International

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণ ও ফলাফল

1 min read
পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম রক্তক্ষয়ী মহাযুদ্ধ হল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। নতুন নতুন সামরিক প্রযুক্তি ও ভয়াবহ ধ্বংসের জন্য প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সর্বাধিক আলোচিত। পৃথিবীর ইতিহাসে এর আগের কোন যুদ্ধে কখনোই এতো মানুষের প্রাণ যায়নি। যুদ্ধে সামরিক  ও বেসামরিক মিলে প্রায় ১৬ মিলিয়ন লোকের প্রাণ গিয়েছিল।
১৯১৪ সাল থেকে শুরু হওয়া এই মহাযুদ্ধটি ১৯১৮ পর্যন্ত চলেছিল। প্রায় ৫ বছর ধরে চলা প্রথম বিশ্বের কারণ ও ফলাফল নিয়ে আজকের আলোচনা।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণ

১ম বিশ্বযুদ্ধের শুরুটা হয় অস্ট্রিয়ার যুবরাজ আর্কডিউক ফার্ডিনান্ড হত্যার মধ্য দিয়ে। ১৯১৪ সালের ২৮ শে জুন, তাঁকে বসনিয়ার রাজধানী সেরোজিবেতে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। তাকে হত্যা করে সার্বিয়ান নাগরিক গ্রাব্রিলো প্রিন্সিপ। এমনিতেই  প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরুর কয়েক বছর পূর্বে পুরো ইউরোপ বিশেষ করে দক্ষিণ পূর্ব ইউরোপের বলকান অঞ্চলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল।
ইউরোপীয় শক্তি, অটোমান সাম্রাজ্য, রাশিয়া এবং অন্যান্য দেশের সাথে তাদের শক্ত জোট ছিল কিন্তু বলকান অঞ্চল বিশেষত বসনিয়া, সার্বিয়া এবং হার্জেগোভিনার রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এই চুক্তিগুলি ধ্বংস করার হুমকি হিসেবে দেখা দেয়।
এই হত্যাকাণ্ডের ফলে বহুদিনের অস্ট্রিয়া ও সার্বিয়ার পারস্পরিক শত্রুতা একেবারে চরম আকার ধারণ করে। অস্ট্রিয়া সরকার তখন হত্যার অপরাধে কতগুলো শর্ত আরোপ করে এক চরমপত্র দেয় সার্বিয়ার উপর। চরম পত্রের দাবি অধিকাংশ মানলেও সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে কয়েকটি দাবি পূরণ করার নয় বলে ঘোষণা দেয় সার্বিয়ার।
সার্বিয়ার এমন হঠকারিতার কারণে সকল প্রকারের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে অস্ট্রিয়া সরকার। উভয় পক্ষ তাদের সৈন্য সমাবেশ করতে শুরু করে দেয়। ফলে তারা ক্রমশ যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যায়। বলকান অঞ্চলের রাজনৈতিক আধিপত্য থাকায় রাশিয়া এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ১৯১৪ সালের ১৮ই জুলাই, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রি সাজোনভ অস্ট্রিয়ার রাষ্ট্রদূতকে সার্বিয়ার উপর হেনস্তা, নির্যাতন, এবং কোন প্রকার সামরিক ব্যবস্থা নিলে রাশিয়া তা মেনে নিবেনা বলে সতর্ক করেন।
২৬ জুলাই, ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রি স্যার এডওয়ার্ড গ্রে এই বলকান অঞ্চলের সমস্যা নিরসনের জন্য ফ্রান্স, ইতালি ও জার্মানির সাথে এক কূটনৈতিক বৈঠকের প্রস্তাব দেন। ফ্রান্স ও ইতালি বৈঠকের সম্মতি দিলেও জার্মান সরকার তা বাতিল করে দেন।
এরপর ১৯১৪ সালের ২৮ জুলাই, অস্ট্রিয়া সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। অস্ট্রিয়া ও জার্মানির সৈন্য সার্বিয়ার অভিমুখে চললে রাশিয়াও যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে। এদিকে রাশিয়া সেনা সমাবেশ করলে যুদ্ধটি অস্ট্রে-হাঙ্গেরি থেকে রুশ- জার্মানিতে যুদ্ধে রুপান্তরিত হয়।
জার্মানির প্রধান সেনানায়ক কাইজার ৩১ জুলাই, রাশিয়ার নিকট এক চরমপত্রে তাদের সেনা সমাবেশ বন্ধের নির্দেশ দেয়। কিন্তু রাশিয়া আদেশ প্রত্যাখান করলে জার্মানি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে দেয়। রাশিয়া ছাড়াও জার্মানি  ফ্রান্সকে যুদ্ধে নিরপেক্ষ থাকার জন্য এক চরমপত্র পাঠায় কিন্তু ফ্রান্স সেটি আগ্রাহ্য করলে জার্মানি ফ্রান্সের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ ঘোষণা করে।
ইংল্যান্ড আগস্টে জার্মানিকে শতর্ক করে এক চরমপত্র প্রেরণ করে যেন যুদ্ধে না জড়ায়। জার্মানি চরমপত্রের কর্ণপাত না করলে ইংল্যান্ড তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এভাবেই অস্ট্রো-সার্বিয়ার যুদ্ধ বিশ্বযুদ্ধে রুপ নেয়।
এই যুদ্ধে একদিকে কেন্দ্রিয় শক্তিজোট (জার্মান, অস্ট্রিয়া ও অটোম্যান শক্তি) অন্যদিকে মিত্রশক্তি নামে পরিচিত (সার্বিয়া, রাশিয়া, ফ্রান্স, ব্রিটেন, জাপান, বেলজিয়াম, কানাডা, নিউজিল্যান্ড। এছাডাও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।
আমেরিকা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে একপ্রকার নিরপেক্ষতা অবলম্বন করেছিল কিন্তু জার্মানির আক্রমণাত্মক ও সাবমেরিন যুদ্ধ চালালে আমেরিকার পক্ষে স্থির থাকা সম্ভব হয়নি। এছাড়া যুদ্ধে জার্মানির টর্পেডোর আঘাতে আমেরিকার কিছু জাহাজের ক্ষয়ক্ষতি হয়। যার ফলে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।
আমেরিকা যুদ্ধে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত কেন্দ্রিয় শক্তিজোটের যুদ্ধে জয়লাভের সম্ভাবনা একপ্রকার নিশ্চিত ছিল। তবে তাদের যোগদানের পর যুদ্ধের গতি পাল্টাতে থাকে এবং ক্রমশ মিত্র শক্তি জোটের অনুকূলে চলে আসে।
১৯১৮ সালের ৯ই নভেম্বর, জার্মানীর অভন্তরীণ বিপ্লব শুরু হয়। জার্মান নৌবাহিনীর বিপ্লবের মুখে সেনাপ্রধান কাইজার হল্যান্ডে পালিয়ে যান। এরপর জার্মানি ১১ নভেম্বর যুদ্ধ বিরতি প্রার্থনা চাইলে অবশেষে যুদ্ধ বন্ধ হয়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল

এই যুদ্ধের ফলাফল ছিল সেসময়ের জন্য ভয়াবহ ব্যপার। এর পূর্বে যতগুলো যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল সেগুলো থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মৃত্যুর সংখ্যা ছিল দ্বিগুণ বেশি। বিশ্বের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ এই যুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ে। মিত্রশক্তি জোটের সবচেয়ে বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে।
সামিরক লোকের চেয়ে বেসামরিক সাধারণ লোকের মৃত্যু হয়েছে বেশি। যুদ্ধাবস্থায় খাদ্যভাব, রোগ ও মহামারির কারণে এসকল সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এছাড়া যুদ্ধরত সকল দেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সর্বপ্রথম বিভিন্ন মরণাস্ত্রের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। বোমারু বিমান, সাবমেরিন, ভারী কামান, ট্যাংক, বিস্ফোরক বোমা, এবং বিষাক্ত গ্যাসের মত মরণঘাতি অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছিল এতে।
5/5 - (11 votes)
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x