সংগঠন কি | সংগঠন কাকে বলে | সংগঠন নিয়ে বিভিন্ন সংজ্ঞা

সংগঠন কি | সংগঠন কাকে বলে | সংগঠন নিয়ে বিভিন্ন সংজ্ঞা

সংগঠন কি

সংগঠন একটি সামাজিক প্রক্রিয়া। প্রত্যেক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের এক বা একাধিক উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য থাকে। আর এ উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় মানবসম্পদ, কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি, সাজসরঞ্জাম এবং কার্যক্ষেত্রের প্রয়োজন হয়। তবে সকল উপকরণের সুসংবদ্ধ সমাহার ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভবপর হয় না। তাই জটিল কার্য অপরের সাহায্যে সম্পাদন করার জন্য কতিপয় ব্যক্তির সমন্বয়ে কাঠামো গঠন করা হয়। এ কাঠামোর আওতায় মানুষ তথা কর্মীরা একত্রিত হয়ে কাজ করে। ফলে প্রতিষ্ঠানের পক্ষে তাদের সমবেত প্রচেষ্টার ফলশ্রুতিতে সহজে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয়। আর সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য মানুষের এরূপ সমবেত কর্মপ্রচেষ্টাকেই সংগঠন নামে অভিহিত করা হয়।

সংগঠন কাকে বলে

সাধারণত লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন বিশেষায়িত উপাদানসমূহের সুষম সমন্বয় সাধনকে সংগঠন বলে। অন্যভাবে বলা যায়, কতিপয় ব্যক্তি বা দল পারস্পরিক স্বার্থে একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে একটি সামাজিক পদ্ধতি ও সুনির্দিষ্ট কাঠামোর ভিতর অন্তর্ভুক্ত হওয়াকে সংগঠন বলে। সহজ কথায়, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে বা ততোধিক ব্যক্তি পূর্ব নির্ধারিত পদ্ধতিতে একত্রিত হয়ে কাজ করলে তাকে সংগঠন বলে।

সংগঠন কাকে বলে তা নিয়ে মনীষীদের বিভিন্ন সংজ্ঞা

সংগঠন সম্পর্কে বিভিন্ন মনীষী ও পণ্ডিত ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে
তাঁদের উল্লেখযোগ্য ও জনপ্রিয় সংজ্ঞা উপস্থাপন করা হল।

এল. এইচ. হেনী (L. H. Honey) এর মতে, “কোন নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য বা উদ্দেশ্যাবলি অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠানের বিশেষ বিশেষ অংশ বা উপাদানসমূহকে সুষ্ঠুভাবে সমন্বয় সাধনের প্রক্রিয়াকে সংগঠন বলে।” (Organization is a harmonious adjustment of specialized parts for the accomplishment of some common purpose or purposes.)

কুঞ্জ এবং ডোনেল ( Koontz and Donnel) এর ভাষায়, “সংগঠন হল একটি সম্পর্কের কাঠামো যেখানে প্রাতিষ্ঠানিক উপকরণাদি সমবেত হয় এবং সকল উপকরণাদিকে ঘিরে ব্যক্তির প্রচেষ্টাসমূহ সমন্বিত হয়। ” (Organization is a structural relationship by which an enterprise is bound together and the framework in which individual effort is coordinated.)

এস. পি. বিপ (S. P. Robbins) এর ভাষায়, “সাধারণ বা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত অনেকগুলো লক্ষ্য অর্জনে কার্যসম্পাদনের জন্য দুই বা ততোধিক ব্যক্তিকে একত্রিত করে সচেতনভাবে যে সামাজিক দল বা এককের সমন্বয় সাধন করা হয় তাকে সংগঠন বলে।” (Organization is a conciously co-ordinated social unit, compose of two or more people that functions on a relatively continuous basis to achieve a common goal or set of goals.)

এল. এ. অ্যালেন (L. A. Allen) এর মতে, “সংগঠন হল এমন এক প্রক্রিয়া, যা উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য আবশ্যকীয় কার্যাদি শনাক্তকরণ ও শ্রেণীবদ্ধকরণ, দায়িত্ব ও কর্তব্য সংজ্ঞায়িতকরণ ও বণ্টন এবং কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপন, যাতে তারা সর্বাধিক তৎপরতার সাথে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্য অর্জনে সমর্থ হয়।” (Organization as the process of identifying and grouping the work to be performed, defining and obligating responsibility and authority and establishing relationship for the purpose of enabling people to work most effectively together in accomplishing objectives.)

থিওডোর ক্যাপলো (Theodore Caplow) এর মতে, “কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে যে সামাজিক পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করা হয় তাকে সংগঠন বলে।” (Organization is a social system deliberately established to out some definite purpose.)

টেলকট (Talcott) এর মতে, “সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অনুসন্ধানের উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে যে সামাজিক একক বা মানবিক দল গঠন বা পুনর্গঠন করা হয় তাকে সংগঠন বলে।” (Organizations are social units or human grouping deliberately constructed and reconstructed to seek specific goals.)

  1. W. Shewldge এর মতে, “সংগঠন হল অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় জনশক্তি, জিনিসপত্র, যন্ত্রপাতি,সাজসরঞ্জাম ও কার্যক্ষেত্রের সুসংবদ্ধ সমাহার।”

অধ্যাপক ম্যাকফারল্যান্ড (Prof. Mcfarland) এর মতে, “সংগঠন হল এমন একদল পরিচিত ব্যক্তিবর্গ, যারা লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে প্রচেষ্টা বলে অবদান রাখে।”

এইচ. এ. সিমন (H. A. Simon) এর মতে, “সংগঠন বলতে কোন দলের বা গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত সদস্যবৃন্দের মধ্যে যোগাযোগের ধারা ও অন্যান্য সম্পর্কের জটিল সমাহারকে বুঝায়।”

উপসংহার

উপরিউক্ত আলোচনা ও সংজ্ঞাসমূহের আলোকে বলা যায় যে, সংগঠন হল প্রতিষ্ঠানের উপকরণাদি ও কাজকে বিভিন্ন বিভাগ ও উপবিভাগে বিভক্তকরণ, প্রত্যেকের জন্য পৃথকভাবে দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব নির্ধারণ এবং প্রতিষ্ঠানের উপর হতে নিচ পর্যন্ত প্রত্যেক কাজ বা বিভাগ ও উপবিভাগের মধ্যে সম্পর্ক নিরূপণ ও সমন্বয় সাধনের একটি প্রক্রিয়া, যাতে প্রতিটি ব্যক্তি ও উপায় উপকরণের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করে লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়।

Similar Posts