ইলেকট্রন বিন্যাস কি? ইলেকট্রন বিন্যাস লেখার নিয়ম
আজকে আমরা ইলেকট্রন বিন্যাস কি? ইলেকট্রন বিন্যাস লেখার নিয়ম সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব।
ইলেক্ট্রন বিন্যাস হল কোন অণু, পরমাণু বা অন্য কোন বস্তুতে ইলেক্ট্রনের বিন্যাস বা সজ্জা। ইলেক্ট্রন সবসময় যে নির্দিষ্ট সম্ভাব্য এলাকা জুড়ে পরিভ্রমণ করে তাকে অর্বিটাল বলা হয়ে থাকে।
এই অর্বিটালগুলোর নির্দিষ্ট আকৃতিও রয়েছে। অর্বিটালগুলোর আকৃতি এবং ইলেক্ট্রন ধারণক্ষমতা অর্থাৎ অরিবিটালটি কি পরিমাণ ইলেকট্রন ধারণ করতে পারবে তা নির্ভর করে নিউক্লিয়াস থেকে অর্বিটালের দূরত্বের উপর।
প্রতিটি অর্বিটালের সর্বোচ্চ ইলেক্ট্রন ধারণক্ষমতা নির্দিষ্ট থাকে। এর বেশি ইলেকট্রন সে কখনো ধারণ করতে পারেনা। অণু বা পরমাণুর কোন একটি অর্বিটালে ঠিক কতটি করে ইলেক্ট্রন অবস্থান করবে তা আউফবাউ নীতি অনুযায়ী নির্ধারিত হয়।
কোন অণু বা পরমাণুর অর্বিটালগুলোতে কতটি করে ইলেক্ট্রন রয়েছে বিশেষ উপায়ে তার প্রকাশিত রূপই হচ্ছে ইলেক্ট্রন বিন্যাস। পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাসের উপরে ঐ পরমাণুর যোজনী নির্ভর করে। ইলেক্ট্রন বিন্যাসের বৈশিষ্ট্যের উপরে দাঁড়িয়ে আছে সমযোজী বন্ধনের ভিত্তি।
ইলেকট্রন বিন্যাস কি? কাকে বলে?
ইলেকট্রন বিন্যাসঃ কোন পরমাণুর ইলেকট্রন তার বিভিন্ন শক্তিস্তরে কিভাবে বিন্যস্ত থাকে তার প্রকাশকেই ইলেকট্রন বিন্যাস বলে।
ইলেকট্রন বিন্যাসের মূল বক্তব্য বোর পরমাণু মডেলের তত্ত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত। ইলেকট্রন বিন্যাসের মূল বক্তব্য হলো-
- প্রতিটি পরমাণুতে একাধিক প্রধান শক্তিস্তর বিদ্যমান থাকবে। প্রত্যেক প্রধান শক্তিস্তর একটি সংখ্যা ‘n’ দ্বারা চিহ্নিত হয়। n এর মান সবসময় পূর্ণসংখ্যা হয়। যেমন, n=1,2,3……
- যে শক্তিস্তরটি নিউক্লিয়াসের খুব কাছাকাছি থাকে সেই শক্তিস্তরটি সবচেয়ে কম শক্তি সম্পন্ন হয়। অর্থাৎ, নিউক্লিয়াস থেকে শক্তিস্তরের দূরত্ব যত বাড়ে শক্তিস্তর ততো বেশি শক্তি সম্পন্ন হয়। ইলেকট্রন সাধারণত কম শক্তিসম্পন্ন স্তরে আগে প্রবেশ করে।
- অর্বিটালের আকৃতি এবং ইলেক্ট্রন ধারণক্ষমতাকে যথাক্রমে ইংরেজি বর্ণ s, p, d, f দ্বারা নির্দেশ করা হয়। এছাড়াও g, h এবং i বর্ণ দিয়েও নির্দেশ করার বিধান রয়েছে তবে এখনও পর্যন্ত এগুলো ব্যবহারের প্রয়োজন পড়েনি। প্রতিটি অর্বিটালের শক্তিমাত্রা নির্দিষ্ট। ইলেক্ট্রন এক শক্তিমাত্রার অর্বিটাল থেকে অন্য শক্তিমাত্রার অর্বিটালে চলে যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণ শক্তি গ্রহণ বা বর্জন করতে হয়।
ইলেকট্রন কি সে বিষয়ে আশা করি আমরা মোটামুটি একটা ধারণা পেয়েছি। এবার চলুন জেনে নেই কিভাবে ইলেকট্রন বিন্যাস করতে হয়?
