মোবাইল ব্যাংকিং এ কিভাবে নিরাপদ থাকবেন
১.নিবন্ধিত সিমে ব্যাংকিং একাউন্ট খোলা
আমরা অনেকেই আছি যে নিজের ব্যবহৃত সিম দিয়ে অ্যাকাউন্ট না খুলে পরিবারের অন্য সদস্যদের দিয়ে একাউন্ট খুলি এতে দেখা যায় বিভিন্ন প্রকার ঝামেলা হয় । অর্থাৎ আপনার সিম যদি নিবন্ধন না হয় অর্থাৎ সঠিক না হয় তাহলে যেকোনো সময়ে বন্ধ হয়ে যেতে পারে । এছাড়াও হাতে থাকা ফোন মোবাইল চুরি হয়ে যেতে পারে সে ক্ষেত্রে আপনার সমস্যা দেখা দিতে পারে । তাই আপনার কাছে সিমের বৈদ্য কাগজপত্র থাকলে খুব সহজেই আপনি সিম রিপ্লেস করতে পারবেন । কিন্তু কাগজপত্র না থাকলে সিম তুলতে পারবেন না । এতে আপনার মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টে থাকা আর ফেরত না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি । তাই আপনাকে অ্যাকাউন্ট খোলার আগে অবশ্যই নিজের নিবন্ধিত সিম দিয়ে একাউন্ট খুলতে হবে ।
২.আপনার ফোন হারিয়ে গেলে
নিজের হাতে থাকা ফোন হারিয়ে গেলে যত দ্রুত সম্ভব মোবাইল ব্যাংকিংয়ে হেল্পলাইনে কল করে তাদের কাছ থেকে একটু পরামর্শ নিবেন । নিরাপত্তার জন্য সম্ভব হলে সিম কার্ডের সিকিউরিটি অন করুন । যাতে ফোন চালু করলে সিমের পিন দরকার হয় । আপনার হাতে থাকা ফোনটি হারিয়ে গেলে আপনাকে তৎক্ষণাৎ সিম রিপ্লেস করতে হবে । বাড়তি নিরাপত্তার জন্য সম্ভব হলে সিম কার্ডের পিন কোড সিকিউরিটি অন করুন যাতে ফোন চালু করলে সিমের পিন দরকার হয় । আমাদেরকে মনে রাখতে হবে সিম কার্ডের পিন চালু করাটা একটু বিপদজনক কেননা সিমের পিন নাম্বার ভুলে গেলে আপনি আর আপনার সিম কার্ডটি ব্যবহার করতে পারবেন না । একই মোবাইলের জন্য নতুন একটি সিম তুলতে হবে এতে করে মোবাইল নম্বর ঠিকই ফিরে পাবেন তবে একটু ঝামেলা হবে । তাই নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আপনাকে সর্বক্ষেত্রে সিমের পিন কোড একটিভ থাকতে হবে তাহলে আপনার চিন্তা দূর হবে ।
৩. মুঠো ফোনে ব্যালেন্স হিসাব রাখুন
আমাদের হাতে থাকা মুঠো ফোনে বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে কত টাকা জমা আছে তা আমাদেরকে জানতে হবে । কেননা এটা অনেক সময় কাজে লাগতে পারে । কাস্টমার কেয়ারে আমরা কোন সমস্যার পরলে তাদের কাছে ফোন করলে তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করবে যে আপনার লাস্ট কবে কত টাকা ক্যাশ আউট করেছেন তা আপনাকে মনে রাখতে হবে । জিজ্ঞাসা করবে লাস্ট কবে সর্বশেষ কত টাকা ক্যাশ আউট করেছেন জানতে চাইলে আপনাকে বলতে হবে । কাস্টমার কেয়ার কখনোই আপনার পিন নাম্বার জিজ্ঞাসা করবে না এবং জানতে চাইবে না । আর একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে আমরা যে ক্যাশ আউট করার পর আমাদের হাতে থাকা মুঠোফোনে যে মেসেজগুলো আসে সেগুলো অবশ্যই সংরক্ষণ করে রাখতে হবে ডিলিট করা যাবে না কেননা এগুলো অনেক সময় অনেক উপকার করে এ ক্ষেত্রে আমাদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে ।
৪.ভুয়া কাস্টমার কেয়ার থেকে সাবধান
মনে রাখতে হবে কোন কাস্টমার কেয়ারে অর্থাৎ মোবাইল ব্যাংকিং কাস্টমার কেয়ার কখনোই আপনার পিন নাম্বার জানতে চাইবে না । আপনার মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট এর পিন নাম্বার শুধু আপনার জানা উচিত আর যেন কেউ না জানে । কাস্টমার কেয়ারে ভুয়া পরিচয় দিয়ে আপনার মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট যেমন. বিকাশ. নগদ, উপায়, ডাচ বাংলা ইত্যাদি আপনার কাছেই পরিচয় পিন নাম্বার জানতে চাহিবে আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে কাস্টমার কেয়ার কখনোই আপনার পিন নাম্বার তারা জানতে চাইবে না । তারা আপনাকে ভুয়া পরিচয় দিয়ে আপনার ফোনে একটা এসএমএস দিয়ে বলবে আপনার ফোনে একটা ভেরিফিকেশন কোড গেছে আপনি তাহলে আপনার পিন নাম্বার তাদের কাছে দেন কখনোই আপনি এমন কাজ করবেন না তাদেরকে পিন বা কোড নাম্বার দিবেন না । বরঞ্চ আপনি হেল্প লাইনে তাদের সাথে কথা বলে অভিযোগ করুন ।
৫.নিজের নম্বর গোপন রাখুন
হাতে থাকা মুঠোফোনের মোবাইল একাউন্টে ব্যাংকিংয়ের সব থেকে প্রথম কাজটি হল পিন নম্বর নিজের কাছে সংরক্ষিত রাখা । আপনার পিন নাম্বার যেন কেউ না জানতে পারে । আপনার যদি অনেক বা একাধিক মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট থাকে বিকাশ, নগদ , উপায় প্রত্যেকটি একাউন্টের জন্য আলাদা আলাদাভাবে পিন নম্বর সেট করতে হবে। আপনাকে আরো একটি কথা মনে রাখতে হবে পিন নাম্বার কেউ যেন না জানে । কেউ পিন নাম্বার জেনে গেলে আপনার টাকা তুলে নিতে পারবে । এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই পিন নম্বর পরিবর্তন করতে হবে ।
৬.টাকা পাঠানোর আগে ফোন করে নিশ্চিত হন
আমরা আজকাল অনেকেই নিজের হাতের মুঠোফোন দিয়ে সহজেই কাছের কিংবা আপনজনদের কাছে সহজেই টাকা পাঠাতে পারি । কিন্তু আমরা ফোন করে নিশ্চিত না হয়ে কখনো টাকা পাঠাবো না আগে ফোন দিয়ে তাদের কাছে তাদের মোবাইল ব্যাংকিংঅ্যাকাউন্ট কোন নাম্বার দিয়ে খোলা আছে জানতে চাইবো তারপর নিশ্চিত হয়ে তাদের কাছে টাকা পাঠাবো । কেননা অনেক প্রতারকেরা ফোন করে টাকা চাওয়ার অনেক ঘটনায় ঘটেছে । আপনার কাছের কিংবা পরিচিতির জন্য নম্বর থেকে ফোন এলে আপনি টাকা দেওয়ার আগে অবশ্যই আপনার মোবাইল থেকে সেই ব্যক্তির নম্বর ডায়াল করে জেনে নিবেন তিনি আসলেই কত টাকা চাচ্ছেন । গলার স্বর , এমনকি কথাবাত্রা ভালোভাবে শুনে তাদের কাছে টাকা পাঠাবেন ।
৭.ভুয়া কল নকল মেসেজ এ ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে
আজকাল বিভিন্ন অনলাইনে সেবা ব্যবহার করে অনেক প্রতারক ফোন নাম্বার বানিয়ে সেগুলো থেকে মেসেজ পাঠানো হয় এমনকি কল করা হয় এটি খুবই বিপদজনক। একটু উদাহরণ থেকেই বলা যায় যে আমাদের হাতে থাকা মুঠোফোন মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বিকাশ থেকে যে মেসেজগুলো আছে সেগুলো বিকাশ থেকে এসেছে । অনেকেই আপনাকে এরকম প্রতারনামূলক মেসেজ পাঠিয়ে আপনার মোবাইল ফোন করে বলবে যে ভাই ভুলে আপনার বিকাশে এত হাজার টাকা চলে গেছে একটু তাড়াতাড়ি আমাকে ফেরত দেন । কোনভাবেই তাদের কথা বিশ্বাস করবেন না আপনি হয়তো সরল মনে মেসেজ দেখেই সাথে সাথে বিকাশে ডায়াল করে টাকা দিতে চাইবেন । এরকম মারাত্মক ভুল কখনোই করবেন না। আপনার ফোনে মেসেজ এলে আপনি আপনার একাউন্ট টাকা চেক করবেন তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন । অর্থাৎ যে কোন মোবাইল ব্যাংকিং ফোন বা মেসেজ এলে আপনাকে তৎক্ষণাৎ আপনার টাকা চেক করতে হবে নিজের মোবাইল থেকে । আপনি কখনোই তাদের কথা মেসেজ এর উপর বিশ্বাস করবেন না এতে আপনার বিপদ হতে পারে ।
৮. Mobile মেসেজের জন্য জায়গা রাখা
নতুন মেসেজ আসার জন্য মোবাইল ইনবক্সে পর্যাপ্ত খালি জায়গা রাখতে হবে । অনেক সময় আমাদের হাতে থাকা মুঠোফোনে মেসেজের পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে নতুনমেসেজ আসার জন্য স্পেস থাকে না । এরকম হলে মোবাইল ব্যাংকিং এর গুরুত্বপূর্ণ লেনদেনে মেসেজ আসবে না তাই আপনাকে নতুন মেসেজের জন্য ইনবক্সে জায়গা রাখতে হবে । বিভিন্ন প্রকার মোবাইল কোম্পানি থেকে বিভিন্ন ধরনের মেসেজ আসে তাই আপনাকে অপ্রয়োজনীয় মেসেজগুলো ডিলিট করে দিতে হবে এবং মোবাইল ব্যাংকিং এর মেসেজগুলো সংরক্ষণ করে রাখতে হবে ।
৯.জিনের বাদশা & লটারি পুরস্কার থেকে সাবধান
আজকাল অনেকের কাছ থেকে শুনে থাকবেন অপরিচিত কেউ ফোন করে হঠাৎ বলে আপনি এত টাকা লটারি জিতেছেন, আপনি এই নাম্বারে টাকা বিকাশ করলেই আপনি লটারি টাকা পাবেন । তখন অনেকেই লোভে পড়ে মোবাইলে টাকা পাঠিয়ে দেয় । এত লোভ আপনি কখনোই করবেন না এরকম অবস্থায় পড়লে আপনাকে অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অব্যাহত করতে হবে এবং মোবাইল সেবার হেল্পলাইনে আপনাকে অভিযোগ করতে হবে ।
আশা করি উপরের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করলে বা মেনে চললে আপনার হাতে থাকা মুঠোফোনের মোবাইল ব্যাংকিং এর একাউন্ট গুলো আপনি নিরাপদে রাখতে পারবেন এতে করে আপনার কোন রকম ঝামেলায় পোহাতে হবে না । তাই আমি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের কাছে তুলে ধরলাম মোবাইল ব্যাংকিং নিরাপদ থাকার উপায়গুলো ।