ভাষা আন্দোলন রচনা

ভাষা আন্দোলন রচনা

আসসালামুয়ালাইকুম আজ আমরা আপনাদের সাথে ভাষা আন্দোলন রচনা নিয়ে আলোচনা করব। ভাষা আন্দোলনের জন্য আমাদের লাখো মানুষদের যুদ্ধ করে  তবেই আমরা পেয়েছি আমাদের ভাষা বাংলা। অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে। তাই চলুন ভাষা আন্দোলন রচনা থেকে আমরা আপনাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা  মনে করিয়ে দেই।

 ভূমিকা:

হাজার 947 সালের দেশভাগ হয় এবং তারপর থেকেই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সংঘটিত আন্দোলন হচ্ছে ভাষা আন্দোলন, চূড়ান্ত রূপ লাভ  করেছিল 1952 সালে। 1952 সালের ফেব্রুয়ারীতে সালাম, রফিক, জব্বার, প্রমুখ,  বাংলা ভাষা প্রেমিক আত্মদানের মধ্যে দিয়ে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রকর্তৃক স্বীকৃতি পায়। আর এই আন্দোলন বীজ রোপিত হয়ে আরো আগে, অন্যদিকে এর প্রক্রিয়া এবং ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। প্রকৃত বিচারে ভাষা আন্দোলন বাঙালির আত্মপরিচয় সংকট থেকে উত্তরণের প্রথম  ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

এর মধ্যে দিয়ে একদিকে যেমন বাঙালি জাতীয়তা বোধের উন্মেষ ঘটে, কোন নদীকে অন্যদিকে সমগ্র পরাধীন ছিন্ন করে স্বাধীনতা   পথে অগ্রসর হয়। এটিএম শ্রীলংকার পূর্ব বাংলা সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক আন্দোলন। ভাষা আন্দোলনের মধ্যে নিহিত বাঙালির স্বাধিকার বীজ মন্ত্র অর্থাৎ বাংলাদেশের স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল এর মাধ্যমে।

 ভাষা আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে:

1947 সালের দ্বিজাতি তত্ত্বের ব্রিটিশ ভারত ভাগ হয় দুই ভাগে অর্থাৎ ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়।ভাষা আন্দোলন রচনা পাকিস্তান রাষ্ট্রের ছিল দুটি অংশ- পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম পাকিস্তান। প্রায় 2 হাজার কিলোমিটারের ব্যবধানে অবস্থিত পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে সংস্কৃতিক ভৌগলিক ও ভাষাগত দিক থেকে অনেকগুলো মৌলিক পার্থক্য ছিল। সমগ্র পাকিস্তানের শতকরা  56 ভাগ। মানুষের মাতৃভাষা বাংলা ছিল।

1948 সালে 23 শে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদের বৈঠকে উর্দু ভাষা ব্যবহারের পাশাপাশি বাংলা ভাষা ব্যবহারের অধিকার সংক্রান্ত সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করে পূর্ব বাংলা থেকে নির্বাচিত সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। প্রধানমন্ত্রীর লিয়াকত আলী খান এ প্রস্তাবের কঠোর সমালোচনা করেন।  ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের সংসদীয় প্রস্তাব গৃহীত হয়নি। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে গড়ে ওঠে তমুদ্দিন মজলিস এবং রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ।

1948 সালের 10 ই মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সভায় বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ধর্মঘট ডাকা সিদ্ধান্ত হয়। ভাষা আন্দোলন রচনা  11 মার্চ পালিত সেই ধর্মঘটে পিকেটিংয়ের সময় বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। এর কিছুদিন পরেই 21 শে মার্চ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় এক ভাষণে ঘোষণা করেন উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।

চব্বিশে মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন হলে গিয়ে তিনি একই বক্তব্য রাখেন। যখন তিনি উর্দুর ব্যাপারে তার  অবস্থানের কথা পুনরুল্লেখ উল্লেখ করেন , উপস্থিত ছাত্রের না ,না বলে চিৎকার করে ওঠে। তাৎক্ষণিকভাবে নিয়ে ঘোষণার প্রতিবাদে তারা বলে উর্দু নয় বাংলা হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। পূর্ববাংলা জনগণের মধ্যে ক্ষোভের বিষয় ছিল। জন্ম হয়। বাংলা ভাষার সমমর্যাদার দাবিতে আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠে।

 ভাষা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়:

1952 সালের 27 শে জানুয়ারি পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দেন। এর ফলে পূর্ব বাংলার জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। 29 শে জানুয়ারি সিদ্ধান্ত হয়, ঢাকা শহরে প্রতিবাদে মিছিল-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রভাষার দাবিতে আন্দোলনকারী সংগঠনগুলো সম্মিলিতভাবে একুশে ফেব্রুয়ারি তারিখে সমগ্র পূর্ব বাংলায় প্রতিবাদ কর্মসূচি ও ধর্মঘটের আহ্বান করে। আন্দোলন দমন করতে পুলিশ 144 ধারা জারি করে। ফলের দিনটিতে ঢাকা শহরের সকল প্রকার মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। কিন্তু এই আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বহুসংখ্যক ছাত্র ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মী বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন।

 একুশে ফেব্রুয়ারি:

1952 সালে একুশে ফেব্রুয়ারি পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল 9 টা থেকে সরকারি আদেশ উপেক্ষা করে ঢাকা শহরের স্কুল কলেজ হাজার হাজার ছাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর সমবেত হয় । 144 ধারা ভঙ্গের প্রশ্নে পুরাতন কলা ভবন প্রাঙ্গণে আমতলায় ঐতিহাসিক ছাত্রসভা অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্ররা 57 জন ছোট ছোট দলে বিভক্ত  হয় রাষ্ট্রভাষাবাংলা সাই স্লোগান দিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসতে চায়। তারা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। পুলিশ অস্ত্রহাতে চারিদিকে ঘিরে রাখি।

বেলা সোয়া এগারটার দিকে ছাত্ররা একত্র হয়ে প্রতিবন্ধকতা ভেঙ্গে রাস্তায় নামার প্রস্তুতি নিলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে ছাত্রদের সতর্ক করে দেয়।ভাষা আন্দোলন রচনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য  তখন পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ বন্ধ করতে অনুরোধ জানায় এবং ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ত্যাগের নির্দেশ দেন। কিন্তু ক্যাম্পাস ত্যাগ করার সময় কয়েক জন ছাত্রকে 144 ধারা ভঙ্গের অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।

এরপর আরো অনেক ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনা  বিক্ষোভ মিছিল বের করে।  ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ 144 ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের উপর গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে নিহত হয় রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার সহ আরো অনেক। শহীদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়ে ওঠে। শোকাবহ এ ঘটনার অভিঘাতে সমগ্র পূর্ব বাংলায়  কঠোর  ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

 একুশে ফেব্রুয়ারি পরবর্তী আন্দোলন:

একুশে ফেব্রুয়ারি ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশ বিদ্রোহের আগুন। দাউদাউ করে জলে ওঠে। বাইশে 22 ও 23 শে ফেব্রুয়ারি ছাত্র, শ্রমিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, ও  সাধারণ জনতা  পূর্ণ হরতাল  পালন করে এবং সভা শোভাযাত্রা সহকারে 144 ধারা ভঙ্গ করে। 22 শে ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে শহীদ হন শফিউর রহমান শফিক। 23 শে ফেব্রুয়ারি ফুলবাড়ীয়ায় ছাত্র জনতার মিছিল। পুলিশের অত্যাচার নিপীড়ন চালায়।

শহীদের স্মৃতি করে রাখতে ওই দিন বিকেল থেকে রাত অবধি। কাজ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের ছাত্ররা নির্মাণ করে ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ মিনার। চব্বিশে ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন 22 শে ফেব্রুয়ারি শহীদ হওয়া শফিউর রহমানের পিতা। ছাব্বিশে ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন দৈনিক আজাদ পত্রিকার সম্পাদক জনাব আব্দুল কামাল উদ্দিন।

ভাষা আন্দোলনের অর্জন:

1952 সালে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্দোলন ভাষাকেন্দ্রিক হলেও তা পুরো বাঙালি জাতিকে অধিকার সম্পর্কে সচেতন করেন। এর ফল হিসেবে 1954 সালের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিপুল ব্যবধানে  মুসলিম লীগ  কে পরাজিত করে। একুশের চেতনাকে ধারণ করে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহার ছিল 21 দফা সংবলিত।

ক্রমবর্ধমান গণআন্দোলনের মুখে 1954 সালে 7 এই মে পাকিস্তান। ভাষা আন্দোলন রচনাগণপরিষদে বাংলা অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গৃহীত পায়। 1952 সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য চর্চা একাডেমী প্রতিষ্ঠা হয়।  1956 সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান বাংলা ও  উর্দু কে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।  1999 সালের 17 নভেম্বর ইউনেস্কো বাংলা ভাষা আন্দোলন, মানুষের ভাষা ও সাংস্কৃতিক অধিকারের প্রতি সম্মান জানিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে যা বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে গভীর শ্রদ্ধা ও যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে উদযাপিত হয়।দিবস  টি  এই আন্তর্জাতিক করতে কানাডাপ্রবাসী রফিকুল আব্দুস উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন।

উপসংহার:

একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতিসত্তার পরিচয় নির্দেশ করে। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বীরের  ভাষা শহীদদের অবদান জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।ভাষা আন্দোলন রচনা তবে আত্মদান তখনই সার্থক হবে যখন বাংলাদেশের সর্বস্তরে  বাংলা ভাষা প্রচলন প্রথম সম্ভব হবে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্র, স্থান, ব্যক্তি অর্থাৎ প্রত্যেক বাঙালি একটি  দায়িত্ব  ও কর্তব্য রয়েছে।

আশা করি আমাদের এই ভাষা আন্দোলন রচনা টি আপনাদের ভাল লেগেছে। আমাদের যদি আরো কিছু ভাষা আন্দোলন রচনা সম্পর্কে জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। শ্রদ্ধাশীল নিজ নিজ ভাষার প্রতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *