অমরাবিন্যাস কি? (What is Placentation in Bangla?)

গর্ভাশয়ের অভ্যন্তরে অবস্থিত যে বিশেষ ধরনের টিস্যু ডিম্বক (ovule) ধারণ করে তাকে অমরা (placenta) বলে। ডিম্বকগুলো অমরার মাধ্যমে গর্ভাশয়ের মধ্যে নির্দিষ্ট রীতি অনুযায়ী সাজানো থাকে। গর্ভাশয়ে ডিম্বকযুক্ত অমরার উৎপত্তি ও সজ্জাবিন্যাসকে অমরাবিন্যাস (placentation) বলে।

অমরাবিন্যাস নিচে বর্ণিত বিভিন্ন ধরনের হতে পারে।

 এক প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট গর্ভাশয়ের অমরাবিন্যাস

প্রান্তীয় (Marginal) : একগর্ভপত্রী গর্ভাশয়ের, সংযুক্ত কিনারা বা প্রান্ত থেকে অমরা উৎপন্ন হয়। যেমন- মটর।

বহুপ্রান্তীয় (Parietal) : একাধিক গর্ভপত্রযুক্ত গর্ভাশয়ের একাধিক প্রান্ত থেকে অমরা উৎপন্ন হয়। যেমন- সরিষা।

মূলীয় (Basal) : দ্বিগর্ভপত্রী গর্ভাশয়ের মূলদেশ থেকে অমরা সৃষ্টি হয়। যেমন- সূর্যমুখী।

মুক্তকেন্দ্ৰীয় (Free central) : বহুগর্ভপত্রী গর্ভাশয়ের কেন্দ্রীয় অক্ষ থেকে অমরা সৃষ্টি হয়। যেমন – তুঁত।

 

ডিম্বাশয়ের মধ্যে ডিম্বক যুক্ত অমরার উৎপত্তি ও সজ্জাবিন্যাসকে অমরাবিন্যাস বা প্লাসেনটেশন বলে ।

গর্ভাশয়ের প্রস্থচ্ছেদ করলে দেখা যায় এক বা একাধিক গর্ভপত্রযুক্ত হয়ে গর্ভাশয় গঠিত হয় । গর্ভপত্রের দুটি কিনারা থাকে । এই কিনারা পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ডিম্বাশয়ের প্রকোষ্ঠ গঠন করে । গর্ভপত্রের দুটি কিনারা যেখানে যুক্ত হয় তাকে অঙ্কীয় সন্ধি ( Ventral suture ) বলে । এই সন্ধি বা সংযােগে প্যারেনকাইমা কলার সঙ্গে ডিম্বকগুলি যুক্ত থাকে । এই প্যারেনকাইমা কলাকে অমরা ( Placenta ) বলে । অঙ্কীয় সন্ধির উল্টো দিকের সন্ধিকে পৃষ্ঠ সন্ধি ( Dorsal Suture ) বলে । এই সন্ধিতে কোনাে অমরা থাকে না ।

অমরাবিন্যাসের প্রকারভেদ

অমরাবিন্যাস সাত প্রকার হয় , যথা— i. প্রান্তীয় অমরাবিন্যাস , ii. বহুপ্রান্তীয় অমরাবিন্যাস , iii. মূলীয় অমরাবিন্যাস , iv. অক্ষীয় অমরাবিন্যাস , v. মুক্ত মধ্য অমরাবিন্যাস , vi. গাত্রীয় অমরাবিন্যাস এবং vii. শীর্ষদেশীয় অমরাবিন্যাস ।

প্রান্তীয় অমরাবিন্যাস :

যখন একগৰ্ভপত্রী ও একপ্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট গর্ভাশয়ের সংযুক্ত কিনারা বা অঙ্কীয় সংযােগ থেকে অমরা উৎপন্ন হয়ে দুই সারিতে সাজানাে ডিম্বক বহন করে , তখন ওই প্রকার অমরাবিন্যাসকে প্রান্তীয় অমরাবিন্যাস বা মার্জিনাল প্লাসেনটেশন বলে । উদাহরণ — মটর , সিম ইত্যাদি ফ্যাবেসি গােত্রের সমস্ত প্রজাতি ।

বহুপ্রান্তীয় অমরাবিন্যাস :

যখন একাধিক গর্ভপত্র পাশাপাশি যুক্ত হয়ে একপ্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট গর্ভাশয় গঠন করে এবং গর্ভপত্রের প্রতিটি সংযুক্ত প্রান্তের ভিতর দিক থেকে আমরা উৎপন্ন হয় , তখন তাকে বহুপ্রান্তীয় অমরাবিন্যাস বা প্যারাইটাল প্লাসেনটেশন বলে । উদাহরণ — সরষে , কুমড়াে ইত্যাদি ।

মূলীয় অমরাবিন্যাস :

যখন দ্বিগর্ভপত্রী একপ্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট গর্ভাশয়ের মূলদেশ থেকে একটিমাত্র ডিম্বকযুক্ত অমরা গঠিত হয় , তখন তাকে মূলীয় অমরাবিন্যাস বা বেসাল প্লাসেনটেশন বলে । উদাহরণ — সূর্যমুখী , গাঁদা , অ্যাসটেরিডি / কম্পােসিটি গােত্রের সমস্ত প্রজাতি ।

অক্ষীয় অমরাবিন্যাস :

যখন বহু গর্ভপত্রী একাধিক প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট গর্ভাশয় মিলিত হয় এবং মিলনের খাঁজগুলির সংযুক্তির ফলে সৃষ্ট কেন্দ্রীয় অক্ষ থেকে অমরা গঠিত হয় , তখন তাকে অক্ষীয় অমরাবিন্যাস বা অ্যাক্সাইল প্লাসেনটেশন বলে । উদাহরণ — জবা , রজনীগন্ধা , ঢ‍্যাঁড়শ , কলা ইত্যাদি ।

মুক্ত মধ্য অমরাবিন্যাস :

যখন বহুগর্ভপত্রী একপ্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট গর্ভাশয়ের কেন্দ্রীয় অক্ষের চারপাশ থেকে অমরা উৎপন্ন হয় , তখন তাকে মুক্ত মধ্য বা মুক্ত কেন্দ্রীয় অমরাবিন্যাস বা ফ্রি-সেন্ট্রাল প্লাসেনটেশন বলে । উদাহরণ — তুঁত , নুনিয়া ইত্যাদি ।

গাত্রীয় অমরাবিন্যাস :

যখন বহুগর্ভপত্রী ও বহুপ্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট গর্ভাশয়ের বিভেদপ্রাচীরের উভয় গাত্র থেকে অমরা উৎপন্ন হয় , তখন তাকে গাত্রীয় অমরাবিন্যাস বা সুপারফিসিয়াল প্লাসেনটেশন বলে । উদাহরণ — শালুক , শিয়ালকাঁটা ইত্যাদি ।

শীর্ষদেশীয় অমরাবিন্যাস :

যখন একাধিক গর্ভপত্র ও বহুপ্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট গর্ভাশয়ের শীর্ষদেশ থেকে আমরা উৎপন্ন হওয়ার ফলে ডিম্বকগুলি নীচের দিকে ঝুলে থাকে , তখন তাকে শীর্ষদেশীয় অমরাবিন্যাস বা এপিক্যাল প্লাসেনটেশন বলে । উদাহরণ — লালপাতা ।

মালভেসি ( জবা ) এবং মুসেসি ( কলাফুল ) গােত্রের অমরাবিন্যাস 

মালভেসি ও মুসেসি গােত্রের অমরাবিন্যাস অক্ষীয় ( axile ) প্রকৃতির । নীচে এদের অমরাবিন্যাস চিত্রের সাহায্যে দেখানাে হল —

মালভেসি গােত্রের অন্তর্ভুক্ত জবা ফুলের অমরাবিন্যাস :

এক্ষেত্রে গর্ভাশয়টি পাঁচ প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট । এক্ষেত্রে গর্ভাশয়ের গর্ভপত্রের কিনারা ভিতরের দিকে ভাঁজ হয়ে এবং পরস্পর যুক্ত হয়ে এই প্রকোষ্ঠগুলি গঠিত হয় । এই সংযােগকালে যুক্ত ডিম্বাশয়টির মাঝে একটি মধ্য অক্ষ গঠিত হয় এবং অক্ষীয় সন্ধির ভিতরের দিকে অমরা সৃষ্টি হয় । এই কারণে জবার অক্ষীয় অমরাবিন্যাস দেখা যায় ।

মুসেসি গোত্রের অন্তর্ভুক্ত কলা ফুলের অমরাবিন্যাস :

এক্ষেত্রে গর্ভাশয়টি তিনটি প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট হয় । এক্ষেত্রে গর্ভাশয়ের তিনটি গর্ভপত্র যুক্ত হয়ে গর্ভপত্রের কিনারা ভাঁজ হয়ে পরস্পর যুক্ত হয় এবং তিনটি প্রকোষ্ঠ গঠন করে । এক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় অক্ষের অক্ষীয় সন্ধির ভিতরের দিকে অমরা সৃষ্টি হয় । এই কারণে কলাফুলের অক্ষীয় অমরাবিন্যাস দেখা যায় ।

 

শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “অমরাবিন্যাস কি?” আর্টিকেল পছন্দ হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।

Similar Posts