আকাশে বিজলি চমকালে যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় আর আমরা সাধারণত যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করি তা আলাদা কিছুই নয়। যখন আকাশে অনেক মেঘ করে তখন জলীয়বাষ্পগুলো এত ঠাণ্ডা হয়ে যায় যে তা বরফের আকার ধারণ করে এবং এগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়। এসব সংঘর্ষের ফলে ইলেকট্রিক চার্জের উৎপত্তি হয়। এভাবে চলতে চলতে একসময় মেঘের ওই পুরো এলাকাটুকুই চার্জে পূর্ণ হয়ে যায়।
মেঘের উপরে পজিটিভ চার্জ আর নিচে সৃষ্টি হয় নেগেটিভ চার্জ। এরা ঘুরতে ঘুরতে পরস্পরের আকর্ষণে মিলিত হলেই বিকট শব্দে বিদ্যুতের চোখ অন্ধকার করা ঝলকানিসহ বজ্রপাতের সৃষ্টি হয়। এই বিদ্যুৎ তার আশপাশের বায়ুকে প্রায় ৩০,০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় উষ্ণ করে ফেলে, যা কিনা সূর্যের পৃষ্ঠ থেকেও পাঁচ গুণ বেশি উষ্ণ!প্রতিটি আঘাত ১ বিলিয়ন ভোল্ট বিদ্যুৎ শক্তি বহন করার ক্ষমতা রাখে।
সত্য কথা হলো, বজ্রপাতে নিহত ব্যক্তির দেহে কোনো পরিবর্তন হয় না। বজ্রপাত হচ্ছে মূলত তীব্র শক্তি সম্পন্ন বৈদ্যুতিক আধান। বৃষ্টির সময় এই বজ্রপাত মানুষের কাছাকাছি বা উপর পড়লেই মানুষ মৃত্যু বরণ করে। কারণ তীব্র শক্তি সম্পন্ন এই বৈদ্যুতিক চার্জ বা আধান ইলেকট্রিক শকের মতো কাজ করে। একজন মানুষ বিদ্যুৎ এর সংস্পর্শে এলে শরীর দিয়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ প্রবাহের ফলে যেমন মানুষ মৃত্যু বরণ করে তেমনি বজ্রপাতের সময়ও একই বিষয় ঘটে থাকে।
সহজ বাংলা ভাষায় বজ্রপাতে মৃত্যু হলো বৈদুতিক শকে মৃত্যুর মতোই। মানুষের দেহ প্রচন্ড পরিমাণে বিদ্যুৎ পরিবাহী। বিদ্যুৎ এর সংস্পর্শে এলেই মানুষের শরীর দিয়ে বিদ্যুৎ পরিবাহিত হওয়া শুরু করে। এই কারণে মানুষ অনেক সময় বৈদ্যুতিক যন্ত্রের সংস্পর্শে এসে মারা যায়। শরীর দিয়ে বিদ্যুৎ যত বেশি পরিবাহিত হবে মানুষের মৃত্যু তত তাড়াতাড়ি হবে। বজ্রপাত হলে মানুষ কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই মৃত্যু বরণ করে। কারণ বজ্রপাতে প্রচুর পরিমাণ বৈদ্যুতিক চার্জ থাকে যার পরিণতি হয় নির্মম মৃত্যু।
তাই এই থেকে বোঝা যায় বজ্রপাতে মৃত্যু আর সাধারণ ভাবে বৈদ্যুতিক শকে মৃত্যু একই রকম। তাই বজ্রপাতে নিহত ব্যক্তির মৃত দেহে কোনোরকমের পরিবর্তন হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এটি পুরোপুরি একটি ভুল ধারণা এবং কুসংস্কার। বজ্রপাতের সময় খোলা মাঠ, জানালার কাছে কিংবা বড় গাছের নিচে অবস্থান করা উচিত নয়। বজ্রপাতের সময় ফোন ব্যবহার থেকেও বিরত থাকতে হবে।