৭ম শ্রেণি হিন্দুধর্ম শিক্ষা: ৬ষ্ঠ অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর (PDF)
৭ম শ্রেণি হিন্দুধর্ম শিক্ষা ৬ষ্ঠ অধ্যায় : ধর্মগ্রন্থ তত্ব ও তথ্যের মাধ্যমে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা প্রদান করে। উপাখ্যানের মাধ্যমে সেই শিক্ষার প্রয়োগের দৃষ্টান্তও দেয়া হয়েছে। পূর্ববর্তী শ্রেণিতে আমরা ধর্মীয় উপাখ্যানের সাথে নৈতিক শিক্ষার সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেছি।
সত্যবাদিতা, ক্ষমা, জীবসেবা, কর্তব্যনিষ্ঠা, দেশতৃপ্রেম ইত্যাদি নৈতিক শিক্ষার ধারণা এবং এ সম্পর্কিত দৃষ্টান্তমূলক উপাখ্যান ও তার শিক্ষা সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা সততা, কর্তব্য নিষ্ঠা ও ত্যাগ-তিতিক্ষা এ নৈতিক মূল্যবোধের ধারণা এবং প্রাসঙ্গিক ধর্মীয় উপাখ্যান ও তার শিক্ষা সম্পর্কে জানব।
৭ম শ্রেণি হিন্দুধর্ম শিক্ষা ৬ষ্ঠ অধ্যায়
প্রশ্ন ॥ ১ ॥ সততা বলতে কী বোঝায়? সততার দুটি উদাহরণ দাও।
উত্তর : ‘সৎ’ শব্দ থেকে ‘সততা’ শব্দের উৎপত্তি। কোনো অন্যায় বা অবৈধ কাজ না করার নামই সততা। সততা আসলে কোনো একক গুণ নয়। কতগুলো গুণের সমষ্টিমাত্র। এসব গুণের মধ্যে আছে সত্যনিষ্ঠা, আন্তরিকতা, স্পষ্টবাদিতা, সদাচার, লোভহীনতা প্রভৃতি। সততার দুটি উদাহরণ- তূণীরের সততা এবং শ্রীরামচন্দ্রের সততা।
প্রশ্ন ॥ ২ ॥ লক্ষ্মণ রামসীতার সাথে বনে গেলেন কেন?
উত্তর : ভ্রাতৃপ্রেমে লক্ষ্মণ রামসীতার সাথে বনে গেলেন। লক্ষণ, রাম ও সীতাকে অনেক ভালোবাসতেন। রামসীতা যখন বনবাসে যাচ্ছিলেন তখন লক্ষ্মণ রাজ পরিবারের সুখ ত্যাগ করে তাদের সঙ্গে বনে চলে গেলেন। কারণ লক্ষ্মণের চরিত্রে ত্যাগের মহিমাময় গুণ ছিল। তাই লক্ষণ, রাম ও সীতার সেবা করার জন্য বনে গমন করেছিলেন।
প্রশ্ন ॥ ৩ ॥ কৈকেয়ী রাজা দশরথের কাছে বর দুটি প্রার্থনা করলেন কেন?
উত্তর : নিজ পুত্র ভরতকে সিংহাসনে বসাতে কৈকেয়ী বর দুটি চেয়েছিলেন।
রাজা দশরথ একবার অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। কৈকেয়ীর সেবাযত্নে তিনি সুস্থ হয়ে উঠলে তাকে দুটি বর দিতে চান। রামের অভিষেকের সময়ে কৈকেয়ী বর দুটি চেয়ে নেন। এক বরে রাম চৌদ্দ বছরের জন্য বনে যাবে, অন্য বরে ভরত বসবে সিংহাসনে।
নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও
প্রশ্ন ॥ ১ ॥ ত্যাগ-তিতিক্ষা কাকে বলে? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : সাধারণত ত্যাগ শব্দের অর্থ কোনো কিছু বিসর্জন করাকে বোঝায়। নিজ স্বার্থ রক্ষা না করে অন্যের মঙ্গলের জন্য কোনো কিছু দান করার মানসিকতাকে বলা হয় ত্যাগ। তিতিক্ষাও ত্যাগের মতো আরেকটি বিশেষ গুণ। তিতিক্ষা মানে সহিষ্ণুতা। অন্যের প্রতি সহিষ্ণু হয়েই ব্যক্তি ত্যাগী হয়ে ওঠে। নিজ স্বার্থ না দেখে অন্যের মঙ্গলের জন্য কাজ করে সর্বসুখ বির্সজন দেয়। শ্রীরাম ভরতের প্রতি সহিষ্ণু হয়ে তার পিতৃসম্মান অক্ষুণ্ন রাখতেই বনে গমন করেন। তার এ ত্যাগের পেছনে তিতিক্ষাই কাজ করেছিল। তিতিক্ষা ছিল তার চরিত্রের সবচেয়ে বড় গুণ।
প্রশ্ন ॥ ২ ॥ পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে ত্যাগ-তিতিক্ষা কীভাবে শান্তি আনতে পারে- ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ত্যাগ-তিতিক্ষা মানুষের একটি মহৎ গুণ। এ গুণটির জন্য পরিবার ও সমাজে সবার মধ্যে শান্তিপূর্ণ সম্পর্কের সৃষ্টি হয়। সবাই একে অন্যের দুঃখ, কষ্ট, প্রয়োজন অনুভব করে। বিপদে সহায় হয়, সাহায্য করে। নিজের স্বার্থকে বড় করে দেখে না। এভাবে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে ভালো প্রভাব ফেলে। সবাই সুখে-শান্তিতে মিলেমিশে জীবনযাপন করে। সবার মাঝে মৈত্রীভাব গড়ে ওঠে। এটি হিন্দুধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
১. নীলরতন ও মনোরমার বেশ সুখেই সাংসারিক জীবন কাটাচ্ছিল। বেশ কয়েক বছর হলো তাদের কোনো সন্তানাদি হচ্ছে না। ডাক্তার বলেছে তাদের সন্তান হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এজন্য তাদের দুজনের মধ্যে একটা হতাশা বিরাজ করছে। বাড়ির কর্মচারী দীননাথ ব্যাপারটি লক্ষ করে। সে দরিদ্র। তার দুটি সন্তান। দীননাথ স্ত্রীকে রাজি করিয়ে তার একটি সন্তানকে মনোরমার কোলে তুলে দেয়। মনোরমা নীলরতনের সংসারে শান্তির আবহ ফিরে আসে।
ক. রামায়ণের প্রধান চরিত্র কে?
