Blog
1 min read

ইভিএম কি? ইভিএম কিভাবে কাজ করে?

মত প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হলো ভোট। বর্তমান বিশ্বে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোট প্রয়োগ বা ভোটারদের মতামত প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হলো ইভিএম। কিন্তু অনেকে জানেনা ইভিএম কি? ইভিএম কিভাবে কাজ করে? চলুন তাহলে জেনে নেই –

ইভিএম কি?

ইভিএম এর পূর্ণরূপ হল ইলেকট্রনিক ভোটিং। ভোট প্রয়োগে মেশিন বা ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় বিধায় সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম নামে পরিচিত। একে ই-ভোটিং ও বলা হয়। নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আরো গ্রহণযোগ্য, সহজ, কার্যকরী ও স্বচ্ছ করার লক্ষ্যেই সারাবিশ্বে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের প্রচলন শুরু হয়েছে।

একটি মেশিনে প্রায় 4000 পর্যন্ত ভোট দেওয়া যায়। সর্বোচ্চ 64 জন প্রার্থীর তালিকা থাকে। এই মেশিনের মাধ্যমে বাটন চাপ দিয়ে অশিক্ষিত লোকও ভোট দিতে পারে। একটি ভোট দিতে মাত্র 14 সেকেন্ড সময় লাগে।

এর অন্যতম একটি সুবিধা হচ্ছে একজন ভোটার কোনভাবেই একটির বেশি ভোট দিতে পারে না। সাধারণ ব্যালট ভোটের মতোই নির্বাচন কেন্দ্রে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর পক্ষে পোলিং এজেন্টরা, নেতাকর্মীরাসহ আরো অনেক পর্যবেক্ষকরা থাকে।এ মেশিনটিতে একটি পূর্ব প্রোগ্রামিং করা মাইক্রোচিপ থাকে যা প্রতিটি ভোটের ফলাফল তাৎক্ষণিকভাবে হিসেব করে প্রদর্শন করে।

ব্যালট পেপারে সিল মারার পরিবর্তে এ মেশিনের মাধ্যমে ভোটাররা নিজেদের ইচ্ছে অনুযায়ী প্রতীকের পাশে সুইচ টিপে ভোট দিতে পারে। প্রত্যেকটি বুথে একটি করে ইভিএম এর প্রয়োজন হয়। এটি কয়েকটি ইউনিটে ভাগ করা থাকে। এগুলো হলো –

  • ব্যালট ইউনিট
  • কন্ট্রোল ইউনিট
  • ডিসপ্লে ইউনিট
  • ব্যাটারি ইউনিট
  • স্মার্ট কার্ড ও মাস্টার কার্ড

ব্যালট ইউনিট: এটি বুথের ভিতরে থাকে। এর মাধ্যমে ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন ।

কন্ট্রোল ইউনিট: এ ইউনিটটি সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের সামনের টেবিলে থাকে।

ডিসপ্লে ইউনিট: ইভিএমের সাথে একটা বড় ডিসপ্লে ইউনিট রাখা থাকে। এটি এমন জায়গায় রাখা হয় যাতে বুথের ভেতর ভোট সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টিগোচর হয়।

ব্যাটারি ইউনিট: ইভিএম মেশিন চালাতে প্রয়োজন হয় 12 ভোল্টের একটি ব্যাটারি। ব্যাটারির সাহায্যে মেশিনটি সারাদিন চলতে পারে এতে বাড়তি কোনো বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় না ।

স্মার্ট কার্ড ও মাস্টার কার্ড: ইভিএম মেশিন পরিচালনা করার জন্য সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারকে একটি করে স্মার্ট কার্ড ভিত্তিক আইডি কার্ড দেওয়া হয়। এ কার্ড ছাড়া কন্ট্রোল ইউনিট পরিচালনা করা সম্ভভ হয় না।

ইভিএম কিভাবে কাজ করে?

ভোটকেন্দ্রে ইভিএম মেশিন ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও ইন্টারনেট, ব্যক্তিগত কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, টেলিফোন ব্যবহার করেও ই- ভোটিং প্রয়োগ করা সম্ভব। নতুনতর অপটিক্যাল স্ক্যান ভোটিং পদ্ধতিতে পাঞ্চকার্ড, অপটিক্যাল স্ক্যানার ব্যবহৃত হয়। এ পদ্ধতিতে একজন প্রার্থী ব্যালট পেপার কে চিহ্নিত করে ভোট প্রদান করে।

আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে ডিআরই। এ ভোটিং পদ্ধতিতে একটি মাত্র মেশিনের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ ও গণনা কাজ করা হয়। ভারত ও ব্রাজিলের সব ধরনের নির্বাচনে এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও ভেনিজুয়েলা এবং যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপকভাবে ডিআরই ভোটিং পদ্ধতির প্রচলন রয়েছে।

নির্বাচন কেন্দ্রে একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে ইভিএমের কন্ট্রোল ইউনিট থাকে। এর সম্মুখে থাকে ডিজিটাল ডিসপ্লে। আর বিপরীত দিকে থাকে স্টার্ট সুইচ,ব্যালট নামক সুইচ,মেমোরি রিসেট সুইচ,ফাইনাল রেজাল্ট সুইচ এবং ক্লোজ বাটন সহ আরো অনেক সুইট রয়েছে। ভোট প্রক্রিয়া শুরু করতে স্টার সুইচ চাপতে হয়।

এরপর ব্যালট সুইচ চেপে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ভোটারকে ভোট দিতে বুথে পাঠান। এ সুইচটি চাপলে বুথের মধ্যে থাকা ইভিএম এর অপর অংশ ব্যালট ইউনিটটি একটি ভোট দেওয়ার জন্য কার্যকর হয় ভোট দেয়ার সাথে সাথে এটি আবার অকার্যকর হয়ে যায়। যতক্ষণ না কন্ট্রোল ইউনিট এর ব্যালট সুইচ চাপা হচ্ছে।

ভোটদান শেষ হলে ভোটার বেরিয়ে আসলে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার পুনরায় ব্যালট সুইচ চেপে ব্যালট ইউনিটটি কার্যকর করেন। এভাবে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হলে ক্লোজ সুইচটি চাপলেই ভোট কার্যক্রম একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে। এরপর ফাইনাল রেজাল্ট সুইচটি কার্যকর হবে।

এটি এক এক করে চাপলে ব্যালট ইউনিটে সাজানো ক্রমানুসারে একের পর এক প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা বেরিয়ে আসে। ইভিএম এর অপর অংশ ইউনিটটি রাখা হয় বুথের ভেতর। ভোটার ঢুকে দেখবে যে ব্যালট ইউনিটের নিচের দিকে একটি সবুজ বাতি জ্বলছে।

অর্থাৎ আপনার ভোট দিন । ব্যালট ইউনিটের ওপর প্রার্থীর নাম ও প্রতীক সাজানো থাকে। প্রত্যেকটা প্রতীকের পাশেই একটি করে সুইচ থাকে। ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রতীকটির পাশের সুইচে চাপবে। সেখানে চাপার পর ভোটার ব্যালট ইউনিটের নিচের দিকে থাকা লালবাতিটি জ্বলতে দেখবেন।

অর্থাৎ, তার ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। নতুন ভোটটি দেওয়া হলে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের সামনে রাখা কন্ট্রোল ইউনিট এর সামনের ডিসপ্লেতে একটি ভোট যোগ হবে। এরপর তিনি আবার অন্য কাউকে ভোটদানের অনুমতি দিয়ে বুথে পাঠালে ভোটার গিয়ে ব্যালট ইউনিটের সবুজ বাতি জ্বলতে দেখবেন। এভাবেই চলতে থাকে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া।

ইভিএম এর সুবিধা

ইভিএম এর কয়েকটি সুবিধা হলো –

  • খরচ সাশ্রয় হয়।
  • একটি মেশিন দিয়েই চার-পাঁচটা নির্বাচন করা সম্ভব হয়।
  • এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোন ভোটারের ভোট বাতিল হয় না।
  • এটি ব্যবহারকালে ইলেকট্রিক শক খাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
  • একাধিক ভোট দেয়ার সুযোগ নেই।
  • কেন্দ্রে কোন গন্ডগোল হলে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার কন্ট্রোল ইউনিটের ক্লোজ বাটনটিতে চাপলেই দখলকারীরা কোন ভোট দিতে পারবে না।
  • দ্রুত ভোট গণনা করা যায় ইত্যাদি।

যেসব দেশ EVM তৈরি করে

বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ইভিএম মেশিন তৈরি করে থাকে। বাংলাদেশেও এটি তৈরি হয়। পাইল্যাব বাংলাদেশ নামে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ইভিএম মেশিন তৈরি করে। ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া প্রক্রিয়ার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ইভিএম প্রস্তুতকারী দেশসমূহের প্রতিষ্ঠান গুলোর তালিকা নিম্নে দেয়া হল-

  • ভারত ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড , ভারত।
  • ইলেকট্রনিক্স কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড, ভারত।
  • ডোমিনয়ন ভোটিং সিস্টেমস, কানাডা।
  • ইএসএন্ডএস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
  • হার্ট ইন্টারসিভিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
  • নেড্যাপ,নেদারল্যান্ডস।
  • প্রিমিয়ারে ইলেকশন সলিউশনস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
  • সিকোইয়া ভোটিং সিস্টেমস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
  • টিএম টেকনোলজিস ইলেকশন ইনকর্পোরেশন, কানাডা।
  • এগুলো ছাড়াও আকুপোল,ইউনিল্যাক ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন প্রস্তুতকারক হিসেবে খ্যাত।
Rate this post