হরমোন কি? হরমোনের কাজ। What is Hormone in Bengali?

হরমোন হচ্ছে অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত এক বিশেষ ধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থ, যা সরাসরি রক্তে মিশে রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে দেহের জৈব কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করে।

হরমোনের কাজ
১. গ্রোথ হরমোন : দেহ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এর অভাবে মানুষ বেঁটে হয়।
২. প্রোল্যাকটিন হরমোন : স্তন বর্ধনে এবং দুগ্ধ নিঃসরণে সহায়তা করে।
৩. থাইরক্সিন হরমোন : দেহের বিপাকে সহায়তা করে।
৪. অ্যাড্রেনালিন হরমোন : জরুরি বিপাকক্রিয়ায় সাহায্য করে।
৫. ইনসুলিন : রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমায় এবং শর্করা বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে। এর অভাবে ডায়াবেটিস রোগ হয়।
৬. গ্লুকানন : রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়ায়।
৭. টেস্টোস্টেরন : পুরুষের আনুষঙ্গিক যৌন বৈশিষ্ট্য প্রকাশে সহায়তা করে এবং শুক্রাণু উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে।
৮. ইস্ট্রোজেন ও প্রজোস্টেরন : স্ত্রীলোকের আনুষঙ্গিক যৌন বৈশিষ্ট্য প্রকাশে সহায়তা করে এবং অমরা গঠনে সহায়তা করে।
৯. রিলাক্সিন : গর্ভাবস্থায় শ্রেণীবন্ধনী শিথিল করে।

হরমোন জনিত সমস্যা ও করণীয়
মানবদেহে ও বিভিন্ন প্রাণীর দেহে এক ধরনের বিশেষ নালিবিহীন গ্রন্থি থাকে। এসব গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রস রক্তের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে দেহের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। সুস্থ দেহের চাহিদা অনুসারে গ্রন্থি থেকে অবিরত ধারায় হরমােন নিঃসৃত হয়। তবে প্রয়োজনের চেয়ে কম বা বেশি পরিমাণ হরমােন নিঃসৃত হলে দেহে নানা রকম অবাঞ্ছিত প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এসব সমস্যার মধ্যে প্রধান প্রধান হল: থাইরয়েড সমস্যা, বহুমূত্র, পারকিনসন প্রভৃতি।

১. থাইরয়েড সমস্যা : মানুষের দেহে থাইরয়েড হরমােনের ঘাটতিতে থাইরয়েডজনিত সমস্যা যেমন- গলগণ্ড বা গয়টার রোগ হয়। এ হরমােনের ঘাটতিতে শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধা পায়। শরীরে আয়ােডিনের অভাব হলে এ হরমােনের উৎপাদন ব্যাহত হয়। এই জন্য খাদ্যে আয়ােডিনযুক্ত লবণ ব্যবহারের সুফল পাওয়া যায়। এছাড়া কলা, ফলমূল, কচু, সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি খেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
২. বহুমূত্র : মানুষের অগ্ন্যাশয়ের ভিতর অবস্থিত আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যানস নামক গ্রন্থি থেকে ইনসুলিন হরমােন নিঃসৃত হয়। ইনসুলিন দেহের শর্করা পরিপাক নিয়ন্ত্রণ করে।
অগ্ন্যাশয়ে যদি প্রয়োজন মতাে ইনসুলিন তৈরি না হয় তবে রক্তে শর্করার পরিমাণ স্থায়ীভাবে বেড়ে যায়, প্রস্রাবের সাথে গ্লুকোজ নির্গত হয়। এ অবস্থার নামই বহুমূত্র। এ রােগের লক্ষণগুলাে হল ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, অধিক পিপাসা লাগা, ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া, পর্যাপ্ত খাবার খাওয়া সত্ত্বেও দেহের ওজন কমতে থাকা। দুর্বলতা বােধ করা, চোখে কম দেখা, চামড়া খসখসে ও সূক্ষ্ম হয়ে যাওয়া, ক্ষতস্থান সহজে না শুকানাে ইত্যাদি। বহুমূত্র রােগটি যে কোন বয়সের মানুষেরই হতে পারে। বহুমূত্র রােগ একেবারে নিরাময় করা যায় না। কিন্ত এই রােগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। ডাক্তারদের মতে বহুমূত্র নিয়ন্ত্রণের জন্য ৩টি ‘D’ অর্থাৎ Discipline (শৃঙখলা), Diet (খাদ্য নিয়ন্ত্রণ), Dose (ঔষধ সেবন) মেনে চলা আবশ্যক।
৩. পারকিনসন : সাধারণত ৫০ বছর বয়সের বেশি মানুষের এ রােগটি হয়। রােগীর মস্তিষ্কে ডােপামিন নামক হরমােনটির কার্যকারিতা নষ্ট হয় বলে তার মাংসপেশি কার্যকারিতা হারায়। ফলে রােগীর নড়াচড়া ও হাটাচলা করতে কষ্ট হয়। ডাক্তারের পরামর্শে নিয়মিত ফিজিওথেরাপি গ্রহণ, পরিমতি খাদ্য গ্রহণ ও সুস্থ জীবনযাপন করার মাধ্যমে রােগী অনেকটা সুস্থ থাকে। আমাদের সকলেরই হরমােনজনিত সমস্যাগুলাে সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা উচিত। তাহলে বিভিন্ন ধরনের জটিল রােগ থেকে মুক্তি লাভ করা সম্ভব। 

এ সম্পর্কিত আরও প্রশ্ন ও উত্তরঃ–

১। আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স কি?

উত্তর : আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স অগ্ন্যাশয়ের মাঝে অবস্থিত এক ধরনের নালিবিহীন গ্রন্থি, যা শরীরে শর্করার বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে। এর নালিহীন কোষগুলি হতে ইনসুলিন ও গ্লুকাগন হরমোন নিঃসৃত হয়, যা রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *