অব্যয় পদ কাকে বলে? অব্যয় পদ কত প্রকার ও কি কি?

যে পদের কোনাে অবস্থাতেই পরিবর্তন হয় না তাকে অব্যয় পদ বলে। যেমন– কিন্তু, সৎ, কেমন, যেমন, বরং, ব্যতীত, বটে, বেশ, ওহে প্রভৃতি।

অব্যয় পদের প্রকারভেদ
অব্যয় পদ পাঁচ প্রকার। যথাঃ–
ক) সম্বন্ধবাচক অব্যয়,
খ) অনন্বয়ী অব্যয়,
গ) অনুসর্গ বা কারক অব্যয়,
ঘ) অনুকার অব্যয় ও
ঙ) উপসর্গ অব্যয়।

ক. সম্বন্ধবাচক অব্যয় : যে সব অব্যয় দুটি পদ বা বাক্যের মধ্যে সম্বন্ধ স্থাপন করে তাকে সম্বন্ধবাচক অব্যয় বলে। যেমন– রহিম ও করিম নামাজ পড়ে।
খ. অনন্বয়ী অব্যয় : যে অব্যয় পদ বাক্যের অন্যান্য পদের সাথে সম্পর্ক না রেখে স্বাধীনভাবে বসে বাক্যের ভাব প্রকাশে সাহায্য করে, তাকে অনন্বয়ী অব্যয় বলে। যেমন– ছিঃ ছিঃ এমন কাজ কেউ করে! বাঃ দৃশ্যটি কী সুন্দর।

গ. অনুসর্গ বা কারক অব্যয় : যে অব্যয় পদ বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের পরে বসে বিভক্তির ন্যায় কাজ করে এবং অন্যান্য পদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে, তাকে অনুসর্গ বা কারক অব্যয় বলে। যেমন– ও-কে দিয়ে এই কাজ হবে না।
ঘ. উপসর্গ অব্যয় : যে অব্যয় পদ ধাতু বা শব্দের পূর্বে বসে পদের অর্থের পরিবর্তন করে, তাকে উপসর্গ অব্যয় বলে। যেমন– প্র, পরা, সম, অপ, পর ইত্যাদি।
ঙ. অনুকার অব্যয় : যে অব্যয় পদ ধ্বনির অনুকরণ বা ধ্বনি প্রকাশের জন্য গঠিত হয়, তাকে অনুকার অব্যয় বলে। যেমন– রিমঝিম বৃষ্টি পড়ে। এখানে ‘রিমঝিম’ – অনুকার অব্যয়।

অব্যয় পদ চেনার উপায়

অব্যয় পদ চেনার জন্য কিছু উপায় আছে, সেগুলো হলঃ

১. অব্যয়পদ হলে এটি কোন বিন্দুতে স্থানান্তর করা যায় না। যেমনঃ সে খুব ভাল করেছে।

২: সংযোগ, বিয়োগ, বিকল্প, তুলনা, আবেগ, মনোভাব, পদে পদে ও বাক্যে বাক্যে সম্পর্ক স্থাপন ইত্যাদি কাজ করলে সেটি অব্যয়পদ হবে।

৩: সমস্ত উপসর্গ ও অনুসর্গ অব্যয় পদের অন্তর্ভুক্ত।

৪: কিছু কিছু অব্যয় পদে বিভক্তি যুক্ত থাকতে দেখা যায় কিন্তু অব্যয় পদের বিভক্তি ইচ্ছে মতো বদলানো যায় না। হয় শূন্য বিভক্তি থাকে নতুবা একটি নির্দিষ্ট বিভক্তিই থাকে।

৫. একটি প্রবাদ বা বাক্য যদি অব্যয় পদ ছাড়া সম্পূর্ণ থাকে তাহলে অব্যয়পদ হতে পারে। যেমনঃ সে অনেক দূর যায়।

৬. এটি বাক্যের অন্য কোন অংশের জন্য কাজ করতে পারে। যেমনঃ সে সুন্দরভাবে গান গায়। (সুন্দরভাবে এখানে ক্রিয়াবিশেষণ হিসেবে কাজ করছে)

