আবেশ দুই প্রকার। যথা- ১) স্বকীয় আবেশ (Self Induction) এবং ২) পারস্পরিক আবেশ (Mutual Induction)
স্বকীয় আবেশ কাকে বলে? (What is called Self Induction in Bengali/Bangla?)
কোন বর্তনীর নিজস্ব প্রবাহের দ্বারা সৃষ্ট চৌম্বকক্ষেত্রের পরিবর্তনের ফলে বর্তনীতে একটি তড়িচ্চালক বল আবিষ্ট হয়। এই ঘটনাকে স্বকীয় আবেশ বলে। কোনো পরিবাহী তারের কুন্ডলীর মধ্য দিয়ে একটি নির্দিষ্ট মানের তড়িৎ প্রবাহ চালনা করা হলে এটি একটি চৌম্বক ক্ষেত্র সৃষ্টি করে। চৌম্বক ক্ষেত্রের বলরেখাগুলি কুন্ডলির প্রতিটি পাকের সাথে জড়িয়ে পড়ে এবং কুন্ডলীর সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে চৌম্বক ফ্লাক্স উৎপন্ন করে। কুন্ডলীর তড়িৎ প্রবাহমাত্রার পরিবর্তন হলে কুন্ডলীর সাথে জড়িত চৌম্বক ফ্লাক্সেরও পরিবর্তন ঘটে। এর ফলে কুন্ডলীতে একটি আবিষ্ট তড়িচ্চালক বলের তথা আবিষ্ট তড়িৎ প্রবাহের সৃষ্টি হয়। লেঞ্জের সূত্রানুসারে এই আবিষ্ট তড়িৎ প্রবাহ কুন্ডলীর মূল তড়িৎ প্রবাহের পরিবর্তনকে বাধা দেয়। আবার কুন্ডলীতে তড়িৎ প্রবাহ বন্ধ করার মুহূর্তে কুন্ডলীর প্রতিটি পাকের সাথে জড়িত বলরেখাসমূহ অপসারিত হওয়ায় চৌম্বক ফ্লাক্সের পরিবর্তন হয়। ফলে কুন্ডলীতে একটি সমমুখী ক্ষণস্থায়ী তড়িচ্চালক বল আবিষ্ট হয়। এতে কুন্ডলীতে তড়িৎ প্রবাহের অবলুপ্তি কিছুটা বিলম্বিত হয়। তড়িৎ বর্তনীর যে ধর্মের ফলে তড়িৎ প্রবাহমাত্রার পরিবর্তনের বিরুদ্ধে বাধার সৃষ্টি হয়, তাকে ‘স্বকীয় আবেশ ধর্ম’ (self inductance) বলে এবং এই ঘটনাকে ‘স্বকীয় আবেশ’ (self induction) বলে। এক্ষেত্রে বর্তনীতে সংযুক্ত কুন্ডলীকে ‘আবেশক’ (inductor) বলা হয়। কোনো কুন্ডলীর স্বকীয় আবেশ কুন্ডলীর প্রস্থচ্ছেদ, আকার, পাকসংখ্যা এবং কুন্ডলীতে পরিবাহী তারের পাকের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে।
স্বকীয় আবেশ গুণাঙ্ক (Coefficient of Self Induction or Self Inductance) : কোনো কুন্ডলীর মধ্যে একক তড়িৎ প্রবাহ চললে তার মধ্যে যে পরিমাণ চৌম্বক ফ্লাক্স অবস্থান করে তাকে ঐ কুন্ডলীর স্বকীয় আবেশ গুণাঙ্ক বলে। স্বকীয় আবেশ গুণাঙ্কের SI একক হেনরী (Henry সংক্ষেপে H)। কোন কুন্ডলীতে 1As-1 হারে তড়িৎ প্রবাহমাত্রার পরিবর্তন হলে যদি 1V তড়িচ্চালক শক্তি আবিষ্ট হয়, তাহলে ঐ কুন্ডলীর স্বকীয় আবেশ গুণাঙ্ককে এক হেনরী (1H) বলে।
আবেশহীন কুন্ডলী কি? (What is Non Inductive Coil in Bengali/Bangla?)
কোনো পরিবাহী তারের কুন্ডলীর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত করা হলে স্বকীয় আবেশ সৃষ্টি হয়। এর ফলে অনেক ক্ষেত্রে বর্তনীতে আবিষ্ট তড়িচ্চালক বল সৃষ্টি হওয়ায় অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। এই অসুবিধা দূর করার জন্য কুন্ডলীর স্বকীয় আবেশ সর্বনিম্ন বা শূন্য করার প্রয়োজন পড়ে। এ কারণেই আবেশহীন কুন্ডলীর প্রয়োজন হয়।
একটি দীর্ঘ অন্তরীত পরিবাহী তারকে সমান দুই ভাঁজ করে একটি চোঙাকৃতি অন্তরক ববিনের গায়ে সুষম এবং ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে কুন্ডলী তৈরি করা হলে, এরূপ কুন্ডলীকে আবেশহীন কুন্ডলী বলে। এর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ পাঠালে কুন্ডলীর এক অর্ধেকের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ যে দিকে প্রবাহিত হয়, অপর অর্ধেকের মধ্য দিয়ে পাশাপাশি কিন্তু বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়। এভাবে পাশাপাশি বিপরীত তড়িৎ প্রবাহযুক্ত দুটি তারে সৃষ্ট স্বকীয় আবেশ পরস্পরকে নাকচ করে দেয়। ফলে সমগ্র কুন্ডলীতে কোন স্বকীয় আবেশ থাকে না। এভাবে জড়ানো কুন্ডলীকে তাই আবেশহীন কুন্ডলী বলে।
পারস্পরিক আবেশ কাকে বলে? (What is called Mutual Induction in Bengali/Bangla?)
পাশাপাশি স্থাপিত দুটি কুন্ডলীর একটিতে তড়িৎ প্রবাহমাত্রার পরিবর্তন হলে অপরটিতে তড়িচ্চালক বল তথা তড়িৎ প্রবাহের সৃষ্টি হয়, এই ঘটনাকে পারস্পরিক আবেশ বলে। প্রথম কুন্ডলীতে তড়িৎ প্রবাহ চালনা করা হলে কুন্ডলীটি একটি চৌম্বকক্ষেত্রের সৃষ্টি করে এবং সৃষ্ট চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যে চৌম্বক বলরেখা তথা চৌম্বক ফ্লাক্স বিন্যাস্ত থাকে। এখন দ্বিতীয় কুন্ডলীটিকে প্রথম কুন্ডলীর খুব নিকটে সৃষ্ট চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে স্থাপন করা হলে কুন্ডলীটির প্রতিটি পাকের সাথে চৌম্বক ফ্লাক্স জড়িত হয়ে পড়ে। এ কারণে প্রথম কুন্ডলীতে তড়িৎ প্রবাহমাত্রার পরিবর্তন ঘটানো হলে দ্বিতীয় কুন্ডলীতে চৌম্বক ফ্লাক্সের পরিবর্তন ঘটে। এর ফলে দ্বিতীয় কুন্ডলীতে একটি আবিষ্ট তড়িচ্চালক বল-এর উদ্ভব হয় এবং আবিষ্ট তড়িৎ প্রবাহ পাওয়া যায়। এই ঘটনা বা ক্রিয়াকে পারস্পরিক আবেশ বলে। এক্ষেত্রে প্রথম কুন্ডলীটিকে মুখ্য কুন্ডলী (primary coil) এবং দ্বিতীয় কুন্ডলীটিকে গৌণ কুন্ডলী (secondary coil) বলে।
পারস্পরিক আবেশ গুণাঙ্ক : কোনো মুখ্য কুণ্ডলীতে তড়িৎপ্রবাহ একক হারে পরিবর্তিত হলে গৌণ কুণ্ডলীতে যে আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তি উৎপন্ন হয় তাকে পারস্পরিক আবেশ গুণাঙ্ক বলে।
পারস্পরিক আবেশ গুণাঙ্ক-এর নির্ভরশীলতা : দ্বিতীয় কুন্ডলীকে প্রাথমিক কুন্ডলী এবং প্রাথমিক কুন্ডলীকে দ্বিতীয় কুন্ডলী হিসেবে ব্যবহার করা হলেও কুন্ডলীদ্বয়ের পারস্পরিক আবেশ গুণাঙ্কের কোনো পরিবর্তন হয়না। কুন্ডলীদ্বয়ের পারস্পরিক আবেশ গুণাঙ্কের মান নির্ভর করে –
(i) কুন্ডলীদ্বয়ের মধ্যবর্তী দূরত্বের উপর,
(ii) কুন্ডলীদ্বয়ের আপেক্ষিক কৌণিক অবস্থানের উপর,
(iii) কুন্ডলীদ্বয়ের আকৃতির উপর,
(iv) কুন্ডলীদ্বয়ের পাক সংখ্যার উপর।
পারস্পরিক আবেশ গুণাঙ্ক-এর একক : পারস্পরিক আবেশ গুণাঙ্কের SI একক হলো হেনরি (Henry বা H)। দুটি কুন্ডলীর একটির মধ্য দিয়ে 1s-এ তড়িৎ প্রবাহমাত্রার পরিবর্তনের হার 1As-1 হলে অপর কুন্ডলীতে যদি 1V তড়িচ্চালক বল আবিষ্ট হয়, তবে কুন্ডলীদ্বয়ের পারস্পরিক আবেশ গুণাঙ্ক হবে 1Henry বা 1H। আবার একটি কুন্ডলীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তড়িৎ প্রবাহমাত্রা 1A হলে যদি দ্বিতীয় কুন্ডলীতে জড়িত মোট চৌম্বক ফ্লাক্স 1Wb হয়, তবে কুন্ডলীদ্বয়ের পারস্পরিক আবেশ গুণাঙ্ক হবে 1Henry বা 1H।