আজকে আমরা আলোচনা করবো মানবদেহের হরমোন এবং এদের কাজ নিয়ে।
মানবদেহের হরমোন কি?
যে জৈব রাসায়নিক বস্তুটি কোষে উৎপন্ন হয় এবং দেহের অভ্যন্তরে বার্তাবাহক অণুর ন্যায় কাজ করে, শরীরের এক অংশে তৈরি হওয়ার পর এরা শরীরের অন্যান্য অংশে ভ্রমণ করে যেখানে তারা কোষ এবং অঙ্গগুলো কীভাবে তাদের কাজ করে তা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে, তাকেই হরমোন বলা হয়।
আরো সহজ ভাবে বলতে গেলে, হরমোন হল দেহ দ্বারা তৈরি অণু যা মানুষের দেহের ক্রিয়াকলাপ এবং কার্যাবলির শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। প্রত্যেকটি মানব দেহে প্রায় ৫০ টি পরিচিত হরমোনেরর উপস্থিতি রয়েছে।
মানবদেহের হরমোন গ্রন্থিগুলোর নাম কি কি?
মানবদেহের কয়েকটি মুখ্য নালীহীন গ্রন্থি বা হরমোন এর নাম নিম্নরূপ-
১. পিটুইটারি গ্রন্থি
২. থাইরয়েড গ্রন্থি
৩. প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি
৪. থাইমাস গ্রন্থি
৫. অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি বা সুপ্রারেনাল গ্রন্থি
৬. আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স
৭. গোনাড বা জনন গ্রন্থি
১. পিটুইটারি গ্রন্থি
পিটুইটারি গ্রন্থি হলো মূলত মস্তিষ্কের নিচের অংশে অবস্থিত সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচেয়ে ছোট একটি গ্রন্থি। এই গ্রন্থি থেকে
- গোনাডোট্রপিন,
- সোমাটোট্রপিন,
- থাইরয়েড উদ্দীপক হরমোন,
- এডরেনোকর্টিকোট্রপিন ইত্যাদি হরমোন নিঃসৃত হয়।
কাজ
এটি মানব দেহের প্রধান হরমোনের উৎপাদক গ্রন্থি। কারণ একদিকে পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন সংখ্যায় যেমন বেশি, তেমনি অন্যান্য গ্রন্থির উপর এসব হরমোনের প্রভাবও তেমন বেশি। এটি মানবদেহের বৃদ্ধি হরমোন নির্গত করে।
২. থাইরয়েড গ্রন্থি
থাইরয়েড গ্রন্থি গলার ট্রাকিয়ার উপরের দিকের অংশে অবস্থিত। এই গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়
- থাইরক্সিন
- ক্যালসিটোনিন ইত্যাদি হরমোন।
কাজ
১। থাইরক্সিন মানবদেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি, বিপাকীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে।
২। ক্যালসিটোনিন ক্যালসিয়াম বিপাকে সহায়তা করে।
৩. প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি
মানুষের চারটি প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি রয়েছে। এবং এই সবগুলোর অবস্থান থাইরয়েড গ্রন্থির পিছনে। এই গ্রন্থি থেকে
- প্যারাথরমোন হরমোন নিঃসরণ হয়।
কাজ
প্যারাথরমোন মূলত ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের বিপাক নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে।
৪. থাইমাস গ্রন্থি-
থাইমাস গ্রন্থি মানবদেহের গ্রীবা অঞ্চলে অবস্থিত।এই গ্রন্থি হতে
- থাইমোসিন হরমোন নিসৃঃত হয়।
কাজ
থাইমোসিন দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বিকাশে সহায়তা করে।
৫. অ্যাড্রেনাল বা সুপ্রারেনাল গ্রন্থি
অ্যাডরেনাল বা সুপ্রারেনাল গ্রন্থি কিডনির উপরের দিকে অবস্থান করে।এই গ্রন্থি থেকে
- অ্যাডরেনাল হরমোন নিঃসৃত হয়।
কাজ
১। দেহে রক্ত আবশ্যকীয় বিপাকীয় কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
২। এটি কঠিন শারীরিক ও মানসিক চাপ থেকে পরিত্রাণে সাহায্য করে ।
৬.আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স
আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স অগ্ন্যাশয় এর মাঝে অবস্থিত। এই গ্রন্থি হতে
- ইনসুলিন
- Glucagon হরমোন নিঃসৃত হয় ।
কাজ
শর্করা বিপাক ও রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
৭. গোনাড বা জনন অঙ্গ গ্রন্থি
গোনাড গ্রন্থি মেয়েদের ডিম্বাশয় এবং ছেলেদের শুক্রাশয় অবস্থান করে।
এই গ্রন্থি মেয়েদের
- ইস্ট্রোজেন
ও ছেলেদের
- টেস্টোস্টেরন হরমোন নিঃসৃত করে ।
কাজ
১। এই গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন দেহের পরিণত বয়সের লক্ষনগুলো বিকশিত করতে ভূমিকা রাখে।
২। প্রাণীর বৃদ্ধির পাশাপাশি ও যৌন আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
মানবদেহের হরমোন এর ভারসাম্য বজায় রাখার উপায় কী?
শরীরের স্বাভাবিক কার্যাবলী ঠিক রাখায় এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইনসুলিন, ইস্ট্রোজেন, ডোপামিন, এফএসএইচ, টিএসএইচ ইত্যাদি জৈবিক রাসায়নিক উপাদান-
-মেজাজ
-চুলের বৃদ্ধি
-ওজন
– প্রজনন ক্ষমতা
– মানসিক অবস্থা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে।
হরমোনের সঠিক সরবরাহ বজায় রাখতে শরীরের সকল গ্রন্থি সমান ভাবে কাজ করে। আর এর সামান্য ঘাটতিই স্বাস্থ্যগত জটিলতা ডেকে আনতে পারে যার জন্য ছুটতে হয় চিকিৎসকের কাছে এবং খেতে হয় নানান ধরনের ঔষধ।
এই ঔষধেরও রয়েছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যা ডেকে আনতে পারে আরও বড় বিপদ।
প্রাকৃতিক উপায়ে মানবদেহের হরমোন এর ভারসাম্য নিয়ন্ত্রন হয় কিভাবে?
প্রাকৃতিক উপায়ে হরমোনের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করার উপায়-
১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস তৈরী করা।
২. পরিমিত পরিমান খাবার গ্রহন।
৩. নিয়মিত শরীরচর্চা করা।
৪. মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকা।
৫. পর্যাপ্ত পরিমান ঘুম।এই সকল কিছু যদি মেনে চলা যায় তবে কোনো ঔষধ ছাড়াই আমরা আমাদের শরীরের হরমোনের ভারসাম্যতা বজায় রাখতে পারি এবং সুস্থ্য থাকতে পারি।
আশা করি আজকে আপনাদের মানবদেহের হরমোন সম্পর্কে ভালো একটি ধারণা দিতে পেরেছি।
