাধীনতা প্রয়ােজনের দ্বারা অবশ্যই নিয়ন্ত্রিত এবং সীমাবদ্ধ হওয়া আবশ্যক।”
প্রফেসার গেটেল (Prof. Gettel) বলেন, “স্বাধীনতা হচ্ছে সেসব কাজ করা এবং উপভােগ করা যেগুলাে করা ও উপভােগ করার যােগ্য।”
সি, ডি, বার্নস (c.D. Burns)-এর মতে, Liberty means liberty to grow to ones natural hight, to develop ones, abilities. অর্থাৎ স্বাধীনতা হলাে ব্যক্তির স্বাভাবিক বিকাশ। ব্যক্তির সামর্থ্যের উন্নয়ন।
পরিশেষঃ উপযুক্ত আলােচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, স্বাধীনতা হল এমন একটি সামাজিক অবস্থা বা পরিবেশ যেখানে ব্যক্তিসত্তার পরিপূর্ণ বিকাশ সম্ভবপর এবং তার প্রয়ােজনীয় অধিকার ভােগ করতে পারে।

স্বাধীনতা কাকে বলে?

স্বাধীনতা কাকে বলে তা নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। সকল মতামতের মধ্যে নির্ভরযোগ্য সংজ্ঞা তুলে ধরা হল।

সাধারণ অর্থে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী কোন কাজ করাকে স্বাধীনতা বলে। তবে, প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতা বলতে কোন অবাধ স্বাধীনতাকে বোঝায় না।

কারণ, সীমাহীন স্বাধীনতা সমাজে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিঘ্ন ঘটায়। যেমন, কাউকে ইচ্ছামত সবকিছু করার স্বাধীনতা দিলে স‘মাজের অন্য জ‘নের ক্ষতি হতে পারে, যা এক অ‘শান্তিপূর্ণ ও বি‘শৃঙ্খলা পরিবেশ সৃষ্টি করবে।

তাই, স্বাধীনতার সংজ্ঞায় বলা যায়,  অন্যের কোন কাজে হ‘স্তক্ষেপ বা বাধা সৃষ্টি না করে নিজের ই‘চ্ছানুযায়ী নি‘র্দিষ্ট সী‘মার মধ্যে কাজ করাকে স্বাধীনতা বলে। অর্থাৎ স্বাধীনতা হলো এমন সুযোগ-সুবিধা যেখানে কেউ কারো কোন ক্ষতি না করে সকলেই নিজের অধিকার ভোগ করবে এবং স্বাধী‘নতা ব্য‘ক্তির ব্যক্তিত্ব বিকা‘শে সহায়তা করবে এবং অধিকার ভোগের ক্ষেত্রে বাধা অপসারণ করবে। এ পর্যায়ে বলা যায় স্বাধীনতা কাকে বলে তা যথেষ্ট পরিষ্কার।

স্বাধীনতা কত প্রকার ও কী কী?

স্বাধীনতা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যথা-

  • ব্যক্তি স্বাধীনতা।
  • সামাজিক স্বাধীনতা।
  •  রাজনৈতিক স্বাধীনতা।
  •  অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ।
  • জাতীয় স্বাধীনতা।

ব্যাক্তি স্বাধীনতা কাকে বলে?

ব্যক্তিস্বাধীনতা : যে স্বাধীনতা ভোগ করলে অন্যের কোনো ক্ষতি হয়না এমন স্বাধীনতাকে ব্যক্তিস্বাধীনতা বলে। যেমন- ধর্মচর্চা করা, পারিবারিক গোপনীয়তা রক্ষা করা ইত্যাদি।

সামাজিক স্বাধীনতা কাকে বলে?

সামাজিক স্বাধীনতা : জীবন রক্ষা, সম্পত্তি ভোগ করা এবং বৈধ পেশা গ্রহণ করা সামাজিক স্বাধীনতার অন্তর্ভুক্ত । সামাজিক স্বাধীনতা ভোগের মাধ্যমে নাগরিক জীবন বিকশিত হয়। সমাজে বসবাসকারী মানুষের অধিকার রক্ষার জন্যই এ স্বাধীনতার প্রয়োজন।

রাজনৈতিক স্বাধীনতা কাকে বলে?

রাজনৈতিক স্বাধীনতা : রাজনৈতিক স্বাধীনতা বলতে নির্বাচনে ভোটদান, নির্বাচিত হওয়া, বিদেশে অবস্থানকালীন নিরাপত্তা লাভ ইত্যাদিকে বুঝায়।  রাজনৈতিক স্বাধীনতার মাধ্যমে ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় শাসনকাজে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়।

অর্থনৈতিক স্বাধীনতা : যোগ্যতা অ‘নুযায়ী পেশা গ্রহণ ও উ‘পযুক্ত পারি‘শ্রমিক লাভ ক‘রাকে অর্থনৈতি স্বাধীনতা বলে। মূলত আর্থিক সুবিধা প্রাপ্তির জন্য নাগরিকরা এ স্বাধীনতা ভোগ করে। অর্থনৈতিক স্বাধী‘নতা না থাকলে অন্যান্য স্বা‘ধীনতা ভোগ করা যায় না।

জাতীয় স্বাধীনতা: বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রা‘ষ্ট্র ও অন্য রাষ্ট্রের হস্ত‘ক্ষেপ থেকে মুক্ত। বাংলাদেশের অ‘বস্থা‘নকে জাতীয় স্বাধী‘নতা বা রাষ্ট্রীয় স্বাধী‘নতা বলে। এই স্বাধীন‘তার ফলে এ‘কটি রাষ্ট্র অ‘ন্য রাষ্ট্রের কর্তৃক থাকে । প্রত্যেক স্বাধী‘ন রাষ্ট্র জা‘তীয় স্বা‘ধীনতা ভোগ করে।

 

শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “স্বাধীনতা কি | স্বাধীনতা কাকে বলে | স্বাধীনতা বলতে কি বুঝায়” আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে, অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।

5/5 - (31 votes)
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.