পড়াশোনা
1 min read

সমাস কাকে বলে? সমাস কত প্রকার ও কি কি?

আজ আমরা জানব সমাস নিয়ে। আজকে আমরা যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করব তা হলঃ সমাস কাকে বলে? সমাস কত প্রকার ও কি কি বিস্তারিত?

সমাস কাকে বলে?

সমাস সংস্কৃত শব্দ। এর অর্থ সংক্ষেপ, মিলন, একাধিক পদের একপদীকরণ। অর্থ সম্বন্ধ আছে এমন একাধিক শব্দের একসঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি নতুন শব্দ গঠনের প্রক্রিয়াকে সমাস বলে। যেমন – বিলাত হতে ফেরত – বিলাতফেরত।

ড. সুকুমার সেনের মতে, ” পরস্পর অন্বয় বিশিষ্ট দুই বা ততোধিক পদকে একপদে পরিণত হওয়াকে সমাস বলে। “

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, “পরস্পর অর্থ সঙ্গতি বিশিষ্ট দুই বা বহুপদকে একটি পদ করার নাম সমাস। “

জ্যােতিভূষণ চাকীর মতে, “পরস্পর সম্পর্কিত দুই বা তার বেশি শব্দ একসঙ্গে মিলে সমাস হয়।”

সমাসের প্রকারভেদ / শ্রেণীবিভাগ

সমাস ৬ প্রকার। যথাঃ

  • দ্বন্দ্ব
  • দ্বিগু
  • কর্মধারয়
  • তৎপুরুষ
  • অভ্যয়ীভাব ও
  • বহুব্রীহি

দ্বন্দ্ব

যে সমাসে প্রত্যেকটি সমস্যমান পদের অর্থের প্রাধান্য থাকে তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে। এ সমাসে পর্বপদ ও পরপদের সম্বন্ধ বুঝানোর জন্য ব্যাসবাক্যে এবং, ও, আর এ তিনটি অব্যয় পদ ব্যবহৃত হয়। যেমন – ভাই ও বোন = ভাইবোন, মাতা ও পিতা = মাতাপিতা।

দ্বন্দ্ব সমাসের প্রকারভেদ / শ্রেণীবিভাগ

দ্বন্দ্ব সমাস নানা প্রকার হতে পারে। কয়েকটি হলো –

  • মিলনার্থক দ্বন্দ্ব (মাসি ও পিসি = মাসি-পিসি)
  • সমার্থক দ্বন্দ্ব (হাট ও বাজার = হাট- বাজার)
  • বিরোধার্থক দ্বন্দ্ব ( দা ও কুমড়া = দা -কুমড়া)
  • অলুক দ্বন্দ্ব ( দেশে ও বিদেশে = দেশে-বিদেশে)
  • ইত্যাদি অর্থে দ্বন্দ্ব (কাপড় ও চোপড় = কাপড়-চোপড়)
  • বহুপদী দ্বন্দ্ব (বই, খাতা ও কলম = বই- খাতা- কলম)

দ্বিগু

সমাহার (সমষ্টি) বা মিলন অর্থে সংখ্যাবাচক শব্দের সঙ্গে বিশেষ্য পদের যে সমাস হয়, তাকে দ্বিগু সমাস বলে। এ দ্বিগুতে সমাসনিষ্পন্ন পদটি বিশেষ্য পদ হয়। যেমন – তিন কালের সমাহার = ত্রিকাল, শত অব্দের সমাহার = শতাব্দী

কর্মধারয়

যেখানে বিশেষণ বা বিশেষণ ভাবাপন্ন পদের সাথে বিশেষ্য বা বিশেষ্য ভাবাপন্ন পদের সমাস হয় এবং পরপদের অর্থই প্রধান রূপেই প্রতীয়মান হয়, তাকে কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন – যে চালাক সেই চতুর = চালাক-চতুর

কর্মধারয় সমাসের প্রকারভেদ / শ্রেণীবিভাগ

কর্মধারয় কয়েক প্রকার। যেমন –

  • মধ্যপদলোপী কর্মধারয় (সিংহ চিহ্নিত আসন – সিংহাসন)
  • উপমান কর্মধারয়(তুষারের ন্যায় শুভ্র- তুষারশুভ্র)
  • উপমিত কর্মধারায় (মুখ চন্দ্রের ন্যায় – চন্দ্রমুখ)
  • রূপক কর্মধারয় ( মন রূপ মাঝি – মনমাঝি)

তৎপুরুষ

পূর্বপদের বিভক্তির লোপে যে সমাস হয় এবং যে সমাসে পরপদের অর্থ প্রধানভাবে বোঝায়, তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন – বিপদকে আপন্ন – বিপদাপন্ন, শ্রম দ্বারা লব্ধ – শ্রমলব্ধ।

তৎপুরুষ সমাসের প্রকারভেদ / শ্রেণীবিভাগ

তৎপুরুষ সমাস ৯ প্রকার। এগুলো হলো –

  • দ্বিতীয়া তৎপুরুষ (চিরকাল ব্যাপিয়া সুখী – চিরসুখী)
  • তৃতীয়া তৎপুরুষ (মধু দিয়ে মাখা – মধুমাখা)
  • চতুর্থী তৎপুরুষ (গুরুকে ভক্তি – গুরুভক্তি)
  • পঞ্চমী তৎপুরুষ (কারা থেকে মুক্ত – কারামুক্ত)
  • ষষ্ঠী তৎপুরুষ (রাজার পুত্র – রাজপুত্র)
  • সপ্তমী তৎপুরুষ (গাছে পাকা – গাছপাকা)
  • নঞ্ তৎপুরুষ (অ (নয়) চেনা – অচেনা)
  • উপপদ তৎপুরুষ (পঙ্কে জন্মে যা – পঙ্কজ)
  • অলুক তৎপুরুষ (গায়ে পড়া – গায়েপড়া)

অভ্যয়ীভাব

যে সমাসে পূর্বপদে একটি অব্যয় এবং পরপদে একটি বিশেষ্য থাকে এবং অর্থের দিক থেকে পূর্বপদ অর্থাৎ, অব্যয়ের অর্থই প্রাধান্য পায়, তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে। যেমন – কন্ঠের সমীপে – উপকন্ঠ, দিন দিন – প্রতিদিন।

বহুব্রীহি

যে সমাসে সমস্যমান পদগুলোর কোনটির অর্থ না বুঝিয়ে, অন্য কোন পদকে বোঝায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন – সহ উদর যার – সহোদর, সমান বর্ণ যার – সমবর্ণ।

বহুব্রীহি সমাসের প্রকারভেদ / শ্রেণীবিভাগ

বহুব্রীহি সমাস ৮ প্রকার। যথাঃ-

  • সমানাধিকরণ বহুব্রীহি (খোশ মেজাজ যার – খোশমেজাজ)
  • ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি (দু কান কাটা যার – দু কানকাটা)
  • ব্যতিহার বহুব্রীহি (কানে কানে যে কথা – কানাকানি)
  • নঞ্ বহুব্রীহি (ন (নাই) জ্ঞান যার – অজ্ঞান)
  • মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি (গায়ে হলুদ দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে – গায়ে হলুদ)
  • প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি (ঘরের দিকে মুখ যার – ঘরমুখো)
  • অলুক বহুব্রীহি (মাথায় পাগড়ি যার – মাথায়পাগড়ি)
  • সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি (দশ গজ পরিমাণ যার – দশগজি)
5/5 - (31 votes)