ইলেকট্রন বিন্যাস লেখার নিয়ম
ইলেকট্রন বিন্যাস লেখার নিয়ম – কোন একটি পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাস করতে চাইলে আপনাকে প্রথমে পরমাণু্টির ইলেকট্রন সংখ্যা জানতে হবে। তারপর শক্তিস্তর ও উপশক্তিস্তর সম্বন্ধে ধারণা থাকতে হবে।
শক্তিস্তর সাধারণত ৭ টি। এগুলোকে উর্ধ্বক্রমাণুসারে K, L, M, N…. দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। ইলেকট্রন বিন্যাসের ক্ষেত্রে 1, 2, 3, 4…. হিসেবে লেখা হয়। অর্থাৎ, K=1, L=2, M=3, N=4 ইত্যাদি।
প্রতিটি শক্তিস্তরের জন্য আবার নির্দিষ্ট সংখ্যক উপস্তর রয়েছে। উপস্তর সাধারণত ৪ টি। এগুলো হল s p d ও f. এগুলোতে যথাক্রমে সর্বোচ্চ ২, ৬, ১০ ও ১৪ টি করে ইলেকট্রন থাকতে পারে।
এর মধ্যে ১ নং শক্তিস্তরে উপস্তর থাকে ১ টি, ২ নং শক্তিস্তরে উপস্তর থাকে ২ টি, ৩ নং শক্তিস্তরে উপস্তর থাকে ৩ টি এবং বাকিগুলোতে ৪ টি করে উপস্তর থাকে।
চলুন একটা উদাহরণের মাধ্যমে ইলেকট্রন বিন্যাস লেখার নিয়মটি আয়ত্ব করার চেষ্টা করি।
আমরা জানি, সালফার (S), এর ইলেকট্রন সংখ্যা ১৬ টি। তাহলে সালফার (S) এর ইলেকট্রন বিন্যাস হবেঃ 1s2 2s2 2p6 3s2 3p4
খেয়াল করে দেখুন, প্রথম শক্তিস্তর পূর্ণ করে ক্রমান্বয়ে ইলেকট্রন বিন্যাসিত হয়েছে।
প্রথম শক্তিস্তরে 2টি, দ্বিতীয় শক্তিস্তরে 2+6=8 টি , তৃতীয় শক্তিস্তরে 2+4 = 6 টি ইলেকট্রন রয়েছে। এখানে তৃতীয় শক্তিস্তরে 3p6 না হয়ে 3p4 হইছে, কারন সালফার পরমাণুতে মোট ইলেকট্রন সংখ্যা ছিলো ১৬ টি, তৃতীয় শেলের বা শক্তিস্তরের p উপস্তরের জন্য ৪ টি ইলেকট্রনই বাকি ছিলো। অর্থাৎ P উপস্তরে 4 টি ইলেকট্রন বসালেই সালফারের ইলেকট্রন বিন্যাস পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। তাই আর বাকি 2 টি ইলেকট্রন লাগেনি।
ইলেকট্রন প্রবেশের পূর্ণ ধারাটি হলো:
1s -> 2s -> 2p-> 3s-> 3p-> 4s-> 3d-> 4p-> 5s-> 4d-> 5p-> 6s-> 4f-> 5d-> 6p-> 7s-> 5f-> 6d.
ক্রমটি এমন উল্টোপাল্টা কেনো তা জানতে হলে আপনাকে হুন্ডের নীতি সম্পর্কে জানতে হবে। উপরোক্ত ধারা অনুসারেই ইলেকট্রন বিন্যাস করতে হবে। তবে বিন্যাস লেখার সময় অবশ্যই সিরিয়ালি লিখবেন।
আপনার সুবিদার্থে আরেকটি উদাহরণ দিলাম:
Sc (21) = 1s2 2s2 2p6 3s2 3p6 3d1 4s2
আমরা যদি একটানা ইলেকট্রন বসাতাম তাহলে 3d3 লিখলেই হতো, কিন্তু উপরের ধারা অনুযায়ী আগে 4s এ ইলেকট্রন প্রবেশ করে তারপর 3d তে এসেছে। আর এজন্যই 4s অরবিটাল পূর্ণ হয়ে বাকি ইলেকট্রন্গুলো 3d তে এসেছে।
তবে কিছু ব্যতিক্রমও আছে। কখনো যদি দেখেন শেষে 4s2 আর তার আগে 3d4 থাকে তাহলে 4s থেকে একটি ইলেকট্রন 3d তে পাঠিয়ে দিতে হবে। অর্থাৎ তখন 3d5 এবং 4s1 হবে। অর্থাৎ শেষ ও তার আগের স্তর অর্ধেক পূর্ণ করা সম্ভব হলে এরকমটা হবে।
শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “ইলেকট্রন বিন্যাস কি? ইলেকট্রন বিন্যাস লেখার নিয়ম” আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে, অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।