১. চৌম্বক কাকে বলে ? কত প্রকার ও কি কি উদাহারন দাও
চুম্বকঃ যে সকল বস্তুর আকর্ষণ ও দিক নির্দেশক ধর্ম আছে তাদে কে চুম্বক বলে।
বিভিন্ন প্রকার চুম্বক হলোঃ
চুম্বকের আকর্ষন ও বিকর্ষনী ধর্মকে এর চুম্বকত্ব বলে ।
চুম্বকের ধর্মঃ
চুম্বকের সমমেরু পরস্পরর্কে বিকর্ষণ করে এবং বিপরীতমেরু পরস্পরকে আকর্ষণ করে। চুম্বুক সর্বদা উত্তর ও দক্ষিণমুখী হয়ে থাকে। একটি দন্ডচুম্বককে যত টুকরাই করা হোক না কেন সর্বদা উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু সৃষ্টি করে।
২. চৌম্বক পদার্থ , অচৌম্বক পদা্র্থ , চুম্বক বল রেখা , কুরি বিন্দু , চুম্বক পোলারিটি , চুম্বক মেরু , চুম্বক ক্ষেত্র ও উপমেরু এর সংঙ্গা দাও
চৌম্বক পদার্থ:
যে সকল পদার্থকে চুম্বক আকর্ষণ করে এবং যাদের চুম্বকে পরিণত করা যায় তাদের চৌম্বক পদার্থ বলে। যেমন-লোহা, লোহার যৌগ, নিকেল, কোবাল্ট।
অচৌম্বক পদার্থঃ
কোন চুম্বক যে সকল পদার্থকে আকর্ষণ করে না, ঐ সকল পদার্থকে অচৌম্বক পদার্থ বলে। উদাহরণঃ অ্যালুমিনিয়াম, স্টিল, সোনা ইত্যাদি।
প্রাকৃতিক চৌম্বক :
প্রকৃতিতে বা খনিতে পাওয়া যায় যে চুম্বক তাকে প্রাকৃতিক চুম্বক বলে । আগে প্রাকৃতিক চুম্বককে লোডস্টোন বলা হত ।
কৃত্রিম চুম্বক:
মানুষের কাজের উপযোগী বিভিন্ন চুম্বক পদার্থ ব্যবহার করে পরীক্ষাগারে বিভিন্ন আকার আকৃতির যে সকল চুম্বক তৈরি করা হয় তাকে কৃত্রিম চুম্বক বলে।
কৃত্রিম চুম্বক দুই প্রকারঃ
- ১. স্থায়ী চুম্বক : চুম্বক ক্ষেত্রে সরিয়ে নিলেও চুম্বকত্ব লোপ পায় না
- ২. অস্থায়ী চুম্বকঃ চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে আনলে চুম্বুকে পরিণত হয়, চুম্বক ক্ষেত্রে সরিয়ে নিলেও চুম্বকত্ব লোপ পায়
চৌম্বক মেরু:
কোন চুম্বকের যে অঞ্চলে চুম্বকের আকর্ষন বা বিকর্ষন বল বেশী সেইঅঞ্চলকে ঐ চুম্বকের মেরু বলে ।
উপমেরু:
ভুল পদ্বতিতে চুম্বকনের সময় মাঝে মাঝে দুই প্রান্তে বা মাঝখানে অতিরিক্ত মেরু সৃষ্টি হয় । এই অতিরিক্ত মেরুকে উপমেরু বলে ।
চৌম্বক পোলারিটি:
কোন চুম্বক পদার্থকে কোন স্থায়ী চৌম্বক ক্ষেত্রে রাখলে তা ক্ষনস্থায়ীভাবে চুম্বকে পরিনত হয় িএবং এর দুপাশে চৌম্বক দ্বিমেরু বা দ্বিপোল সৃষ্টি হয় । চুম্বকের এই ধর্মকে পোলারিটি বলে ।
চৌম্বক আবেশ:
কোন চৌম্বক পদার্থকে কোন শক্তিশালী চুম্বকের নিকটে আনলে ঐ চুম্বক পদার্থটি সাময়িক ভাবে চুম্বকে পরিনত হয় বা অন্য কোন চৌম্বক পদার্থকে আকর্ষন করে । এ ঘটনাকে চৌম্বক আবেশ বলে ।
চৌম্বক বিভব:
কোন চুম্বকের একটি একক উত্তর মেরুকে অসীম দুর থেকে চৌম্বক ক্ষেত্রের অভ্যান্তরে কোন বিন্দুতে আনতে চুম্বক বলের বিরুদ্ধে যে পরিমান কাজ করতে হয় তাকে চৌম্বক বিভব বলে ।
চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রাবল্য:
চুম্বকের ক্ষেত্রের কোন বিন্দুতে একক্ শক্তির একটি উত্তর মেরু স্থাপন করলে যে বল অনুভব করে তাকে ঐ ক্ষেত্রের প্রাবল্য বলে ।
ডায়াম্যাগনেটিক পদার্থ:
যে সকল পদার্থ খুব শক্তিশালী কোন চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্য স্থাপন করলে ঐ সকল পদার্থে ক্ষীণ চৌম্বকত্ব দেখা যেতে পারে, তাদের ডায়াম্যাগনেটিক বলে। উদাহরণ : পানি, তামা, বিসমাথ, অ্যান্টিমনি ইত্যাদি ডায়াচৌম্বক পদার্থ।
প্যারা চৌম্বক:
কোন পদার্থের উপর চৌম্বকক্ষেত্র প্রয়োগ করা হলে সামান্য পরিমান চুম্বকত্ব প্রদর্শন করে, তাকে প্যারা চৌম্বক পদার্থ বলে।
ফেরোচুম্বক পদার্থ:
যে সকল পদার্থকে কোন চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্য স্থাপন করলে ঐ সকল পদার্থে শক্তিশালী চৌম্বকত্ব দেখা যায়, তাদের ফেরোচুম্বক পদার্থ বলে। উদাহরণ : অ্যালুমিনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, প্লান্টিনাম, টিন ইত্যাদি।
কুরী বিন্দু:
যে তাপমাত্রা একটি চুম্বকের চুম্বকত্ব সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত বা নষ্ট হয়ে যায় , তাকে উক্ত চুম্বকের কুরী বিন্দু বা কুরী তাপমাত্রা বলে। যেমন-লোহার কুরী বিন্দু ৭৭০º সে:।
সলিনয়েড:
একটি কাচা লোহার দন্ডকে U আকারে বাকিয়ে লম্বা অন্তরিত তার দ্বারা জডিয়ে এর মধ্যদিয়ে তডিৎ প্রবাহিত করলে তা একটি চুম্বকের ন্যায় আচরন করে । একে সলিনয়েড বলে ।
চুম্বকের ওপর তড়িৎপ্রবাহের ক্রিয়া :
কোনো পরিবাহী তারের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ পাঠালে তার চারপাশে একটি চৌম্বক ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয় । ওই তারের কাছে একটি চুম্বক শলাকা থাকলে শলাকাটি বিক্ষিপ্ত হয় । একে চুম্বকের ওপর তড়িৎপ্রবাহের ক্রিয়া বলে
৩. পৃথিবী একটি বিরাট চুম্বক প্রমান কর
কোন দন্ড চুম্বককে ঝুলিয়ে দিলে এটি সর্বদা উত্তর দক্ষিন বরাবর অবস্থান করে । ধারণা করা হয় পৃথিবীর অভ্যন্তরে বিশাল এক চুম্বক দন্ড অবস্থিত যার দক্ষিন মেরু উত্তর দিকে আর উত্তর মেরু দক্ষিন দিকে অবস্থিত । এ বিশাল চুম্বকের আর্কষনের জন্য দন্ড চুম্বকের দক্ষিন মেরু বিশাল চুম্বকের উত্তর মেরু (দক্ষিন দিকে ) আর্কষন করে যার ফলে দন্ড চুম্বকের দক্ষিন মেরু দক্ষিন দিকে ঘুরে যায় । আবার দন্ড চুম্বকের উত্তর মেরুকে বিশাল চুম্বকের দক্ষিন মেরু (উত্তর দিকে) আর্কষন করে ফলে দন্ড চুম্বকের উত্তর মেরু উত্তর দিকে মুখ করে । এ থেকে প্রমান যে পৃথিবী একটি বিরাট চুম্বক বা চুম্বকের ন্যায় আচরন করে ।
৪. ডায়া , প্যারা ও ফেরো চুম্বকের পার্থক্য দেখাও
- ১. ফেরোচৌম্বক পদার্থ চুম্বক দ্বারা প্রবলভাবে আকর্ষিত হয়। কিন্তু প্যারাচৌম্বক পদার্থ দ্বারা ক্ষীণভাবে আকর্ষিত হয়। অন্যদিকে ডায়াচৌম্বক পদার্থ দ্বারা ক্ষীণভাবে বিকর্ষিত হয়।
- ২. ফেরোচৌম্বক পদার্থ কেলাসিত কঠিন পদার্থ। কিন্তু প্যারাচৌম্বক ও ডায়াচৌম্বক পদার্থ কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় হতে পারে।
- ৩. ফেরোচুম্বকে কুরি বিন্দু আছে অন্যদিকে প্যারা ও ডায়া চুম্বকে নেই
- ৪. ফেরেচৌম্বক পদার্থ মুক্তভাবে ঝুলানো চৌম্বক ক্ষেত্র বরাবর অতিদ্রুত স্থাপিত হয়, কিন্তু প্যারাচৌম্বক পদার্থ স্বাভাবিকভাবে চৌম্বক ক্ষেত্র বরাবর স্থাপিত হয়। অন্যদিকে ডায়াচৌম্বক পদার্থ মুক্তভাবে ঝুলানো চৌম্বক ক্ষেত্রের সমকোণে স্থাপিত হয়।
- ৫. ফেরোচৌম্বক ও প্যারাচৌম্বক পদার্থে চৌম্বক প্রবণতা ধনাত্মক, কিন্তু তা ফেরোচৌম্বক পদার্থে উচ্চমানের ও প্যারাচৌম্বক পদার্থে নিম্মমানের হয়। আবার ডায়াচৌম্বক পদার্থে চৌম্বক প্রবণতা ঋণাত্মক ও নি¤œমানের হয়। ৬. ফেরোচুম্বকে চৌম্বক ধারকত্ব ধর্ম আছে কিন্তু প্যারা ও ডায়া চুম্বকে নেই
৫. তড়িৎ চুম্বক কি? তড়িৎ-চুম্বকে কাঁচা লোহা ব্যবহার করা হয় কেন?
তড়িৎ চুম্বক :
কাঁচা লোহার দণ্ডের উপর অন্তরিত তামার তার কুণ্ডলীর মতো জড়িয়ে ওই তারের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ পাঠালে লোহার দণ্ডটি চুম্বকে পরিণত হয়। কিন্তু এই চুম্বকের চুম্বকত্ব অস্থায়ী। তড়িৎ প্রবাহ বন্ধ করা মাত্র চুম্বক্তি চুম্বকত্ব নষ্ট হয়ে যায়। এই চুম্বককে তড়িৎ চুম্বক বলে।
তড়িৎ-চুম্বকে কাঁচা লোহা ব্যবহার:
কারন, তড়িৎ প্রবাহ পাঠালে কাঁচা লোহা অস্থায়ী চুম্বকে পরিণত হয়। যতক্ষণ তড়িৎ প্রবাহ পাঠানো হয় ততক্ষণই কাঁচা লোহার দণ্ডটি চুম্বক থাকে। তড়িৎ প্রবাহ বন্ধ করা মাত্র ওর চুম্বকত্ব লোপ পায়। তাই তড়িৎ চম্বুকে মজ্জা রূপে কাঁচা লোহা ব্যবহার করা হয়।
৬. চুম্বক বলরেখা কি? চুম্বক বলরেখার ধর্ম লেখ ।
চুম্বক বলরেখা: কোনো চৌম্বক ক্ষেত্রে একটি বিচ্ছিন্ন উত্তর মেরুকে মুক্তাবস্থায় স্থাপন করলে মেরুটি যে পথে পরিভ্রমণ করে তাকে চৌম্বক বলরেখা বলে।
চুম্বক বলরেখার ধর্ম :
এরা উত্তর মেরু থেকে উৎপন্ন হয়ে দক্ষিন মেরুতে শেষ হয়
এরা পরস্পরের প্রতি পার্শ্ব চাপ প্রয়োগ করে
এরা কখনও পরস্পরকে ছেদ করে না
এরা বদ্ধ রেখা
৭. কোন বস্তুকে চুম্বকে পরিণত করা হলে এর ভর ও আয়তনের কোন পরিবর্তন হয় না কেন ?
১) কোনো চৌম্বক পদার্থকে চুম্বকে পরিণত করার সময় পদার্থটির ভৌত অবস্থার পরিবর্তন হয় না। শুধু পদার্থটির আত্তঃআণবিক সজ্জার পরিবর্তন হয় যা তার বাহ্যিক পরিবর্তনে কোন রকম প্রভাব ফেলবে না।
২) চুম্বকের চুম্বকত্ব একটি ভৌত ধর্ম। এটি কোন রাসায়নিক ধর্ম নয়। কোন বস্তুকে চুম্বকে পরিণত করা হলে এর কোন রাসায়নিক পরিবর্তন হয় না।
সুতরাং, কোন বস্তুকে চুম্বকে পরিণত করা হলে বস্তুর কণাগুলো চুম্বকশক্তি গ্রহণ করে। ফলে বস্তুটির ভর অথবা আয়তনের কোন পরিবর্তন হয় না।
৮. চুম্বক আকর্ষন ও মহাকর্ষ আকর্ষনের পার্থক্য:
চুম্বক চৌম্বক পদার্থকে আকর্ষন করে , মহাকর্ষ যে কোন বস্তুকে আকর্ষন করে
চুম্বক আকর্ষন শক্তিশালী , মহাকর্ষ আকর্ষন দুর্বল
সমমেরুকে বিকর্ষন করে , মহাকর্ষর কোন মেরু নেই
সকল বস্তুর প্রতি একই আচরন করে , মহাকর্ষ সকল বস্তুর প্রতি একই আচরন করে না
আরও কিছু তথ্য
লোহার কুরি তাপমাত্রা ৭৭০ প।
হাতুড়ি দিয়ে কোন চুম্বক পেটালে সেটি চুম্বকত্ব হারাবে।
তাপমাত্রা বাড়ালে চুম্বকত্ব কমবে।
নতুন উদ্ভাবিত সব থেকে শক্তিশালি চুম্বক হচ্ছে বোরন আয়রন নিয়োডিমিয়াম।
মেরু অঞ্চলে চুম্বকের আকর্ষণ ক্ষমতা সবচেয়ে বেশী।
চুম্বকের উত্তর মেরু আসলে পৃথিবীর ভৌগলিক দক্ষিণ মেরু।
ক্যাসেটের ফিতার শব্দ সঞ্চিত থাকে চুম্বক শক্তি হিসেবে।
রাডারে যে তড়িঃ চৌম্বক তরঙ্গ ব্যবহার করা হয় তার নাম মাইক্রোওয়েভ।
প্রাকৃতিক চুম্বককে পূর্বে লেডস্টোন বলা হতো।
কম্পিউটারের ফিতায় এবং টেপরেকর্ডারে সিরামিক চুম্বক ব্যবাহৃত হয়.
শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “চুম্বক বিষয়ক প্রশ্ন উত্তর” আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে, অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।