গড় কাকে বলে? গড় কত প্রকার ও কি কি?

গড় কাকে বলে? (What is called Mean or Average in Bengali/Bangla?)

একই জাতীয় একাধিক রাশির সমষ্টিকে রাশিগুলোর মোট সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে যে ভাগফল পাওয়া যায়, তাকে ঐ রাশিগুলোর গড় (Mean) বলে।

গড় হচ্ছে কোনো একটা সংখ্যা তালিকা বা রাশির সকল মানকে একটি একক মান হিসাবে প্রকাশ করে।

আবার কোনো তালিকার সব সংখ্যার মান যদি সমান হয় তাহলে সেই সংখ্যাটি গড়।

 

গড় সংজ্ঞা (Definition of Mean)

গড় বলতে আমরা এমন একটি প্রতিনিধিত্বকারী সংখ্যাকে বুঝি যা সংগৃহীত তথ্যের মধ্যবিন্দু বা কেন্দ্র বিন্দুতে অবস্থান করে। অর্থাৎ প্রাপ্ত তথ্যসমূহের যোগফকে তথ্য সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে যে মান পাওয়া যায় তাকে গড় বলে।

গড়ের প্রকারভেদ (Types of Mean)

গড় তিন প্রকার। যথা-

১) গাণিতিক গড় (Arithmetic Mean)

২) গুণিতক গড় (Geometric Mean)

৩) তরঙ্গ গড় (Harmonic Mean)

১) গাণিতিক গড় (Arithmetic Mean)

গণিতের সূত্র ব্যবহার করে গড় পরিমাপ করাকে গাণিতিক গড় বলে। এক্ষেত্রে গড় নির্ণয়ে প্রাপ্ত তথ্যকে সংখ্যা বানিয়ে গাণিতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়।

 

গাণিতিক গড়ের সুবিধা (Advantages of Arithmetic Mean)

  • গাণিতিক গড় সহজ পরিমাপক
  • অশ্রেণীকৃত তথ্য থেকে সহজে গাণিতিক গড় নির্ণয় করা যায়।
  • গাণিতিক গড় গাণিতিক ও বীজগাণিতিক প্রক্রিয়া আরোপের উপযোগী।
  • গাণিতিক গড়ের ব্যবহার সর্বাধিক।
  • নমুনার তারতম্য হলেও গাণিতিক গড় কম প্রভাবিত হয়।

 

গাণিতিক গড়ের অসুবিধা (Disadvantages of Arithmetic Mean)

  • গাণিতিক গড় অনুমানের উপর নির্ণয় করা যায় না।
  • যেসব তথ্য মান খুব বড় এবং খুব ছোট মিশ্রিত সেসব ক্ষেত্রে গাণিতিক গড় সঠিকভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না।
  • তথ্যসমূহের সীমারেখা জানা না থাকলে গড় নির্ণয় করা সম্ভব নয়।
  • গ্রাফের মাধ্যমে গাণিতিক গড় নির্ণয় করা যায় না।
  • গাণিতিক গড় এমন একটি সংখ্যা মান হতে পারে যা তথ্য সমূহে বিদ্যমান নয়।

 

গাণিতিক গড়ের ব্যবহার (Use of Arithmetic Mean)

ব্যবহারিক জীবনে গাণিতিক গড়ের ব্যবহার বিস্তৃত। তাছাড়া ব্যবহারিক প্রয়োজনে প্রতি ক্ষেত্রেই গাণিতিক গড়ের ব্যবহার অনস্বীকার্য। যেমন, মাসিক গড় আয়, গড় লেনদেন, কোম্পানির হিসাব-নিকাশ, কোন পণ্যের গড় আমদানী রপ্তানীর ও পন্যের চাহিদা ইত্যাদিতে গাণিতিক গড় ব্যবহার করে সমস্যার সমাধান করা যায়।

 

 

২) গুণিতক গড় (Geometric Mean)

গুণিতক গড় কেন্দ্রীয় প্রবণতার একটি বিশেষ পরিমাপক। সাধারণত আনুপাতিক হিসাব, শতকরা হিসাব এবং পরিবর্তনের হারের ক্ষেত্রে গুণিতক গড় ব্যবহার উপযোগী। তাছাড়া অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক তথ্য বিশ্লেষণ যেমন সূচক সংখ্যা নির্ণয়ে গুণিতক গড় ব্যবহার করা হয়। গুণিতক গড়ের সংজ্ঞা অনুসারে আমরা পাই:

 

গুণিতক গড়ের সুবিধা (Advantages of Geometric Mean)

গুণিতক গড়ের সুবিধাগুলি নিম্নে আলোচনা করা হলঃ

  • গুণিতক গড়ের সংজ্ঞা যথেষ্ট স্পষ্ট
  • তথ্যসমূহের শতকরা হার, অনুপাত ইত্যাদির ক্ষেত্রে গুণিতক গড় ব্যবহার সহজসাধ্য
  • গুণিতক গড় মূল ও মাপনীর মানসমূহ দ্বারা প্রভাবিত হয়
  • সূচক সংখ্যা তৈরিতে গুণিতক গড় ব্যবহার করা হয়।

 

গুণিতক গড়ের অসুবিধা (Disadvantages of Geometric Mean)

গুণিতক গড়ের অসুবিধাগুলি নিম্নে আলোচনা করা হলঃ

  • গাণিতিক বিষয়ে জ্ঞান থাকলে গুণিতক গড় নির্ণয় করা কঠিন
  • তথ্য মানের মধ্যে গণ্য ও ঋণাত্মক মান থাকলে গুণিতক গড় নির্ণয় করা যায় না।
  • লগ এর মাধ্যম ছাড়া গুণিতক গড় নির্ণয় কঠিন।

 

৩) তরঙ্গ গড় (Harmonic Mean)

তরঙ্গ গড় কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিমাপের আর একটি বিশেষ পরিমাপক। কতকগুলো বিশেষ ক্ষেত্র যেমন, শেয়ার প্রতি আয়, টাকা প্রতি পণ্য ক্রয়ের পরিমান, প্রতি ঘণ্টায় দূরত্ব অতিক্রম ইত্যাদি ধরনের তথ্যের গড় নির্ণয় তরঙ্গ গড় বিশেষভাবে উপযোগী।

তরঙ্গ গড়ের সংজ্ঞা নিম্নে দেওয়া হলো: তথ্য মান সমূহের উল্টান মানগুলোর গাণিতিক গড়ের উল্টানকে তরঙ্গ গড় বলে। যদি X১, X২, …………. Xn; n টি অশূন্য তথ্য হয় তাহলে তরঙ্গ গড়ের সংজ্ঞানুযায়ী পাই –

 

তরঙ্গ গড়ের সুবিধা (Advantages of Harmonic Mean)

  • তরঙ্গ গড়ের সূত্র সহজভাবে বুঝা যায়।
  • তরঙ্গ গড় সকল তথ্যমানের উপর ভিত্তি করে নির্ণয় করা হয়।
  • তথ্যমান।

শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “গড় কাকে বলে? গড় কত প্রকার ও কি কি?” আর্টিকেল পছন্দ হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।