Modal Ad Example
পড়াশোনা

ইলেকট্রিক সার্কিট কি? সার্কিট সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

1 min read

ইলেকট্রিক সার্কিট কি?

যার মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হতে পারে তাকে সার্কিট বলে অর্থাৎ কারেন্ট চলার সম্পূর্ণ পথকেই ইলেকট্রিক সার্কিট বা বর্তনী বলে। এটিকে অন্যভাবে বলা যায়, সার্কিট বা বর্তনী হল বিদ্যুৎ এর উৎস, পরিবাহী, নিয়ন্ত্রন যন্ত্র, ব্যবহারযন্ত্র, রক্ষণযন্ত্রের সমন্বয়ে গঠিত এমন একটি পথ যার মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হতে পারে।

ইলেকট্রিক সার্কিটের উপাদান সমূহ

একটি আদর্শ সার্কিটের পাঁচটি প্রয়োজনীয় উপাদান থাকে। যেমন–

১. বিদ্যুতের উৎসঃ যেমন- ব্যাটারি, জেনারেটর ইত্যাদি।

২. পরিবাহীঃ যেমন- তামা বা অ্যালুমিনিয়ামের তার ইত্যাদি।

৩. নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রঃ যেমন-সুইচ, রিলে, সকেট ইত্যাদি।

৪. ব্যবহার যন্ত্রঃ যেমন-বাতি, পাখা, মােটর ইত্যাদি।

৫. রক্ষণ যন্ত্রঃ যেমন-ফিউজ, সার্কিট ব্রেকার ইত্যাদি।

ইলেকট্রিক সার্কিটের প্রকারভেদ

বৈদ্যুতিক লোডের উপর ভিত্তি করে সার্কিট ৩ প্রকার। যথা-

  • ওপেন সার্কিট (Open Circuit)
  • ক্লোজ সার্কিট (Closed Circuit)
  • শর্ট সার্কিট (Short Circuit)

সংযোগের উপর ভিত্তি করে সার্কিট ৩ প্রকার। যথা-

  • সিরিজ সার্কিট (Series Circuit)
  • প্যারালাল সার্কিট (Parallel Circuit)
  • মিশ্র সার্কিট (Mixed Circuit)

উৎসের উপর ভিত্তি করে সার্কিট ২ প্রকার। যথা-

  • এসি সার্কিট (AC Circuit)
  • ডিসি সার্কিট (DC Circuit)

ওপেন সার্কিট (Open Circuit)

যদি কোনো সার্কিটের অংশ বিযুক্ত বা খোলা থাকে এবং ঐ অংশে কোনো কারেন্ট প্রবাহিত না হয়, তবে তাকে ওপেন সার্কিট বলে। এটি এক জায়গায় চার্জ রাখতে ব্যবহার করা যেতে পারে অর্থাৎ এটিকে প্রবাহিত হতে না দেওয়া, যেমন ব্যাটারি বা পাওয়ার ব্যাংককে সার্কিটে রাখার মতো, তবে এটি মূল সার্কিটের সাথে সংযোগযুক্ত রাখার মতো।

ওপেন সার্কিটের ব্যবহার

ওপেন সার্কিটের সাধারণ ব্যবহার হল কোন কিছু বন্ধ করা। ফলে সার্কিটের মধ্য দিয়ে কোন কারেন্ট প্রবাহিত হয় না এবং কাজ করা নিরাপদ। বিংশ শতাব্দীর “পুরানো দিনগুলোতে” কেবল কিছু বন্ধ করাই একমাত্র উপায় ছিল কিন্তু এখন অনেকগুলো ডিভাইস (টিভি, কম্পিউটার) বন্ধ করার জন্য একটি সত্যিকারের ওপেন সার্কিট ব্যবহার না করে বরং তার পরিবর্তে অল্প-কারেন্ট/শক্তি ব্যবহার করে কন্ট্রোলার ব্যবহার করা হয়। যেমন রিমোট কন্ট্রোল।

ক্লোজ সার্কিট (Closed Circuit)

যে সার্কিট শর্ট সার্কিট বা ওপেন সার্কিট নেই অর্থাৎ একটি আদর্শ সার্কিটকে ক্লোজড সার্কিট বলে। কারেন্ট চলাচলের সম্পূর্ণ পথকেই ক্লোজড সার্কিট বলে। ক্লোজ সার্কিটে কারেন্ট কোন প্রকার সমস্যা ছাড়া ধারাবাহিকভাবে প্রবাহিত হতে পারে। অর্থাৎ এটি ওপেন সার্কিট যেমন খোলা থাকে যেখানে কারেন্ট ফ্লো হতে পারেনা, কিন্তু ক্লোজ সার্কিট হলো বন্ধ সার্কিট যেখানে কারেন্ট প্রবাহিত হতে পারে। ফলে লোড সচল থাকে।

ক্লোজ সার্কিটের ব্যবহার

একটি ক্লোজ সার্কিট এমন একটি সার্কিট যা সম্পূর্ণ, পুরোপুরি কারেন্ট প্রবাহিত করতে পারে। আমাদের ব্যবহৃত একটি সাধারণ টচ-লাইট থেকে শুরু করে মোবাইল, টিভি, কম্পিউটার এবং ল্যাপটপ সহ সবকিছুতেই ক্লোজ সার্কিট এর ব্যবহার করা হয়।

শর্ট সার্কিট (Short Circuit)

যদি কোনো কারণে কোনাে সার্কিটের মধ্যবর্তী এক বা একাধিক অংশ শর্ট হয়ে যায়, যাতে কারেন্ট কোনাে লােড বা রেজিস্টরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত না হয়ে সরাসরি প্রবাহিত হয়, তবে এ প্রকার সার্কিটকে শর্ট সার্কিট বলে। মূলত ওপেন সার্কিট বা খোলা বর্তনীর বিপরীত হলো শর্ট সার্কিট, যেখানে বর্তনীর দুটি বিন্দুর মধ্যে কোন প্রকার রোধ-ই নাই। সাধারণভাবে অনেকেই সত্যিকার কারণ না জেনে, যেকোনো ধরনের বৈদ্যুতিক ত্রুটিকে ঢালাওভাবে শর্ট-সার্কিট বলে আখ্যায়িত করে থাকে। শর্ট সার্কিট এর মধ্য দিয়ে অতিরিক্ত কারেন্ট প্রবাহিত হতে পারে ফলে তাপ বা তড়িতের ফুলকি সৃষ্টি করতে পারে।

শর্ট সার্কিটের ব্যবহার

  • বিভিন্ন বৈদ্যুতিক মেশিনের (যেমনঃ ট্রান্সফরমার) ডিজাইনে শর্ট সার্কিট ব্যবহার করা হয়।
  • বৈদ্যুতিক মেশিনের রেটিং, ভোল্টেজ রেগুলেশন ইত্যাদি কাজের জন্য শর্ট সার্কিট পরীক্ষা করা হয়ে থাকে।
  • যন্ত্রের তূল্য বর্তনী নির্ণয়ের কাজেও শর্ট সার্কিট পরীক্ষার করা হয়।
  • শর্ট সার্কিট প্রক্রিয়া ব্যবহার করে আর্ক ওয়েল্ডিং করা হয়ে থাকে।

সিরিজ সার্কিট (Series Circuit)

যে সার্কিটের মধ্য দিয়ে শুধু কারেন্ট এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে প্রবাহিত হয় এবং যাতে কম্পােনেন্টসমূহ সিরিজে যুক্ত থাকে, তাকে সিরিজ সার্কিট বলে।

সিরিজ সার্কিটের বৈশিষ্ট্য

  • একটিমাত্র পথে কারেন্ট প্রবাহিত হয়।
  • কম্পােনেন্ট সমূহ সিরিজে যুক্ত থাকে।
  • ভােল্টেজ প্রতিটি লােডে বিভক্ত হয়।
  • সার্কিটের মােট রেজিস্ট্যান্স আলাদা আলাদাভাবে প্রতিটি রেজিস্ট্যান্সের যোগফলের সমান।
  • সার্কিটের মােট ভােল্টেজ তাদের আলাদা আলাদা রেজিস্ট্যান্সের মধ্যকার ভােল্টেজ ড্রপের যােগফলের সমান।
  • সিরিজ সার্কিটের মােট রেজিস্ট্যান্স, Rs= R1 + R2 + R3 +………ohm

সিরিজ সার্কিটের ব্যবহার

  • বাসা-বাড়িতে এবং ছোট-খাটো অফিস-আদালতে সিরিজ সার্কিট ব্যবহার করা হয়।
  • সিরিজ সার্কিট বিভিন্ন আলোক সজ্জায় ব্যাবহার করা হয়।
  • ভোল্টমিটারের সাথে মালটিপ্লায়ার হিসেবে সিরিজ সার্কিট ব্যাবহার করা হয়।
  • বৈদ্যুতিক মোটর, জেনারেটর প্রভৃতি কয়েলসমূহে সিরিজ সংযোগ ব্যবহার করা হয়।
  • টর্চলাইট রেডিও, গাড়ি ইত্যাদির ব্যটারিতে কারেন্ট নিয়ন্ত্রণের জন্য সিরিজ সার্কিট ব্যবহার করা হয়।

সিরিজ সার্কিটের সুবিধা ও অসুবিধাসমুহ

সিরিজ সার্কিটের সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশি-

  • সিরিজ সার্কিটে বিদ্যুৎ চলার একটি মাত্র পথ থাকে।
  • প্রতিটি লোডকে একটি মাত্র সুইচ দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
  • সিরিজ সার্কিটের কোন লোডের একটি ফিউজ হয়ে গেলে বাকিগুলো কাজ করা বন্ধ করে দেয়।
  • সিরিজ সার্কিটে বাতি গুলো মৃদু ভাবে জ্বলে।
  • সিরিজ সার্কিটের বিদ্যুৎ স্থির থাকে।
  • সিরিজ সার্কিটের সকল লোডে সমপরিমাণ বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়।
  • সিরিজ সার্কিটে ভোল্টেজ ভাগ হয়ে যায়।
  • সিরিজ সার্কিটে রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি পায়।

প্যারালাল সার্কিট (Parallel Circuit)

যে সার্কিটে কারেন্ট একাধিক পথের মাধ্যমে এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে গমন করে এবং যাতে সকল অংশে ভােল্টেজ সমান থাকে, তাকে প্যারালাল সার্কিট বলে।

প্যারালাল সার্কিটের বৈশিষ্ট্য

  • বিদ্যুৎ প্রবাহের একাধিক পথ থাকে। [I = i1 + i2 + i3]
  • সার্কিটে মােট কারেন্ট আলাদা আলাদাভাবে শাখা কারেন্টের যােগফলের সমান।
  • সার্কিটের সকল রেজিস্টরের ভােল্টেজ ড্রপের পরিমাণ একই।
  • সার্কিটের মােট রেজিস্ট্যান্স তার শাখাসমূহের রেজিস্ট্যান্সের ব্যস্তানুপাতিক মানের যােগফলের সমান
  • প্যারালাল সার্কিটের মােট রেজিস্ট্যান্স, 1/Rp = 1/R1 + 1/R2 + 1/R3 +……….ohm.

প্যারালাল সার্কিটের ব্যবহার

সাধারণত আবাসিক এলাকা, অফিস-আদালত, কল-কারখানা , রাস্তার লাইট ও খেলার মাঠে ব্যবহৃত একাধিক বাতিকে আলাদাভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্যারালাল সার্কিট ব্যবহার করা হয়। তাছাড়াও বিদ্যুৎ সরবরাহ ও বিতরণ ব্যবস্থায় প্যারালাল সার্কিট ব্যবহার করা হয়

প্যারালাল সার্কিটের সুবিধা ও অসুবিধাসমুহ

  • প্যারালাল সার্কিটে বিদ্যুৎ চলার একাধিক পথ থাকে।
  • প্রতিটি লোড কে আলাদা আলাদা সুইচ দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
  • বাতিগুলো উজ্বল ও নিজস্ব ক্ষমতায় জ্বলে।
  • একটি বাতি নষ্ট হলে অপর বাতি গুলো জ্বলে।
  • প্যারালাল সার্কিটে কারেন্ট ভাগ হয়ে যায়।
  • প্যারালাল সার্কিটে ভোল্টেজ সমান থাকে।
  • প্যারালাল সার্কিটে সকল লোডের রেজিস্ট্যান্স কমে যায়।

মিশ্র সার্কিট বা সিরিজ-প্যারালাল সার্কিট (Mixed Circuit)

যে সার্কিটে লােডসমূহের কিছু অংশ সিরিজে এবং কিছু অংশ প্যারালালে যুক্ত থাকে এবং যাতে মােট কারেন্ট আলাদা আলাদা কারেন্টসমূহের যােগফলের সমান, এ প্রকার সার্কিটকে সিরিজ-প্যারালাল সার্কিট বা মিশ্র সার্কিট বলে।

মিশ্র সার্কিটের বৈশিষ্ট্য

মিশ্র সার্কিটের বৈশিষ্ট্যসমূহ হলো-

  • এ প্রকার সার্কিটে রেজিস্টরসমূহ সিরিজে এবং প্যারালালে যুক্ত থাকে।
  • সিরিজ অংশে কারেন্ট একই থাকে।
  • প্যারালাল অংশে ভােল্টেজ একই থাকে।
  • মােট কারেন্ট প্রবাহ আলাদা আলাদা শাখা কারেন্টের যােগফলের সমান।
  • সার্কিটের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন মানের রেজিস্টরের জন্য বিভিন্ন মানের ভােল্টেজ পাওয়া যায়।

মিশ্র সার্কিটের ব্যবহার

যেহেতু সিরিজ এবং প্যারালাল সার্কিট মিলে মিশ্র সার্কিট (সিরিজ + প্যারালাল = মিশ্র সার্কিট) তৈরি হয়, তাই সিরিজ এবং প্যারাল উভয় সার্কিটের বৈশিষ্ট্য এবং ব্যবহারই মিশ্র সার্কিটে রয়েছে। মিশ্র সার্কিটের যে অংশে সিরিজ সংযোগ সে অংশে সিরিজ সার্কিটের সকল বৈশিষ্ট্য এবং যে অংশে প্যারালাল সংযোগ সে অংশে প্যারালাল সার্কিটের বৈশিষ্ট্য সমূহ বিদ্যমান। সাধারণত জটিল স্থান সমূহে মিশ্র সার্কিটের ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ যেসকল স্থানে শুধু মাত্র সিরিজ বা প্যারালাল সংযোগে কাজ হয় না, সেসকল স্থানে মিশ্র সার্কিট সংযোগ ব্যবহার করা হয়।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

Leave a Comment

x