Modal Ad Example
বাংলা

গাথাকাব্য কি? এর প্রকার ও বৈশিষ্ট্য

1 min read

গাথাকাব্য কি

আখ্যানমূলক লোকসঙ্গীতকে গাথাকাব্য বা গীতিকা বলে। গাথাকাব্যের ইংরেজি Ballad। ব্যালাড শব্দটি এসেছে ফরাসি শব্দ Ballede থেকে যার অর্থ নৃত্য। প্রাচীন ইউরোপে নৃত্যের সাথে যে কবিতা গাওয়া হত তাকেই Ballad বা গাথাকাব্য বা গীতিকাব্য বলা হত।
মধ্যযুগ থেকে ১৯ শতকের শেষ পর্যন্ত, ব্রিটেন এবং আয়ারল্যান্ডের জনপ্রিয় কবিতা এবং গানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল এই ব্যালাডস বা গাথাকাব্য। এগুলো প্রথমত ইউরোপে এবং পরে অস্ট্রেলিয়া, উত্তর আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকাতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল।
পাশ্চাত্ত্যের মতো আমাদের স্বদেশীয় গাথাগুলোর অধিকাংশে সুরসংযোগে গেয়, বাদ্যসহযোগে তালসংযুক্ত এবং ক্বচিৎ নৃত্যযোগে বৈচিত্র্যীকৃত। এক দেশের সঙ্গে আর এক দেশের ব্যক্তি ও সমাজমানসের পার্থক্যের জন্য গাথার রূপ ও প্রকৃতি অল্পস্বল্প পৃথক হলেও গাথা সর্বত্রই ব্যক্তিমুদ্রাহীন লোকচিত্ত-উদ্ভূত একপ্রকারের প্রকৃত লোকসাহিত্য। প্রাচীন কাব্যবিভাগ অনুসারে এগুলো খণ্ডকাব্য, যদিও পূর্ণাঙ্গ খণ্ডকাব্য নয়। কালে কালে জোড়া-তালি লাগানো। তবুও এর প্রকৃতি ক্ষুদ্র আখ্যায়িকা-কাব্যেরই।
ডঃ দীনেশচন্দ্র সেন কবি জসীম উদ্দিন ও চন্দ্রকুমার দে’র সাহায্যে ময়মনসিংহের পল্লী অঞ্চল থেকে যে-সব গাথাকাব্য সমাহরণ করে প্রকাশ করেছেন তা নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যের এক অভাবনীয় সাফল্য।
বাংলা সাহিত্যের প্রথাগত ও প্রাচীন গাথাকবিতা হল এই মৈমনসিংহ গীতিকা ও পূর্ববঙ্গ গীতিকা। মৈমনসিংহ গীতিকা’ সংকলনে মহুয়া, মলুয়া, চন্দ্রাবতী প্রভৃতিতে গাথাকাব্য সন্নিবিষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে ‘কাজলরেখা’ গদ্যপদ্যময় চম্পূ কাব্য মূলত রূপকথা শ্রেণীর। বাকি ন’টির মধ্যে দস্যু কেনারামের পালা ছাড়া সবগুলোই প্রণয়মূলক।
তার মধ্যে রূপবতী ও কমলার কাহিনীতে বিচ্ছেদদুঃখ এবং বিপদ অন্তে মিলন বর্ণিত হয়েছে। এছাড়া মহুয়া, মলুয়া, চন্দ্রাবতী, দেওয়ান ভাবনা, কঙ্ক ও লীলা এবং দেওয়ান মদিনাতে নিষ্ঠুর ট্র্যাজেডির কাহিনী বর্ণিত হয়েছে।

গাথাকাব্যের বৈশিষ্ট্য

সাহিত্যিক গাথা বলতে আমরা বুঝি তার মধ্যে আখ্যানভাগ বা বিশেষ একটি ঘটনা থাকবে। গল্পের কাহিনী হবে সরল ও অনাড়ম্বর। গল্পাংশ বর্ণনায় নাটকীয় সংস্থান সৃষ্টি বিশেষ প্রয়োজনীয়। গাথা কবিতা বস্তু-নিষ্ঠ বলে এতে আত্মগত ভাব-কল্পনা অপেক্ষা জনগণ-নিষ্ঠ ভাব কল্পনার প্রাধান্য বেশি থাকে।
প্রাচীন ও মধ্যযুগের গাথাকাব্যের মুখ্য বিষয় ছিল প্রণয়, প্রণয়বিচ্ছেদ, প্রতিহিংসা প্রভৃতি। এছাড়াও ছিল ভ্রাতৃপ্রীতি, ধর্মদ্বন্ব, বন্ধুপ্রীতি, মাতৃস্নেহ, ইত্যাদি।
মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে মুকুন্দরামের চণ্ডীমঙ্গলঘনরামরূপরাম প্রভৃতির রচিত ধর্মমঙ্গল, কেতকাদাস ক্ষেমানন্দের মনসা মঙ্গল বা মনসার ভাসান, শিবায়ন প্রভৃতি কাব্য, এবং ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল এই শ্রেণীর কাব্যের উদাহরণ। এছাড়া ‘গোরক্ষবিজয়’, ‘ময়নামতীর গান’, ‘ময়মনসিংহ গীতিকা’ প্রভৃতিও গাথা সাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত।

গাথাকাব্যের প্রকারভেদ

প্রাচীন গাথাকাব্য বা লোকগীতি সমূহকে নানাভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ১. ইতিহাস আশ্রিত, ২. ধর্মাশ্রিত, ৩.প্রণয় আশ্রিত, এবং বারমাস্যা প্রভৃতি।
১. ইতিহাস আশ্রিত: স্থানীয় কোন ঐতিহাসিক বা জনশ্রুতিমূলক ঘটনা ইতিহাস আশ্রিত গাথাকাব্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল। বাংলাদেশের সামাজিক ইতিহাস রচনায় এই জাতীয় গাথাকাব্যগুলো অনেক ক্ষেত্রে আবার তথ্যের পরিচায়ক হয়ে উঠেছে।
২. ধর্মাশ্রিত: লৌকিক দেব-দেবীকে অবলম্বন করেই ধর্মাশ্রিত কাব্য গড়ে উঠত।
৩. প্রণয় আশ্রিত: এসকল গাথাকাব্যগুলোতে লৌকিক প্রেমকাহিনী বা নরনারীর প্রেমকথাই স্থান পেয়েছে।
৪. বারমাস্যা: বাংলার ছয় ঋতুভেদে বারমাসের জনজীবনের বিবরণ সুন্দরভাবে বারমাস্যাতে বর্ণিত হত।
5/5 - (13 votes)
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x