উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনে লর্ড কর্নওয়ালিসের বিভিন্ন সংস্কার কার্যাদির মধ্যে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত একটি অন্যতম সংস্কার হিসেবে বিবেচিত ছিল। সূর্যাস্ত আইন ছিল এই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তেরই একটা অংশ।
মুগল শাসনামলে ভূমির মালিকানা ছিল রাষ্ট্রের। রায়ত বা প্রজাগণ তাতে প্রথাগত অধিকার ভোগ করত। আর জমিদারগন ছিলো প্রজাদের থেকে কর আদায়কারী এজেন্ট বা প্রতিনিধি।কিন্তু ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের অধীনে জমি জমিদারদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে পরিগণিত হবে।
১৭৯৩ সালের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের চুক্তির মধ্যে একটি রীতি ছিল নির্দিষ্ট দিনে সূর্যাস্তের পূর্বে রাজস্ব জমা দিতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ে রাজস্ব জমা দিতে ব্যর্থ হলে জমিদার তার জমিদারি হারাবেন বলে উল্লেখ করা হয়। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের এ রীতিই সূর্যাস্ত আইন (Sun Set Law) নামে সর্বাধিক পরিচিত।
১৪ নং রেগুলেশনে বিধান করা হয়েছিল যে, রাজস্ব পরিশোধে অক্ষম জমিদারদের জমি প্রকাশ্য নিলামে বিক্রয় করে জমিদারদের বকেয়া রাজস্ব আদায় করা হবে।
এই আইন অনুসারে জমিদারেরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সরকারের প্রাপ্য রাজস্ব পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সরকারে রাজস্ব পরিশোধ করতে না পারলে, তাকে সমগ্র জমিদারি বা তার অংশ বিক্রি করে সরকারের প্রাপ্য রাজস্ব মেটাতে হয়। অন্যথায় তার জমিদারি বাজেয়াপ্ত হবে।
পূর্বে, ১৭৯০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি, লর্ড কর্নওয়ালিস রাজস্ব সংগ্রহের অংশ হিসেবে দশসালা বন্দোবস্ত চালু করেন এবং পরবর্তীতে ডাইরেক্টর সভার অনুমোদনক্রমে এটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বলে ঘোষিত হয়।
এই আইনের শর্ত অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় রাজস্ব ১২টি কিস্তিতে জেলা কালেক্টরেটে নিকট পরিশোধ করতে হতো। যদি জমিদারগণ কোনভাবেই এই কর আদায় করে জমা দিতে ব্যর্থ হতো, তাহলে তার জমিদারী নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হতো। এক্ষেত্রে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন অতি বৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি কারণে ফসল নষ্ট হয়ে গেলেও সরকার এতে কর্ণপাত করতো না।
রাজস্বের হার বেশি হওয়ায় সময়মতো রাজস্ব দেওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল। সূর্যাস্ত আইনের ফলে মাত্র ২২ বছরের মধ্যে প্রায় অর্ধেক সংখ্যক জমিদার তাদের জমিদারি হারায়। কেবল সে সমস্ত জমিদারি টিকে থাকতে সক্ষম হয় যারা সামন্ত প্রথার অনুকরণে নির্দিষ্ট পরিমাণ খাজনা দেওয়ার শর্তে তালুকদার, ইজারাদার প্রভৃতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শ্রেণীকে জমি বন্দোবস্ত দিয়েছিল।
সূর্যাস্ত আইন চালু করেন লর্ড কর্নওয়ালিস। তিনি ১৭৯৩ সালের ২২ মার্চ এটি চালু করেন। ১৪ নং রেগুলেশনে বিধান করা হয়েছিল যে, রাজস্ব পরিশোধে অক্ষম জমিদারদের জমি প্রকাশ্য নিলামে বিক্রয় করে জমিদারদের বকেয়া রাজস্ব আদায় করা হবে।