Modal Ad Example
রসায়ন

গ্রীনহাউজ কি? গ্রীনহাউজ গ্যাস ও প্রভাব

1 min read

গ্রীন হাউজ কি?

গ্রিনহাউজ হল কাঁচের তৈরি একটি ঘর যা শীত প্রধান দেশে গাছপালা জন্মাতে ব্যবহার করা হয়। গ্রীনহাউজের ভিতরে আটকে থাকা সূর্যের তাপ বাইরে বের হতে পারে না। ফলে গ্রিনহাউজের ভিতরের গাছপালা এবং বাতাস উষ্ণ থাকে যা গাছের বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।
শীতল আবহাওয়ায় উপযুক্ত উষ্ণতার অভাবে শাক-সবজী, ফল-মূল চাষাবাদে বিঘ্ন ঘটে। এ সকল গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ ঠান্ডা সহিঞ্চু নয় বা ঠান্ডা সহ্য করতে পারে না। তাই, শীত প্রধান দেশে শাক-সবজী, ফল-মূল চাষের জমির উপর স্বচ্ছ কাঁচ দ্বারা এমন ঘর তৈরি করা হয় যাতে সূর্যের আলো স্বচ্ছ বস্তুর ভিতর দিয়ে এরূপ বদ্ধ ঘরে প্রবেশ করতে পারে, কিন্তু উৎপন্ন তাপ ভেতর থেকে বের হতে পারে না। ফলে, অল্প সূর্যের আলোতেও যথেষ্ঠ তাপ উৎপন্ন হয়ে শাক-সবজী, ফল-মূলকে উপযুক্ত উষ্ণতা প্রদান করে।
আমাদের পৃথিবীও একপ্রকার গ্রীনহাউজ। দিনের বেলা সূর্য পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে। রাতে, পৃথিবী যখন ঠান্ডা হয়, তখন তাপ বায়ুমণ্ডলে ফিরে আসে। এই প্রক্রিয়া চলাকালীন, তাপ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে গ্রীনহাউজ গ্যাস (CO2, CH4, N2O, O3) দ্বারা শোষিত হয়। এটিই পৃথিবীর পৃষ্ঠকে উষ্ণ করে তোলে, যা পৃথিবীতে জীবিত প্রাণীদের বেঁচে থাকা সম্ভব করে তোলে।

গ্রীনহাউজ গ্যাস

বায়ুমন্ডলের যে সকল গ্যাস তাপীয় অবলোহিত (infrared) সীমার মধ্যে বিকিরিত শক্তি শোষণ ও নির্গত করে সে সকল গ্যাসকে গ্রীনহাউজ গ্যাস বলে। অর্থাৎ গ্রিনহাউজ গ্যাস হচ্ছে সেই গ্যাস সমূহ যা অবলোহিত বিকিরণ শোষণ করে এবং একটি গ্রিনহাউস প্রভাব তৈরি করে। এই গ্যাসগুলো বায়ুমণ্ডলে তাপ আটকে রাখার কাজ করে।
পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রাথমিক গ্রিনহাউস গ্যাস গুলোর মধ্যে আছে জলীয় বাষ্প (H2O vapor), কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2), মিথেন (CH4), নাইট্রাস অক্সাইড (N2O) এবং ওজোন (O3)।এগুলো বায়ুমণ্ডলে না থাকলে পৃথিবী থেকে বিকিরিত তাপ মহাশূন্যে চলে যেত। ফলে পৃথিবী রাতের বেলায় ঠাণ্ডা হয়ে পড়ত। তবে গ্রীনহাউজ গ্যাসগুলে যদি বায়ুমন্ডলে অতিরিক্ত বেড়ে যায় তখন পৃথিবীর উষ্ণায়ন বেড়ে যায়। ফলস্বরুপ, জলবায়ু ঘটিত বিভিন্ন আপদ (খরা, অতিবৃষ্টি, সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি) দেখা দেয়।
১. কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2): কার্বন ডাই অক্সাইড জীবাশ্ম জ্বালানি (কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং তেল), কঠিন বর্জ্য, গাছ এবং অন্যান্য জৈবিক পদার্থ পোড়ানোর মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে।
২. মিথেন (CH4): কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং তেল উৎপাদন ও পরিবহনের সময় মিথেন নির্গত হয়। মিথেন গবাদি পশু এবং অন্যান্য কৃষি পদ্ধতি, জমির ব্যবহার এবং পৌরসভার কঠিন জৈব বর্জ্যের ক্ষয় থেকেও উৎপন্ন হয়।
৩. নাইট্রাস অক্সাইড (N2O): নাইট্রাস অক্সাইড কৃষি, জমি ব্যবহার এবং শিল্প কার্যক্রমের সময় নির্গত হয়। এছাড়া জীবাশ্ম জ্বালানী এবং কঠিন বর্জ্যের দহনেও উৎপন্ন ও নির্গত হয়।
৪. ফ্লোরিনযুক্ত গ্যাস: হাইড্রোফ্লুরোকার্বন (Hydrofluorocarbons), পারফ্লুরোকার্বন (perfluorocarbons), সালফার হেক্সাফ্লোরাইড (sulfur hexafluoride) এবং নাইট্রোজেন ট্রাইফ্লোরাইড হল কৃত্রিম, শক্তিশালী গ্রীনহাউস গ্যাস যা বিভিন্ন ধরনের গৃহস্থালী, বাণিজ্যিক এবং শিল্প প্রয়োগ এবং প্রক্রিয়া থেকে নির্গত হয়।
৫. জলীয় বাষ্প (H2O): জলীয় বাষ্প (H2O) সবচেয়ে ক্ষতিকর গ্রীনহাউজ গ্যাস। জলীয় বাষ্পের অনুগুলো ভূ-পৃষ্ঠ থেকে প্রতিফলিত কম শক্তির বিকিরণ তীব্রভাবে শোষণ করে।
জলীয় বাষ্পের পরিমাণের কোন নিয়ন্ত্রণ সীমা নেই। আকাশে এর পরিমাণ যত বেশী থাকবে ভূ-পৃষ্ঠে তত বেশী গরম অনুভূত হবে। আবার ভূ-পৃষ্ঠ যত বেশী গরম হবে জলীয় বাষ্প তত বেশী পরিমাণে উৎপন্ন হবে।

