২৫ শে মার্চ গণহ*ত্যা দিবস রচনা ও ইতিহাস

২৫ শে মার্চ গণহত্যা দিবস রচনা । ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ইতিহাস

ভূমিকা :১৯৭১ সাল পাকিস্তানী বাহিনীরা হঠাৎ করে এদেশের সাধারণ মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ।যা অপারেশন সার্চলাইট  এটি মূলত( গণহত্যা) নামে পরিচিত।
রাষ্ট্রীয়ভাবে  ২৫ শে মার্চ কে  গণহত্যা দিবস কে ২০১৭ সাল থেকে পালন করা হয় । গত ৫০ বছরেও স্বাধীনতার পর এই দিনটিকে আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যা দিবস   স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা করলেও এখন পর্যন্ত সফল  তা হয়নি । এটা একটা  বেদনা দায়ক  ব্যাপার । ২৫  সে মার্চ  কাল রাতে অর্থাৎ অপারেশন সার্চলাইটে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীরা ৫০ হাজার   বাংলাদেশিকে হত্যা করে যা পৃথিবীর বুকে ভয়াবহ  দৃষ্টান্ত যা অপারেশন সার্চলাইট হিসেবে পরিচিত ( গণহত্যা)  বাংলাদেশ  ।অপারেশন সার্চলাইট ১৯৭১ সাল থেকে ২৫ শে মার্চ থেকে শুরু হওয়া পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত পরিকল্পিত গণহত্যা, যার মাধ্যমে তারা 1971 এর মার্চ ও পরবর্তী সময়ে সংঘটিত বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দমন করতে চেয়েছিল । ঢাকায়  এক রাতের যে অভিযানে অর্ধলক্ষ মানুষের  প্রাণহানি  হয়েছিল, সেই রাতটিকে স্বাধীন বাংলাদেশের বর্ণনা করা হয়  কালো রাত্রি হিসেবে । পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চের রাতে ওই সেনা অভিযানের সাংকেতিক নাম বা অপারেশন সার্চলাইট এই অভিধানটির পরিকল্পনা করা হয়েছিল তার এক সপ্তাহ আগে ১৮ই মার্চ । সময়টা ছিল রাজনৈতিকভাবে উত্তেজনা  । এরই মধ্যেই ৭ই মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমান ভাষণ দিয়েছিলেন । তখন চলছিল ঢাকায়শেখ মজিবুর রহমান – ইয়া খানের বৈঠক। আলোচনায় অংশ নিতে জুলফিকার আলী ভুট্টো ও রয়েছিলেন ঢাকা শহরে । সবকিছু মিলিয়েই  খুবই উত্তেজনা পরিস্থিতি ছিলএর প্রেক্ষাপটে অপারেশন সার্চলাইট এর, যুক্তি ছিল রাজনৈতিক সম্মততা  ব্যর্থ  হলেও সামরিক অভিযান চালিয়ে পাকিস্তান সরকারের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা হবে । কাল রাত  এই ভয়াবহ সেনা অভিযানের পরিকল্পনা কিভাবে হয় তা ধারণা পাওয়া যায় সেই  সময়ের পাকিস্তানের কর্মকর্তাদের স্মৃতিকথা থেকে।

 অপারেশন সার্চলাইট পরিকল্পনা করা হয়েছিল যেভাবে:

 মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের 14 তম ডিভিশনের পরিকল্পনাকারী । ১৯৭১ সালের ৯ মার্চ রাতের পূর্ব পাকিস্তানের  গর্ভনর  লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান টেলিফোন থেকে মেজর জেনারেল রাও  ফরমান আলী  এবং খাদিম হোসেন রাজাকে কমান্ড হাউজে ডেকে পাঠান । রাফরমান আলী ছিলেন পাকিস্তানের গর্ভনরের উপদেষ্টা তারা দুইজনেই সেখানে যাওয়ার পর টিক্কা খান তাদের বলেন শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার  খানের  আলোচনা   তেমন অগ্রগতি হচ্ছে না । যে কারণে তারা একটা আলোচনা করেছিলেন অপারেশন সার্চলাইট হিসেবে ( গণহত্যা) সেই অনুযায়ী তারা ১৮ই মার্চ সকাল থেকে ।  খাদিম হোসেন রাজার বাসায় রাও ফরমান আলী এবং দুজন মিলে অপারেশন সার্চলাইট এর খসড়া তৈরি করেছিলেন । পরবর্তীতে জানা যায় খাদিম হোসেন রাজা তার বইয়ে লিখেছেন ২৪শে মার্চ দুইটি হেলিকপ্টার নিয়ে রাও  ফরমান আলী  এবং তিনি নিজে ঢাকার বাইরে অবস্থানরত বিগ্রেড কমান্ডারদের সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দিতে রওনা হন । তারা যশোর কুমিল্লা চট্টগ্রামে যান সিলেট এমন কি রংপুর রাজশাহী ক্যান্টনমেন্টে পাঠানো হয় সিনিয়র স্টাফ অফিসারদের । অপারেশন সার্চলাইটের পরিকল্পনার কিছু দিক ছিল সেগুলো হলো এমন :
সফল হওয়ার জন্য  আংশিক চমক  এবং  সেনাবাহিনী প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে  আশ্রয় নিয়ে তাদের সাহায্য করার পরামর্শ দিয়েছিল । যেকোন বিদ্রোহ  বা বিরোধিতা কে কঠোরভাবে দমন করা হবে বাঙালি সেনাসদস্য পুলিশকে নিরস্ত্র করা হবে। বিশেষ করে পিলখানায় ইস্টবেঙ্গল পাকিস্তান রাইফেলসের অস্ত্রগার , রাজারবাগে পুলিশ এবং চট্টগ্রামের কুড়ি হাজার রাইফেলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়া ।

 ২৫ শে মার্চ গণহত্যা দিবস রচনা । ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ইতিহাস

শেখ মুজিবকে জীবিত অবস্থায় ধরতে হবে । ১৫ জন আওয়ামী লীগ এবং কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদেরকে তাদের বাড়িতে তলাশি করতে হবে এবং তাদেরকে পাওয়া গেলে গ্রেফতার করতে হবে । উদ্বোধন কর্মকর্তারা দেশের বিভিন্ন ব্যারাকে ঘুরে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করলেও অপারেশন সার্চলাইট  এর অংশ নেওয়ার জন্য সামরিক বাহিনী কারো কাছে কোন লিখিত অর্ডার পাঠানো হয়নি ।
 মেজর জেনারেল খাদিম হোসেনের কাছে  লেফটেন্যান্ট  জেনারেল  টিক্কা খানের কাছ থেকে ফোনটি এসেছিল ২৫ শে মার্চ সকাল 11 টায় সংক্ষেপে বলা হয়েছিল আজ রাতেই হবে । তৎক্ষণাৎ  প্রেসিডেন্ট ইয়া হিয়া খান  ততক্ষণে  নিরাপদে করাচি পৌঁছে যান ।
২৫ শে মার্চের গণহত্যা দিবস । মানব সভ্যতার ইতিহাসে এটি কলঙ্কিত হত্যাযজ্ঞের দিন । নিরহ নিরস্ত্র বাঙালির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বর্বর রচিত গণহত্যা চালানোর  স্মৃতির কাল রাতে ২৫ শে মার্চ । 1971 সালের এই রাতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর হাতে রচিত হয়েছিল বিশ্বের  নিঃসঙ্গতম  গণহত্যার এই কালাধ্যায় । একাত্তরের দিনটিতে সারা দেশের মানুষ ছিল স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় উজ্জীবিত । জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ শুনেই মানুষ বুঝে গিয়েছিল স্বাধীনতা আসন্ন । স্বাধীনতা আকাঙ্ক্ষা  বাস্তবায়নের জন্য নামতে হবে সশস্ত্র সংগ্রামে। পচিশে মার্চের সেই রাতে ঢাকাবাসী নিরীহ বাঙালি সারাদিনে কর্মব্যস্ততা শেষে গভীর ঘুমে  আচ্ছন্ন । ঠিক সেই সময়ে ভয়ংকর হায়েনার মত ঝাঁপিয়ে পড়ে হানাদার বাহিনী । সেই রাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে থাকা গণমাধ্যম  অগ্নিসংযোগ,   মোটরসেল ছেড়ে , দৈনিক ইত্তেফাক , দৈনিক সংবাদ জাতীয় পেজ ক্লাব ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী । জীবন দিতে হয় বেশ কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মীকে । ডক্টর . গোবিন্দ চন্দ্র দেব ,  অধ্যাপক সন্তোষ  ভট্টাচার্য , ডঃ মনিরুজ্জামান সহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী নয় শিক্ষককে তারা নির্মমভাবে হত্যা করে নিষ্ঠুরভাবে । সেই রাতে   ১ তার  দিকে একদল  শূন্যবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির 32 নম্বর বাড়ির দিকে এগিয়ে যায় । তারা গুলি   করতে করতে  বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। তারপর তারা বাঙালির স্বাধীনতা স্বপ্নকে চিরতরে নস্যাৎ করে দিতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়  পা   সেনাবাহিনী দল ।

