মধু | মধুর উপকারিতা
জমানুষ বলে থাকে, জন্মের পর প্রথমে শিশুর মুখে মধু দিলে শিশুরা মিষ্টি কথা বলা শেখে। এটা কিন্তু সত্য নয় এটা কথার কথা। তবে মধুর আসলেই বিশেষ গুন আছে। সেটা হয়তো মিষ্টি কথা বলানোর গুণ নয়। মধুর শরীরের পক্ষে বিশেষ উপকারী। মধুর অসংখ্য গুণ রয়েছে।
আমাদের দেশে সেই প্রাচীনকাল থেকেই ব্যাপক হারে মধুর ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে শুধু আমাদের দেশে নয় বিদেশেও মধুর কদর অনেক। চীন সহ, এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সকাল শুরু হয় মধু দিয়ে। তাদের খাবারের তালিকায় মধু থাকে।
অনেকের চায়ের সাথে মধু এবং গরম জলে মধু মিশিয়ে নিয়মিত খান। এর উপকারিতা ও সুফল অনেক। চলুন তাহলে এসব উপকারিতা ও সুফল সম্পর্কে জেনে নেই।
মধুর খাদ্যগুণ
পুষ্টিগুণ হিসেবে যদি আমরা খাবারের তালিকা তৈরি করে তাহলে সে তালিকার প্রথম সারিতে মধু থাকবে। মধু শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং বিভিন্ন রোগবালাই প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। যা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। মধুতে 45 টির ও থেকে বেশি খাদ্যগুণ রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি হলো –
- মধুতে ২৫ – ৩৭ % গ্লুকোজ
- ৩৪ – ৪৩ % ফ্রুক্টোজ
- ০.৫ – ৩.০ % সুক্রোজ
- ২২% অ্যামাইনো এসিড
- ৫ – ১২ % মন্টোজ
- ২৮ % খনিজ লবণ
- ১১% এনকাইম
- ভিটামিন বি ১
- ভিটামিন বি ২
- ভিটামিন বি ৩
- ভিটামিন বি ৫
- ভিটামিন বি ৬
- জিংক
- কপার
- এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান
- এন্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান
- আয়োডিন ইত্যাদি উপাদান থাকে। তবে একটা চর্বি ও প্রোটিন নেই।
খালি পেটে মধু খাওয়ার উপকারিতা
জীবনকে সুন্দর করতে মধুর খাদ্য উপাদান অনেক উপকারী। প্রত্যেকদিন সকালে খালি পেটে কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে খেলে তা ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়াও লিভার পরিষ্কার করে থাকে।
আপনার যদি হজমের সমস্যা থাকে তাহলে প্রতিদিন সকালে মধু খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কারণ মধু পেটের অম্লভাব কমিয়ে হজম করতে সহায়তা করে। আপনি যদি হজমের সমস্যা দূর করতে চান তাহলে প্রতিবার ভারী খাবার খাওয়ার পূর্বে এক চামচ মধু খেয়ে নিন। বিশেষ করে সকালে খালি পেটে এক চামচ মধু খাওয়া খুবই উপকারী।
মধুর উপকারিতা
মধুর উপকারিতা অনেক যা বলে শেষ করা যাবে না। তবুও নিম্নে কয়েকটি দেওয়া হলো –
1. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
মধু শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শরীরের ভেতরে এবং বাইরে থাকা যেকোনো ধরনের ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে প্রতিরোধ করে। মধুতে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রোগ প্রতিরোধকারী শক্তি গড়ে তোলেন এবং যেকোনো ধরনের সংক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করে।
2. ওজন কমাতে সাহায্য করে
নিয়মিত মধু সেবন করলে পাকস্থলীতে অতিরিক্ত গ্লুকোজ তৈরি হয়। গ্লুকোজ মস্তিষ্কের সুগার লেভেল বাড়িয়ে দেয়। যে কারণে মেদ কমানোর হরমোন নিঃসরণের জন্য অতিরিক্ত মাত্রায় চাপ সৃষ্টি করে। ফলের মেদ কমে যায়।
3. অনিদ্রায়
রাতে প্রতিদিন নিয়ম করে মধু খেলে গভীর ঘুম হয়।
4. কোষ্ঠকাঠিন্য
মধুতে বি কমপ্লেক্স রয়েছে। আর এ ভিটামিন বি কমপ্লেক্স কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে।
5. ডায়রিয়া
মধু ডায়রিয়া প্রতিরোধ করতে হেল্প করে। যাদের আমাশয়, ডায়রিয়া ও পেট খারাপ রয়েছে তারা প্রতিদিন মধু খেতে পারেন। এতে অনেকটা উপকার পাবেন।
6. হজম সমস্যা দূর করে
মধুতে থাকা বিভিন্ন উপাদান শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। একারণে, খাবার খাওয়ার পর বদ হজম, গলা জ্বালা,বুক জ্বালা ইত্যাদি সমস্যা দূর হয়।
7. অরুচি
অনেকে একটু খেলেই হাঁপিয়ে পড়ে, বেশি খেতে পারে না বা খাবার ইচ্ছে থাকে না, অরুচিতে ভোগেন । এক্ষেত্রে মধু খেলে খাবারের রুচি বাড়ে ও খাবার চাহিদাও বাড়ে।
8. বমি
এমন অনেকেই আছে যাদের খাবার দেখলেই বমি আসে বা একটু খেলেই বমি বমি লাগে তাদের এ সমস্যার সমাধানও করে মধু।নিয়মিত মধু খেলে বমি বমি ভাব কমে যায়।
9. স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়
মধু শুধু কায়িক শক্তি বাড়ায় না এছাড়াও প্রতিদিন ঘুমানোর আগে নিয়মিত এক চামচ করে মধু খেলে মস্তিষ্কের কাজ সঠিক ভাবে চলতে সাহায্য করে। এর ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ, স্মৃতিশক্তি বাড়ে।
10. দুর্বলতা দূর করে
অনেকে আছে যারা সারাক্ষণ ঝিমুনি বা দুর্বল অনুভব করে। এই ঘুম ঘুম ভাব কাটানোর জন্য ও তরতাজা থাকতে নিয়মিত মধু খেতে পারেন।
11. যৌন দুর্বলতায়
অনেক পুরুষদের এ সমস্যা থাকে। এ সমস্যা বিভিন্ন ধরণের হয়। যারা এ সমস্যায় ভুগছে তারা যদি নিয়মিত মধু খাওয়া শুরু করতে পারে তাহলে এ সমস্যা থেকে সহজেই রেহাই পাবে।
12. হাড় ও দাঁতের গঠন
মধুতে রয়েছে ক্যালসিয়াম। আর ক্যালসিয়াম দাঁত, হাড়, চুলের গোড়া শক্ত রাখে ও নখের উজ্জলতা বৃদ্ধি করে। তাছাড়া দাঁতের ক্ষয়রোধ করে মধু।
13. সর্দি – কাশি কমাতে
সর্দি-কাশি জ্বর, ঠান্ডা লাগা কমাতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত মধু খাওয়া উচিত। এতে অনেকটা উপকার পাওয়া যায়।
14. রূপচর্চা ও তারুণ্য ধরে রাখতে
ত্বককে টানটান ও চকচক করতে মধু একটি বিশেষ উপকারী উপাদান। এছাড়া মধুতে রয়েছে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট। আর এ এন্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখে। মধু তারুণ্য ধরে রাখতেও সাহায্য করে।
15. চুলের যত্নেে
শুধু ত্বক নয়। চুলের যত্নে মধু ব্যবহার করা হয়। চুলের জন্য মধুর উপকারিতা অনেক।