৬ দফার দাবি গুলো কি কি? | ৬ দফার দাবির প্রস্তাব গুলোর ব্যাখ্যা

৬ দফার দাবিসমূহ-

  1. প্রস্তাব – এক : শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের প্রকৃতি
  2. প্রস্তাব – দুই : কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা
  3. প্রস্তাব – তিন : মুদ্রা ও অর্থ-সম্বন্ধীয় ক্ষমতা
  4. প্রস্তাব – চার : রাজস্ব, কর, বা শুল্ক সম্বন্ধীয় ক্ষমতা
  5. প্রস্তাব – পাঁচ : বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা
  6. প্রস্তাব – ছয় : আঞ্চলিক বাহিনী গঠনের ক্ষমতা

 

৬ দফার দাবির প্রস্তাব গুলোর ব্যাখ্যাঃ

প্রস্তাব – এক : শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের প্রকৃতি

লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সংবিধান রচনা করে পাকিস্তানকে একটি ফেডারেশনে পরিণত করতে হবে, যেখানে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার থাকবে এবং প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের ভোটে নির্বাচিত আইন পরিষদ সার্বভৌম হবে;

প্রস্তাব – দুই : কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা

কেন্দ্রীয় (ফেডারেল) সরকারের ক্ষমতা কেবল মাত্র দু’টি ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে- যথা- দেশরক্ষা ও বৈদেশিক নীতি। অবশিষ্ট বিষয়গুলো অঙ্গ রাজ্যগুলিতে ন্যস্ত করা উচিত।

প্রস্তাব – তিন : মুদ্রা ও অর্থ-সম্বন্ধীয় ক্ষমতা

মুদ্রার ব্যাপারে নিম্নলিখিত ২ টির যে কোন একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা চলতে পারে।
(ক) সমগ্র দেশের জন্যে দু’টি পৃথক, অথচ অবাধে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা চালু থাকবে। অথবা
(খ) বর্তমান নিয়মে সমগ্র দেশের জন্যে কেবল মাত্র একটি মুদ্রাই চালু থাকতে পারে।
তবে সেক্ষেত্রে শাসনতন্ত্রে এমন ফলপ্রসূ ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে করে পূর্ব-পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে মূলধন পাচারের পথ বন্ধ হয়। এক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পৃথক ব্যাংকিং রিজার্ভ ও পৃথক রাজস্ব ও মুদ্রানীতি গ্রহণ করা উচিত।

প্রস্তাব – চার : রাজস্ব, কর, বা শুল্ক সম্বন্ধীয় ক্ষমতা

ফেডারেশনের অঙ্গরাষ্ট্রগুলোর কর বা শুল্ক ধার্যের ব্যাপারে সার্বভৌম ক্ষমতা থাকবে। কেন্দ্রীয় (ফেডারেল) সরকারের কোনরূপ কর ধার্যের ক্ষমতা থাকবে না। তবে প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য অঙ্গ-রাষ্ট্রীয় রাজস্বের একটি অংশ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাপ্য হবে। অঙ্গরাষ্ট্রগুলোর সবরকমের করের শতকরা একই হারে আদায়কৃত অংশ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল গঠিত হবে।

প্রস্তাব – পাঁচ : বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা

  • ফেডারেশনভুক্ত প্রতিটি রাজ্যের বহির্বাণিজ্যের পৃথক হিসাব রক্ষা করতে হবে।
  • বহির্বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা অঙ্গরাজ্যগুলোর এখতিয়ারাধীন থাকবে।
  • কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা সমান হারে অথবা সর্বসম্মত কোন হারে অঙ্গরাষ্ট্রগুলোই মিটাবে।
  • অঙ্গ রাষ্ট্রগুলির মধ্যে দেশজ দ্রব্য চলাচলের ক্ষেত্রে শুল্ক বা করজাতীয় কোন রকম বাধা-নিষেধ থাকবে না।
  • শাসনতন্ত্রে অঙ্গরাষ্ট্রগুলোকে বিদেশে নিজ নিজ বাণিজ্যিক প্রতিনিধি প্রেরণ এবং স্ব-স্বার্থে বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদনের ক্ষমতা দিতে হবে।

প্রস্তাব – ছয় : আঞ্চলিক বাহিনী গঠনের ক্ষমতা

আঞ্চলিক সংহতি ও শাসনতন্ত্র রক্ষার জন্য শাসনতন্ত্রে অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলোকে স্বীয় কর্তৃত্বাধীন আধা সামরিক বা আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন ও রাখার ক্ষমতা দিতে হবে।
১৯৬৬ সালের ৫-৬ ফেব্রুয়ারি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের লাহোরে বিরোধী দলের একটি সম্মেলনে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের জন্য তার ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি পেশ করেন। ছয় দফা কর্মসূচি বাঙালির ‘‘মুক্তির সনদ’’ হিসেবে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। ইতিহাসবিদ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলন ছিল পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক আধিপত্য থেকে মুক্তির জন্য সংগ্রামের একটি টার্নিং পয়েন্ট।
স্বায়ত্তশাসনের আড়ালেই মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতার নীলনকশা তৈরি হয়। পূর্ব পাকিস্তানের ৬ দফা কর্মসূচি বাঙালিদের ওপর দীর্ঘদিনের পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনের শিকড়ে আঘাত করে। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের নেতারা বুঝতে পেরেছিলেন যে, তারা যদি ছয় দফা দাবি মেনে নেন, তাহলে পূর্ব পাকিস্তান আর তাদের সঙ্গে থাকবে না।
এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি কনফেডারেশন হবে, এবং সেই কারণেই পশ্চিম পাকিস্তান শুরু থেকেই ছয় দফা প্রত্যাখ্যান করেছে। ছয় দফা ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।

Similar Posts