সামাজিক পরিবর্তনের উপাদানসমূহ

চারটি মূল উপাদান সামাজিক পরিবর্তনকে প্রভাবিত করে তা হল পরিবেশ, প্রযুক্তি, সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং জনসংখ্যা। এছাড়া অন্যন্য উপাদানগুলো হল, প্রাকৃতিক উপাদান, জৈবিক উপাদান, সাংস্কৃতিক উপাদান, শিক্ষা, প্রযুক্তি, যোগাযোগ, শিল্পায়ন ও নগরায়ণ ইত্যাদি।

সামাজিক পরিবর্তনের উপাদান

১. সাস্কৃতিক উপাদান
সামাজিক পরিবর্তনের একটি অন্যতম উপাদান হল সংস্কৃতি। সমাজের বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি, মানুষের মূল্যবোধের পার্থক্য, উদ্দেশ্য ও আদর্শের ভিন্নতা প্রভৃতি সামাজিক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে। সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠান যা সমাজের মধ্যে নানা রকমের পরিবর্তন সৃষ্টি করে।
২. প্রাকৃতিক উপাদান
ভূ-প্রকৃতিগত অবস্থান সামাজিক পরিবর্তনের একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হতে পারে। ধীর এবং আকস্মিক ভৌগোলিক পরিবর্তন যেমন জলবায়ু সংক্রান্ত পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন প্রভৃতি মানুষের জীবনযাত্রার উপর প্রভাব ফেলে।
এর ফলে সমাজের ব্যাপক পরিবর্তন সাধন হয়। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় নতুন নতুন সমস্যা সৃষ্টি করে। মানুষ এসব সমস্যা মোকাবিলায় নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করে সমাজের পরিবর্তন সাধন করে।
৩. জৈবিক উপাদান
জৈবিক উপাদান বৃদ্ধি বা হ্রাস, স্থানান্তর অথবা ঘনত্বের পরিবর্তন সামাজিক পরিবর্তনে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিনিয়ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বেকারত্ব, শিশুশ্রম ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে তীব্র প্রতিযোগিতার মতো নানামুখী সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
৪. শিক্ষা
শিক্ষা হলো এক ধরনের সংস্কার সাধন ও বিরামহীন প্রক্রিয়া। এটি সমাজে সদস্যদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার আত্মবিশ্বাস ও বিচার বিবেচনার ক্ষমতা জাগ্রত করে। শিক্ষায় যাবতীয় অজ্ঞতা, কুসংস্কার প্রভৃতি থেকে মুক্তি দেয়। বর্তমানে সামাজিক পরিবর্তনে শিক্ষা বিরাট ভূমিকা রেখে চলছে। এখন ঘরে বসেও দূরবর্তী কোন দেশের শিক্ষা লাভ করা সম্ভব।
৫. যোগাযোগ
যে দেশের যোগাযোগ মাধ্যম যত উন্নত সে দেশের অর্থনীতিও তত উন্নত। উন্নত যোগাযোগ সামাজিক পরিবর্তনের একটি অন্যতম উপাদান। এই যোগাযোগ বিভিন্নভাবে হতে পারে যেমন জল,স্থল ও আকাশপথে যোগাযোগ। এছাড়া টেলিফোন, ফ্যাক্স, ইন্টারনেট, ই-মেইল, ডিস এন্টেনা, মোবাইল, রেডিও, টেলিভিশন, পত্র-পত্রিকা প্রভৃতি সামাজিক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে।
৬. শিল্পায়ন ও নগরায়ণ
শিল্পায়ন ও নগরায়ন অর্থনৈতিক জীবনে আমূল পরিবর্তন ঘটায়। শিল্প এলাকায় মানুষের কর্মক্ষেত্র তৈরী হয়। ফলে জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পায়। নগরায়ণের মাধ্যমে মানুষের কর্মের ক্ষেত্র তৈরী, আর্থিক সচ্ছলতা আনয়ন, এবং বেকারত্ব দূর করা যায়। ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের পর এর প্রভাবে সারা পৃথিবীতে শিল্পায়ন ও নগরায়ন বৃদ্ধি ঘটে।
৭. প্রযুক্তি
প্রযুক্তি হল বিজ্ঞানের প্রায়োগিক দিক। প্রযুক্তির নতুন নতুন উদ্ভাবন এবং এর প্রসারের মাধ্যমে সমাজব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিবর্গের মানসিক গঠন এবং সামাজিক কাঠামোর পরিবর্তন সাধিত হয়।
যেমন- বেতারের আবিষ্কার সামাজিক জীবনে আমোদ- প্রমোদের ব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা, রাজনীতি এবং অন্যান্য আরও বহু ধরনের সামাজিক কাজকে প্রভাবিত করেছে। মোটর ইঞ্জিন আবিষ্কার আজ সামাজিক সম্পর্কের পরিধিকে বিস্তৃত করেছে।

Similar Posts