সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম আলোচিত উদ্ভাবন হচ্ছে ব্লকচেইন প্রযুক্তি। ব্লকচেইন টেকনোলজি তথ্য সংরক্ষণে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে নিরাপদ ও উন্মুক্ত পদ্ধতি। সাতোশি নাকামতো ছদ্মনামের এক ব্যক্তি বা গ্রুপকে ব্লকচেইন প্রযুক্তির উদ্ভাবক বলে মনে করা হয়।
২০০৯ সালে বিটকয়েন সফটওয়্যার প্রকাশিত হওয়ার পর, বিশ্বব্যাপী ব্লকচেইন প্রযুক্তি অনেক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ব্লকচেইন আসলে কি? এটি কিভাবে কাজ করে এবং এটির যাবতীয় বিষয় নিয়ে আজকের আলোচনা।
ব্লকচেইন (Blockchain) হল একটি বিকেন্দ্রীকৃত, বিতরণ করা এবং প্রায়শই সর্বজনীন ডিজিটাল হিসাব যা অনেক কম্পিউটারের ডিজিটাল লেনদেন রেকর্ড করতে ব্যবহৃত হয়। ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপটোকারেন্সির লেনদেনের হিসেব প্রদর্শিত ও সংরক্ষণ করা হয়। ব্লকচেইনের তিনটি প্রধান ভিত্তি হল তথ্য বিকেন্দ্রীকরণ (Decentralization), স্বচ্ছতা (Transparency) এবং তথ্য অপরিবর্তনীয়তা (Immutability)।
ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্রিপটোকারেন্সির প্রতিটি লেনদেনকে ছোট ছোট ব্লকের আকারে একটির পর আরেকটি সংযুক্ত করে চেইনের আকারে রেকর্ড করা হয়। ব্লকচেইন ব্যবহারকারীরা কোনো থার্ড পার্টি বা সেন্ট্রাল অথরিটি ছাড়াই নিশ্চিত এবং সুরক্ষিত ভাবে লেনদেন করতে পারে। ২০০৯ সালে সাতোশি নাকামোতো নামক ব্যক্তি বা গ্রুপ ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিজিটাল মুদ্রা বিটকয়েন আবিষ্কার করেছিলেন।
ব্লকচেইন এর প্রতিটি ব্লকের মধ্যে কয়েকটি তথ্য জমা থাকে। লিস্ট অফ রেকর্ডকে ব্লক বলে, যেগুলো ক্রিপ্টোগ্রাফির মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে। প্রতিটি ব্লকে আগের ব্লকের ক্রিপ্টোগ্রাফিক হ্যাশ ভালু থাকে যা টাইমস্ট্যাম্প ও লেনদেনের ডেটার সমন্বয়ে গঠিত।
ব্লকচেইনে নতুন ডেটা আসার সাথে সাথে, এটি একটি নতুন ব্লকে প্রবেশ করে। একবার ব্লকটি ডেটা দিয়ে পূর্ণ হয়ে গেলে, এটি পূর্ববর্তী ব্লকের সাথে চেইন করা হয়, যা ডেটাকে কালানুক্রমিক ক্রমে একসাথে শৃঙ্খলিত করে।
বিটকয়েন ক্ষেত্রে প্রথমে এর ব্লকের মধ্যে জমা করা হয় কয়েন এর ট্রানজাকসশন তথ্য। তারপর জমা হয় একটি ইউনিক হ্যাশ কোড। এবং তারপর জমা হয় ওই ব্লকের পূর্ববর্তী ব্লকের হ্যাশ কোড।
এই ভাবে প্রতিটি ব্লকের হ্যাস তার পরবর্তী ব্লকের মধ্যে জমা থাকে। এবং এভাবে একটি চেইন তৈরি করা হয়। ব্লকচেইনের সর্বপ্রথম যে ব্লকটি থাকে বা যে ব্লক থেকে (Block 1) চেইন তৈরির কাজ শুরু হয়, তাকে জেনেসিস ব্লক বলা হয়।
হ্যাশ হচ্ছে মূলত একটি আইডেন্টিফায়ার। প্রত্যেকটি ব্লকের হ্যাশ তার একেবারেই নিজস্ব এবং প্রত্যেকের জন্য নির্দিষ্ট। অর্থাৎ, দুটি ব্লকের হ্যাশ কখনোই একই হতে পারবে না।
এটি অনেকটা মানুষের ফিঙ্গারপ্রিন্টের মত। দুটি মানুষের ফিঙ্গারপ্রিন্ট যেমন একরকম হতে পারবে না, তেমনি দুটি ব্লকের হ্যাশও কখনো মিলবে না। আর এই হ্যাশগুলো জেনারেট হয় প্রত্যেকটি ব্লকের স্টোর করা ডেটা অনুযায়ী। যার মানে, একটি ব্লকের ডেটা যদি কোনরকম পরিবর্তন করা হয়, তাহলে ওই ব্লকটির হ্যাশও চেঞ্জ হয়ে যাবে।
ব্লকচেইনে প্রত্যেকটি ডেটা মুছে ফেলা বা পরিবর্তন করা প্রায় অসম্ভব। কারণ, এক্ষেত্রে আপনি যদি একটি ব্লকে থাকা ডেটা পরিবর্তন করতে চান, তাহলে আপনাকে ওই ব্লকটির সাথে তার আগের সবগুলো ব্লকের ডেটা পরিবর্তন করতে হবে।
সংক্ষেপে বলতে গেলে, কেউ ব্লকচেইন প্রযুক্তির মালিক নয়, আবার প্রত্যেকেই এটির মালিক। এটি ব্লকচেইন প্রযুক্তির অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে একটি এবং এই সম্মিলিত মালিকানা এবং জবাবদিহিতাই ব্লকচেইনকে অত্যন্ত নিরাপদ এবং অপরিবর্তনীয় করে তুলেছে।
২০০৮ সালে সাতোশি নাকামোতো নামক এক ব্যক্তি বা গ্রুপ ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইন মুদ্রা বিটকয়েন আবিষ্কার করেছিলেন।