ফিউজ (Fuse) হলো সংকর ধাতুর তৈরি ছোট সরু তার, যা মূলত বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা এড়াবার জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি একটি চিনামাটির কাঠামাের উপর দিয়ে আটকানাে থাকে। তারটি সরু এবং গলনাঙ্ক কম বিশিষ্ট হয়। এর মধ্য দিয়ে একটি নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি তড়িৎ প্রবাহিত হলে এটি অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে গলে যায়। ফলে তড়িৎ বর্তনী বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এভাবে তড়িৎ প্রবাহ বন্ধ করে দিয়ে ফিউজ যন্ত্রপাতিকে রক্ষা করে। বর্তনীতে ফিউজ সিরিজ সংযােগ করতে হয়।
ফিউজ তারের মান বিভিন্ন হয়ে থাকে। সাধারণত আমরা ৫ অ্যাম্পিয়ার, ১৫ অ্যাম্পিয়ার, ৩০ অ্যাম্পিয়ার এবং ৬০ অ্যাম্পিয়ার ফিউজ তার ব্যবহার করে থাকি। ১০ অ্যাম্পিয়ার ফিউজ মানে এর মধ্য দিয়ে ১০ অ্যাম্পিয়ারের বেশি বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলে এটি গলে যাবে। বিভিন্ন যন্ত্রপাতির জন্য বিভিন্ন মানের ফিউজ ব্যবহার করতে হয়। বাতি, পাখা, টিভি ইত্যাদির জন্য ৫ অ্যাম্পিয়ার ফিউজ এবং ইলেকট্রিক কেটলি বা ইত্রির জন্য ১৫ অ্যাম্পিয়ার ফিউজ ব্যবহার করতে হয়। বাড়ির মেইন ফিউজ ৩০ বা ৬০ অ্যাম্পিয়ারের হয়ে থাকে।
ব্যাপারটা আর একটু বােঝার চেষ্টা করি। টেলিভিশন ৫ অ্যাম্পিয়ারের বেশি বিদ্যুৎ প্রবাহের জন্য পুড়ে যায়। এখন যদি টেলিভিশনের সাথে ৩০ অ্যাম্পিয়ারের ফিউজ লাগাও তাহলে কী হবে? এ ফিউজ কোনাে কাজে আসবে না। ইলেকট্রিক কেটলির সাথে ৫ অ্যাম্পিয়ার ফিউজ লাগালে কী হবে? সুইচ অন করলেই ফিউজটি গলে যাবে। কারণ ইলেকট্রিক কেটলিতে ৫ অ্যাম্পিয়ারের বেশি বিদ্যুৎ প্রয়ােজন হয়। যেখানে যা প্রয়ােজন সেখানে তেমন মানের ফিউজ ব্যবহার করতে হবে।
প্রয়ােজনের তুলনায় বেশি মানের ফিউজ ব্যবহার করলে কোনাে কাজ দিবে না, অর্থাৎ বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা এড়ানাে যাবে না। আবার কম মানের ফিউজ ব্যবহার করলে বারবার ফিউজ তার পুড়ে যেয়ে অসুবিধার সৃষ্টি করবে। কেউ কেউ আবার বাড়িতে ফিউজ পুড়ে গেলে তার লাগাবার সময় দুই তিনটি তার একত্র করে লাগান। এ রকম কখনাে করা উচিত নয়। কারণ, এতে ফিউজের মান বেড়ে যায়। দুইটি ১০ অ্যাম্পিয়ারের ফিউজ তার একত্র করলে ২০ অ্যাম্পিয়ার ফিউজ হয়ে যাবে।
ফিউজের সুবিধা : ফিউজের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটা অন্য প্রটেকটিভ ডিভাইসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সহজ ও সস্তা।
ফিউজের অসুবিধা : ফিউজের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো একই ফিউজকে একবারের বেশি ব্যবহার করা যায় না এবং লাইন বন্ধ করে নতুন ফিউজ লাগাতে হয়।