কলার উপকারিতা!

কলা খুবই সহজলভ্য একটি ফল। রাস্তায় হাঁটছেন কলা দেখেই দুটো কলা খেয়ে নিলেন,অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে এক কাঁদি কলা নিয়ে বাসায় ফিরলেন,সকালের নাস্তার টেবিলে রুটি কলা,দুপুরে তরকারি হিসেবে কাঁচাকলা আর ইলিশ মাছের ঝোল। আমরা প্রতিনিয়ত এতো কলা খাচ্ছি কিন্তু কলায় আসলে আছেটা কি? কখনো ভেবে দেখেছেন? কলায় কি কি গুণাগুণ আছে? আসুন জেনে নেই…

কলা অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন।কলায় রয়েছে দৃঢ় টিস্যু গঠনকারী উপাদান যেমন আমিষ,ভিটামিন এবং খনিজ।কলায় অনেক ক্যালরি রয়েছে। যেকোনো তাজা ফলের তুলনায় কলায় যেকোন খাদ্য উপাদান এবং পানিজাতীয় উপাদানের সমন্বয় বেশি।

১০০ গ্রাম পরিমাণ কলার খাদ্যগুণ

পানি:৭০.১%

আমিষ:১.২%

ফ্যাট:০.৩%

খনিজ লবণ :০.৮%

আশঁ:০.৪%

শর্করা:৭.২%

ক্যালসিয়াম:৮৫ মিলিগ্রাম

ফসফরাস:৫০ মিলিগ্রাম

আয়রণ:০.৬ মিলিগ্রাম

ভিটামিন বি:৮ মিলিগ্রাম

এছাড়া ভিটামিন সি ও রয়েছে।

অতিরিক্ত পাকা কলায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। যা শীরের রোগ প্রতিরোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।এছাড়া কলা শরীরে শক্তি যোগায় এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।এবারে জানা যাক কলার বিস্তারিত গুণাগুণঃ

কর্মশক্তি যোগায়

কলার মধ্যে প্রাকৃতিক চিনির মিশ্রণ ফ্রুক্টোজ,গ্লুকোজ এবং সুক্রোজ থকে যা রক্তের শর্করার মাত্রা বজায় রাখে এবং কর্মশক্তির যোগান দেয়।প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রাখুন কলা এবং যখন ঘেমে গিয়ে দূর্বল হয়ে যাবেন তখন কলা খাবেন।দেখবেন শরীরে শক্তি পাবেন।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

কলা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।কলা দ্রুত হজমে সাহায্য করে।প্রতিদিন দুইটি কলা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে এবং হজমেও সাহায্য করবে।

উচ্চ রক্তচাপ কমায়

কলায় বিদ্যমান পটাশিয়াম ও সোডিয়াম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এছাড়া হৃদরোগ ও স্ট্রোক প্রতিরোধে কলা সহায়তা করে। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে প্রতিদিন কলা খেতে পারেন।

রক্তস্বল্পতা দূর করতে

কলায় বিদ্যমান আয়রন কোষে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় রক্তস্বল্পতা দূর করে এবং অ্যানিমিয়ার সম্ভাবনা কমায়।

শরীরে প্রোবায়টিকের যোগান দেয়

কলা প্রোবায়োটিক এর একটি অন্যতম প্রাকৃতিক উৎস। এতে রয়েছে ফ্রুক্টোওলিগোস্যাকারাইড(FOS) যা দেহে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি করে।অন্ত্রের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রোবায়টিক গ্রহণ করা প্রয়োজন।

দুশ্চিতা দূর করে

কলা মানসিক চাপ কমাতে এবং একই সাথে মানসিক দক্ষতা বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে।তাই কোনো গুরুত্বপূর্ণ বা স্ট্রেসফুল কাজের পূর্বে কলা খেলে উপকার পাবেন।

ঘুমের জন্য সহায়ক

কলায় বিদ্যমান ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামিনো এসিড থাকে যা সেরাটোনিন নামক হরমোন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এই হরমোনটি ঘুমের জন্য সহায়ক।

স্নায়ুকে শান্ত করে

কলায় প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে যা স্নায়ুকে শান্ত করতে সাহায্য করে।কলায় বিদ্যমান ভিটামিন বি স্নায়ুকে শান্ত রাখে।

পরিশ্রম  ব্যায়ামে শক্তি যোগায়

অনেক বেশি শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করলে শরীর অনেক দুর্বল হয়ে যায় এক্ষেত্রে কলা শরীরে শক্তি যোগায়। পেশি, লিগামেন্ট ও রগ শক্তিশালী করে তোলে।তাই কোনো শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করার পূর্বে কলা খাওয়া অনেক উপকারী।

ওজন কমাতে সাহায্য করে

কলা ওজন কমাতে সাহায্য করে। অধিক ক্যালরি সম্পন্ন খাবারের পরিবর্তে কলা খেলে দ্রুত ওজন কমে যেতে সাহায্য করবে। মাঝারি আকৃতির একটি কলায় মাত্র ১০৫ ক্যালরি থাকে।এছাড়া কলায় বিদ্যমান ক্রোমিয়াম নামক খনিজ পদার্থ বিপাক প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে।

ধূমপান ছাড়তে সহায়তা করে

আপনি যদি বেশি ধূমপানে আসক্ত হয়ে থাকেন এবং ধূমপান ছাড়তে চান তাহলে বেশি বেশি কলা খান। কারণ কলায় বিদ্যমান ভিটামিন বি৬ বি১২,পটাসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম শরীর থেকে নিকোটিনের প্রভাবে দূর করতে সহায়তা করে।হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।এছাড়া কলা মাথা ব্যথা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কলা বহুগুণে সমৃদ্ধ একটি ফল।বিদেশি দামী ফলের দিকে না ঝুকে কম দামে দেশি ফল খাওয়া ভালো।তাই শরীর সুস্থ রাখতে প্রতিদিন ছোট বড় সকলেরই কলা খাওয়া উচিত।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *