দই কি? খুব সহজে বাড়িতেই দোকানের মতো দইয়ের রেসিপি। দইয়ের ইতিহাস

দই কি?

দধি বা দই হলো একধরনের দুগ্ধজাত খাদ্য যা গাঁজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরী করা হয়ে থাকে৷

দুধে উপস্থিত ল্যাক্টোজের গাঁজনের মাধ্যমে তৈরী হয় ল্যাক্টিক এসিড যা দুধের প্রোটিনের ওপর কাজ করে।

ফলে দই এর স্বাদ এবং বৈশিস্ট্যপূর্ন গন্ধ প্রদান করে থাকে।

ইতিহাস

আজকালকার বহু মানুষের ধারনা, প্রায় চার হাজার বছর আগে যাযাবর জাতি নোমোডিক দের হাত ধরে এই দেশে দই এর উৎপত্তি হয়।

কিন্তু এটি উদ্দেশ্যপ্রনীত ছিলো না।

কেননা নোমোডিক রা দুধ বহন করতো প্রানীর চামড়া দিয়ে বানানো থলেতে, যা ব্যাক্টেরিয়া সৃষ্টির আদর্শ স্থান, সেই স্থানে ব্যাক্টরিয়ার সংস্পর্শে দুধ দইয়ে পরিনত হয়।

দই

ঐতিহাসিকদের মতে,ঔ একইসময় একইভাবে হয়তো আরও কিছু অঞ্চলে দইয়ের উৎপত্তি ঘটেছে।

প্রথম দই বানানোর দাবিদার দেশটি নিশ্চিতভাবেই মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া আর বুলগেরিয়ার বাইরে নয়।

সে যে অঞ্চলই হোক না কেন, বুলগেরিয়া যে বাণিজ্যিকভাবে পশ্চিমা দেশগুলোকে প্রথম দই খাইয়েছে, তা নিয়ে কারও মনে কোনো সন্দেহ নেই। পৃথিবীকে এটি চেনানো দেশটিও  বুলগেরিয়া।

দইয়ের গুপ্ত রহস্য ভেদ করা প্রথম বিজ্ঞানীটি বুলগেরিয়ার “ড. স্টামেন গ্রিগোরভ”, ১৯০৪ সালে বিয়ের কিছুদিন পর জেনেভার মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরেন গ্রিগোরভ।

তখন তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং সঙ্গে ছিল ‘রুকাটকা’ নামের মাটির পাত্রে বানানো দই।

পরীক্ষাগারে সেই দই নিয়ে এক বছর ঘাম ঝরানোর পর গ্রিগোরভ আবিষ্কার করেন, গাঁজন প্রক্রিয়ায় দুধ থেকে দই হতে কোন একটি ব্যাকটেরিয়া দায়ী।

গ্রিগোরভ এবং বুলগেরিয়ানদের দইপ্রীতির সম্মানে সেই বীজাণুটির নাম রাখা হয়—‘ল্যাক্টোব্যাসিলাস বুলগেরিকুশ’।

এতে দইয়ের সঙ্গে বুলগেরিয়ার সম্পৃক্তি টেকসই ভিত্তি পেয়ে যায় চিরকালের মতো!

শুধু তাই নয়, গ্রিগোরভের এই আবিষ্কারকে সম্মান করে তাঁর জন্মভূমি বুলগেরিয়ার ত্রার্নে একটা জাদুঘরও বানানো হয়, যা কিনা দই নিয়ে পৃথিবীর একমাত্র জাদুঘর।

দই কেনো খাওয়া দরকার?

নিয়মিত টকদই খাওয়ার রয়েছে নানান ধরনের উপকারিতা। কেননা এই টকদই এ রয়েছে নানান ধরনের উপকারী ব্যাক্টেরিয়া যা আমাদের দেহের উপকার সাধন করে।

এছাড়াও টকদই এ রয়েছে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-এ, ভিটামিন- বি৬, ভিটামিন- বি১২ ইত্যাদি উপাদান। এইসকল উপকারী উপাদান খুব সহজেই আমাদের দেহের ভিতর প্রবেশ করতে পারে এই দইয়ের মাধ্যমে।

তাছাড়াও যাদের হজম শক্তি খুবই কম এবং দুধ জাতীয় কোনো খাবার বা দুধ খেয়ে তা হজম করতে পারে না ;

তারা দই খাওয়ার মাধ্যমে দুধ এর উপকারী উপাদান গুলা নিজের শরীর গঠন ও উন্নতি সাধনের কাজে লাগাতে পারে।

আর প্রতিদিন দুধ খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের দেহের নানাবিধ রোগ প্রতিরোধও হয়ে থাকে।

দই খাওয়ার নিয়ম কি?

টকদই খাওয়া আমাদের দেহের জন্য কতটা উপকারী তা আমরা এতোক্ষনে প্রায় সবাই জেনে গেছি ।কিন্তু এই টকদই কখন কিভাবে খেতে হবে সেই সম্পর্কে আমাদের পরিপূর্ণ কোনো ধারণা নেই।

এটি মূলত ভারী কোনো খাবার বা দুপুরের খাবারের পর খেলে খুব বেশি উপকার পাও্যা যায় ।

টকদই শুধু শুধু বা বোরহানি, লাচ্ছি বা ওটস এর সাথে মিশিয়েও খাওয়া যেতে পারে। তবে কোনো কিছু দিয়ে মিশিয়ে খাওয়ার চেয়ে শুধু শুধু খেলেই বেশি উপকার পাওয়া যায় ।

তবে টকদই যখনই খাওয়া হোক না কেনো তার পরিমান ৩০০-৫০০ গ্রাম এর বেশি হওয়া উচিত না।

কেননা কোনোকিছুই বেশি খাওয়া বা গ্রহন করলে তা উপকারের চেয়ে অপকারটাই বেশি করে ফেলে।

দই বানানোর রেসিপি

আমরা অনেকেই কিনে আনার ঝামেলার জন্য প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও টকদই খায় না। তাই ঘরে বসেই খুব সহজে টকদই বানানোর উপায় দেওয়া হলো-

উপকরণ

১। দুধ- ১ লিটার

২। দইয়ের বীজ- ৩ টেবিল চামচ

৩। গুড়া দুধ- ( ২-৩) টেবিল চামচ

পদ্ধতি-

১। প্রথমেই ১ লিটার দুধ কে ফুটিয়ে এর পরিমান অর্ধেক করে নিতে হবে ; যাতে দুধ পর্যাপ্ত পরিমান ঘন হয় । কেননা দুধ যতো ঘন হবে দইয়ের ঘনত্বও ততো ভালো হবে।

২। দুধের ঘনত্ব বাড়ানোর জন্য এতে গুড়া দুধ মিশানো যেতে পারে।

৩। এর পর চুলা থেকে দুধ কে নামিয়ে ঠান্ডা করে নিতে হবে এবং দুধের মধ্যে আঙ্গুল ডুবিয়ে দেখতে হবে গরম সহনীয় কিনা।

৪। অর্থ্যাৎ দুধ যখন হাল্কা গরম থাকবে তখন এতে দইয়ের বিজ দিয়ে ভালভাবে এর সাথে মিশিয়ে দিতে হবে যাতে কোনোরকম কোনো দানা না থাকে ।

৫। তারপর দুধের মিশ্রনটিকে কোনো এয়ার টাইট বক্স বা মাটির পাত্রে রেখে সেটিকে মোটা কোনো কাপড়ে মুড়িয়ে একটু উষ্ণ জায়গায় রেখে দিতে হবে ।

৬। ৭-৮ ঘন্টা পর দেখা যাবে দই তৈ্রী হয়ে গিয়েছে ।

৭। এরপর ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন করা যাবে ।

দই খাওয়ার উপকারিতা কি কি?

দেহকে সুস্থ সবল রাখতে নিয়ম কানুন এর পাশাপাশি আরেকটি বিশেষ দিক এর প্রতি নজর রাখা উচিত আর তা হলো খাদ্য।

আর সকল উপকারী খাদ্যের মধ্যে প্রধান হলো টকদই। এতে রয়েছে ভিটামিন, আমিষ, মিনারেল আরো নানান ধরনের উপকারী উপাদান।

পাশাপাশি দুধের সমপরিমান উপকারিতা থাকায় দুধের মতোই কাজ করে আমাদের দেহের ঘাটতি পূরনে।

যেমনঃ

১৷ হাঁড় ও দাঁতঃ এতে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম থাকায় এটি হাঁড় ও দাঁত গঠনে এবং মজবুত করতে সাহায্য করে থাকে।

২। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেঃ এতে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া শরীরের অন্যান্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া কে মেরে দেহকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

নিয়মিত টকদই খেলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাবে কয়েক গুন।

৩। কোষ্ঠকাঠিন্যঃ এতে থাকা ল্যাকটিক এসিড কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

এটি মানুষের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

যাদের দুধ হজমে সমস্যা হয় তারা ইচ্ছে করলে দই খেতে পারেন ফলে দুধের পুষ্টি পাবেন।

৪। ওজন কমাতেঃ ওজন কমানোর ক্ষেত্রে টকদই একটি কার্যকরী উপাদান হতে পারে।

এটি খাওয়ার ফলে এতে থাকা আমিষের জন্য অনেকক্ষন পেট ভরা থাকে ফলে ক্ষিধার উদ্রেক ঘটে না এবং ওজন কমে।

৫। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ প্রতিদিন এক কাপ টকদই খেলে দেহের উচ্চরক্তচাপ অনেকাংশে কমানো সম্ভব হয়।

এটি উচ্চরক্তচাপ এর পাশাপাশি দেহের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করে।

অনেক সময় দেখা যায় অনেকেই গর্ভবতী মা কে এটি খেতে দেন না।

কিন্তু এটি খুব বড় একটি ভুল পদক্ষেপ। কেননা টকদই গর্ভবতী মায়ের কোনো ক্ষতি করে না বরং টকদই মা ও বাচ্চা উভয়ের পুষ্টি চাহিদা পূরন করে।

দই এর মধ্যে মূলত টকদই এবং মিষ্টি দই এই দুটি দই এর জনপ্রিয়তা লক্ষ করা যায়।

এতে অনেক সময় বিভিন্ন ফ্লেভার ও যোগ করা হয়ে থাকে।

তবে এই সকল কিছুর উর্ধ্বে র‍য়েছে টকদই যার কোনো ক্ষতিকর দিক নেই উল্টো রয়েছে অনেক উপকারিতা।

তাই সুস্বাস্হ্য রক্ষায় টকদই এর প্রয়োজনীয়তা অকল্পনীয়।

Similar Posts