HISTORY

হিব্রু সভ্যতার ইতিহাস ও বৈশিষ্ট্য সমূহ

1 min read

হিব্রু সভ্যতার ইতিহাস

মধ্য এশিয়া ও নিকট প্রাচ্যের যেসব সভ্যতা আমাদের আধুনিক সভ্যতাকে প্রভাবিত করেছে তাদের মধ্যে হিব্রু সভ্যতা অন্যতম। হিব্রু সভ্যতা পূর্ববর্তী সভ্যতার অনেক কিছু আত্ম করেছিল বটে কিন্তু হিব্রু সভ্যতার মৌলিক কিছু সৃষ্টিও। আছে। বিশেষ করে একেশ্বরবাদের প্রবক্তা ইহুদীরা ধর্মে নৈতিকতা এবং পবিত্রতা রক্ষায় অধিক ভূমিকা পালন করে।

হিব্রুদের পরিচয়

প্রাচীন মিশরীয় এবং মেসােপটেমীয় সভ্যতার পর যারা প্রাচীন মানব সভ্যতায় অবদান রেখেছিল তারা হচ্ছে হিব্রু জাতি। হিব্রুরাই ইহুদী ধর্মের প্রবর্তক এবং ইসরাইলী জাতি হিসেবে সমধিক পরিচিত। ঐতিহাসিকদের মতে প্রাচীন ফোরাত নদীর (ইউফ্রেটিস নদী) অপর পাড় থেকে যে সব মানবগােষ্ঠী বিতাড়িত হয়ে প্যালেস্টাইনে বসতি স্থাপন করে- তারাই হিব্রু জনগােষ্ঠী। হিব্রু শব্দের অর্থ ‘বিদেশী (Alien) থেকে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। তাই নৃতাত্ত্বিক অর্থে হিব্রুরা কোনাে নির্দিষ্ট জাতি নয়। হিব্রু সভ্যতার অনেক উপাদানই মিসরীয় ও ব্যবিলনীয় উৎস থেকে আহরিত।

হিব্রুদের রাজনৈতিক ইতিহাস।

হিব্রু জাতি খ্রিস্টপূর্ব ১৮০০ অব্দে তাদের আদি পুরুষ ইব্রাহিমের (আব্রাহাম) নেতৃত্বে উত্তর-পশ্চিম মেসােপটেমিয়ার একত্রে বসবাস শুরু করে। অতঃপর ইব্রাহিমের পৌত্র ইয়াকুব (জ্যাকব) হিব্রুদের নিয়ে ফনেশিয়া পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে প্যালেস্টাইনে বসতি স্থাপন থেকে লােহিত, সাগরের পথে করেন। ইয়াকুব এর অপর নাম ইসরায়েল থেকেই উক্ত/ জাতি ইসরাইলী নামে পরিচিতি। ১৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মেগিদে ইসরাইলীরা দুর্ভিক্ষে পতিত হলে প্রতিবেশী মিশরে গমন করেন কিন্তু সেখানে তারা ফারাওদের অধীনে দাসত্ব বরণ করেন। খ্রিস্টপূর্ব ১৩০০-১২৫০ অব্দে নবী মুসা (মােজেস) মিশরে আবির্ভূত হয়ে হিব্রুদের মুক্ত করে সিনাই উপদ্বীপে উপস্থিত হন। এখানে এসে হিব্রুরা দেবতা যেহােভাব উপাসনা শুরু করে।

অতঃপর দাউদ (ডেভিড) এর নেতৃত্বে প্যালেস্টাইন (ফিলিস্তিন) দখলকরে এবং জেরুজালেম শহরে রাজধানী স্থাপন করেন। তিনি হিব্রু জাতিকে সুসংহত করেন। দাউদ এর মৃত্যুর পর তার পুত্র সুলায়মান (সলােমন) হিব্রুদের রাজা মনােনীত হন। তিনি ছিলেন মহাজ্ঞানী ও সুপন্ডিত।

মিসর খ্রিস্টপূর্ব ৯৩৫ অব্দে সুলায়মান মৃত্যুবরণ করলে হিব্রু জাতির পতন শুরু হয়। জেরুজালেম রাজ্য রাজ্য দ্বিখন্ডিত হয়ে উত্তরে ইসরাইল এবং দক্ষিণে জুদাহ রাজ্যে বিভক্ত হয়। পরে এ্যাসিরীয়গণ হিব্রুরাজ্য এবং ক্যালডীয় রাজা নেবুশাদনেজার জুদাহ রাজ্য দখলচিত্র ও হিব্রু সভ্যতার বিকাশ করেন। হিব্রু ধর্ম প্যালেস্টাইনকে কেন্দ্র করে হিব্রু জাতির উত্থান সভ্যতার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী ঘটনা।

হিব্রু ধর্মের (ইহুদী জাতির) ধর্মগ্রন্থ তাওরাত বা ওল্ড টেস্টামেন্ট (Old Testament)। মুসা (আ) এর নেতৃত্বে তারা একেশ্বরবাদের প্রতীক হিসেবে যেহােভা’র আরাধনায় আকৃষ্ট হয়। মুসার মৃত্যুর পর হিব্রু ধর্ম কুসংস্কারে পতিত হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৬ অব্দে পারস্যের হাতে জেরুজালেমের পতন ঘটলে হিব্রুরা পারস্যের অধীনস্থ হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন বন্দীদশায় থাকার পর এক পর্যায়ে হিব্রুদের মধ্যে নব চেতনার উদ্ভব হয়। এ যুগে ইহুদীরা জরথুস্ত্র ধর্মের প্রভাবে আসে এবং আবার একেশ্বরবাদে আকৃষ্ট হয়। তাই ইসলামের মতাে ইহুদী ধর্মও একেশ্বরবাদের ওপর প্রতিষ্ঠিত।

হিব্রু আইনের ইতিহাস।

আইন তৈরীতে এ্যামারাইটদের ন্যায় হিব্রুদেরও যথেষ্ট অবদান আছে। তবে তাদের আইন অনেকটা হাম্মুরাবীর আইনের দ্বারা প্রভাবিত। ব্যবিলনীয় আইনের অনুকরণে তারা যে আইন তৈরী করে তা ‘ডিউটোরােনােমিক কোড’ নামে পরিচিত। এই কোড হাম্মুরাবীর আইনের চেয়ে অনেকটা পরিশুদ্ধ। তাদের প্রণীত অনুশাসনে গরীব দুঃখীদের স্বার্থরক্ষা, মানবতা, দাসদের মুক্তির যথাযথ ব্যবস্থার উল্লেখ রয়েছে। ঐতিহাসিকদের মতে এই আইনের প্রয়ােগের ফলে রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা মজবুত হয়। হিব্রু সাহিত্য সাহিত্য চর্চায় হিব্রুদের পারদর্শিতা লক্ষ্য করা যায়। তাদের সাহিত্য কর্ম ‘ওল্ড টেস্টামেন্ট’ (Old Testament) এবং ‘অ্যাপক্রিপা’য় (Apoerypha) লিপিবদ্ধ আছে।

মুসার (আ) অনেক বাণী ওল্ড টেস্টামেন্টে সংগৃহীত করা হয়েছে। রাজা দাউদ (ডেভিড) প্লাসম (Psalms) এর অধিকাংশ পরিচ্ছেদ লিপিবদ্ধ করেন। যা শ্রেষ্ঠ সাহিত্য কর্ম বলে বিবেচিত। “উইজডম অব সলােমন” একটি শ্রেষ্ঠ ইহুদী সাহিত্য গ্রন্থ। এ ছাড়া “সােলেমানের গীতিকা” (Song’s of Solomon) হিজাতির জনপ্রিয় গীতিকা। হিব্রু শিল্পকলা এবং স্থাপত্য অতুলনীয়। রাজা দাউদ জেরুজালেমকে ঐশ্বর্যশালী তিলােত্তমা নগরীতে পরিণত করেন। জেরুজালেমে এখনাে অনেক স্থাপত্য তাঁর কীর্তি বহন করছে।

5/5 - (13 votes)
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x