Modal Ad Example
পড়াশোনা

প্রাকৃতিক সম্পদ কাকে বলে? প্রাকৃতিক সম্পদের প্রকারভেদ, সংরক্ষণ এবং গুরুত্ব।

1 min read

প্রাকৃতিক সম্পদ কাকে বলে? (What is called Natural Resource in Bengali/Bangla?)
প্রকৃতিতে যেসব বস্তু স্বাভাবিকভাবে পাওয়া যায় তাকে প্রাকৃতিক সম্পদ বলে। অন্যভাবে বলা যায় প্রকৃতির দানই হচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদ। মানুষের দৈনন্দিন অভাব পূরণে এদের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে রয়েছে – জমি, পানি, জলবায়ু, গাছ-পালা, পশু-পাখি, বিভিন্ন ধরনের খনিজ দ্রব্য ইত্যাদি।

প্রাকৃতিক সম্পদ হলো প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক উপাদান, যেগুলো মানুষের অভাব পূরণে সক্ষম। যেমন- ধান, সূর্যের আলো ইত্যাদি।

প্রাকৃতিক সম্পদের প্রকারভেদ (Types of Natural Resource)
প্রাকৃতিক সম্পদকে তিন ভাগে বিভক্ত। যথা-
১। নবায়নযোগ্য সম্পদ। যেমন- সূর্যালোক।
২। অনাবয়নযোগ্য সম্পদ। যেমন- কয়লা।
৩। অন্যান্য সম্পদ। যেমন- প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য।

প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণের উপায়
সম্পদ এমনই সব দ্রব্য যেগুলো মানুষের অসীম অভাব পূরণ করতে পারে। তবে এই সম্পদের যোগান বা মজুদ অসীম নয়। তাই সম্পদ সংরক্ষণ না করলে ভবিষ্যতে সম্পদের সংকট দেখা যাবে। সম্পদ সংরক্ষণ বলতে প্রাকৃতিক সম্পদের এমন ব্যবহারকে বুঝায়, যেন ঐ সম্পদ যথাসম্ভব অধিক সংখ্যক লোকের দীর্ঘ সময়ব্যাপী সর্বাধিক মঙ্গল নিশ্চিত করতে সহায়ক হয়।

আমরা জানি, অফুরন্ত সম্পদ যেমন- পানিশক্তি, বায়ুশক্তি ইত্যাদি পুন:সংগঠনশীল। তাই এ সকল সম্পদ উত্তম ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সংরক্ষণ করা যায়। তবে অনবায়নযোগ্য সম্পদ যেমন- কাঠ-কয়লা, গ্যাস ইত্যাদি বার বার তৈরি হয় না এবং অব্যবস্থাপনার দ্বারা ব্যবহার করলে এ সব সম্পদ সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। তাই অনবায়নযোগ্য সম্পদ ব্যবহারে আরও সচেতন হতে হবে যেন অপচয় না হয়। অফুরন্ত সম্পদ যেমন- সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে সৌরবিদ্যুৎ এবং পানিশক্তিকে কাজে লাগিয়ে জলবিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করা যায় এবং এতে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয় না। যদি বিভিন্ন ব্যবহৃত দ্রব্যকে পুনরায় ব্যবহারের জন প্রক্রিয়াজাত করা যায় তবে সম্পদের অপচয় কমে যাবে।

সম্পদ সংরক্ষণের জন্য আমাদের প্রথমেই বাছাই করে নিতে হবে যে কোন কোন সম্পদগুলো আমরা আগে সংরক্ষণ করবো। সম্পদের গুরুত্ব বিবেচনা করে নির্ধারণ করতে হবে কোন সম্পদসমূহ রক্ষা করা বেশি জরুরি। যেমন- অজৈব সারের প্রয়োগ হলে জমির কৃষি পন্যের ফলন বৃদ্ধি পায়। তবে কেউ যদি অতিরিক্ত সার প্রয়োগ করে তাহলে জমির ক্ষতিসাধন হয়। এক্ষেত্রে অজৈব সারের পরিবর্তে জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে যাতে ভূমি সম্পদ অর্থাৎ প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয় রক্ষা করা যায়। এভাবে আমাদের সুবিশাল বনজ সম্পদ, প্রাকৃতিক গ্যাস, সুপেয় পানি সম্পদ ইত্যাদি রক্ষা করতে হবে। অন্যথায় ভবিষ্যতে এই সকল সম্পদসমূহের তীব্র সংকট দেখা যাবে। তাই বাংলাদেশের ভূমি, পানি, বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ ও প্রাকৃতিক পরিবেশকে সংরক্ষণ করা উচিত এবং এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

প্রাকৃতিক সম্পদের গুরুত্ব (Importance of Natural resource)
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রাকৃতিক সম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম। ভূমি, বনভূমি, মৎস্য, খনিজ পদার্থ, সৌরতাপ, প্রাকৃতিক জলাশয় ইত্যাদি এ দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ। দেশের অর্থনীতিতে এসব প্রাকৃতিক সম্পদকে যথাযথভাবে ব্যবহার করে দারিদ্র্য দূরীকরণ, খাদ্যনিরাপত্তা বিধান এবং উন্নত জীবনমান নিশ্চিত করা সম্ভব। বাংলাদেশের মাটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। অত্যন্ত উর্বর এই মাটিতে ফসল ফলাতে বেশি পুঁজির প্রয়োজন পড়ে না। মাটির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে আমাদের কৃষিক ফসল, ফুল, ফল, শাকসবজিসহ বনজ সম্পদের প্রসার ঘটাতে পারি। স্বাধীনতার ৪০ বছরে তিন গুণ খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পেরেছে। উন্নত প্রযুক্তি, বীজ, চাষাবাদের নিয়মকানুন মেনে বাংলাদেশে এই মাটিতে আরও বেশি ফসল উৎপাদন করতে পারবে। তবে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ, মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি বাড়িঘর, কলকারখানা, পুল, রাস্তাঘাট, শহর-উপশহর নির্মাণে দেশের উর্বর ভূমি হ্রাস পাচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে ভূমির ব্যবহার না করা হলে জাতীয় জীবনে বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। অর্থনীতিতে প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে পানির গুরুত্বও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। দেশের নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়, পুকুর ইত্যাদির পানির ওপর কৃষি ও শিল্প অর্থনীতি সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল। যোগাযোগব্যবস্থাও পানিপথের প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। দেশের খনিজ, বনজ, সৌরসহ সব প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার করে দেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হওয়ার পথে অগ্রসর হচ্ছে। জাতীয় আয়ের সিংহভাগই আসে এসব সম্পদকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে। কাঁচামাল হিসেবে প্রাকৃতিক সম্পদের চাহিদা ও জোগান বাড়ছে, পণ্য উৎপাদনে প্রাকৃতিক সম্পদের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে।

শীর্ষ ১০টি প্রাকৃতিক সম্পদ (Top 10 Natural resource)

  • জল
  • বাতাস
  • কয়লা
  • খনিজ তেল
  • প্রাকৃতিক গ্যাস
  • ফসফরাস
  • বন
  • অন্যান্য খনিজ (বক্সাইট)
  • লোহা
  • মাটি

প্রাকৃতিক সম্পদ ও মানবসৃষ্ট সম্পদের মধ্যে পার্থক্য কি?

প্রাকৃতিক সম্পদ ও মানবসৃষ্ট সম্পদের মধ্যে পার্থক্য নিচে দেওয়া হলো–

  • প্রাকৃতিক সম্পদ প্রকৃতিতে পাওয়া যায়। কিন্তু মানবসৃষ্ট সম্পদ মানুষ নিজে প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করে।
  • প্রাকৃতিক সম্পদকে রূপদান করতে হয় না। কিন্তু মানব সম্পদকে রূপদান করতে হয়।
  • প্রাকৃতিক সম্পদ সীমিত। কিন্তু, মানবসৃষ্ট সম্পদ তুলনামূলকভাবে অতটা সীমিত নয়।
  • প্রাকৃতিক সম্পদ বর্তমানে নিঃশেষের পথে। কিন্তু, সে তুলনায় মানবসৃষ্ট সম্পদের প্রসার হচ্ছে।
  • মানুষ প্রাকৃতিক সম্পদ তৈরি করতে পারে না কিন্তু মানবসৃষ্ট সম্পদ তৈরি করতে পারে।
  • সূর্যের আলো, মাটি, পানি, বায়ু, গাছপালা, পশুপাখি, খনিজ সম্পদ, জীবাশ্ম জ্বালানি ইত্যাদি হল প্রাকৃতিক সম্পদ, কিন্তু কাগজ, ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র ইত্যাদি হল মানবসৃষ্ট সম্পদ।
  • প্রাকৃতিক সম্পদ মানবসৃষ্ট সম্পদের ওপর নির্ভর না করলেও মানবসৃষ্ট সম্পদ প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল।
  • মানবসৃষ্ট সম্পদের মূল উৎসই হল প্রাকৃতিক সম্পদ।

 

শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “প্রাকৃতিক সম্পদ কাকে বলে?” আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে, অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।

4.8/5 - (94 votes)
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x