চুম্বক কি? চুম্বকত্ব কাকে বলে? চুম্বকের প্রকারভেদ ও ধর্ম

আজকের আর্টিকেলে আমরা চুম্বক কি? চুম্বকত্ব কাকে বলে? চুম্বকের প্রকারভেদ ও ধর্ম, চুম্বক পদার্থ, চুম্বক বলরেখা, চুম্বকের প্রয়োগ ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব। তাহলে আর দেরি না করে চলুন এসব বিষয় সম্পর্কে জেনে নেই।

চুম্বক কাকে বলে? চুম্বক কি?

চুম্বক এক প্রকার শক্তি, যার প্রভাবে কোন জড় বস্তুর আকর্ষণ – বিকর্ষণ ও দিক নির্দেশক ধর্ম লাভ করে, ঐ শক্তিকে চুম্বক বলে। অর্থাৎ, যে সকল বস্তুর আকর্ষণ ও দিক নির্দেশক ধর্ম আছে, তাদেরকে চুম্বক বলে। চুম্বকের রাসায়নিক সংকেত হলো Fe3O4.

চুম্বকের মেরু অঞ্চলে অর্থাৎ, দুই মেরুতে আকর্ষণ ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। ড. গিলবার্ট ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে চুম্বক ও চুম্বক মেরুর ধর্ম থেকে প্রমাণ করেন যে, পৃথিবী একটি বিরাট চুম্বক। এজন্য চুম্বক সবসময় উত্তর-দক্ষিনে অবস্থান করে। এর উত্তর মেরু এন্টার্কটিকা মহাদেশের দক্ষিণে ভিক্টোরিয়া অঞ্চলে আর দক্ষিণ মেরু কানাডার উত্তরদিকে বুথিয়া উপদ্বীপে অবস্থিত। ভূচুম্বকের উত্তর মেরুকে লাল মেরু এবং দক্ষিণ মেরুকে নীল মেরু বলা হয়।

চুম্বকত্ব কী? চুম্বকত্ব কাকে বলে?

চুম্বকের আকর্ষর্ণীয় ও দিক নির্দেশক ধর্মকে চুম্বকত্ব বলে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, চুম্বকত্ব হলো একটি গতিশীল আদানের প্রভাব। যা উত্তর মেরু থেকে লম্বভাবে বের হয়ে দক্ষিণ মেরুতে যায়। চুম্বকত্ব চুম্বকের একটি ভৌত ধর্ম।

চুম্বকের ধর্ম

চুম্বকের সমমেরু পরস্পরকে বিকর্ষণ করে এবং বিপরীতমেরু পরস্পরকে আকর্ষণ করে।
চুম্বুক সর্বদা উত্তর ও দক্ষিণমুখী হয়ে থাকে।
একটি দন্ড চুম্বককে যত টুকরাই করা হোক না কেন তা সর্বদা উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু সৃষ্টি করে। অর্থাৎ চুম্বকের ৪ টি মূল ধর্ম আছে। এগুলো হলো –

  • আকর্ষণ ধর্ম
  • দিকদর্শী ধর্ম
  • বিপরীতধর্মী দুই প্রান্ত
  • চুম্বকন ধর্ম

চারটি ধর্মের কথা বলা হলেও প্রধান ধর্ম হচ্ছে দুটি। এগুলো হলো – আকর্ষণ ও দিকদর্শী ধর্ম।

চুম্বক কত প্রকার ও কি কি?

চুম্বক ২ প্রকার। যথাঃ

  • প্রাকৃতিক চুম্বক
  • কৃত্রিম চুম্বক

প্রাকৃতিক চুম্বক কি?

প্রকৃতিতে বা খনিতে যে চুম্বক পাওয়া যায়, তাকে প্রাকৃতিক চুম্বক বলে। পূর্বে প্রাকৃতিক চুম্বককে লোডস্টোন বলা হতো। বর্তমানে প্রাকৃতিক চুম্বকের ব্যবহার নেই বললেই চলে।

প্রাকৃতিক চুম্বকের বৈশিষ্ট্য:

  • এ চুম্বকের চুম্বকত্ব স্থায়ী ও শক্তিশালী হয় না।
  • এ চুম্বকে দুইয়ের অধিক মেরু থাকতে পারে।
  • এ ধরণের চুম্বক নিয়মিত আকারে থাকে না ইত্যাদি।

কৃত্রিম চুম্বক কি?

মানুষের কাজের উপযোগী বিভিন্ন চুম্বক পদার্থ ব্যবহার করে পরীক্ষাগারে বিভিন্ন আকার আকৃতির যে সকল চুম্বক তৈরি করা হয় তাকে কৃত্রিম চুম্বক বলে।

অর্থাৎ, পরীক্ষাগারে লোহা, ইস্পাত, নিকেল, কোবাল্ট ইত্যাদি চৌম্বক পদার্থকে বিশেষ উপায়ে চুম্বকে পরিণত করা হলে তাকে প্রাকৃতিক চুম্বক বলে। সাধারণত শিল্প ও বৈজ্ঞানিক কাজে এ চুম্বক ব্যবহার করা হয়।

কৃত্রিম চুম্বক আবার দুই প্রকার। যথা-

  • অস্থায়ী চুম্বক
  • স্থায়ী চুম্বক

অস্থায়ী চুম্বকঃ চুম্বক পদার্থকে কোন চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে আনলে চুম্বুকে পরিণত হয়। চুম্বকক্ষেত্রটি সরিয়ে নেওয়ার সাথে সাথে এর চুম্বকত্ব লোপ পায়।

এটি সাধারণ কাঁচা ও নরম লোহা দিয়ে তৈরি। কলিং বেল, বৈদ্যুতিক ঘন্টা, মটর, স্পিকার, জেনারেটর, ট্রান্সফর্মার ইত্যাদি তৈরিতে অস্থায়ী চুম্বক ব্যবহার করা হয়।

স্থায়ী চুম্বক: চুম্বকক্ষেত্র সরিয়ে নিলেও যে কৃত্রিম চুম্বকের চুম্বকত্ব সহজে লোপ পায় না, তাকে স্থায়ী চুম্বক বলে। লোহা, নিকেল, কোবাল্ট, তামা ইত্যাদির মিশ্রণ দিয়ে বর্তমানে শক্তিশালী স্থায়ী চুম্বক তৈরি করা হচ্ছে।

বর্তমানে উদ্ভাবিত সবচেয়ে শক্তিশালী স্থায়ী চুম্বক হলো নিয়োডিমিয়াম, বোরন, আয়রন। লোহার মাঝে ০.৮% এর বেশি কার্বন থাকলে তা স্থায়ী চুম্বক তৈরি করে।

স্থায়ী চুম্বক আবার ২ প্রকার। যথাঃ

  • সংকর চুম্বক
  • সিরামিক চুম্বক

সংকর চুম্বকঃ এলনিকো সংকর যা অ্যালুমিনিয়াম, কপার, লোহা, নিকেল, কোবাল্ট তামা ইত্যাদির মিশ্রণে তৈরি শক্তিশালী স্থায়ী চুম্বক। সর্বপ্রথম স্থায়ী চুম্বক তৈরি হয়েছিল ইস্পাত দ্বারা। যাতে কার্বনের পরিমাণ ছিল ০.৮%।

সিরামিক চুম্বকঃ এটি ফেরাইড যৌগ নামে পরিচিত। আয়রন অক্সাইড ও বেরিয়াম অক্সাইডের মিশ্রণে এটি তৈরি পূর্বে এটি তৈরিতে ক্রোমিয়াম ডাই অক্সাইড ব্যবহৃত হতো। ক্রোমিয়াম ডাই অক্সাইডের সংকেত হলো CrO2.

টেপ রেকর্ডার, কম্পিউটার মেমোরি বা স্মৃতির ফিতায় এ সিরামিক চুম্বক ব্যবহার করা হয়।

চৌম্বক পদার্থ কি বা কাকে বলে?

যে সকল পদার্থকে চুম্বক আকর্ষণ করে এবং যাদের চুম্বকে পরিণত করা যায় তাদের চৌম্বক পদার্থ বলে। অর্থাৎ, যেসকল পদার্থ চুম্বক কর্তৃক সহজেই আকৃষ্ট হয় বা যাদের কৃত্রিম চুম্বকে পরিণত করা যায়, তাদের চুম্বক পদার্থ বলে। যেমন-লোহা, লোহার যৌগ, নিকেল, কোবাল্ট ইত্যাদি।

চৌম্বক পদার্থ কত প্রকার ও কি কি?

চৌম্বক পদার্থ ৩ ধরণের হয়ে থাকে। এগুলো হলো –

  • ফেরোচৌম্বক পদার্থ
  • প্যারাচৌম্বক পদার্থ
  • ডায়াচৌম্বক পদার্থ

ফেরোচৌম্বক পদার্থ: যে সকল পদার্থকে কোন চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্য স্থাপন করলে ঐ সকল পদার্থে শক্তিশালী চৌম্বকত্ব দেখা যায় এবং আবিষ্ট চুম্বকায়নের অভিমুখ আবেশী ক্ষেত্রের অভিমুখ বরাবর হয়, তাদের ফেরোচুম্বক পদার্থ বলে। চৌম্বক পদার্থ বলতে সাধারণত ফেরোচৌম্বককে বুঝায়।

উদাহরণ : আয়রন, ইস্পাত, কোবাল্ট, নিকেল, মিউমেটাল ইত্যাদি।

প্যারা চৌম্বক: কোন পদার্থের উপর চৌম্বকক্ষেত্র প্রয়োগ করা হলে সামান্য পরিমান চুম্বকত্ব প্রদর্শন করে এবং আবিষ্ট চুম্বকায়নের অভিমুখ আবেশী ক্ষেত্রের অভিমুখ বরাবর হয়, তাদের প্যারা চৌম্বক পদার্থ বলে।

যেমন – অ্যালুমিনিয়াম, প্লাটিনাম, ক্রোমিয়াম, তরল অক্সিজেন, ম্যাঙ্গানিজ, লোহা ও নিকেলের দ্রবণ ইত্যাদি।

ডায়াচৌম্বক পদার্থ: যে সকল পদার্থ খুব শক্তিশালী কোন চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্য স্থাপন করলে ঐ সকল পদার্থে ক্ষীণ চৌম্বকত্ব দেখা যেতে পারে, তাদের ডায়াচৌম্বক পদার্থ বলে।

উদাহরণ : পানি, তামা, বিসমাথ, পারদ, সোনা, অ্যালকোহল, অ্যান্টিমনি ইত্যাদি ডায়াচৌম্বক পদার্থ।

অচৌম্বক পদার্থ কাকে বলে?

অচৌম্বক পদার্থঃ কোন চুম্বক যে সকল পদার্থকে আকর্ষণ করে না, ঐ সকল পদার্থকে অচৌম্বক পদার্থ বলে। অর্থাৎ, পদার্থে কোন চুম্বকত্ব দেখা না দিলে তাকে অচৌম্বক পদার্থ বলা হয়। উদাহরণঃ অ্যালুমিনিয়াম, স্টিল, সোনা ইত্যাদি।

চুম্বকের প্রয়োগ

  • দিক নির্ণায়ক কম্পাস তৈরিতে চুম্বক ব্যবহার করা হয়।
  • রাডারে, ট্রান্সফর্মারে চুম্বক ব্যবহার করা হয়।
  • বৈদ্যুতিক ঘন্টা ও মোটরে চুম্বক ব্যবহার করা হয়।
  • মাইক্রোফোন ও লাউড স্পিকারে চুম্বক ব্যবহার করা হয় ইত্যাদি।

তড়িৎ চুম্বক কি? তড়িৎ-চুম্বকে কাঁচা লোহা ব্যবহার করা হয় কেন?

তড়িৎ চুম্বক : কাঁচা লোহার দণ্ডের উপর অন্তরিত তামার তার কুণ্ডলীর মতো জড়িয়ে ওই তারের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ পাঠালে লোহার দণ্ডটি চুম্বকে পরিণত হয়। কিন্তু এই চুম্বকের চুম্বকত্ব অস্থায়ী। তড়িৎ প্রবাহ বন্ধ করা মাত্র চুম্বকত্ব নষ্ট হয়ে যায়। এই চুম্বককে তড়িৎ চুম্বক বলে।

আবার বলা যায়, এক টুকরা কাঁচা লোহাকে দন্ডাকার বা U আকারে বাঁকিয়ে একে অন্তরীত তামার তারে জড়িয়ে তড়িৎ প্রবাহ চালনা করলে তড়িৎ চুম্বক তৈরি হয়। যতক্ষণ তারের মধ্যে দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হয় ততক্ষণই এর চুম্বকত্ব থাকে, তড়িৎ প্রবাহ বন্ধ করার সাথে সাথে এর চুম্বকত্ব লোপ পায়।

তড়িৎ-চুম্বকে কাঁচা লোহা ব্যবহার: তড়িৎ চুম্বকে কাঁচ লোহা ব্যবহার করার কারণ হলো, তড়িৎ প্রবাহ পাঠালে কাঁচা লোহা অস্থায়ী চুম্বকে পরিণত হয়। যতক্ষণ তড়িৎ প্রবাহ পাঠানো হয় ততক্ষণই কাঁচা লোহার দণ্ডটি চুম্বক থাকে। তড়িৎ প্রবাহ বন্ধ করা মাত্র ওর চুম্বকত্ব লোপ পায়। তাই তড়িৎ চম্বুকে মজ্জা রূপে কাঁচা লোহা ব্যবহার করা হয়।

চুম্বক বলরেখা কি? চুম্বক বলরেখার ধর্ম লেখ।

চুম্বক বলরেখা: কোনো চৌম্বক ক্ষেত্রে একটি বিচ্ছিন্ন উত্তর মেরুকে মুক্তাবস্থায় স্থাপন করলে মেরুটি যে পথে পরিভ্রমণ করে, তাকে চৌম্বক বলরেখা বলে।

চুম্বক বলরেখার ধর্ম :

  • এরা উত্তর মেরু থেকে উৎপন্ন হয়ে দক্ষিন মেরুতে শেষ হয়।
  • এরা পরস্পরের প্রতি পার্শ্ব চাপ প্রয়োগ করে।
  • এরা কখনও পরস্পরকে ছেদ করে না।
  • এরা বদ্ধ রেখা।

চৌম্বক নিয়ে আরও বিভিন্ন প্রশ্ন ও উত্তর

চৌম্বক মেরু কাকে বলে?

চৌম্বক মেরু: কোন চুম্বকের যে অঞ্চলে চুম্বকের আকর্ষন বা বিকর্ষন বল বেশী সেই অঞ্চলকে ঐ চুম্বকের মেরু বলে ।

উপমেরু কাকে বলে?

উপমেরু: ভুল পদ্বতিতে চুম্বকনের সময় মাঝে মাঝে দুই প্রান্তে বা মাঝখানে অতিরিক্ত মেরু সৃষ্টি হয় । এই অতিরিক্ত মেরুকে উপমেরু বলে ।

পোলারিটি কাকে বলে?

চৌম্বক পোলারিটি: কোন চুম্বক পদার্থকে কোন স্থায়ী চৌম্বক ক্ষেত্রে রাখলে তা ক্ষনস্থায়ীভাবে চুম্বকে পরিনত হয় এবং এর দুপাশে চৌম্বক দ্বিমেরু বা ‍দ্বিপোল সৃষ্টি হয় । চুম্বকের এই ধর্মকে পোলারিটি বলে ।

চৌম্বক আবেশ কাকে বলে?

চৌম্বক আবেশ: কোন চৌম্বক পদার্থকে কোন শক্তিশালী চুম্বকের নিকটে আনলে ঐ চুম্বক পদার্থটি সাময়িক ভাবে চুম্বকে পরিনত হয় বা অন্য কোন চৌম্বক পদার্থকে আকর্ষন করে । এ ঘটনাকে চৌম্বক আবেশ বলে ।

চৌম্বক বিভব কাকে বলে?

চৌম্বক বিভব: কোন চুম্বকের একটি একক উত্তর মেরুকে অসীম দুর থেকে চৌম্বক ক্ষেত্রের অভ্যান্তরে কোন বিন্দুতে আনতে চুম্বক বলের বিরুদ্ধে যে পরিমান কাজ করতে হয় তাকে চৌম্বক বিভব বলে ।

চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রাবল্য কাকে বলে?

চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রাবল্য: চুম্বকের ক্ষেত্রের কোন বিন্দুতে একক্ শক্তির একটি উত্তর মেরু স্থাপন করলে যে বল অনুভব করে তাকে ঐ ক্ষেত্রের প্রাবল্য বলে ।

কুরী বিন্দু বা তাপমাত্রা কাকে বলে?

কুরী বিন্দু: যে তাপমাত্রা একটি চুম্বকের চুম্বকত্ব সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত বা নষ্ট হয়ে যায় , তাকে উক্ত চুম্বকের কুরী বিন্দু বা কুরী তাপমাত্রা বলে। যেমন-লোহার কুরী বিন্দু ৭৭০º C.

সলিনয়েড কাকে বলে?

সলিনয়েড: একটি কাঁচা লোহার দন্ডকে U আকারে বাকিয়ে লম্বা অন্তরিত তার দ্বারা জডিয়ে এর মধ্যদিয়ে তডিৎ প্রবাহিত করলে তা একটি চুম্বকের ন্যায় আচরন করে । একে সলিনয়েড বলে ।

চুম্বকের ওপর তড়িৎপ্রবাহের ক্রিয়া কাকে বলে?

চুম্বকের ওপর তড়িৎপ্রবাহের ক্রিয়া : কোনো পরিবাহী তারের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ পাঠালে তার চারপাশে একটি চৌম্বক ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয় । ওই তারের কাছে একটি চুম্বক শলাকা থাকলে শলাকাটি বিক্ষিপ্ত হয় । একে চুম্বকের ওপর তড়িৎপ্রবাহের ক্রিয়া বলে।

পৃথিবী একটি বিরাট চুম্বক প্রমান কর?

কোন দন্ড চুম্বককে ঝুলিয়ে দিলে এটি সর্বদা উত্তর দক্ষিন বরাবর অবস্থান করে । ধারণা করা হয় পৃথিবীর অভ্যন্তরে বিশাল এক চুম্বক দন্ড অবস্থিত যার দক্ষিন মেরু উত্তর দিকে আর উত্তর মেরু দক্ষিন দিকে অবস্থিত ।

এ বিশাল চুম্বকের আর্কষনের জন্য দন্ড চুম্বকের দক্ষিন মেরু বিশাল চুম্বকের উত্তর মেরু (দক্ষিন দিকে ) আর্কষন করে যার ফলে দন্ড চুম্বকের দক্ষিন মেরু দক্ষিন দিকে ঘুরে যায় ।

আবার দন্ড চুম্বকের উত্তর মেরুকে বিশাল চুম্বকের দক্ষিন মেরু (উত্তর দিকে) আর্কষন করে ফলে দন্ড চুম্বকের উত্তর মেরু উত্তর দিকে মুখ করে । এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, পৃথিবী একটি বিরাট চুম্বক বা চুম্বকের ন্যায় আচরন করে ।

ডায়া, প্যারা ও ফেরো চুম্বকের মাঝে পার্থক্য কি কি?

  • ফেরোচৌম্বক পদার্থ চুম্বক দ্বারা প্রবলভাবে আকর্ষিত হয়। কিন্তু প্যারাচৌম্বক পদার্থ দ্বারা ক্ষীণভাবে আকর্ষিত হয়। অন্যদিকে ডায়াচৌম্বক পদার্থ দ্বারা ক্ষীণভাবে বিকর্ষিত হয়।
  • ফেরোচৌম্বক পদার্থ কেলাসিত কঠিন পদার্থ। কিন্তু প্যারাচৌম্বক ও ডায়াচৌম্বক পদার্থ কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় হতে পারে।
  • ফেরোচুম্বকে কুরি বিন্দু আছে অন্যদিকে প্যারা ও ডায়া চুম্বকে নেই
  • ফেরেচৌম্বক পদার্থ মুক্তভাবে ঝুলানো চৌম্বক ক্ষেত্র বরাবর অতিদ্রুত স্থাপিত হয়, কিন্তু প্যারাচৌম্বক পদার্থ স্বাভাবিকভাবে চৌম্বক ক্ষেত্র বরাবর স্থাপিত হয়। অন্যদিকে ডায়াচৌম্বক পদার্থ মুক্তভাবে ঝুলানো চৌম্বক ক্ষেত্রের সমকোণে স্থাপিত হয়।
  • ফেরোচৌম্বক ও প্যারাচৌম্বক পদার্থে চৌম্বক প্রবণতা ধনাত্মক, কিন্তু তা ফেরোচৌম্বক পদার্থে উচ্চমানের ও প্যারাচৌম্বক পদার্থে নিম্মমানের হয়। আবার ডায়াচৌম্বক পদার্থে চৌম্বক প্রবণতা ঋণাত্মক ও নি¤œমানের হয়।
  • ফেরোচুম্বকে চৌম্বক ধারকত্ব ধর্ম আছে কিন্তু প্যারা ও ডায়া চুম্বকে নেই।
  • ফেরো চুম্বকের উদাহরণ হলো – লোহা, নিকেল, কোবাল্ট ইত্যাদি। ডায়া চুম্বকের উদাহরণ হলো সোনা, পানি, তামা, পারদ ইত্যাদি আর প্যারা চুম্বকের উদাহরণ হলো প্লাটিনাম, ম্যাঙ্গানিজ, তরল অক্সিজেন ইত্যাদি।

কোন বস্তুকে চুম্বকে পরিণত করা হলে এর ভর ও আয়তনের কোন পরিবর্তন হয় না কেন ?

কোনো চৌম্বক পদার্থকে চুম্বকে পরিণত করার সময় পদার্থটির ভৌত অবস্থার পরিবর্তন হয় না। শুধু পদার্থটির আত্তঃআণবিক সজ্জার পরিবর্তন হয় যা তার বাহ্যিক পরিবর্তনে কোন রকম প্রভাব ফেলবে না।

চুম্বকের চুম্বকত্ব একটি ভৌত ধর্ম। এটি কোন রাসায়নিক ধর্ম নয়। কোন বস্তুকে চুম্বকে পরিণত করা হলে এর কোন রাসায়নিক পরিবর্তন হয় না।

সুতরাং, কোন বস্তুকে চুম্বকে পরিণত করা হলে বস্তুর কণাগুলো চুম্বকশক্তি গ্রহণ করে। ফলে বস্তুটির ভর অথবা আয়তনের কোন পরিবর্তন হয় না।

চুম্বক আকর্ষন ও মহাকর্ষ আকর্ষনের মধ্যে পার্থক্য কী কী?

  • চুম্বক চৌম্বক পদার্থকে আকর্ষন করে আর মহাকর্ষ যে কোন বস্তুকে আকর্ষন করে।
  • চুম্বক আকর্ষন শক্তিশালী অন্যদিকে মহাকর্ষ আকর্ষন দুর্বল।
  • সমমেরুকে বিকর্ষন করে আর মহাকর্ষর কোন মেরু নেই।
  • সকল বস্তুর প্রতি একই আচরন করে , মহাকর্ষ সকল বস্তুর প্রতি একই আচরন করে না।

আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

  • লোহার কুরি তাপমাত্রা ৭৭০°C.
  • হাতুড়ি দিয়ে কোন চুম্বক পেটালে সেটি চুম্বকত্ব হারাবে।
  • তাপমাত্রা বাড়ালে চুম্বকত্ব কমবে।
  • নতুন উদ্ভাবিত সব থেকে শক্তিশালি চুম্বক হচ্ছে বোরন আয়রন নিয়োডিমিয়াম।
  • মেরু অঞ্চলে চুম্বকের আকর্ষণ ক্ষমতা সবচেয়ে বেশী।
  • চুম্বকের উত্তর মেরু আসলে পৃথিবীর ভৌগলিক দক্ষিণ মেরু।
  • ক্যাসেটের ফিতার শব্দ সঞ্চিত থাকে চুম্বক শক্তি হিসেবে।
  • রাডারে যে তড়িঃ চৌম্বক তরঙ্গ ব্যবহার করা হয় তার নাম মাইক্রোওয়েভ।
  • প্রাকৃতিক চুম্বককে পূর্বে লেডস্টোন বলা হতো।
  • কম্পিউটারের ফিতায় এবং টেপরেকর্ডারে সিরামিক চুম্বক ব্যবাহৃত হয়।

তো আজ এখানেই থাকলো। আশা করি চুম্বক কি, এর ধর্ম, চৌম্বকত্ব, চৌম্বক পদার্থ ইত্যাদি নিয়ে কিছুটা হলেও ধারণা দিতে পেরেছি। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু। ধন্যবাদ

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *