ভূগোল

অর্থনৈতিক ভূগোল পাঠের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

0 min read

আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে অর্থনৈতিক ভূগোল পাঠের প্রয়োজনীয়তা ক্রমশ বাড়ছে। মানুষের দৈনন্দিন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে শুরু করে তাদের জীবনযাত্রা কীভাবে পরিচালিত হয় এবং কীভাবে বর্তমান অবস্থার আরও উন্নতি ঘটিয়ে ভবিষ্যতের জীবনযাত্রাকে জীবনযাত্রাকে সুন্দর করার জন্য সুন্দর করে গড়ে তোলা যায়, তার সুবিস্তৃত আলোচনা অর্থনৈতিক ভূগোলের মাধ্যমে করা হয়। কাজেই অর্থনৈতিক ভূগোল পাঠ যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি এর ব্যাপক প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে অর্থনৈতিক ভূগোলের বাস্তব জ্ঞান খুবই অর্থবহ।

অর্থনৈতিক ভূগোল পাঠের প্রয়োজনীয়তা

বর্তমান বিশ্বে অর্থনৈতিক ভূগোল পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সমাজের সব শ্রেণি ও পেশার জনগোষ্ঠীর এ বিষয়ের জ্ঞান থাকা আবশ্যক। নিম্নে অর্থনৈতিক ভূগোল পাঠের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

১. সম্পদ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন

অর্থনৈতিক ভূগোল পাঠের মাধ্যমে আমরা পৃথিবীতে বিদ্যমান প্রাকৃতিক সম্পদ সম্পর্কে সহজেই ধারণা লাভ করতে পারে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন সম্পদে সমৃদ্ধ। কোনো দেশ বনজ সম্পদে, কোনো দেশ খনিজ সম্পদে, আবার কোনো দেশ মৎস্য সম্পদে সমৃদ্ধ। অর্থনৈতিক ভূগোল পাঠের মাধ্যমে আমরা এসব সম্পদের অবস্থান, উৎপাদন, বণ্টন ও বিনিময় সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান লাভ করতে পারি।

২. জ্ঞানের শাখা হিসেবে অর্থনৈতিক ভূগোল

মানুষের সম্পদ সীমিত কিন্তু চাহিদা অসীম। আর মানুষ তার এ অসীম চাহিদা পূরণের তাগিদে দিন দিন বিভিন্ন আর্থিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছে। মানুষ পূর্বের ন্যায় বর্তমানে শুধুমাত্র খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানে সন্তুষ্ট নয়। প্রতিদিন তার চাহিদা মিটানোর জন্য সে বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যেমন নিজেকে জড়িয়ে রেখেছে, পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে তাদের মধ্যে চাহিদা মিটানোর আকাঙ্ক্ষাও প্রবল হচ্ছে। আর অর্থনৈতিক ভূগোল পাঠের মাধ্যমে অর্থনৈতিক বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞানার্জন খুব সহজেই সম্ভব। অতএব, এর গুরুত্ব অপরিসীম।

৩. ব্যবসা বাণিজ্য সম্পর্কে জ্ঞানলাভ

তৃতীয় পর্যায়ের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হলো ব্যবসা বাণিজ্য। যেদেশের অর্থনীতি ব্যবসা বাণিজ্য নির্ভর সেদেশ তত বেশি উন্নত। উদাহরণস্বরূপ, সিঙ্গাপুরের কথা বলা যায়। কাজেই কোন স্থানে কোন ধরনের পণ্যের ঘাটতি রয়েছে আবার কোন অঞ্চলে উদ্বৃত্ত পণ্য উৎপাদিত হয় এবং কোথায় কোন পণ্যের চাহিদা রয়েছে তা অর্থনৈতিক ভূগোল পাঠের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি। তাছাড়া এ বিষয় পাঠের মাধ্যমে আমরা অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্যের গতিপ্রকৃতি সম্বন্ধে জানতে পারি ।

৪. শহর, নগর ও বাণিজ্য কেন্দ্র সম্পর্কে জ্ঞানার্জন

পৃথিবীর নগর, শহর ও বাণিজ্য কেন্দ্র সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে হলে অর্থনৈতিক ভূগোল পাঠ করা একান্ত আবশ্যক। কেননা বিভিন্ন দেশের ছোটবড় সব নগর, শহর, বাণিজ্য, কেন্দ্রের অবস্থান এবং এদের গড়ে ওঠার কারণ ও তাদের বর্তমান অবস্থা আমরা অর্থনৈতিক ভূগোল পাঠের মাধ্যমে জানতে পারি।

৫. পাঠ্যক্রম হিসেবে

ভূগোলের অন্তর্ভুক্ত শাখার মধ্যে মানবিক ভূগোল অন্যতম। আর এরই একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হলো অর্থনৈতিক ভূগোল। তাই আমাদের এ বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞানার্জন প্রয়োজন। তাহলে আমরা এ জ্ঞানের দ্বারা ভবিষ্যতের জীবনকে সুখময় ও সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারব এবং আমাদের জীবনযাপন প্রণালিও সহজ হবে।

৬. পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা লাভ

পরিবেশের মধ্যে আমরা প্রত্যেকেই বশ্বাস করি। কাজেই মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি ও অবনতি পরিবেশের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। তাই পরিবেশ সম্পর্কে জ্ঞানলাভ প্রত্যেক মানুষের অবশ্যই প্রয়োজন। কেননা মানুষের যাবতীয় কর্মকান্ড ও জীবনযাপন প্রণালির ওপর পরিবেশের প্রভাব বিদ্যমান। অতএব অর্থনৈতিক ভূগোল পাঠের মাধ্যমে আমরা পরিবেশ সম্পর্কে সঠিক ধারণ অর্জন করতে পারি।

৭. পণ্য উৎপাদনের বৈচিত্র্যতা

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদন হয় এবং তাদের স্থানিক ও আন্তর্জাতিক বণ্টন অর্থনৈতিক ভূগোলের একটি অন্যতম আলোচ্য বিষয়। সুতরাং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন অঞ্চলভেদে পণ্য উৎপাদনের মধ্যে যে বৈচিত্র্যতা লক্ষ করা যায় তা এ বিষয় পাঠের মাধ্যমে জানা যায়।

৮. শিল্প

শিল্পের জন্য প্রয়োজন যেমন শিল্পের উপযোগী পরিবেশ তেমনি প্রয়োজন প্রাকৃতিক সম্পদ। সে কারণে পৃথিবীর সব স্থানে শিল্পকারখানা সমানভাবে গড়ে উঠতে পারেনি। অর্থনৈতিক ভূগোল পাঠের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ধরনের শিল্পের অবস্থা ও উৎপাদন সম্পর্কে ধারণা পেতে পারি।

৯. পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা

ভালো যোগযোগ ব্যবস্থা ছাড়া উৎপাদিত পণ্যদ্রব্য যেমন সহজে বাজারজাত করা যায় না, তেমনি উৎপাদনের জন্য কাঁচামালও যথাযথ সময়ে সরবরাহ করা যায় না। কাজেই পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পর্কে জ্ঞানলাভ ব্যতীত কোনো দেশ কৃষি, শিল্প, ব্যবসা বাণিজ্যে উন্নতি ঘটাতে পারে না।

১০. সরকারকে সহায়তা করা

সরকার ও সরকারি কর্মচারীদের অর্থনৈতিক ভূগোলের জ্ঞান থাকা আবশ্যক। তাহলে দেশের কোন অঞ্চলে কোন ধরনের ফসল ভালো উৎপাদন হবে এবং কোথায় কোন ধরনের শিল্প স্থাপন করা অধিক লাভজনক হবে সেটি সহজেই জানা সম্ভব। তাছাড়া দেশের রাস্তাঘাট, রেললাইন, বন্দর কোথায় নির্মাণ করলে সুবিধা হবে এবং কোন দ্রব্য কম খরচে আমদানি করলেও কোন দেশে রপ্তানি করলে কম খরচ পড়ে এসব বিষয় শুধুমাত্র অর্থনৈতিক ভূগোলশান্ত থেকে জানা সম্ভব।

১১. সাংস্কৃতিক জ্ঞানলাভ

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সভ্যতা ও সংস্কৃতি ভিন্ন ধরনের। ঔপনিবেশিক শাসন, ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে পৃথিবীর এক প্রান্তের সংস্কৃতি অন্য প্রান্তের সাথে মিশ্রণ ঘটেছে। আর এসবই অর্থনৈতিক ভূগোলশাস্ত্র পাঠের মাধ্যমে জানা সম্ভব।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x