শিক্ষা ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আব্বাসীয় খলিফা আল-মামুনের স্থান ইসলামের ইতিহাসে অদ্বিতীয়।
তাঁর উদার পৃষ্ঠপোষকতায়, জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় এক অভাবনীয় অগ্রগতি সাধিত হয়েছিল।
যার প্রমাণ ইমাম বুখারী,ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহমেদ ইবনে হাম্বল,বীজগনিতের জনক আল- খাওয়ারিজীমি,ফারসি কবি আব্বাস,প্রখ্যাত পন্ডিত হুনাইন ইবনে ইসহাকসহ প্রমূখ ঐতিহাসিক ব্যাক্তিবর্গ।
৭৮৫ খ্রিস্টাব্দে আল-মামুন হারুন-অর-রশীদের পারস্য দেশীয় পত্নী মারাজিলের গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
ভ্রাতা আমিন গৃহযুদ্ধে নিহত হলে মামুন ৮১৩ খ্রিস্টাব্দে খলিফা রুপে সমাদৃত হন।
এই আব্বাসীয় খেলাফতেই প্রকৃত অর্থে ইসলামি সভ্যতার উন্মেষ এবং ক্রমবিকাশ শুরু হয়।
এই আব্বাসীয় খেলাফতের খলিফা আল-মামুনের সময়েই ইমাম বুখারী, শাফেয়ী, আহমেদ ইবনে হাম্বল, দার্শনিক কিন্দী, আল-খাওয়ারিজীমি,চিকিৎসাবিদ কুস্টা বিন লিউক,ঐতিহাসিক ওয়াকিদী,শতাধিক চিকিৎসা বিষয়ক মৌলিক গ্রন্থের রচয়িতা ও অনুবাদক হুনাইন ইবনে ইসহাকের মতো বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের আবির্ভাব হয়েছিল।
ঐতিহাসিকদের মতে, “জ্ঞান-বিজ্ঞানের এমন কোন ক্ষেত্র ছিলো না যাতে মামুনের যুগের কবি, দার্শনিক,জ্যোতির্বিদ,অঙ্কশাস্ত্র বিশারদ,আইনজ্ঞ, ধর্মবেত্তা,চিকিৎসক, স্থপতি,চারু ও কারু শিল্পী, ঐতিহাসিক ও রসায়নবিদ প্রভৃতিতে মনীষীগণ অবদান রেখে যান নি।”
আব্বাসীয় খেলাফতে খলিফা আল-মামুনের নেতৃত্বে সাম্রাজ্যের মধ্যে স্কুল,কলেজ,গবেষণাকেন্দ্র গড়ে তোলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রচুর অর্থ মঞ্জুরীর ব্যবস্থা করেন।
সাপ্তাহিক শিক্ষা বৈঠকঃ
খালিফা আল-মামুনের উদার পৃষ্ঠপোষকতায় পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও বিভিন্ন জাতির পন্ডিত,কবি,সাহিত্যিক,ঐতিহাসিক, দার্শনিক,বৈজ্ঞানিক, চিকিৎসাবিদ মনীষীরা তাঁর দরবারে জমায়েত হয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা করতেন।
আব্বাসীয় খেলাফতে খলিফা আল-মামুনের প্রচেষ্টায় এথেন্স,আলেকজান্দ্রিয়া, সিরিয়া,এশিয়া প্রভৃতি স্থান হতে বহু মূল্যবান প্রাচীন গ্রন্থসমূহের পান্ডুলিপি সংগ্রহ করা হয়।
গ্রিক গ্রন্থসমূহের খোঁজে খলিফা আল-মামুন কনস্টান্টিনোপল এবং আর্মেনীয় সম্রাটের দরবারে দূত প্রেরণ করেছিলেন।
প্রাচীন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দার্শনিক এরিস্টটল, প্লেটোর গ্রন্থগুলো এবং ইউক্লিড,গ্যালেন,টলেমি প্রমূখের বৈজ্ঞানিক গ্রন্থাবলি খলিফার পৃষ্ঠপোষকতায় এগুলো অনুবাদ করা হয়।
আব্বাসীয় খলিফা আল-মামুনের রাজত্বে ধর্মতত্ত্ব,হাদিসশাস্ত্র,আইনশাস্ত্র, ভাষাতত্ত্ব প্রভৃতির চর্চা অবিরাম গতিতে চলতে থাকে।
করআন শরীফের ব্যাখ্যার প্রয়োজনীয়তা থেকেই ব্যাপক ভাষাতাত্ত্বিক এবং ধর্মীয় গবেষণারের সূচনা করেন।
মুহাম্মদ বিন ইসমাইল বুখারী অর্থাৎ ইমাম বুখারী এই সময়েই বুখারী শরীফ সংকলন করেন।
আব্বাসীয় খেলাফতে খলিফা আল-মামুনের সময়ে তাঁর অসাধারণ নেতৃত্বের ফলে ইমাম বুখারী, শাফেয়ী, আহমেদ ইবনে হাম্বল, দার্শনিক কিন্দী,আল খাওয়ারিজীমি,কুসটা বিন লিউক সহ বিখ্যাত ব্যাক্তিবর্গের আবির্ভাব হয়েছিল।