গ্রীনহাউজ প্রতিক্রিয়া

গ্রীনহাউজ প্রতিক্রিয়া (Greenhouse effect) হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার দ্বারা ভূপৃষ্ঠ হতে বিকীর্ণ তাপ বায়ুমণ্ডলীয় গ্রীনহাউজ গ্যাসসমূহ দ্বারা শোষিত হয়ে পুনরায় বায়ুমণ্ডলের অভ্যন্তরে বিকিরিত হয়। এই বিকীর্ণ তাপ বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরে ফিরে এসে ভূপৃষ্ঠের তথা বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রাকে বাড়িয়ে দেয়।
যদিও গ্রীনহাউস প্রভাব একটি প্রাকৃতিক ঘটনা, তবে বায়ুমণ্ডলে গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমনের পরিমাণ বেড়ে গেলে এর প্রভাবটি তীব্র হতে পারে। শিল্প বিপ্লবের শুরু থেকে ২০ শতকের শেষ পর্যন্ত, বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মিথেনের পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি।
অনেক বিজ্ঞানী ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে বায়ুমণ্ডলীয় কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাসের বৃদ্ধি ২১ শতকের শেষ নাগাদ বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা 3-4 °C (5.4–7.2 °ফা) আপেক্ষিক বৃদ্ধির দিকে নিয়ে যেতে পারে। এই গ্লোবাল ওয়ার্মিং পৃথিবীর জলবায়ুকে পরিবর্তন করতে পারে এবং এর ফলে চরম খরা এবং অতি বৃষ্টিপাত হতে পারে। ফলে নির্দিষ্ট অঞ্চলে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে।
গ্রীনহাউজ প্রভাবের কারণ
গ্রীনহাউজ ইফেক্ট হল পৃথিবীর পৃষ্ঠ এবং ট্রপোস্ফিয়ার (বায়ুমন্ডলের সর্বনিম্ন স্তর) উষ্ণায়ন যা বাতাসে জলীয় বাষ্প, কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন এবং কিছু অন্যান্য গ্যাসের উপস্থিতির কারণে ঘটে। গ্রিনহাউস প্রভাবের প্রধান কারণগুলি হল:
জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো
জীবাশ্ম জ্বালানি আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এগুলো পরিবহন এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ানো কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত করে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বেড়েছে। এর ফলে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ বেড়েছে।
বন নিধন
গাছপালা এবং গাছ কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন ছেড়ে দেয়। গাছ কাটার কারণে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে যা পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে।
কৃষিকাজ
সারে ব্যবহৃত নাইট্রাস অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস প্রভাবের অন্যতম অবদানকারী।
শিল্প বর্জ্য
শিল্প ও কলকারখানা ক্ষতিকর গ্যাস উৎপন্ন করে যা বায়ুমন্ডলে নির্গত হয়।
ওজোন স্তরের অবক্ষয়
ওজোন স্তর পৃথিবীকে সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে। এটি স্ট্রাটোস্ফিয়ারের উপরের অঞ্চলে পাওয়া যায়। ওজোন স্তরের হ্রাসের ফলে ক্ষতিকারক UV রশ্মি পৃথিবীর পৃষ্ঠে প্রবেশ করে যা ত্বকের ক্যান্সারের কারণ হতে পারে এবং জলবায়ুকে ব্যাপকভাবে পরিবর্তন করতে পারে।
5/5 - (11 votes)
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x