৭. যদি কোন শব্দ কোন বাক্যে ব্যবহৃত হয় এবং তার আগে কোন শব্দের মান পরিবর্তন না হয়, তাহলে সেটি অব্যয়পদ হতে পারে। যেমনঃ তার আসল নাম মুহাম্মদ।

বাংলা ভাষায় তিন ধরনের অব্যয় শব্দ আছে-

বাংলা অব্যয় শব্দ : আর, আবার, ও, হাঁ, না

তৎসম অব্যয় শব্দ : যদি, যথা, সদা, সহসা, হঠাৎ, অর্থাৎ, দৈবাৎ, বরং, পুনশ্চ, আপাতত, বস্তুত ইত্যাদি।

বিদেশি অব্যয় শব্দ : আলবত, বহুত, খুব, শাবাশ, খাসা, মাইরি, মারহাবা। (মনে রাখার টেকনিক – মামাকে আশা খুব খাওয়ায়)

বিভিন্ন প্রকার অব্যয় এর সংজ্ঞা :-

পদান্বয়ী অব্যয় :-

যে অব্যয় পদ বাক্যের মধ্যে ব্যবহৃত হয়ে এক পদের সঙ্গে অন্য পদকে সংযুক্ত করে, তাকে পদান্বয়ী অব্যয় বলে।

যেমন – কর্ম ব্যতীত সুখ লাভ সম্ভব নয়। রাকেশ ও তপন আজকে বেড়াতে যাবে। বিয়েতে আপনার কিন্তু আসা চাই।

ওপরে কথিত বাক্য তিনটিতে ব্যতীত, ও, কিন্তু এই অব্যয়গুলি বাক্যের মধ্যে বসে এক পদের সঙ্গে অন্য পদকে যুক্ত করেছে। সুতরাং এগুলি পদান্বয়ী অব্যয়।

অনন্বয়ী অব্যয় :-

যে অব্যয় পদের সঙ্গে বাক্যের অন্যান্য পদের কোনো সম্বন্ধ থাকে না, তাকে অনন্বয়ী অব্যয় বলে।

যেমন– বাঃ! কী সুন্দর দৃশ্য! হায়। আমার কপালে কি এই ছিল? মা, আমাকে আশীর্বাদ করো।

এখানে বা: হায়, মা—এই তিনটি পদ বাক্যের বাইরে বসে প্রশংসা, খেদ, সম্বোধন ইত্যাদি বুঝিয়েছে। এই পদগুলির দ্বারা মনের বিশেষ ভাব প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু সবকটি ক্ষেত্রেই মূল বাক্যের সঙ্গে এদের কোনো সম্বন্ধ নেই।

বাক্যান্বয়ী অব্যয় :-

যে অব্যয় বাক্যে অন্বয় বা সম্বন্ধ স্থাপন করে তাদের বাক্যান্বয়ী বা সমুচ্চয়ী অব্যয় বলে।

বাক্যালঙ্কার অব্যয় :-

যে অব্যয় বাক্যের মধ্যে বসে বাক্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, তাকে বাক্যালঙ্কার অব্যয় বলে।

যেমন – এ গাড়ি তো গাড়ি নয়। দেখে মনে হয় যেন উরজাহাজ। ‘তো’ ‘যেন’ এগুলি বাক্যালঙ্কার অব্যয়। কারণ এগুলি বাক্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে।

ভাবপ্রকাশক অব্যয় :-

যে অব্যয় বক্তার মনের ভাব প্রকাশ করে, তাকে ভাব প্রকাশক অব্যয় বলে।

যেমন – মরি মরি! একি লজ্জা! ধন্য ধন্য। বাংলাদেশ।

এখানে মরি মরি, ধন্য ধন্য বিশেষ ভাব প্রকাশ করেছে। তাই এগুলি ভাব প্রকাশক অব্যয়।

সম্মতি বা অসম্মতিসূচক অব্যয় :-

যে অব্যয় পদের দ্বারা বক্তার মনের ইচ্ছা বা অনিচ্ছা প্রকাশ পায়, তাকে সম্মতি বা অসম্মতিসূচক অব্যয় বলে।

যেমন – হ্যাঁ, আমি তো যাবই। না, কথাটা সত্যি নয়।

এখানে হ্যাঁ সম্মতিসূচক অব্যয় এবং না অসম্মতিসূচক অব্যয়।

সম্বোধনসূচক অব্যয় :-

যে অব্যয়ের দ্বারা কাউকে সম্বোধন করা বোঝায়, তাকে সম্বোধনসূচক অবায় বলে।

যেমন – হ্যাঁগো, আজ কলকাতা যাবে কি? ওরে, একবার এদিকে আয়।

অনুকার অব্যয় :-

যে সব শব্দ ধ্বনির ব্যঞ্জনা দেয় তাকে, ধ্বন্যাত্মক অব্যয় বা অনুকার অব্যয় বলে।

যেমন – ঝমঝম্ করে বৃষ্টি পড়ছে। শোঁ শোঁ শব্দে বাতাস বইছে। হনহন করে হেঁটে যাচ্ছে।

উপমাবাচক অব্যয় :-

যে সব অব্যয়ের দ্বারা উপমা বা তুলনাকে বোঝায় তাকে, উপমাবাচক অব্যয় বলে।

যেমন – চাঁদের মতো সুন্দর। মিছরির ন্যায় মিষ্টি। তুলোর মতো নরম।

সংযোজক অব্যয় :-

যে অব্যয় পদ বাক্যের সঙ্গে বাক্যের বা পদের সঙ্গে পদের সংযোগ সাধন করে, তাকেই সংযোজক অব্যয় বলে।

যেমন – আমি খেলার মাঠে গিয়েছিলাম; কিন্তু তোমায় দেখতে পাইনি। বাবা এবং মায়ের কথা শোনা উচিত।

বিয়োজক অব্যয় :-

বিকল্প বোঝাতে বাক্যের মধ্যে যে অব্যয় ব্যবহৃত হয়, তাকেই বিয়োজক অব্যয় বলে।

যেমন – হয় তুমি একাজ কর নয় তাকে কাজটি করতে দাও। তুমি অথবা সমর সেখানে যাবে।

সংকোচক অব্যয় :-

যে অব্যয় একটি বিষয়কে সংকুচিত করে কিন্তু অন্য বিষয়কে প্রাধান্য দেয়, তাকে সংকোচক অব্যয় বলে।

যেমন – এখন খেলা বন্ধ করে বরং পড়াশোনায় মন দাও। ভালো খেলোয়াড় হয়েছ জানি; তবুও মন দিয়ে পড়াশোনা করো।

হেতুবাচক অব্যয় :-

কারণ বোঝাতে যে অব্যয় বাক্যে ব্যবহৃত হয় তাকে হেতুবাচক অব্যয় বলে।

যেমন – বাবা আমাকে মেরেছেন কারণ আমি তাঁর কথা শুনিনি। আপনি তাড়াতাড়ি আসবেন কেননা আমি পড়তে যাবো।

সিদ্ধান্তবাচক অব্যয় :-

যে অব্যয়ের দ্বারা সিদ্ধান্ত বোঝায় তাকে সিদ্ধান্তবাচক অব্যয় বলে।

যেমন – মশায় কামড়েছে তাই ম্যালেরিয়া হয়েছে। শ্যাম আসবে বলে রাম বসেছিল।

নিত্য সম্বন্ধীয় অব্যয় :-

এমন কতগুলো অব্যয় আছে যারা একে অপরের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত একটি বসলে অপরটি বসবেই, একে নিত্য সম্বন্ধীয় অব্যয় বলে।

যেমন – বটে কিন্তু, যেমন-তেমন, যখন-তখন, যেমনি কর্ম তেমনি ফল।

শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “অব্যয় পদ কাকে বলে? অব্যয় পদ কত প্রকার ও কি কি?” আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে, অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।