খ. তিতিক্ষার মাধ্যমে সমাজে কীভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়- ব্যাখ্যা কর?
গ. দীননাথের চরিত্রের বৈশিষ্ট্যে রামচন্দ্রের কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মনোরমা ও নীলরতনের সংসারে সুখের আবহের মূলে রয়েছে দীননাথের ভূমিকাÑ তোমার পঠিত উপাখ্যানের আলোকে মূল্যায়ন কর।
২. দীননাথ পোদ্দার স্পষ্টবাদী মানুষ। কোনো অন্যায় অপরাধ নিজেও করেন না এবং অন্যকে করতে দেখলে বাধা দেন। সদা ভালো পথে চলেন। যেসব বদঅভ্যাস সামাজিক উন্নয়নের অন্তরায় তা দূর করতে সদা তৎপর। তিনি মনে করেন সমাজের কুসংস্কার দূর করা তার দায়িত্ব। তার এসব কর্তব্যনিষ্ঠা ও গুণাবলির কারণে সমাজের সবাই তাকে ভালোবাসে। [ পাঠ-১, ২, ৩ ও ৪ ]
ক. কর্তব্যনিষ্ঠা শব্দটির মানে কী?
খ. আরুণি বিখ্যাত হয়ে আছেন কেন?
গ. উদ্দীপকের দীননাথ পোদ্দারের চরিত্রে কোনটি প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. দীননাথ পোদ্দারের এসব বৈশিষ্ট্য সমাজে কেমন প্রভাব রাখবে বলে তুমি মনে কর? বিশ্লেষণ কর।
৩. পাপন পিতা-মাতা, ভাই-বোন, দাদা-দাদি সবার সাথে ভালো আচরণ করে। কারও কষ্ট ও বিপদ দেখলে তা দূর করতে সচেষ্ট হয়। সে এমন একটি জীবন গঠন করতে চায় যা সবার জন্য আদর্শ হবে। এজন্য সে ধৈর্য, সংযম, ক্ষমা প্রভৃতি গুণাবলি অর্জনে সচেষ্ট। তার আশা এসব গুণাবলি অর্জনের মাধ্যমে সমাজ, রাষ্ট্র ও পরিবার সবার মঙ্গল সাধন করা। আর এ মনোভাব সে শিখেছে তার পরিবারের কাছ থেকে।
ক. কে মানুষের ক্ষতি করে না?
খ. কখন সমাজ শান্তির আধার হয়ে উঠে?
গ. উদ্দীপকে পাপনের চরিত্রে কোন বিষয়টি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “সৎভাবে জীবন পরিচালনায় পরিবারের ভূমিকাই মূখ্য” – উক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ কর।
জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তর
প্রশ্ন ॥ ১ ॥ ত্যাগ অর্থ কী?
উত্তর : কোনো কিছু বর্জন বা পরিহার করা।
প্রশ্ন ॥ ২ ॥ ত্যাগ কীসের অঙ্গ?
উত্তর : ত্যাগ ধর্মের অঙ্গ।
প্রশ্ন ॥ ৩ ॥ রামের পিতার নাম কী?
উত্তর : রাজা দশরথ রামের পিতা।
প্রশ্ন ॥ ৪ ॥ তিতিক্ষা অর্থ কী?
উত্তর : তিতিক্ষা অর্থ সহিষ্ণুতা।
প্রশ্ন ॥ ৫ ॥ তিতিক্ষা সমাজে কী করে?
উত্তর : সমাজে শান্তি আনয়ন করে।
প্রশ্ন ॥ ৬ ॥ বিষ্ণুর অবতার কে?
উত্তর : শ্রীরামচন্দ্র।
অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তর
প্রশ্ন ॥ ১ ॥ ত্যাগ কাকে বলে?
উত্তর : ত্যাগ বলতে কোনোকিছু বর্জন বা পরিহার করা বোঝায়। কিন্তু বিশেষভাবে ত্যাগ বলতে বোঝায় নিজের স্বার্থকে বিসর্জন দেওয়া। নিজের সুখ বা লাভের চিন্তা থেকে নিজেকে বিরত রাখা। ভোগ বা সুখের ইচ্ছা পরিহার করাকেই ত্যাগ বলে।
প্রশ্ন ॥ ২ ॥ কেন রাম বনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলেন?
উত্তর : পিতৃসত্য রক্ষায় রাম বনে যাবার জন্য প্রস্তুত হলেন।
একবার রাজা দশরথ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। কৈকেয়ীর সেবায় সেবারে তিনি সুস্থ হন। তিনি বর দিতে চান কৈকেয়ীকে। সেই বর কৈকেয়ী চান রামের রাজ্য অভিষেকের সময় রামকে বনবাসে যেতে হবে চৌদ্দ বছরের জন্য আর ভরত হবে রাজা।
পিতার দেয়া সত্য রক্ষায় জন্য রাম বনে যাবার জন্যে প্রস্তুত হন।