সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদক্ষেপ সমূহ আলোচনা কর
সিদ্ধান্ত গ্রহণ ব্যবস্থাপনার একটি মৌলিক কাজ। প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবস্থাপনার কার্যসমূহ পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন জটিলতা ও পরিবর্তনশীলতার সম্মুখীন হতে হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সফলতার উপরই ব্যবস্থাপনার সাফল্যার্জন নির্ভর করে। এজন্য ব্যবস্থাপনাকে বিভিন্ন সম্ভাব্য বিকল্পসমূহ হতে পূর্বানুমানের ভিত্তিতে সবচেয়ে উত্তম বিকল্পটি নির্বাচন করতে হয়। এক্ষেত্রে কতকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়, যা সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত।
সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদক্ষেপ সমূহ
ব্যবস্থাপকীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ একটি জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। এ জটিল প্রক্রিয়া সম্পাদনের ক্ষেত্রে কতিপয় ধারাবাহিক প্রক্রিয়া বা পদক্ষেপসমূহকে অনুসরণ করতে হয়। নিম্নে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিভিন্ন পদক্ষেপসমূহ আলোচনা করা হল।
সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিভিন্ন পদক্ষেপসমূহ (Various steps of decision making)
- ১. সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও শ্রেণীবিন্যাসকরণ
- ২. সমস্যা বিশ্লেষণ
- ৩. অগ্রাধিকার নির্ধারণ
- ৪. তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ
- ৫. প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী উপাদান সনাক্তকরণ
- ৬. বিকল্প উদ্ভাবন
- ৭. বিকল্প মূল্যায়ন
- ৮. কাঙ্ক্ষিত বিকল্প নির্বাচন
- ৯. সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন
- ১০. ফলাবর্তনের লক্ষ্যে পর্যবেক্ষণ
১. সমস্যার চিহ্নিতকরণ ও শ্রেণীবিন্যাসকরণ (Identifying and classifying the problem)
সিদ্ধান্ত গ্রহণের মূল উদ্দেশ্যই হল প্রাতিষ্ঠানিক সমস্যার সমাধান। তাই প্রকৃত সমস্যা চিহ্নিত করাকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ সমস্যা চিহ্নিত করতে ভুল হলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে। তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে সহজতর করার লক্ষ্যে কি কি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন তা প্রথমেই চিহ্নিত করতে হবে এবং এর প্রকৃতি অনুযায়ী সেগুলোকে শ্রেণীবিন্যাস করতে হবে।
২. সমস্যা বিশ্লেষণ (Analyzing the problem)
সমস্যা চিহ্নিত করা এবং শ্রেণীবিন্যাসের পর এর প্রকৃতি, কারণ ও ফলাফল সুনির্দিষ্টভাবে বিশ্লেষণ করতে হয়। এক্ষেত্রে যে সমস্যাটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধান করা প্রয়োজন তা নির্ধারণ করতে হয়।
৩. অগ্রাধিকার নির্ধারণ (Determining priority)
প্রতিষ্ঠানে অনেক সময় একাধিক সমস্যা একসাথে দেখা দেয়। এক্ষেত্রে কয়েকটি সিদ্ধান্ত একসাথে গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু সবগুলো সমস্যা একই জাতীয় গুরুত্ব বহন করে না। এমতাবস্থায় ব্যবস্থাপনাকে অপেক্ষাকৃত জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়।
৪. তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ (Collecting data and information)
প্রাসঙ্গিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য ও বস্তুনিষ্ঠ উপাত্ত সংগ্রহের উপর সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বার্থকতা নির্ভরশীল। এমতাবস্থায় প্রতিষ্ঠানে হঠাৎ করে কোনরূপ পরিবর্তন না ঘটলে এসব তথ্যসমূহ সিদ্ধান্তে ইতিবাচক ফল আনয়ন করে। তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সিদ্ধান্তকারীকে তথ্য সম্পর্কে অবগত হওয়া আবশ্যক।
৫. প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী উপাদান সনাক্তকরণ (Identifying inhibiting factors)
সিদ্ধান্তকে সফলতার সাথে বাস্তবায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তা বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী উপাদানসমূহ সনাক্তকরণ। এ উদ্দেশ্যে সংগৃহীত যাবতীয় তথ্য ও উপাত্তসমূহের ভিত্তিতে যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী উপাদানসমূহের সনাক্ত করা প্রয়োজন।
৬. বিকল্প উদ্ভাবন (Generation of development)
প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনেই বিভিন্ন রকম সমস্যা সৃষ্টি হয়ে থাকে। এসব সমস্যাসমূহ যথাযথ সমাধানের জন্য একাধিক বিকল্প উদ্ভাবন করতে হয়, কারণ শুধুমাত্র একটি উপায় থেকে কোন মুখ্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সমীচীন নয়।
৭. বিকল্প মূল্যায়ন (Evaluation of alternatives)
প্রতিষ্ঠানের একাধিক বিকল্প থেকে যে কোন বিকল্প ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হলে গৃহীত সিদ্ধান্তটি সফল ও কার্যকর হতে পারে না। তাই প্রতিষ্ঠানে কোন বিষয়ে নিরপেক্ষ ও যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এর নীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে মূল্যায়ন করা আবশ্যক।
৮. কাঙ্ক্ষিত বিকল্প নির্বাচন (Selection of the desired alternative)
মূল্যায়নকৃত বিকল্পসমূহ হতে সবচেয়ে উত্তম বিকল্পটি নির্বাচন করা সিদ্ধান্ত গ্রহণের গুরুত্বপূর্ণ এবং মৌলিক কাজ। এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী বিকল্পসমূহের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম বিকল্পটি রেখে বাকীসমূহ পরিত্যাগ করে থাকেন।
৯. সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন (Implementation of decision)
শুধুমাত্র সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাই এর মূল লক্ষ্য নয়, এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে সফলতার সাথে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা। কেননা সিদ্ধান্ত গ্রহণের কার্যকারিতা সাধারণত গৃহীত সিদ্ধান্তের সফল বাস্তবায়নের উপর নির্ভর করে। তাই গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যেসব সমস্যাসমূহ বাধা সৃষ্টি করে সেসব সমস্যাসমূহ চিহ্নিত করতে হয় এবং তার প্রয়োজনীয় সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়।
১০. ফলাবর্তনের লক্ষ্যে পর্যবেক্ষণ (Monitoring the decision to get feed back)
সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার সর্বশেষ ধাপ বা প্রক্রিয়া হচ্ছে যে সিদ্ধান্তটি গৃহীত হয়েছে তার যথাযথ বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করা এবং কোন প্রকার ত্রুটিবিচ্যুতি পরিলক্ষিত হলে তার সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এ সম্পর্কে স্বনামধন্য ব্যবস্থাপনা বিশারদ Peter F. Draker বলেছেন, “Best monitoring system is one in which the manager actually goes and looks.” এক্ষেত্রে সরাসরি কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিকট ফলাবর্তন প্রাপ্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।