ফরজ গোসলের মাধ্যমে আমরা নিজেরা পবিত্র হই। ইসলামে পবিত্রতা কে ঈমানের অঙ্গ বলা হয়ে থাকে। তাই ইসলামের সকল বিধি নিষেধ হুকুম আহকাম পালনের সাথে এই পবিত্রতা জড়িয়ে আছে। তাই পবিত্রতা অর্জনের জন্য আমরা প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে গোসল করে থাকি। ফরজ গোসলের দোয়া প্রত্যেক ফরজ গোসলে অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
কোরআন মাজিদে উল্লেখ করা হয়েছে যে,
‘নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তওবা কারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীকে ভালবাসেন‘। [সূরা বাকারা]
রাসূল সা. এরশাদ করেন,
‘যখন কোনো মুসলিম অথবা মুমিন বান্দা অজু করে আর সে তার মুখমন্ডল ধৌত করে তখন অজু অথবা অজুর পানির শেষ ফোঁটার সঙ্গে সঙ্গে তার চেহারা থেকে সব গুনাহ বের হয়ে যায়, যা সে তার দু’চোখ দিয়ে করেছিল। যখন সে তার দু’হাত ধৌত করে তখন অজুর পানি অথবা অজুর পানির শেষ ফোঁটার সঙ্গে সঙ্গে তার উভয় হাত থেকে সব গুনাহ বের হয়ে যায়, যা সে তার হাত দিয়ে করেছিল। শেষ পর্যন্ত সে তার গুনাহ থেকে পাক হয়ে যায়।’ [তিরমিযী]
পবিত্রতা অর্জনের লক্ষ্যে ইসলামের কিছু সুনির্দিষ্ট পন্থা রয়েছে যার মধ্যে অজু,গোসল অন্যতম।
ফরজ গোসলের দোয়া বা নিয়ত-
বাংলা উচ্চারণঃ
“নাওয়াইতুল গুছলা লিরাফইল জানাবাতি।”
বাংলা অর্থঃ
“আমি নাপাকি থেকে পাক হওয়ার জন্য গোসল করছি।”
যেসকল কারণে কারো ওপর গোসল ফরজ হয়-
১. স্বপ্নদোষ বা উত্তেজনাবশত যদি বীর্যপাত হয়ে থাকে।
২. স্বপ্নের কথা মনে থাকুক কিংবা না থাকুক শরীরে, কাপড়ে বা বিছানায় যদি বীর্যের চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়।
৩. নারী-পুরুষ মিলনে বা সহবাসে বীর্যপাত হোক অথবা না হোক।
৪. মহিলাদের মাসিক ঋতুস্রাব (হায়িয) বন্ধ হওয়ার পর।
৫. নিফাস (সন্তান প্রসবের পর যে রক্ত স্রাব হয় তা) শেষ হওয়ার পর।
৬. ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পরে (নব-মুসলিম হলে)।
৭. স্ত্রী-পুরুষ কারও উত্তেজনাবশত বীর্য বের হয়ে আসলে ফরজ গোসল ছাড়া নামাজ হবে না।
ফরজ গোসলের নিয়ম-
গোসলের মধ্যে তিনটি ফরজ আছে। যথা :
১. গড়গড়া করে কুলি করা কিন্তু রোজা রাখাবস্থায় গড়গড়া করা নিষেধ রয়েছে।
২. নাকের ভিতরের নরম স্থান পর্যন্ত পানি পৌঁছিয়ে ভালোভাবে নাক পরিষ্কার করা।
৩. মাথা হইতে পা পর্যন্ত সমস্ত শরীরে পানি পৌঁছিয়ে ধৌত করা।
উপরের তিনটি ফরজ কাজের মধ্যে যদি একটিও ছুটে যায় কিংবা শরীরের একটি পশমের গোড়াও যদি শুকনা থাকে তাহলে গোসল শুদ্ধ হবে না।
গোসলের মধ্যে সুন্নত রয়েছে ছয়টি।
যথা :
১. দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করা।
২. শরীরের কোথায় কোনো নাপাকি থাকলে তা উত্তমরূপে ধৌত করা।
৩. লজ্জাস্থান ভাল করে ধুয়ে পরিষ্কার করা।
৪. অজু করা।
৫. প্রত্যেক অঙ্গ তিনবার করে ধুয়া এবং
৬. গোসলের পর গোসলের স্থান হতে একটু সরে গিয়ে দুই পা ভালো ভাবে ধৌত করা।
সবশেষে শুকনা গামছা বা কাপড় দিয়ে সারা শরীর মুছে পরিষ্কার কাপড় পরিধান করা। গোসলের শুরুতে অযু করা হলে যদি অযু না ভঙ্গ হয় তবে পুনরায় অযুর প্রয়োজন নেই।
গোসলের পর হাটুর উপর কাপড় উঠে গেলে অযু ভাঙ্গবে না। এটি অযু ভঙ্গের কারণ নয়।
আশা করছি আজকে আপনাদের ফরজ গোসলের দোয়া, নিয়ত ও উপায়সমূহ নিয়ে কিছুটা ধারণা দিতে পেরেছি।