২৫ মার্চ কালো রাতে গণহত্যা দিবসের রচনা । ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ইতিহাস

ঘটনা প্রবাহ :  ১৯৭০ সালে  সাবেক পাকিস্তান দেশব্যাপী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় । নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নেতৃত্বে সংখ্যাগরিষ্ঠ  বিজয় লাভ করে । সংসদীয়  আইন অনুযায়ী দেশের শাসন ক্ষমতা শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে আসার কথা ছিল । কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো কার চুপি তে  শেখ  মুজিবুর রহমানের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে অস্বীকার করে । নানা ধরনের তালবাহানা শুরু করতে থাকে । এতে বাঙ্গালীদের মনে সন্দেহ হতে থাকে । তারা  নানাভাবে বাঙালি জাতিকে শাসনের নামে শোষণ করে আসছে । 1971 সালের 7 ই মার্চ ঢাকার ঐতিহাসিক ময়দানে বাংলা সাড়ে সাত কোটি মানুষের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লক্ষ লক্ষ মানুষের সামনে পাকিস্তানি  কুচাকৃতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার ওয়াদা করেন । তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হলে তথা ক্ষমতা ফিরে না দিলে আমরা সংগ্রাম করব ।
* এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।
গণহত্যা  তান্ডব লীলা : সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া খানআওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা অত্যন্ত করেননি । বাঙালি জাতিকে চিরতরে ধ্বংস করার জন্য সশস্ত্র পশ্চিমা সেনাবাহিনীর হাতে অস্ত্র তুলে দেয় । ১৯৭১ সালের 25 শে মার্চের মধ্যরাতে ঘুমন্ত ঢাকা নগরী নিরীহ মানুষের উপর তারা ঝাপিয়ে পড়ে । এমনকি তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসগুলোতে রাজার বাগ পুলিশসহ  নানা জায়গায়  হত্যাযঙ্গ চালায় । পশ্চিম পাকিস্তানের বাহিনী সাধারণ মানুষের উপর হত্যা সংঘ চালানোর প্রাণভয়ে মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যায় । প্রায় এক কোটির মত মানুষ বন্ধু রাষ্ট্র ভারতীয় আশ্রয় নেয়। তবু তাদের মানুষ মারা নেশা কমেনি । এদেশে এক শ্রেণীর স্বাধীনতার বিরোধী মীরজাফর  দল পশ্চিমাদের হাতে হাত রেখে সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে । এদের অত্যাচার মানুষের সহ্যে সীমা ছড়িয়ে যায় ।
উপসংহার : সীমান্ত অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীরা শিবির গড়ে উঠতে লাগলো । বাংলার ছেলেরা সামরিক শিক্ষা গ্রহণ করতে লাগলো । তারা ঝাঁপিয়ে পড়ল গণহত্যাকারী পশুদের উপর । পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে তারা বিভিন্ন ধরনের ট্রেনিং  এর ব্যবস্থা করল । দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর আমরা আমাদের বিজয় অর্জন করতে পেরেছিলাম । এমন নিঃসঙ্গ হত্যা  পৃথিবীতে আর কোথাও দেখিনি ।
তাই  এই পোষ্টের মাধ্যমে আমি আপনাদের 25 মার্চের গণহত্যা দিবস  সম্পর্কে সম্পর্কে তুলে ধরলাম যাতে করে আপনাদের গণহত্যা দিবস সম্পর্কে কনসেপ্ট ক্লিয়ার হয় । পরবর্তীতে আপনাদের গণহত্যা দিবস সম্পর্কে আপনারা তুলে ধরতে পারবেন এই ঘটনাটি ।

Similar Posts