তিলাওয়াত শব্দের অর্থ পাঠ করা, আবৃত্তি করা, পড়া, অনুসরণ করা ইত্যাদি। আল কুরআন পাঠ করাকে ইসলামী পরিভাষায় কুরআন তিলাওয়াত বলা হয়।
কুরআন মাজীদ মুখস্ত পড়া যায়, আবার দেখে দেখেও তিলাওয়াত করা যায়। আল কোরান দেখে দেখে তিলাওয়াত করাকে নাজিরা তিলাওয়াত বলা হয়।
কুরআন মাজীদ শিখতে হলে প্রথমে দেখে দেখে তা পাঠ করতে হয়। অতঃপর হরকত, হরফ ইত্যাদি ভালোমতো চিনে তাজবীদ সহকারে পাঠ করতে হয়। আমরা অনেকেই পুরো কুরআন মাজীদ মুখস্ত করতে পারিনি। সুতরাং আমরা নিয়মিত দেখে দেখে তাজবীদ সহ আল কোরআন তেলাওয়াত করব। দেখে দেখে কুরআন তিলাওয়াত করাাও উত্তম কাজ। এতে অনেক সওয়াব পাওয়া যায়।
কোরআন মাজীদ মহান আল্লাহর পবিত্র বাণী। এটি মানুষের প্রতি আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ নেয়ামত। এটি হলো পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান ভান্ডার। এতে যেমন তাওহীদ, রিসালাত, আখিরাত, ইবাদাত ইত্যাদি বিষয়ে বর্ণনা রয়েছে, তেমনি পার্থিব জীবনের প্রয়োজনীয় নানা জ্ঞান-বিজ্ঞানের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত ও নির্দেশনা রয়েছে। এজন্য একজন ফরাসি পন্ডিত যথার্থই বলেছেন, “আল-কোরআন বিজ্ঞানীদের জন্য একটি বিজ্ঞান সংস্থা, ভাষাবিদদের জন্য এক শব্দকোষ, বৈয়াকরণ দের জন্য এক ব্যাকরণ গ্রন্থ এবং বিধানের জন্য এক বিশ্বকোষ।
তাই আল-কোরআন হালকাভাবে পাঠ করলেই চলবে না। বরং একে খুবই গুরুত্ব সহকারে তেলাওয়াত করতে হবে। এর মর্মার্থ তাৎপর্য উপলব্ধি করতে হবে। কুরআনে বর্ণিত বিষয়াদি সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা ও গবেষণা করতে হবে।
আল্লাহ তা’আলা বলেন, “তবে কি তারা কোরআন সম্বন্ধে অভিনিবেশ সরকারের চিন্তা করে না, নাকি তাদের অন্তর তালাবদ্ধ?” (সূরা মুহাম্মদ আয়াত 24)
অন্য একটি আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন, “এটি কল্যাণময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি নাযিল করেছি যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহ অনুধাবন করে এবং বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিগণ (এ থেকে) উপদেশ গ্রহণ করে।” (সূরা সা’দ আয়াত 29)
আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন, “নিশ্চয়ই আমি কোরআনকে উপদেশ গ্রহণের জন্য সহজ করে দিয়েছি, অতএব কোন উপদেশ গ্রহণকারী আছে কি?” (সূরা আল-কামার আয়াত 22)
কোরআন হলো নূর বা জ্যোতি। এটি তিলাওয়াতকারীর মর্যাদা সমুন্নত করে। কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও সান্নিধ্য লাভ করতে পারে। এর মাধ্যমে মানুষের অন্তর পরিশুদ্ধ হয়। মানুষ নৈতিক ও মানবিক গুণাবলী তো উদ্ভাসিত হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “এই অন্তরসমূহে মরিচা ধরে যেভাবে লোহায় পানি লাগলে মরিচা ধরে। তাকে জিজ্ঞাসা করা হল: হে আল্লাহর রাসূল (সা:), এর পরিশোধক কি? উত্তরে তিনি বলেন, মৃত্যুর কথা বেশি বেশি স্মরণ করা এবং কুরআন তিলাওয়াত করা।” (বায়হাক্বী)।