নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায়

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায়

আমাদের আজকের আর্টিকেল এর বিষয় হল নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় সম্পর্কে।  তবে চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক আমাদের আজকের আর্টিকেল নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় সম্পর্কে। 

নরমাল ডেলিভারি আসলে কি

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় সম্পর্কে জানার আগে আমাদের জানতে হবে নরমাল ডেলিভারি আসলে কি।  নরমাল ডেলিভারির অর্থ হচ্ছে স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় সন্তান প্রসব করা।  সাধারণত মেয়েদের মাসিকের রাস্তা দিয়ে সন্তান প্রসব করাকে চিকিৎসাশাস্ত্রে নরমাল ডেলিভারি বলা হয়।  শুধুমাত্র শিশুর মাথা যদি জরায়ুর মুখ থেকে বের হয় তাহলেই নরমালে ডেলিভারি করা সম্ভব।  শিশুর শারীরিক গঠন এবং শিশুর মাথার অবস্থান নিশ্চিত করে নরমালে ডেলিভারি হবে নাকি অন্য পদ্ধতিতে ডেলিভারি হবে।  কেননা আপনার গর্ভে যদি আপনার সন্তানটি উল্টা হয়ে থাকে, বা অন্যভাবে থাকে, সোজাসোজি থাকে, তাহলে নরমালে ডেলিভারি করা সম্ভব না। এই সকল কিছুই নির্ভর করে শিশুর অবস্থানের উপর এবং সৃষ্টিকর্তার আদেশের ওপর।

যে সকল কারণে নরমাল ডেলিভারি গুরুত্বপূর্ণ

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় জানার আগে আমাদের জানতে হবে নরমাল ডেলিভারি কেন গুরুত্বপূর্ণ। মা ও সন্তানের দুজনের জন্যই স্বাস্থ্যকর এবং নিরাপদ হল নরমাল ডেলিভারি করা।  নরমাল ডেলিভারি হাওয়া বা স্বাভাবিক প্রসব হলে সন্তানের মায়ের সুস্থ হতে ও কম সময় লাগে।  কেননা বাচ্চা যদি নরমালে হয় তাহলে তার শরীরে কিছু ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে যা বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।  যখন কিনা নরমালে ডেলিভারি হয় তখন অ্যামনিওটিক নামক তরলের সংস্পর্শে আসে বাচ্চাটির যার ফলে বাচ্চাটির শ্বাসকষ্টের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। আর আপনার যদি সিজারিয়ান পদ্ধতিতে হয় তাহলে সেক্ষেত্রে জরায়ুতে অক্সিজেন কম প্রবেশ করে যার কারণে সেরে উঠতে সময় লাগে। আর অপরদিকে নরমালে ডেলিভারি করলে আপনি অনেক তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবেন।

এছাড়াও আরো অনেক কারণ আছে নরমালে ডেলিভারি করার।

  1. নরমালি ডেলিভারি করার ক্ষেত্রে খুব সহজেই বাচ্চা মাতৃদুগ্ধ পান করার পদ্ধতি শিখে যায়।
  2. নরমাল ডেলিভারি একটি অন্যতম ভালো দিক হলো কোন কাটাকাটির ঝামেলা নেই। ফলে রোগী তাড়াতাড়ি সেরে ওঠে।
  3. আমরা সকলেই জানি নরমাল ডেলিভারিতে প্রসব বেদনা একটু বেশি সহ্য করতে হয় ঠিকই।  কিন্তু একবার প্রসব হয়ে গেলে পরবর্তীতে আর কোনো সমস্যা হয় না। অপরদিকে আপনার যদি  সিজারিয়ান পদ্ধতিতে সন্তান হয়।  তাহলে আপনার সেরে উঠতে অনেক সময় লেগে যাবে।
  4. যারা কিনা নরমাল ডেলিভারিতে সক্ষম তারা সিজারিয়ানদের থেকে বেশি কর্মক্ষম ও সাহসী হয়ে থাকেন।

 

এক কথায় বলতে গেলে প্রাকৃতিক ভাবে যদি আপনার  সন্তান প্রসব করেন তাহলে এর গুরুত্ব অপরিসীম।  নরমাল ডেলিভারির জন্য যে কত ভালো তার ডেলিভারির পরেই জানতে পারবেন।  এতে আপনার সকল হর্মনাল কাজ ঠিকঠাক মত হবে।  শরীর সুস্থ থাকবে।  এবং কি আপনার বাচ্চাটা ও সুস্থ থাকবে।  কিন্তু আল্লাহ যদি হুকুম না করেন তাহলে কোন কিছুই সম্ভব না।

গর্ভাবস্থায় যে সকল বিষয় মাথায় রাখবেন

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় সম্পর্কে জানার আগে আমাদের আগে জানতে হবে গর্ভাবস্থায় কি কি কাজ করা লাগে।  বা কি কাজ মনে রাখা লাগে এই সম্পর্কে।  আপনি গর্ভবস্থায় কিছু বিষয় সম্পর্কে মনে রাখবেন।

একজন মহিলার জীবনে গর্ভাবস্থায় সময়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। এ সময় শুধু খাবার-দাবারের দিকে নজর দিলে হবেনা সকল বিষয়ের উপর নজর দিতে হবে।  কেননা এর ফলে আপনি একটি সুস্থ শিশুর জন্ম দিতে পারবেন।  আপনাকে সবসময় মনে রাখতে হবে নরমাল ডেলিভারির অনেক সুফল রয়েছে।  তাই খাবার-দাবারের দিকেও নজর দিবে নিজের শরীরের প্রতি নজর রাখবেন।  নিচে কিছু বিষয় সম্পর্কে তুলে ধরা হলো।

  • গর্ভাবস্থায় সব সময় হাসিখুশি থাকুন।
  • মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকুন
  • ক্যাফেইন জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • পরিবারকে সময় দিন।
  • এলকোহল এবং সিগারেট থেকে দূরে থাকুন।
  • নিজেকে যতটা সম্ভব সচল রাখার চেষ্টা করুন।
  • ভালো কিছু দেখুন।
  • সব সময় মনে মনে প্রার্থনা করুন।
  • ফাস্টফুড কোলড্রিংস এড়িয়ে চলুন।
  • সব সময় ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলুন।

 

সব সময় মনে রাখবেন নরমাল ডেলিভারি একমাত্র আপনার স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে।  এবং আপনার শিশুর অবস্থানের ওপর।  তাই সঠিক পদ্ধতিতে এই সময় চলাফেরা করুন।

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায়

আমরা এখন জানব নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় সম্পর্কে। নিচে নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

ডায়েট কিংবা খাবারের তালিকা।

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় এর মধ্যে অন্যতম হলো ডায়েট।  আপনি যখন জানতে পারবেন যে আপনি গর্ভবতী তখন থেকেই নিজের বাড়তি যত্ন নেওয়া শুরু করুন।  এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়েট চার্ট মেনে চলুন।  গর্ভবতী অবস্থায় স্বাস্থ্যকর খাবার, টাটকা শাকসবজি, ফলমূল প্রচুর পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে।  আপনার খাদ্য তালিকায় মাল্টি ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন সমৃদ্ধ খাবার রাখবেন। আপনি যদি নরমালে ডেলিভারি করতে চান তাহলে অবশ্যই মাথায় রাখবেন শরীরের পেশি যত বেশি শিথিল থাকবে নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা ততই বাড়বে।  নরমাল ডেলিভারির জন্য অবশ্যই বেশি বেশি করে ফলমূল শাকসবজি আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাবেন।

প্রচুর পরিমাণে পানি খাবেন

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় এর মধ্যে অন্যতম একটি উপায় হলো প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা।  কেননা পানি আমাদের শরীরের অত্যাবশ্যকীয় একটি জিনিস।  আপনি গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন 8 থেকে 10 গ্লাস পানি খাবেন।  এতে আপনার রক্তচলাচল ভালো হবে কোষ্ঠকাঠিন্য হবে না।  তাই বলা যায় যে যত বেশি পানি খাওয়া যায় ডেলিভারি তত বেশি সহজ হয়।  গর্ভাবস্থায় পানি খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  অনেক সময় দেখা যায় খেতে চাই না বা পানি খেলে ঠান্ডা লাগে।  সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনি পানি থাকে হালকা গরম করে খাবেন।  গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত গরম কোন জিনিস খাওয়া ঠিক না তাই পানিটা খুব অল্প পরিমাণে গরম থাকবে যাতে আপনার ঠান্ডা না লাগে।

গর্ভাবস্থায় প্রেসার ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা

প্রেসার ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় এর মধ্যে অন্যতম।  কেননা আপনি যদি নরমালে ডেলিভারি করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার প্রেসার এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।  কেননা এই দুটোর মধ্যে যদি কোন টা বেড়ে যায় তাহলে নরমাল ডেলিভারি করা সম্ভব না।  যাদের গর্ভাবস্থায় প্রেসার ও ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তাদের তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।  নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। এবং মাথায় রাখতে হবে এগুলো যাতে সব সময় নিয়ন্ত্রণে থাকে।

যেকোনো কাজে একটিভ থাকা

আমাদের মধ্যে অনেক বোনেরাই আছে যারা কিনা প্রেগনেন্সির কথা শুনেই শুয়ে বসে সময় কাটাতে শুরু করে।  তাদের মধ্যে একটি ভুল ধারণা হলো যে এই সময়ে কোন কাজ করা যাবে না।  তাদের এই ধারণাটা একদম  ভুল।  প্রেগনেন্সির সময় সবসময় নিজেকে একটু অ্যাকটিভ রাখার চেষ্টা করুন।  আপনি যদি নিজেকে একটু অ্যাকটিভ রাখেন তাহলে আপনার নরমালে ডেলিভারি করা সম্ভব হবে।  গর্ভাবস্থায় আপনি যদি অতিরিক্ত বেশি অসুস্থ থাকেন তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।  চিকিৎসক যদি আপনাকে বলে বেদ রেস্ট নেওয়ার জন্য তাহলে আপনি রেস্ট নেবেন।  চিকিৎসক যদি আপনাকে বেড্রেস্ট না বলে অন্য কোন সমস্যা না থাকে তবে নিজেকে অবশ্যই অবশ্যই অ্যাক্টিভ রাখুন।

গর্ভাবস্থায় নিজেকে অ্যাক্টিভ রাখার জন্য যেসকল কাজ করতে পারেন,

  • চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে হালকা ব্যায়াম ইয়োগা করুন।
  • বাড়ির টুকটাক হালকা কাজ কর্ম করুন।
  • সকাল সন্ধ্যা হাঁটতে পারেন।
  • এগুলো করার মাধ্যমে আপনার ওজন কম থাকবে শরীর সুস্থ থাকবে এবং নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

 

গর্ভাবস্থায় চিন্তাভাবনা থেকে মুক্ত থাকুন

গর্ভাবস্থায় অবশ্যই নিজেকে চিন্তাভাবনা থেকে একটু মুক্ত রাখুন।  নরমাল ডেলিভারির জন্য শরীর সুস্থ রাখা জরুরি।  আর আপনি যদি বেশি পরিমাণ চিন্তা করেন তাহলে আপনার শরীর অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে।  তাই সবসময় নিজেকে প্রফুল্ল রাখতে চেষ্টা করুন।  এবং সব সময় ভালো চিন্তা ভাবনা করুন, পজিটিভ থাকার চেষ্টা করুন।

গর্ভাবস্থায় শারীরিক ব্যায়াম

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় এর মধ্যে অন্যতম একটি উপায় হলো গর্ভাবস্থায় শারীরিক ব্যায়াম।  আপনি যখন জানতে পারবেন আপনি গর্ভবতীর তখন থেকেই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করবেন।  এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়াম কিংবা ইয়োগা করবেন ।

এসকল বিষয় গুলো যদি আপনি মেনে চলেন তাহলে অবশ্যই আপনার ডেলিভারি নরমাল হওয়া সম্ভব।

আমাদের আজকের আর্টিকেলের বিষয়টি ছিল নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় সম্পর্কে।  আশা করি আপনারা সবাই বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় সম্পর্কে।  এগুলো কোন কিছুই আমাদের হাতে নেই।  তাই অবশ্যই সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করবেন আপনার যাতে নরমাল ডেলিভারি হয়।  আল্লাহর হুকুম ছাড়া কোন কিছুই সম্ভব না।  কিন্তু তার মানে এই না আপনি চেষ্টা করবেন না আপনি সবসময় চেষ্টা করবেন যাতে আপনার নরমালে ডেলিভারি হয়। আপনাকে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *