দিনাজপুর বিরামপুরের দিওড় ইউনিয়নের শৌলাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান স্কুলের বাউন্ডারির ভেতর খেলার মাঠ দখল করে বাড়ি নির্মাণ করছেন বলে লিখিত আভিযোগ দিয়েছেন এলাকাবাসী।
বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিমল সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত শুক্রবার ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে সরজমিনে গিয়ে মাঠের মধ্য নির্মাণ শ্রমিকদের কাজ করতে দেখা গেছে। বিষয়টি ইউএনও পরিমল কুমার সরকারকে মুঠোফোনে অবহিত করলে তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানান। তবে সেখানে ৩ ঘণ্টা বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকগণ অবস্থান করলেও ঘটনাস্থলে কেউ আসেনি। পরে বিকেল বেলা সেই কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিবন্ধন শর্ত অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান ১৯৯৩ সালে ১০২৩ দাগে ২৯ শতক এবং একই দাগে ১৯৯৪ সালে ৩৩ শতক মোট ৬২ শতক জমি শৌলাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পক্ষে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর দলিল রেজিস্ট্রি করে দেন। বর্তমানে স্কুলটি জাতীয়করণ হওয়াই স্কুলের ৬২ শতক জমির মধ্যে ৩৩ শতক জমি স্কুলের নামে দেখিয়ে বাকি ২৯ শতক জমির নতুন দলিল (৭৯ সালের পোড়া যাওয়া) তৈরি করে তার ৩ ভাইবোনের নাম দেখিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের খেলার মাঠ দখল করেন। এদিকে গ্রামবাসী এবং অভিভাবকেরা কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীর খেলার মাঠ দখল হয়ে যাওয়ায় খেলাধুলার পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে জানান।
এ বিষয়ে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইমরুল কায়েস জানান, শৌলাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান খেলার মাঠ দখল করে বাড়ি নির্মাণ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর দাখিল করা হয়েছে। শুনানির দিন প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান উক্ত শুনানিতে অংশগ্রহণ না করে জোরপূর্বক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করছেন।
অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান বলেন, দুই দলিলে জমি দেয়া হয়েছে ঠিক। তবে ৩৩ শতক জমি স্কুলের নামে রয়েছে।
এদিকে উক্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে নারীঘটিত বিষয়ে এলাকাবাসী একটি অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক অন্যত্র বদলির সুপারিশ করেন। আজ পর্যন্ত তাকে বদলি করা হয়নি বলেও জানা যায়।
এছাড়াও গ্রামবাসী ও স্কুলের অভিভাবক মহল ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুলের শহীদ মিনার নির্মাণ না করে ভূয়া ভাউচারে টাকা উত্তোলন এবং স্কুল ঘর নির্মাণের সময় ঠিকাদারের ৫ টন রড চুরি করে বিক্রি করার সময় হাতেনাতে আটকসহ বিভিন্ন অপকর্ম ও দুর্নীতির বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক অভিযোগ দাখিল করেছেন।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার মিনারা বেগমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারি স্কুলের জায়গা ও খেলার মাঠ দখল করে বাড়ি নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটির সভাপতি পরিমল কুমার সরকার জানান, প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমানের বিষয়ে বিভিন্ন অনিয়ম ও অভিযোগ রয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর সুপারিশ করা হবে।