হার্ট অ্যাটাক কি?
হৃৎপিন্ড যখন দেহের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত রক্তের যােগান দিতে পারে না তখন এ অবস্থাকে হার্ট ফেইলিউর বলে। অনেক সময় হৃৎপিন্ড রক্তে পরিপূর্ণ না হতে পারায়, কখনওবা হৃৎপ্রাচীরে যথেষ্ট শক্তি না থাকায় এমনটি হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে উভয় সমস্যাই একসাথে দেখা যায়। অতএব হার্ট ফেইলিউর মানে হৃৎপিন্ড বন্ধ হয়ে গেছে, বা থেমে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে তা নয়। তবে হার্ট ফেইলিউরকে হৃৎপিন্ডের একটি মারাত্মক অবস্থা বিবেচনা করে সুচিকিৎসার কথা বলা হয়েছে।
হার্ট ফেইলিউরের কারণ
করােনারি ধমনির অন্তঃস্থ গাত্রে কোলেস্টেরল জমে ধমনির গহ্বর সংকীর্ণ করে দিলে হৃৎপ্রাচীর পর্যাপ্ত O2 – সমৃদ্ধ রক্ত সরবরাহ থেকে বঞ্চিত হয়। কালান্তরে হার্ট ফেইলিউর ঘটে। উচ্চ রক্তচাপ বেশি দিন স্থায়ী হলে ধমনির অন্তঃস্থ প্রাচীরে কোলেস্টেরল জমার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। ফলে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয় এবং হৃৎপিন্ড দুর্বল হয়ে পড়ে। ডায়াবেটিস হলে দেহ পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদন বা সঠিকভাবে ব্যবহারও করতে পারে না। এ কারণে ধীরে ধীরে হৃৎপেশি ও হৃৎপিন্ডের বাহিকাগুলাে দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলে হার্ট ফেইলিউর ঘটে। হৃৎপিন্ডে জন্মগত বা সংক্রমণজনিত কারণেও হার্ট ফেইলিউর ঘটতে পারে।
হার্ট ফেইলিউরের লক্ষণ
- সক্রিয়, নিষ্ক্রিয় এমনকি ঘুমের মধ্যেও স্বাসকষ্টে ভােগা এবং ঘুমের সময় মাথার নিচে দুটি বালিশ না দিলে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়।
- সাদা বা গােলাপি রঙের রক্তমাখানাে মিউকাসসই স্থায়ী কাশি বা ফোঁস ফোঁস করে শ্বাস-প্রশ্বাস।
- শরীরের বিভিন্ন জায়গার টিস্যুতে তরল জমে ফুলে উঠে।
- পা, গােড়ালি, পায়ের পাতা, উদর ও যকৃত স্মৃতি হয়ে যায়। জুতা পড়তে গেলে হঠাৎ আঁটসাট মনে হয়।
- প্রতিদিন সব কাজে, সবসময় ক্লান্তিভাব। বাজার-সদাই করা, সিঁড়ি দিয়ে উঠা, কিছু বহন করা বা হাঁটা সবকিছুতেই শ্রান্তিভাব।
- পাকস্থলি সব সময় ভরা মনে হয় কিংবা বমি ভাব থাকে।
- হৃৎস্পন্দন এত দ্রুত হয় মনে হবে যেন হৃৎপিন্ড এক প্রতিযােগিতায় নেমেছে।
- কাজ-কর্ম, চলনে অসামঞ্জস এবং স্মৃতিহীনতা প্রকাশ পায়।
হার্ট ফেইলিউরের প্রতিকার
অসুখের শুরুতেই হার্ট ফেইলিউরের বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হলে এবং প্রতিকার সম্বন্ধে সতর্ক হলে রােগীর তেমন সমস্যা থাকে না, সক্রিয় জীবন যাপনেও কোনাে কিছু বাধা হয় না। হার্ট ফেইলিউরে আক্রান্ত রােগীদের সাধারণত ৩ ধরনের চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ রাখার চেষ্টা করা হয়।
২. ওষুধ গ্রহণঃ হার্ট ফেইলিউরের ধরন দেখে চিকিৎসক যে সব ওষুধ নির্বাচিত করবেন নিয়মিত তা সেবন করতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অব্যাহত রাখতে হবে।
৩. অন্যান্য চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়াঃ হার্ট ফেইলিউর যেন খারাপের দিকে মােড় না নেয় সেদিকে দৃষ্টি রেখে বিভিন্ন শারীরিক অব্যবস্থাপনা সারিয়ে তুলতে হবে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। যেমন- শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে টিস্যুতে পানি জমে থাকা। চিকিৎসককে বলতে হবে কখন ওজন পরীক্ষা করাতে হবে এবং ওজন পরিবর্তন সম্বন্ধে কখন তাঁকে রিপাের্ট করতে হবে।
উল্লিখিত ৩টি প্রতিকার পদ্ধতিতে কাজ না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শল্যচিকিৎসা বা অন্য কোনাে ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে।