টেকটোনিক প্লেট কি?

বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলকে ভূমিকম্পের সম্ভাবনার ওপর ভিত্তি করে কতকগুলো ভাগে বিভক্ত করা হয়। এর প্রতিটি অঞ্চলকে টেকটোনিক প্লেট বলা হয়। এ টেকটোনিক প্লেটের বৈশিষ্ট্য অনুসারে এক একটি ভূমিকম্প অঞ্চলের ক্ষেত্র নির্ধারিত হয়েছে।

টেকটোনিক প্লেট কি?
পৃথিবীর কঠিন উপরিভাগ চলমান কোনো খোলস নয়। তবে কালের বিবর্তনে এই উপরিভাগ বহু খণ্ডে বিভক্ত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা এই খণ্ডগুলোর নাম দিয়েছেন টেকটোনিক প্লেট। দুনিয়ায় যে এমন কতগুলো প্লেট আছে, তা কেউ-ই হলফ করে বলতে পারেন না। ধারণা করা হয়, সেটা হবে ২০ থেকে ৪০টির মতো। সাতটি মহাদেশ এই প্লেটগুলোর ওপর শুয়ে আছে এবং প্লেটগুলো মহাদেশ বহনের এই কাজটি করে আসছে কয়েক মিলিয়ন বছর ধরে। ব্যাপারটা এমন যেন এক মহাদেশ আরেক স্বজন মহাদেশের বাড়িতে ঘুরতে গিয়েছে প্লেটগুলোকে বাহন বানিয়ে। চলতি পথে এই প্লেটগুলো যখনই একে অপরের সঙ্গে ঠোকাঠুকি করেছে, পৃথিবীতে ঘটে গেছে ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত। আর প্লেটগুলো বিচ্ছিন্ন হতেই জন্ম হয়েছে সমুদ্রের।
ভূত্বকীয় পাত (Plate tectonics) হলো একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব যার দ্বারা পৃথিবীর অশ্মমণ্ডল অর্থাৎ একে অপরের দিকে চলাচল করতে সক্ষম কিছু পাতলা, অনমনীয় খণ্ডের সমন্বয়ে তৈরি ভূত্বক বা পৃথিবীর উপরিতলের বর্ণনা দেয়া হয়। সর্বপ্রথম ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে জার্মান আবহাওয়াবিদ আলফ্রেড ওয়েগেনারের মহীসঞ্চারণ তত্ত্ব (Continental Drift) থেকেই এই ধারণাটির জন্ম হয়। ভূত্বক গঠনের পাততত্ত্ব (Plate tectonics) বিজ্ঞানের আধুনিকতম আবিষ্কার ও গবেষণার দৌলতে এটি এখন আর নিছক কোনো তত্ত্ব নয়, বরং বিজ্ঞানসম্মত একটি ঘটনা, যা পৃথিবীতে সংঘটিত ভূমিকম্পের জন্য দায়ী বলে ভূবিজ্ঞানীরা গ্রহণ করেছেন। বিজ্ঞানীরা এই তত্ত্বটিকে ব্যবহার করে ভূমিকম্প ছাড়াও আগ্নেয়গিরির উদগীরণ, পর্বত সৃষ্টি এবং মহাসাগর ও মহাদেশ সৃষ্টির ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন।
প্লেট টেকটোনিক্স (Plate Tectonics) ভূতাত্ত্বিক মতবাদ অনুসারে ভূত্বক প্রধানত সাতটি বড় ও কয়েকটি ক্ষুদ্র গতিশীল কঠিন প্লেট দ্বারা গঠিত, যেগুলি নিম্নস্থ ভ্রাম্যমান উষ্ণ গুরুমন্ডলীয় পদার্থের ওপর ভাসছে। প্লেটের বিচলন (movement) ও পারস্পরিক ক্রিয়া ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত, পর্বত সৃষ্টি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ভূতাত্ত্বিক ঘটনাবলীর নিয়ন্ত্রক বলে ধারণা করা হয়। তিন ধরনের পারস্পরিক প্লেট সীমানার কথা জানা যায়।
যথা: সমকেন্দ্রাভিমুখী সীমা, অপসারী সীমা ও পরিবর্তক চ্যুতি সীমা।
* সমকেন্দ্রাভিমুখী সীমা যখন একে অপরের দিকে অগ্রসরমান দুটি প্লেট কেন্দ্রাভিমুখী হয়ে অবশেষে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, তখন একটি প্লেট অপরটির নিচে চাপা পড়ে। এই ধরনের প্লেট সংঘর্ষের ফলে পর্বতমালার সৃষ্টি হয় এবং প্লেট প্রান্তিকের আশেপাশে আগ্নেয়গিরির কর্মকান্ড সংঘটিত হয়।
* অপসারী সীমা এই ক্ষেত্রে দুটি প্লেট একে অপরের থেকে সরে যেতে থাকে। এই ধরনের প্লেট সীমানার ফলে নতুন সমুদ্র তলদেশের এবং সামুদ্রিক আগ্নেয়গিরির সৃষ্টি হয়।
* পরিবর্তক চ্যুতি সীমা যখন দুটি প্লেট একে অপরকে অতিক্রম করে যায়, তখন তাকে পরিবর্তক চ্যুতি সীমা বলে। তিন ধরনের প্লেট বিচলনেই ভূমিকম্প সংঘটিত হয়।

শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “টেকটোনিক প্লেট কি?” আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে, অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।

Similar Posts