বাংলা ব্যাকরণ

সমাস কাকে বলে? সমাস শব্দের অর্থ । সমাস কত প্রকার ও কি কি?

1 min read

সমাস কাকে বলে শুনলেই আমাদের মধ্যে ভীতির উদ্রেক ঘটে। তাই এই ভীতি দূর করে অত্যন্ত সহজ ও সাবলীল ভাবে সমাস সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারনা দেওয়ার জন্যই আজকের এই লেখা।

সমাস কাকে বলে

বাংলা ভাষায় শব্দ গঠনের এক বিশেষ প্রক্রিয়া হলো সমাস। অর্থপূর্ণ দুটি বা তার বেশি শব্দ কে জুড়ে একটি পূর্নাঙ্গ শব্দ গঠন এর প্রক্রিয়াকে বলা হয় সমাস।

সমাস শব্দের অর্থ –

সমাস এই শব্দটির অর্থ হলো- মিলন, একাধিক পদের একপদীকরণ বা সংক্ষেপ।

এই সমাসের রীতি মূলত সংস্কৃত থেকে বাংলায় এসেছে।

যেমন-

বিলাত হতে ফেরত- বিলাতফেরত

চোরা যে বালি- চোরাবালি

সমাস সম্পর্কিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়-

সমস্যমান পদ –

যেসকল পদের দ্বারা বা যেসব পদ নিয়ে সমাস গঠিত হয় তাকে বলা হয় সমস্যমান পদ। যেমন- উক্ত চোরা যে বালি, এখানে চোরা ও বালি হচ্ছে সমস্যমান পদ।

যেকোনো সমাসেই দুইটি সমস্যমান পদ থাকে এর মধ্যে একটি পরপদ এবং অপরটি পূর্বপদ বা উত্তরপদ।

যেমন- চোরা যে বালি, এখানে ‘চোরা’ পূর্বপদ বা উত্তরপদ এবং ‘বালি’ হচ্ছে পরপদ।

সমস্তপদ বা সমাসবদ্ধ পদ

সমস্যমান পদ অর্থ্যাৎ পূর্বপদ ও পরপদের মিলনের মাধ্যমে যে পদ গঠিত হয় তাকে সমস্তপদ বা সসমাসবদ্ধ পদ বলে।

যেমন- চোরা যে বালি,  এখানে চোরা ও বালি দুটি সমস্যমান পদের মিলনে তৈরী চোরাবালি একটি সমস্তপদ বা সমাসবদ্ধ পদ।

ব্যাসবাক্য

সমস্ত পদের গঠনগত অর্থ বিশ্লেষণ করার জন্য যে বাক্যাংশের প্রয়োগ হয়ে থাকে তাকে বলা হয় ব্যাসবাক্য।

যেমন- চোরাবালি এই সমস্তপদের অর্থ বুঝার জন্য এর পূর্বপদ ও পরপদের সাহায্য নিয়ে একটি বাক্যাংশ তৈরী করা হয় যথা- চোরা যে বালি এখানে এই বাক্যাংশটিই মূলত ব্যাসবাক্য।

সমাসের প্রকারভেদ

এটি মূলত ৬ প্রকার। যথা-

১. দ্বন্দ সমাস

২. দ্বিগু সমাস

৩. কর্মধারয় সমাস

৪. তৎপুরুষ সমাস

৫. বহুব্রীহি সমাস

৬. অব্যয়ীভাব সমাস

তাছাড়াও কিছু ব্যাতিক্রমী সমাসের মধ্যে রয়েছে-

১. অলুক সমাস

২. নিত্য সমাস

৩. বাক্যাশ্র‍্যয়ী সমাস

দ্বন্দ সমাস কাকে বলে?

যে সমাসে দুই বা ততোধিক পদের মিলন ঘটে এবং সমস্যমান পদগুলোর প্রত্যেকটিতেই অর্থের প্রাধান্য দেখা যায়, তাকে দ্বন্দ্বসমাস বলে।

চেনার উপায়-

১. দ্বন্দ্বসমাসের প্রধান ও অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে জোড়া শব্দ। যেমন: চাচাচাচী, ভাইবোন ইত্যাদি।

২. এক্ষেত্রে বাক্যের পূর্বপদ ও পরপদ একই বিভক্তিযুক্ত হয়ে থাকে। যেমন: পড়াশুনা। (আ বিভক্তি যুক্ত)

৩. প্রায় সমার্থক যেসকল জোড়া শব্দ থাকে সেগুলোও দ্বন্দ্বসমাস হয় । যেমন: হাটবাজার।

৪. বিপরীতার্থক শব্দ থাকলে তা দ্বন্দ্বসমাস হতে পারে। যেমন: ছেলে- মেয়ে ।

৫.দুটি জোড়া সর্বনাম দিয়েও দ্বন্দ্বসমাস প্রকাশ করা হয়ে থাকে। যেমন: তুমি-আমি ।

৬. সংখ্যাবাচক শব্দ থাকলে তা দ্বন্দ্বসমাস হতে পারে। যেমন: নয়- ছয়।

৭. জোড়া বিশেষন, ক্রিয়া, ও অঙ্গবাচক শব্দ থাকলে তা দ্বন্দ্বসমাস হয়। যেমন:  হাত- পা , নাক-কান।

দ্বন্দ্ব সমাস এর প্রকারভেদ

দ্বন্দ্ব সমাস বহু প্রকারের হতে পারে। তার মধ্য থেকে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য  নাম নিম্নরূপ-

১. মিলনার্থক- যে সমাসে দুইটি পদের অর্থের মধ্যে সম্পর্ক থাকে।  যেমন- মা ও বাবা= মা- বাবা।

২. বিপরীতার্থক- যে সমাসে দুটি শব্দ পরস্পরের বিপরীত অর্থ যুক্ত থাকে।  যেমন- দিবস ও রজনী= দিবস- রজনী

৩. সমার্থক- যে সমাসে দুটি পদই সমার্থক হয়ে থাকে। যেমন- কাজ ও কর্ম= কাজ কর্ম।

৪. অলুক- অলুক শব্দের অর্থ হলো – যা লোপ পায় না বা বিলুপ্ত হয়ে যায় না। অর্থ্যাৎ যে দ্বন্দসমাসে সমস্তপদে বিভক্তি লোপ পায় না তাই অলুক দ্বন্দসমাস। যেমন- দেশে ও বিদেশে= দেশে- বিদেশে।

৫. একশেষ- যে  সমাসে সমস্যমান পদগুলোর একটি বহুবচন জ্ঞাপক পদ সমাসবদ্ধ পদরূপে  গঠিত হয়। যেমন- তুমি, আমি ও সে=  আমরা।

৬. বহুপদী- যে সমাসে দুই এর অধিক পদ থাকে। যেমন- সত্য ও শিব ও সুন্দর= সত্য- শিব- সুন্দর।

৭. বিশেষ্য পদের- দুটি বিশেষ্য পদ মিলিত হয়ে তৈরী।  যথা- রবি ও শশী= রবিশশী।

৮. বিশেষণ পদের- যে সমাসে দুটি পদই বিশেষন।যথা- পন্ডিত ও মূর্খ= পন্ডিত মূর্খ।

৯. সর্বনাম পদের – যে সমাসে দুটি পদই সর্বনাম।যথা- যার এবং তার= যার- তার।

১০. ক্রিয়াপদের- যে সমাসে দুটি পদই ক্রিয়াপদ। যথা- আসা ও যাওয়া= আসা যাওয়া।

১১. সংখ্যাবাচক- যে সমাসে দুটি পদই সংখ্যা হয়ে থাকে। যেমন- নয় ছয়, সাত পাঁচ, সাত সতেরো।

দ্বিগু সমাস কাকে বলে

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, “সংখ্যাবাচক শব্দ পূর্বে থাকিয়া যে কর্মধারয় সমাস তদ্ধিতের অর্থ বা সমাহার বুঝায় তাহাকে দ্বিগু সমাস বলে।”

চেনার উপায় –

দ্বিগু সমাস মূলত সমাহার বা যোগফল বুঝিয়ে থাকে।  এই সমাস সহজে চিনতে হলে দুটি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

১. এটি অনেকগুলোর সমাহার বুঝিয়ে থাকে।

২. প্রধান পদ বা পূর্বপদটি সংখ্যাবাচক এবং পরপদটি বিশেষ্য হয়।

দ্বিগু সমাস এর উদাহারণ-

১. শতাব্দি = শত অব্দের সমাহার

২. সপ্তডিঙা = সপ্ত ডিঙার সমাহার

৩. সপ্তাহ = শত অহের সমাহার

৪. সপ্তর্ষী = স্পত ঋষির সমাহার

৫. সেতার = তিন তারের সমাহার

কর্মধারয় সমাস কাকে বলে

বিশেষ্য ও বিশেষন পদ মিলে যে সমাস হয় এবং পরপদের অর্থই প্রধানরূপে প্রতীয়মান হয়, তাকে কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন- যিনি জজ তিনিই সাহেব= জজ- সাহেব।

কর্মধারয় সমাস এর প্রকারভেদ

ক. সাধারণ কর্মধারয় সমাস

খ. মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস

গ. রূপক কর্মধারয় সমাস

ঘ. উপমান কর্মধারয় সমাস

ঙ. উপমিত কর্মধারয় সমাস

ক. সাধারণ কর্মধারয় সমাস কাকে বলে

বিশেষ‍্য ও বিশেষন, বিশেষ‍্য ও বিশেষ‍্য এবং বিশেষণ ও বিশেষণ পদের মধ‍্যে যে সমাস হয়ে থাকে তাই সাধারন কর্মধারয়। যেমন- নীল যে আকাশ = নীলাকাশ।

খ. মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস কাকে বলে

কর্মধারয়সমাসে কোন কোন স্থানে যদি মধ্যপদের লোপ হয়ে থাকে তবে তাকে মধ্যপদলোপী কর্মধারয়সমাস বলে। যথা: সিংহ চিন্হিত আসন = সিংহাসন।

গ. রূপক কর্মধারয় সমাস কাকে বলে

উপমেয় পদে উপমানের আরোপে  যে সমাস হয়, তাকে রূপক কর্মধারয়সমাস বলে। এক্ষেত্রে উপমেয় পদে রূপ শব্দটি যুক্ত থাকে। যেমন- মন রুপ মাঝি= মনমাঝি।

ঘ. উপমান কর্মধারয় সমাস কাকে বলে

উপমানবাচক পদের সাথে সমান ধর্মবাচক পদের মিলনের মাধ্যমে  যে সমাস হয়, তাকে উপমান কর্মধারয়সমাস বলে। যেমন: শশের  ন্যায় ব্যস্ত = শশব্যস্ত।

ঙ. উপমিত কর্মধারয় সমাস কাকে বলে

সমান ধর্মবাচক পদের কোনো প্রয়োগ না হলে উপমেয় ও উপমান পদের যে সমাস হয়, তাকে উপমিত কর্মধারয়সমাস বলে। যেমন: মুখ চন্দ্রের ন্যায় = চন্দ্রমুখ।

তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে

পূর্বপদের বিভক্তি লোপ পেয়ে  এবং পরপদের অর্থের প্রাধান্য দিয়ে যে সমাস গঠিত হয় তাকে তৎপুরুষসমাস বলে। যেমন- বিপদ কে আপন্ন= বিপদাপন্ন।

তৎপুরুষ সমাসের প্রকারভেদ

তৎপুরুষসমাস নয় প্রকার। যথা:

১।  দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস

২। তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস

৩। চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস

৪। পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস

৫। ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস

৬। সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস

৭। নঞ্ তৎপুরুষ সমাস

৮।  উপপদ তৎপুরুষ সমাস এবং

৯। অলুক তৎপুরুষ সমাস

১. দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে

পূর্বপদের দ্বিতীয়া বিভক্তি (কে, রে, এরে) ইত্যাদি লোপ পেয়ে যে সমাস হয় তাকে দ্বিতীয়া তৎপুরুষসমাস বলে।

২. তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে

পূর্বপদের তৃতীয়া বিভক্তি (দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক ইত্যাদি) লোপ পেয়ে যে সমাস হয়, তাকে তৃতীয়া তৎপুরুষসমাস বলে।

৩. চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে

পূর্বপদের চতুর্থী বিভক্তি (কে, জন্য, নিমিত্ত ইত্যাদি) লোপ পেয়ে যে সমাস হয়, তাকে চতুর্থী তৎপুরুষসমাস বলে।

৪. পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে

পূর্বপদের পঞ্চমী বিভক্তি (হতে, থেকে,চেয়ে ইত্যাদি) লোপ পেয়ে যে তৎপুরুষ সমাস হয় তাকে পঞ্চমী তৎপুরুষসমাস বলে।

৫. ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে

পূর্বপদের ষষ্ঠী বিভক্তি (র, এর) লোপ পেয়ে যে সমাস হয়, তাকে ষষ্ঠী তৎপুরুষসমাস বলে।

৬. সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে

পূর্বপদের সপ্তমী বিভক্তি (এ, য়, তে) লোপ পেয়ে যে সমাস হয়, তাকে সপ্তমী তৎপুরুষসমাস বলে।

৭. নঞ্ তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে

না বাচক নঞ্ অব্যয় (না, নেই, নাই, নয়)এর পূর্বে বসে যে তৎপুরুষসমাস হয়, তাকে নঞ্ তৎপুরুষসমাস বলে।

৮. উপপদ তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে

যে পদের পরবর্তী ক্রিয়ামূলের সাথে কৃৎ প্রত্যয় যুক্ত হয়, সে পদকে উপপদ বলে। কৃদন্ত পদের সাথে উপপদের যে সমাস, তাকে উপপদ তৎপুরুষসমাস বলে।

৯. অলুক তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে

যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের দ্বিতীয়াদি বিভক্তি লোপ হয় না, তাকে অলুক তৎপুরুষসমাস বলে।

বহুব্রীহি সমাস সমাস কাকে বলে

যে সমাসে সমস্যমান পদ গুলোর কোনোটির অর্থ প্রধানরূপে না বুঝিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে তাকে বহুব্রীহিসমাস বলে। যেমন- মহান আত্মা যার= মহাত্মা।

বহুব্রীহি সমাস আট প্রকার।

যথা-

১. সমানাধিকরণ বহুব্রীহি – দশ ভুজ যার= দশভুজা।

২. ব্যাধিকরন বহুব্রীহি – আশীতে বিষ যার= আশীবিষ

৩. ব্যাতিহার বহুব্রীহি – কানে কানে যে কথা= কানাকানি।

৪. মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি – এক দিকে চোখ যার= একচোখা।

৫. নঞর্থক বহুব্রীহি – বে( নাই) হায়া যার= বেহায়া

৬. অলুক বহুব্রীহি – গায়ে হলুদ দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে = গায়ে- হলুদ।

৭. প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি – ঘরের দিকে মুখ যার= ঘরমুখো

৮. সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি – দুই নল যার= দুনলা।

অব্যয়ীভাব সমাস সমাস কাকে বলে

যে সমাসের পূর্বপদে অব্যয় এবং পরপদে বিশেষ্য মিলিত হয়, তাকে অব্যয়ীভাবসমাস বলে।

যেমন-

কন্ঠের সমীপে= উপকন্ঠ।

চাঁদের অনুরূপ= চাঁদপানা ইত্যাদি।

5/5 - (3 votes)
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x