জনপ্রিয় শীতের পিঠা রেসিপি

শীত আসবে আর শীতের পিঠা নিয়ে কথা হবে না এমন তো হতে পারে না।  শীতের পিঠা একে অপরের সাথে খুবই ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িত।  নবান্নে ঘরে যে ধান ওঠে  আর সেই  ধানের  চালে নতুন পিঠা-পুলির উৎসব বাঙালি সংস্কৃতির একটা অংশ।  প্রতিবছরই গ্রামে পিঠা  খাওয়ার ধুম পড়ে।  কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মানুষ শহরমুখী হওয়ার কারণে এই সব  পিঠাপুলি  থেকে নতুন প্রজন্ম একেবারেই অপরিচিত রয়ে যাচ্ছে।  তাই যারা  শীতের পিঠা সম্পর্কে জানতে চান তাদের জন্য এই আর্টিকেলের আয়োজন।

আজকে আমরা জানবো শীতে সাধারণত কি ধরনের শীতের পিঠা তৈরি করা হয় এবং সেগুলো কিভাবে তৈরি করা হয়।  যারা শীতের পিঠা সম্পর্কে জানতে চান তারা ধৈর্য ধরে আর্টিকেলটি পড়ুন।  অথবা যারা  বিশেষ শীতের পিঠা সম্পর্কে  জানতে চান তারা আর্টিকেলটি উপরের দিকে টেনে শীতের পিঠা সম্পর্কিত সেই অংশটি পড়ুন।

চিতই পিঠা

ছবি আয়েশা সিদ্দিকা

শীতকালে যে পিঠাটি বেশি দেখা যায় সেটি হচ্ছে চিতই পিঠা।  চিতই পিঠা  তৈরি করা যেহেতু অনেকটাই সহজ তাই এই পিঠাটি শহরের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে বিক্রি করেন দোকানিরা।  চিতই পিঠা তৈরি করতে শুধু চাউলের গুড়া  প্রয়োজন।  চাউলের গুড়া কে পরিমাণমতো পানি দিয়ে ভিজিয়ে নেওয়া হয়।  সাধারণত এক্ষেত্রে গরম পানি ব্যবহার করা হয়।  একটি মাটির পাতিলে চাউলের গুড়া কে পানির সাথে গুলিয়ে একটি চামচ দিয়ে ছেড়ে দিতে হয়।  তারপর সেটি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিতে হয়।  কিছুক্ষণ পর দেখবেন চিতই পিঠা তৈরি হয়ে  গিয়েছে।  তখন একটি খুরচুন এর সাহায্যে চিতই পিঠা পাতিল থেকে উঠিয়ে নিবেন।  চিতই পিঠা খাবার জন্য শুটকি ভর্তা জনপ্রিয় একটি নাম।  এছাড়াও আপনি খেজুরের গুড়  মাখিয়ে চিতই পিঠা খেতে পারেন।

আরেকটি শীতের পিঠা হচ্ছে ভাপা পিঠা

ছবি এফএনএফ কুকিং

উপকরণ: 

সিদ্ধ চালের গুড়া, খেজুরের গুড় কুচি কুচি করে কাটা, কুড়ানো নারিকেল, এবং প্রয়োজনীয় লবণ।

প্রস্তুত প্রণালীঃ

প্রথমে চাউলের গুড়া তে হালকা লবন মিশিয়ে পানি ছিটিয়ে ঝুরঝুর করে নিতে হবে।  এগুলো ভালোভাবে মেশাতে হবে যেন লবণ চাউলের গুড়ার সাথে খুব ভালোভাবে মিশে যায়।  লক্ষ্য রাখতে হবে যেন চাউলের গুড়া দলা না বাঁধে।  এবার যেকোনো একটি চাল মার সাথে ছেলে নিন তবে আপনার চালের গুড়া গুলো অনেক ঝরঝরে থাকে।  এবার একটি হাঁড়িতে পানি দিন যেন পানি গরমের পড়তে থাকে।  এবার একটি ছিদ্র যুক্ত ঢাকনা বসিয়ে আঠা দিয়ে আটকে দিন।  যাতে পাতিলে থাকা ফুটন্ত পানির ভাপ বের হয়ে না যায়। এবার পাতলা সুতির দুই টুকরা কাপড় ও ছোট আকারের দুটি নিন।  আর আপনি যদি বড় আকারের পিঠা খেতে চান তাহলে বাটির পরিমাণটা একটু বড় নিবেন এবং কাপড়ের টুকরা পরিমাণটাও একটু বড় নিবেন।  এবার আসা যাক আসল কাজের দিকে,

প্রথমে আপনি বাটিতে চালা চালের গুড়ি দিয়ে মাঝখানে গর্ত করে গুড় ও নারিকেল দিন। তারপর উপর দিয়ে আবার চালের গুঁড়ি দিয়ে ঢেকে দিন।  এবার পাতলা সুতি কাপড় ভিজিয়ে পিঠার বাটি ঢেকে উল্টে মুখ ছিদ্র ঢাকনার ওপর রেখে সাবধানে বাটি খুলে ঢেকে দিন। পরবর্তীতে পিঠাটি সিদ্ধ হয়ে গেলে উঠিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।

একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা, ভাপা পিঠা তৈরি করার জন্য আপনাকে অবশ্যই তাজা ঘুড়ি বা সঙ্গে সঙ্গে চাল গুড়ি করে বানালে ভালো হয়।

দুধ-চিতই হল একটি অন্যতম শীতের পিঠা

উপকরণ

চালের গুঁড়ো 3 কাপ, পানি ও লবণ পরিমাণমতো, 1। 5 লিটার দুধ, গুড় 3 কাপ।

প্রস্তুত প্রণালীঃ

দুধ চিতই পিঠা অনেকটা চিতই পিঠার মত, শুধু এখানে দুধের ব্যবহারটা একটু ব্যতিক্রম।  প্রথমে আপনি চালের গুঁড়ায় পানি মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরী করবেন।  কিন্তু একটু খেয়াল রাখবেন যাতে সেই মিশ্রণটা বেশি পাতলা বা ঘন না হয়ে থাকে। এবার যে-পাত্রে পিঠাটা ভাজবেন সেই পাত্রে একটু সামান্য পরিমাণে তেল বাখান।  যাতে পিঠা দেওয়ার সাথে সাথে বা যখন পিঠাটা হয়ে আসবে তখন তুলতে যেন কোন অসুবিধা না হয়।  এই পর্যায়ে পাত্রটি হালকা গরম করে 2 টেবিল চামচ চালগোলা দিয়ে ঢেকে দিন। দুই থেকে তিন মিনিট অপেক্ষা করুন পরে পিঠাটি তুলে ফেলুন।

এবার দুধ চিতই পিঠা বানানোর জন্য দুধের যেই মিশ্রণটি তৈরি করতে হয় সেই বিষয়ে আলোচনা করব।  প্রথমত 1। 5 লিটার দুধ জ্বাল দিয়ে সামান্য পরিমাণে ঘন করে নিন।  এবার আলাদা করে রাখা 3 কাপ গুড় ঝাল দিয়ে সিরা তৈরি করুন।  এখন সেই শিরার মধ্যে ভাজা পিঠা গুলো ছেড়ে দিন, এবং কিছুক্ষণ জ্বাল করুন।  জ্বাল দেওয়ার পরে যখন ঠান্ডা হয়ে যাবে তখন দুধ দিয়ে কিছু সময় ভিজিয়ে রাখুন।  কিন্তু এই পিঠটা সকাল বেলা খেতে বেশি মজা।

নকশি পিঠা হলো শীতের পিঠা

উপকরণ

চালের গুঁড়ো 4 কাপ, লবণ সামান্য, 3 কাপ পানি, 1 টেবিল চামচ ঘি, পিঠাটা ভাজার জন্য তেল 500 গ্রাম।

এই পিঠাটি খাওয়ার জন্য আলাদা করে চিনির সিরা বা গুরের সিরা তৈরি করতে হয়।

সিরার জন্য গুড় 1 কাপ, চিনি 1 কাপ, 2 কাপ পানি, জাল দিয়ে সিরা বানাতে হবে।

প্রস্তুত প্রণালীঃ

পানিতে পরিমাণমতো লবণ ও ঘি দিয়ে চুলায় বসিয়ে দিন।  যখন দেখবেন পানিটা ফুটতে শুরু করেছে তখন সেই ফুটন্ত পানির মধ্যে চালের গুঁড়ো দিয়ে সেদ্ধ করে কাই বানিয়ে নিতে হবে। এবার আপনি আধা ইঞ্চি পুরু করে একটি রুটি বানিয়ে পছন্দমতো আকার দিয়ে কেটে দিন।  এই পিঠাটি কাটার জন্য খেজুরের কাঁটা  ব্যবহার করতে পারে।  এই খেজুরের কাঁটা দিয়ে রুটিতে পছন্দমত নকশা তৈরি করুন। এবার আপনি ডুবোতেলে পিঠাগুলো ভেজে নিন।  তারপর আবার তেলে ভেজে সিরায় দিয়ে 1 মিনিট সময় কিংবা দুই মিনিট সময় রেখে দিন।  এবার পিঠাগুলো তুলে ঠান্ডা হয়ে গেলে পরিবেশন করুন।

শীতের পিঠার মধ্যে অন্যতম একটি হলো দুধ পুলি পিঠা

উপকরণ

2.5 চালের গুড়া,আধা কাপ ময়দা,  1.5 পানি, আধা চা-চামচ লবণ, ঘি আধা চা চামচ, দুধ 1.5 কেজি, 1কাপ চিনি কিংবা স্বাদমতো,একটি কাপের 3 ভাগেরএক ভাগ গুঁড়ো দুধ,4 টেবিল চামচ কনডেন্সড মিল্ক, 1. 5 নারিকেল কুরানো, 2,3 টি এলাচ।

প্রস্তুত প্রণালীঃ

এবার আপনি পিঠার ভিতরে নারিকেল কুরানো গুলো দেওয়ার জন্য আলাদা করে নারকেল কুরানো গুলো রেখে দিন।  প্রথমে আপনি দেড় কাপ পরিমাণের নারিকেল কুরানো নিয়ে রেখে দিন।  এবার বাকি নারিকেল গুলো ফ্রাইপেনে ভেজে নিন সামান্য পরিমাণ বা পাঁচ থেকে ছয় চামচ চিনি দিয়ে ফ্রাইপেনে 7 থেকে 8 মিনিট নারিকেল কুরানো গুলো ভেজে নিন।  যতক্ষণ পর্যন্ত না নারিকেলের পানি গুলো শুকিয়ে যাচ্ছে।  এবার আপনি এই ভাজা নারিকেল গুলো আলাদা করে রেখে দিন কেননা এই  নারিকেল পিঠার ভিতরে দিতে হবে।  এখন আপনি দুধের সঙ্গে চিনি,কনডেন্সড মিল্ক মিশিয়ে জ্বাল দিন।

পিঠা বানানো হতে হতে দেখবেন আপনার দুধ খুব সুন্দর হয় হালকা রং হয়ে যাবে।

এবার আপনি অন্য একটা পাতিলে পানির সঙ্গে লবণ এবং ঘি মিশিয়ে গরম করুন।  যখন পানিটা ফুটতে থাকবে, সেই ফুটন্ত পানির মধ্যে চালের গুঁড়ো ও ময়দা দিয়ে খুব ভালো করে মিশিয়ে চুলা বন্ধ করে দিয়ে খামির তৈরি করুন। এই পর্যায়ে এসে আপনি হাবিব তাকে খুব ভালো করে মেখে নিন।

এবার আপনি সেই খামিরটা থেকে খুব ছোট ছোট করে রুটি বেলে নিন।  পরবর্তীতে সেই বেলে রাখা রুটি গুলোর ভেতরে নারিকেল পুরে দিয়ে পুলি পিঠা তৈরি করুন।  নারিকেল গুলো অবশ্যই ভাজা হতে হবে যা আমরা পূর্বে ভেবে রেখেছিলাম।  এখন আপনি জাল করা দুধের মধ্যে পিঠাগুলো ছেড়ে দিন এবং 20 থেকে 25 মিনিট রান্না করুন।

পাতিলা টাতে খুব আস্তে আস্তে নাড়া চাড়া দিয়ে পিঠা ও দুধগুলো মিশিয়ে নিন।  আবার খেয়াল রাখবেন পুলি পিঠা গুলো যাতে ভেঙে না যায়।  এখন কিছু কুড়ানো নারিকেল দিয়ে আবার দুই থেকে তিন মিনিট রান্না করে নামিয়ে নিন। পিঠাগুলো ঠান্ডা হয়ে গেলে পরিবেশন করুন।  এবং উপভোগ করুন মজাদার শীতের পিঠা।

আমাদের আজকের আর্টিকেলের বিষয়টি ছিল শীতের পিঠা সম্পর্কে।  আশা করি আপনারা সবাই বিস্তারিতভাবে বুঝতে পেরেছেন বা জানতে পেরেছেন শীতের পিঠা সম্পর্কে।  আরো বিভিন্ন ধরনের পিঠা রয়েছে কিন্তু এই পিঠাগুলো শীতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সবাই পছন্দ করে থাকে সেগুলো সম্পর্কে আজকে আলোচনা করেছি। আপনাকে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *