প্রাকৃতিক পরিবেশ কাকে বলে?
প্রাকৃতিক পরিবেশকে ভৌগলিক পরিবেশও বলা হয়। মানুষ তার চারদিকে প্রকৃতির সৃষ্টির বৈচিত্র্যের যে সমারোহ লক্ষ্য করে তা-ই প্রাকৃতিক পরিবেশ। প্রাকৃতিক পরিবেশ বলতে আমাদের চারপাশের ভূ-প্রকৃতি, জলবায়ু, পাহাড়-পর্বত, নদ-নদী, সাগর-মহাসাগর, খাল-বিল, বন-জঙ্গল, বৃষ্টিপাত ইত্যাদি সবকিছুর মিলিত বাহ্যিক রূপকে বুঝায়।
প্রাকৃতিক পরিবেশের পরিবর্তন
প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রকৃতির দান হলেও মানুষ তার কর্মকাণ্ড দ্বারা পরিবেশের অনুকূল বা প্রতিকূল পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। গাছ-পালা উজাড় করছে, নির্বিচারে পশু-পাখি হত্যা করছে, নদীর গতিপথ পরিবর্তন করছে এবং কীটনাশক ও রাসায়নিক সার মাত্রাতিরিক্তভাবে ব্যবহার করছে। এছাড়া যানবাহন ও কলকারখানার ধোঁয়া, পলিথিনের ব্যবহার ইত্যাদি পরিবেশের বিপর্যয় ঘটাচ্ছে। যুদ্ধ, মারনাস্ত্রে আণবিক বোমার পরীক্ষানিরীক্ষার দ্বারা পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে। এ বিপর্যস্ত পরিবেশ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মানব জীবনের উপর হুমকি হয়ে দেখা দিচ্ছে।
প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় নাগরিক সমাজের দায়িত্ব
প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার জন্য নাগরিকমণ্ডলীকে সবসময় সজাগ থাকতে হবে এবং যথাযোগ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। যেখানে সেখানে মলমূত্র ত্যাগ না করা, আবর্জনা না ফেলা, বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, গাছপালা না কাটা, অধিকহারে গাছ লাগানো এবং পুকুর ও ডোবা পরিষ্কার রাখা নাগরিকমণ্ডলীর দায়িত্ব। মলমূত্র ত্যাগের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ও প্রশ্রাবখানা তৈরি করা, ময়লা ও আবর্জনা ফেলার জন্য ডাস্টবিন ব্যবহার করা এবং একাজে একে অপরকে উদ্বুদ্ধ করা সকলের নাগরিক দায়িত্ব। এভাবে যাতে আমরা সবাই সুন্দর, সুস্থ ও নিরাপদ পরিবেশে জীবন যাপন করতে পারি সেদিকে সকল নাগরিককে লক্ষ রাখতে হবে।
প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় আন্তর্জাতিক সমাজের দায়-দায়িত্ব
পৃথিবীর প্রত্যেকটি রাষ্ট্রই আন্তর্জাতিক সমাজের সদস্য। এ হিসেবে প্রত্যেক নাগরিকই আন্তর্জাতিক সমাজের সদস্য। সুতরাং সকল মানুষের কল্যাণের জন্য আন্তর্জাতিক সমাজ ও সংস্থাগুলিকে পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য এবং বিপর্যয় রোধের জন্য ভূমিকা পালন করতে হবে। কোন রাষ্ট্র যেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিরূপ অবস্থা সৃষ্টি করে জীবনের উপর হুমকি সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়− আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত গঙ্গা নদীর উজানে বাঁধ দেওয়ায় নদ-নদীর পানি কমে গিয়ে বাংলাদেশ মরুভূমিতে পরিণত হতে চলেছে, চাষ-বাসের জন্য প্রয়োজনীয় পানির অভাব হচ্ছে, লবণাক্ততা বাড়ছে এবং বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সমাজের এদিকে নজর দেওয়া উচিত।
জলে, স্থলে ও অন্তরীক্ষে আণবিক বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ, সমুদ্র বক্ষে লাখ লাখ টন বর্জ্য পদার্থ নিক্ষেপ, বিষাক্ত গ্যাস দুর্ঘটনা, যুদ্ধ ও বোমা বর্ষণের ফলে বিশ্ব আজ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। সুতরাং আন্তর্জাতিক নদ-নদী পাহাড়-পর্বত, সাগর-মহাসাগর, বনভ‚মি, স্থলপথ, জলপথ ও আকাশপথের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সমাজকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আন্তর্জাতিক সমাজের তদারকিতে সকল প্রকার আণবিক মারণাস্ত্র ধ্বংস করতে হবে এবং এসবের পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ করতে হবে। যুদ্ধের পরিবর্তে শান্তি স্থাপন করতে হবে। তবেই পৃথিবী বাসযোগ্য হয়ে উঠবে।