লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (ল্যান / LAN) কি? এর বৈশিষ্ট্য / সুবিধা ও প্রকারভেদ

কম্পিউটার নেটওয়ার্কের কথা বলতে গেলে সবথেকে বেশি লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক এর নাম আসে। এর ব্যবহার অনেক। ল্যান / LAN এর পূর্ণরূপ হলো – লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বা Local Area Network. লোকাল শব্দটির অর্থ স্থানীয়। একারণে কোন একটি স্থানের কিছু ইলেকট্রনিক ডিভাইসকে একত্রিত করে গড়ে উঠা নেটওয়ার্ককে লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বলা হয়। এই ডিভাইসগুলো হতে পারে কিছু কম্পিউটার, কিছু ফোন বা কিছু প্রিন্টার।

পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক ১/২ জন ব্যবহার করতে পারলেও লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি আরো বেশি। একের অধিক লোকের কাজের সমন্বয় সাধন ও গতি বৃদ্ধির জন্য একই বিল্ডিং এর এক তলা থেকে অন্য তলায়, পাশাপাশি বিল্ডিং এ বা একই এলাকার কম্পিউটারগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করাকে স্থানীয় অঞ্চলের নেটওয়ার্ক বা লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বা সংক্ষেপে ল্যান / LAN বলা হয়। এটি একটি একক নেটওয়ার্ক।

ছোট বা মাঝারি অফিসের কম্পিউটার, প্রিন্টার,মডেম, স্ক্যানার ইত্যাদি ডিভাইসের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে এই নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়। তবে এক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে কম্পিউটারগুলো থাকতে হবে। এর বিস্তৃতি প্যান থেকে বড় হলেও CAN ও WAN এর তুলনায় কম।

একটি নির্দিষ্ট জায়গা কেন্দ্র করে LAN তৈরি করা হয় বলেই একে স্থানীয় বা লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বলে। এর বিস্তৃতি কম হলেও রিপিটার ব্যবহার করে এর বিস্তৃতি ১ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ানো যায়। এ নেটওয়ার্ক তৈরির জন্য ট্রান্সমিশন মিডিয়া হিসেবে টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল, কো-এক্সিয়াল ক্যাবল, অপটিকাল ফাইবার ক্যাবল, রেডিও ওয়েভ ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। কম্পিউটারগুলোকে সংযোগ করে নেটওয়ার্ক তৈরির জন্য যেসব ক্যাবল ব্যবহার করা হয় তাকে ট্রান্সমিশন মিডিয়া বলে।

লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কের (ল্যান / LAN) বৈশিষ্ট্য / সুবিধা

  • বর্তমানে এর মাধ্যমে সেকেন্ডে সর্বোচ্চ ১ জিবি পর্যন্ত গতিতে তথ্য আদান-প্রদান করা যায়। তবে সাধারণ গতি 10 – 100 Mbps পর্যন্ত হয়।
  • সীমিত দূরত্বের মধ্যে এর কার্যক্রম সীমাবদ্ধ।
  • শ্রেণী সংযোগের মাধ্যমে কম্পিউটারগুলো সংযুক্ত হয়।
  • ছোট এলাকার মধ্যে এই নেটওয়ার্ক সহজেই তৈরি করা যায়।
  • বিভিন্ন অফিসের কাজে নেটওয়ার্ক তৈরির জন্য ল্যান সবচেয়ে ভালো।
  • নেটওয়ার্ক স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ সহজ।
  • খরচ কম হয়।
  • ব্যবহার করা সহজ।
  • অনেক ডিভাইসে অ্যাকসেস পাওয়া যায়।
  • রিপিটার, হাব, নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড ব্যবহার করে নেটওয়ার্কের কার্যক্ষমতা বাড়ানো যায়।
  • এ নেটওয়ার্কে কম্পিউটারসমূহ তার বা তারবিহীন সংযোগ প্রদান করা যায়।

লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কের (ল্যান / LAN) প্রকারভেদ

নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ কাঠামো ও সার্ভিস প্রদানের ধরণের উপর ভিত্তি করে লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ

  • ক্লায়েন্ট সার্ভার নেটওয়ার্ক (Client Server Network)
  • পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্ক (Peer to Peer Network)
  • মিশ্র বা হাইব্রিড নেটওয়ার্ক (Hybrid Network)

ক্লায়েন্ট সার্ভার নেটওয়ার্ক (Client Server Network)

একাধিক ডেডিকেটেড সার্ভারের সমন্বয়ে এ ধরনের নেটওয়ার্ক গঠিত হয়। এ ডেডিকেটেড সার্ভার ক্লায়েন্ট পিসির জন্য প্রয়োজনীয় সার্ভিস প্রদান করে। সার্ভিসের আওতায় যা থাকে তা হলো ফাইল,প্রিন্ট মেসেজ,ডাটাবেজ, অ্যাপ্লিকেশন ইত্যাদি।

পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্ক (Peer to Peer Network)

এ ধরণেরর নেটওয়ার্ক প্রতিটি পিসি রিসোর্স শেয়ারিং এর ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। এখানে কোন ডেডিকেটেড সার্ভার থাকেনা, ফলে এখানে পিসি গুলোর মধ্যে গুরুত্বের দিক থেকে কোন শ্রেণীবিন্যাস নেই। প্রত্যেকটি আলাদা আলাদা পিসি তার নিরাপত্তা বিধানে নিজেই দায়ী থাকে।

মিশ্র বা হাইব্রিড নেটওয়ার্ক (Hybrid Network)

মিশ্র বা হাইব্রিড নেটওয়ার্ক মূলত ক্লায়েন্ট সার্ভার ও পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্ক এর সমন্বয়ে গঠিত। সাধারণত এই নেটওয়ার্কে ক্লায়েন্ট সার্ভার অংশের প্রাধান্য বেশি থাকে। এর পাশাপাশি এখানে অল্প পরিসরে পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্ক এর অংশ জোড়া দেওয়া হয়ে থাকে। এ প্রক্রিয়ায় কম্পিউটার নোডগুলোকে সরাসরি কেন্দ্রীয় কম্পিউটারের সাথে যুক্ত না করে বিশেষ স্থানে স্থাপন করা হয় এবং তারপর গতিশীল সংযোগ পথ দ্বারা সংযুক্ত করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *