৭ম শ্রেণির আইসিটি: ৩য় অধ্যায় প্রশ্ন ও উত্তর (PDF)

প্রশ্ন ১ : ইন্টারনেটে অপরিচিত কাউকে ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়া যাবে না- ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: ইন্টারনেট একটি ভার্চুয়াল জগৎ। এখানে অনেক ধরনের মানুষের ভার্চুয়াল উপস্থিতি থাকে। এক এক ধরনের উদ্দেশ্য ভিন্ন রকম। কেউ অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে ইন্টারনেটে প্রবেশ করে প্রতারিত করে। ইন্টারনেট ব্যবহার করে যখন আমরা অন্যের সাথে যোগাযোগ করি তখন হঠাৎ করে অপরিচিত মানুষের সাথে যোগাযোগ হয়ে যায়। অপরিচিত মানুষের সাথে সরল বিশ্বাসে যোগাযোগ করে আমরা যদি নিজের ব্যক্তিগত তথ্য যেমন-ঠিকানা, ফোন নম্বর, ছবি দেই। আর অপরিচিত মানুষটি যদি সেই তথ্য ব্যবহার করে অপপ্রচার করে সেক্ষেত্রে আমাদের ক্ষতি হবে। যা বাস্তব জীবনে অনেক ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াবে। এ কারণে অপরিচিত কাউকে ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়া যাবে না।

প্রশ্ন ২ : কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহার করার নিয়মগুলো উল্লেখ করো।

উত্তর: কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহারে তিনটি নিয়ম মেনে চলতে হয় ৷ নিয়মগুলো হচ্ছে:
১. ইন্টারনেট কখনো একা অন্যদের চোখের আড়ালে ব্যবহার না করা। এমন জায়গায় বসে ব্যবহার করা যেখানে সবাই কম্পিউটারের স্ক্রিন দেখতে পারে।
২. ভুলেও কোনো অপরিচিত মানুষকে নিজের নাম, পরিচয়, ছবি বা পাসওয়ার্ড না দেওয়া।
৩. ইন্টারনেট ব্যবহার করা আনন্দের জন্য, কারও ক্ষতি করার জন্য নয়। কারো সাথে কখনো অসংযত, রূঢ়, অশালীন হওয়া উচিত নয়।

প্রশ্ন ৩ : IAD কী? কম্পিউটার আসক্তির কুফল বর্ণনা করো।

উত্তর: IAD-এর পূর্ণরূপ হলো- Internet Addiction Disorder। যারা খুব বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করে তাদের জন্য IAD নামটি ব্যবহার করা হয়। অনেক বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করলে সেটি আসক্তিতে পরিণত হয়। কম্পিউটারে আসক্ত হলে বিভিন্ন রকমের সমস্যা দেখা দেয়। কম বয়সী ছেলেমেয়েদের বেড়ে ওঠার জন্য মাঠে ঘাটে ছোটাছুটি করতে হয়, খেলতে হয়। যে সময় খেলার মাঠে ছোটাছুটি করে খেলার কথা, সে সময় ঘরের কোণায় কম্পিউটারের সামনে মাথা গুঁজে বসে থাকা মোটেই ভালো নয়। কম্পিউটারে আসক্ত হলে, কম্পিউটারের বাইরে চিন্তা করা যায় না। প্রচুর সময় ও অর্থ ব্যয় হয়। কাজকর্ম, খাওয়া-দাওয়া, ঘুম, লেখাপড়া কোনোটাই ঠিক মত করা যায় না। ফলে তাদের পৃথিবী, মানসিকতা এবং চিন্তাজগৎ সংকীর্ণ হয়ে আসে।

প্রশ্ন ৪ : কম্পিউটার আসক্তির কুফল থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় বর্ণনা করো।

উত্তর: প্রয়োজন ছাড়া অতিরিক্ত সময় কম্পিউটার ব্যবহার করাকে কম্পিউটার আসক্তি বলা হয়। আজকাল শিশু ছেলে মেয়েরাসহ বয়স্ক ব্যক্তিরা কম্পিউটার আসক্তিতে আক্রান্ত হচ্ছে। একজন যখন তার মা বাবা, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজনকে সময় না দিয়ে সেই সময়টাও কম্পিউটারের পেছনে ব্যয় করে তখন বুঝতে হবে তার কম্পিউটারে আসক্তি জন্মেছে। কম্পিউটার আসক্তি মারাত্মক ক্ষতিকর বিশেষ করে কাজ কর্মে ক্ষতি, লেখাপড়ায় সমস্যা, মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ ইত্যাদি। এ আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তাকে আনন্দ পাওয়া শিখিয়ে দিতে হবে— সবচেয়ে সুন্দর বিষয় হচ্ছে খেলাধুলা। কতক্ষণ সে কম্পিউটার ব্যবহার করবে নির্ধারণ করে দেওয়া। মাঝেমাঝে সুন্দর জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যাওয়া। মজার মজার গল্পের বই কিনে দেওয়া এবং নিয়মিত তাকে যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ করলে কম্পিউটার আসক্তি থেকে রক্ষা পাবে। মনে রাখতে হবে— কম্পিউটার খুব চমৎসার একটা যন্ত্র। আমরা সেটাকে ব্যবহার করব, কিন্তু সেটা যেন কখনো আমাদের ব্যবহার না করে।

প্রশ্ন ৫ : সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক সম্পর্কে ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে সামাজিক নেটওয়ার্ক বলতে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েসাইটকে বোঝায়। সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে আজকাল একে অন্যের সাথে সম্পর্ক বা যোগাযোগ রাখা যায়। এরকম কিছু সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক হচ্ছে ফেসবুক, টুইটার, লিংকড-ইন, সুমাজি ইত্যাদি। মানুষের ভেতর তথ্য ছড়িয়ে দেবার জন্য এই নেটওয়ার্কগুলোর কোনো তুলনা নেই। সামাজিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সাধারণ জনগণকে সংগঠিত করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা যায়। স্বৈরশাসক বা সামরিক শাসককে আন্দোলন করে সরিয়ে দিতে এ নেটওয়ার্ক অনন্য ভূমিকা রাখছে। সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কগুলো আমাদের সামাজিক বন্ধনকে দৃঢ় করছে। ফলে আমরা একে অপরের সাথে একটি সামাজিক নেটওয়ার্ককে আবদ্ধ হচ্ছি।

প্রশ্ন ৬ : কপিরাইট আইন কী? ফেয়ার ইউজ বলতে কী বোঝ?

উত্তর: পৃথিবীর দেশে দেশে সৃজনশীল সৃষ্টিকর্মের কপি বা পুনরুৎপাদন, অবৈধ ব্যবহার ইত্যাদি বন্ধের জন্য যে আইনের বিধান রাখা হয়েছে। তাকে কপিরাইট আইন বলে। মুদ্রণ যন্ত্র আবিষ্কার হওয়ার পর থেকে কপি করা বা নকল করা সহজ হয়েছে বলে, লেখকদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য সর্বপ্রথম যুক্তরাজ্যে ১৬৬২ সালে কপিরাইট আইন চালু হয়। এ আইনে বিভিন্ন বুদ্ধিভিত্তিক সম্পদ বা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের আওতায় চলে আসে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ সকল সৃজনশীল বা বুদ্ধিভিত্তিক সম্পদ ব্যবহার করার স্বাধীনতা থাকে। বিশেষ করে একাডেমিক বা পড়ালেখার কাজে সৃজনশীল কাজ কপি করা যায়। অর্থাৎ পড়ালেখার কাজে কোনো বইয়ের ফটোকপি করলে তাতে কপিরাইট আইন ভঙ্গ হয় না। এরকম ব্যবহারকে ‘ফেয়ার ইউজ’ বলা হয়।

প্রশ্ন ৭ : ওপেন সোর্স সফটওয়্যার বুঝিয়ে বলো।

উত্তর: মুক্ত দর্শনের আওতায় যে কম্পিউটার সফটওয়্যারগুলো প্রকাশিত হয় সেগুলোকে একত্রে মুক্ত সফটওয়্যার বা ওপেন সোর্স সফটওয়্যার বলা হয়। এ সফটওয়্যারগুলো সহজে একজন অন্যজনকে কপি করে দিতে পারে, ব্যবহারও করতে পারে। তবে যেহেতু সবাই বিনামূল্যে কপি এবং পরিবর্তন করতে পারে তাই সারা বিশ্বের ব্যবহারকারীরা মিলে এই সফটওয়্যারগুলোকে খুবই শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তুলে। যা একটি মুক্ত দর্শণ বা ওপেন সোর্স ফিলসফি এর একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

প্রশ্ন ৮ : কপিলেফট সম্পর্কে বুঝিয়ে বলো।

উত্তর: সৃজনশীল কাজের স্রষ্টা সবাইকে যদি তার কাজ কপি করার সানন্দ অনুমতি দেন তবে তাকে কপিলেফট বলে। কপিরাইটের একেবারে উল্টোটি হলো কপিলেফট। কপিরাইট আর কপিলেফটের মাঝখানে রয়েছে সৃজনী সাধারণ বা ক্রিয়েটিভ কমন্স। সৃজনী সাধারণ লাইসেন্সের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে কর্মস্রষ্টার কিছু কিছু অধিকার সংরক্ষিত হয়ে থাকে। অর্থাৎ যে কেউ ইচ্ছে করলে লেখকের বই তার লিখিত বা আইনি অনুমতি ছাড়াই প্রকাশ করতে পারবে। তবে লেখকের নামে প্রকাশ করতে হবে এবং সেটি দিয়ে কোনো মুনাফা লাভ করা যাবে না। বর্তমানে এ আইনের আওতায় কম্পিউটার সফটওয়্যারগুলো সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া হয় এবং সবাই মিলে এ সফটওয়্যারগুলো শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তোলে।

প্রশ্ন ৯ : হ্যাকিং সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তর: কোনো সিস্টেম বা ওয়েবসাইটের নিজস্ব বা গোপন অংশটুকু দেখা এবং পরিবর্তন করাই হচ্ছে হ্যাকিং। বর্তমানে নিয়মিতভাবে কম্পিউটারের ওয়েবসাইট হ্যাকিং হচ্ছে। সাধারণত ওয়েবসাইটে আমাদের যতটুকু তথ্য দরকার ততটুকুই আমরা দেখতে পাই। ওয়েবসাইটের গোপন অংশটুকু আমাদের প্রয়োজন নেই। অনেকে এ সকল গোপন অংশটুকুতে হ্যাকিং-এর মাধ্যমে ঢুকে কোনো কিছু পরিবর্তন বা নষ্ট করে চলে আসে। ঘরে বসেই এ কাজগুলো করা হয় বলে হ্যাকার ধরার উপায় নেই। কেউ যদি শুধুমাত্র কৌতূহলী হয়ে অন্যের ওয়েবসাইটে ঢুকে কোনো ক্ষতি না করে বের হয়ে আসে তাকে White hat hacker বা সাদা টুপি হ্যাকার বলে। অন্যথায় তাকে Black hat hacker বা কালো টুপি হ্যাকার বলে। হ্যাকিং একইসাথে বেআইনি এবং অনৈতিক কাজ।

প্রশ্ন ১০ : প্লেজারিজম কী? প্লেজারিজম ধরার কৌশল সম্পর্কে বর্ণনা করো।

উত্তর: ইন্টারনেটে অসংখ্য তথ্য রয়েছে। সেখান থেকে হুবহু কোনো কিছু কপি করে নিজের নামে জমা দেওয়াকে প্লেজারিজম বলে। প্লেজারিজম খুব বড় ধরনের অনৈতিক কাজ। বুঝে হোক বা না বুঝে হোক অনেকেই প্লেজারিজম করছে এবং তাদের অনেকেই এ জন্য খুব বড় বিপদে পড়ে যায়। বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে প্লেজারিজম যেমন বেড়েছে ঠিক সেরকম প্লেজারিজম ধরার কৌশলও অনেক বেড়েছে। সফটওয়্যার ব্যবহার করে ডকুমেন্টের কোন অংশ ইন্টারনেটের কোনো জায়গা থেকে হুবহু কপি করে এনেছে সেটা সহজেই ধরা যায়। তাই বিভিন্ন গবেষণা, প্রজেক্ট পেপার ইত্যাদির ডকুমেন্ট তৈরিতে প্লেজারিজম থেকে দূরে থাকতে হবে।

DOWNLOAD CHAPTER 3

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *