ক্যাকটাসের অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।
ফণিমনসা, তেসিরা মনসা, বাজবরণ ইত্যাদি ক্যাক্টাস জাতীয় উদ্ভিদ। ক্যাক্টাস বৃষ্টিহীন বা খুবই অল্প পরিমাণ বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলের শুষ্ক ও বালুকাময় স্থানে এবং মরুভূমি এলাকায় জন্মায়, তাই ক্যাকটাসকে জাঙ্গল উদ্ভিদ বা জেরােফাইট বলে। ক্যাক্টাস সাধারণত গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ।
উষ্ণ পরিবেশে বসবাস করার জন্য ক্যাক্টাসের নিম্নলিখিত অভিযােজন গত বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায় যথা-
(i) মূল (Root): ক্যাকটাসের সুগঠিত মূলতন্ত্র, মূল সুদীর্ঘ। মাটির অনেক নীচ পর্যন্ত চলে যায়। মূলে মূলরােম ও মূলত্রাণ থাকে। অসংখ্য মূলের শাখা প্রশাখা বের হয় মাটি থেকে জলে শােষণ করার জন্য।
(ii) কাণ্ড (Stem): কাণ্ড খর্বাকার ও কাষ্ঠল হয়। কাণ্ডের বাকল পুরু এবং মােম জাতীয় পদার্থ দ্বারা আবৃত থাকে। কাণ্ডের কোশে মিউসিলেজ নামে এক রকম পিচ্ছিল পদার্থ থাকায় জন্য গাছের জল ধরে রাখার ক্ষমতা বেশি হয়। কান্ডের ত্বকে কিউটিকল থাকে।
(iii) পাতা (Leaf): ক্যাকটাসের পাতা আকারে ক্ষুদ্র এবং সংখ্যায় কম থাকে। ফনিমনসার গাছের পাতা কাটায় রূপান্তরিত হয়েছে। বাপমােচন রােধের জন্য পাতাগুলি কাটায় রূপান্তরিত হয়। পাতায় পত্ররন্ধ খুব কম সংখ্যায় থাকে।
ক্যাক্টাসের প্রধান কয়েকটি শারীরবৃত্তীয় অভিযােজন
1. জল সংরক্ষণ: ক্যাক্টাসের কাণ্ড চ্যাপ্টা, স্থূল এবং রসাল। এইরকম কাণ্ডে প্রচুর পরিমাণ জল সংরক্ষিত থাকে।
2. জল শােষণ : এই জাতীয় গাছের শাখা ও প্রশাখা মূলগুলি মাটির অল্প নীচেই সম্প্রসারিত থাকে, ফলে গাছ সহজেই বৃষ্টির জল শােষণ করতে পারে। প্রধান মূল এবং কয়েকটি প্রধান শাখা মূল জল শোষণের জন্য মাটির গভীরে প্রবেশ করে। এরকম উদ্ভিদের মূলের কোষে বড় বড় ভ্যাকুল থাকে। ভ্যাকুওলের কোষ রসের আস্রাবণ চাপ অনেক বেশী হওয়ায় এসব গাছের সাধারণ স্থলজ উদ্ভিদের তুলনায় জল শােষণ ক্ষমতাও অনেক বেশী হয়।
3. বাষ্পমােচন হ্রাস: ক্যাক্টাসের বাষ্পমােচন রােধ করার জন্য পাতা-কাঁটায় রূপান্তরিত হয় অথবা পাতাগুলি আকারে খুব ছােট এবং কম পত্ররন্ধ্রযুক্ত হয়। কাণ্ডের ত্বকে পুরু কিউটিক এবং মােমের মত আবরণী থাকে।
4. সালােকসংশ্লেষ: ক্যাক্টাস জাতীয় উদ্ভিদের পাতা না থাকায় বা কম থাকায় এদের কাণ্ড চ্যাপ্টা, প্রসারিত এবং সবুজ রঙের হয়। ফলে এই জাতীয় পর্ণকাণ্ডে সহজেই সালােকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া ঘটতে পারে।