রচনা

মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু রচনা

1 min read

ভূমিকা:

হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালির শ্রেষ্ঠতম অর্জন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। আর এই স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে যার নাম চিরস্মরণীয় হয়ে আছে তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সংগ্রাম ও অবদানের নিজ নিজ জাতির মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মানুষদের মত আছেন আমেরিকার জর্জ ওয়াশিংটন তুরস্কের কামাল আতাতুর্ক ও ভারতের মহাত্মা গান্ধী দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা কিউবার ফিদেল কাস্ত্রো নেতা ।

আর আছে বাংলাদেশের শেখ মুজিবুর রহমান তিনি বাঙালি জাতির গৌরব বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, বাঙালিরা এই মহান নেতাকে শ্রদ্ধাভরে সম্মান করে। তিনি বাঙালি জাতির কাছে এক গৌরব এর নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দীর্ঘ সংগ্রাম ও সাধনার মধ্য দিয়ে তিনি ইতিহাসের বরপুত্র হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছেন। তার জীবনাদর্শে আমরা সংগ্রামী চেতনা ও কর্মনিষ্ঠা পরিচয় পাই।

জন্ম:

স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাজার 920 সালের 17 ই মার্চ বর্তমান গোপালগঞ্জ তৎকালীন ফরিদপুর জেলার টুংগীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শেখ লুৎফর রহমান ও মাতা সায়রা খাতুন। দুই ভাই আর বোনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন পিতা-মাতার তৃতীয় সন্তান।

শৈশবকাল:

পারিবারিক আনন্দঘন পরিবেশে বঙ্গবন্ধুর শৈশবের দিনগুলো কাটে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। ছোটবেলা থেকে শেখ মুজিবুর রহমান  চটপটে স্বভাবের ছিলেন। বাড়ির সবাই তাকে খোকা নামে ডাকত। দেখতে তিনি ছিলেন ছিপছিপে কিন্তু তার ছিল  অদম্য প্রাণশক্তি। বাড়ির সবাই এজন্য তাকে খুবই আদর করতেন। নদীতে খালে বিলে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরিয়ে সবাইকে মাতিয়ে তুলতেন। খেলাধুলা ও বেশ ভাল ছিলেন তিনি। স্কুলের ফুটবল দলের পাকা অবস্থান ছিল তার। ছোটবেলা থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের মত দরিদ্র বঞ্চিতদের জন্য ভালোবাসার প্রকাশ দেখা যায়।

একবার নিজের বাড়ির গোলাম গ্রামের গরিব চাষিদের মাঝে বিলিয়ে দেন তিনি। পিতা শেখ লুৎফর রহমান এর কারন জিজ্ঞেস করলে উত্তরে তিনি বলেছিলেন এবার চাষীদের জমির ধান সব নষ্ট হয়ে গেছে আকালে পড়েছে কৃষকরা আমাদের মতো ওদের পেটে ক্ষুধা আছে ওরা আমাদের মত বাঁচতে চায় বাবা। শেখ মুজিবুর রহমানের বাবা ছেলের এই সৎ সাহস ও মহানুভবতা দেখে খুশি হয়েছিলেন। বিদ্যালয়ের উপরের ক্লাসে এসে তার প্রতিবাদী চেতনা আর পরিচয় মিলে।

একবার অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা একে ফজলুল হক ও মন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল পরিদর্শনে আসেন। তাদের আগমনে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মানপত্র পাঠ করেন। আরো অনেকে শেরে বাংলার প্রশংসা করে বক্তৃতা করেন কিন্তু কেউ স্কুল এবং ছাত্রদের সমস্যার কথা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরলেন না। এক পর্যায়ে সংবর্ধনা সভা শেষ করে যখন তারা ফিরে যাচ্ছিলেন তখন তাদের পথরোধ করে দাঁড়ালেন শেখ মুজিবুর রহমান।

সব ছাত্রদের পক্ষ থেকে ইস্কুলে দাবি-দাওয়া অর্থাৎ ছাত্রাবাস পাঠাগারের বই নেই ব্যায়ামাগার নেই খেলাধুলার ব্যবস্থা নেই ইত্যাদি সমস্যার কথা তিনি তাদের সামনে তুলে ধরেন। শেরেবাংলা কৃষি মুজিবুর রহমানের সাহস ও স্পষ্ট বক্তব্য আর জনহিতৈষী মনোভাবের পরিচয় দেখে খুশি হন এবং সাথে সাথে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তাদের সমাধানের নির্দেশ দেন। ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধু ছিলেন সুস্পষ্ট প্রতিবাদী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

ছাত্র জীবন:

সাত বছর বয়সে বঙ্গবন্ধুর ছাত্রজীবন শুরু হয় গোপালগঞ্জের  ডিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাধ্যমে।  প্রাথমিক  শিক্ষা শেষ করে তিনি গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুলে ভর্তি হন এবং এই স্কুল থেকে হাজার  1942 সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। 1942 সালে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে 1944 সালে এবং 1946 সালে বিএ পাস করেন।

1946 ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। শেখ মুজিবুর রহমান নেতা শেখ মুজিবুর প্রমাণিত হতে থাকেন তার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ঘটে থাকে ।1947 এ দেশভাগের পর তিনি আইন পড়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে সবার সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ছাত্র-ছাত্রীদের অধিকার আন্দোলন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দাবি আদায়ের আন্দোলনে তিনি সবসময় সক্রিয় ছিলেন।

রাজনৈতিক জীবন:

ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধু রাজনীতি ও দেশ  সেবায় যুক্ত হন। তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু 1940 সালের দিকে। তখন তিনি নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের কাউন্সিলর এবং গোপালগঞ্জ মুসলিম লীগের সম্পাদক ছিলেন। 1948 সালে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের তিনি ছিলেন অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। 1948 সালে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হলে এর সঙ্গে তিনি যুক্ত হন। এ বছর 11 মাস রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে হরতাল পালনের সময় তিনি গ্রেফতার ও কারারুদ্ধ হন।

বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে সুপারিশ করে পূর্ব পরিষদে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে এ মর্মে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে পূর্ববঙ্গের নাজিম উদ্দিন সরকার চুক্তিবদ্ধ হলে তিনি মুক্তিলাভ করেন। 1949 সালে মুসলিম আওয়ামী লীগ লীগ গঠিত হলে তিনি যুগ্ম সম্পাদকের পদ লাভ করেন এবং 1953 সালে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

1958 সালে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভার মন্ত্রিত্ব লাভ করেন। এদেশের মানুষের অধিকার আদায় এবং শোষণ বঞ্চনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান বহুবার গ্রেফতার ও কারারুদ্ধ হন। এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য তিনি তার জীবনের বেশিরভাগ সময় কারাবন্দি হয়েছিলেন।

7 মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ও স্বাধীনতা ঘোষণা:

1971 সালের 3 মার্চ থেকে 25 শে মার্চ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আহবানে সারা বাংলায় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন পরিচালিত হয়। এর মধ্যে 7 মার্চ তৎকালীন ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বর্তমানে সোহরাওয়াদী উদ্যানে  10 লক্ষ লোকের উপস্থিতিতে  bangabandhu-1 ঐতিহাসিক ভাষণ দেন ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি বাঙালির মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত স্বাধীনতা সংগ্রামের আহ্বান জানান। তিনি দীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন

 

‘’এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,,

এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।

 

এক পর্যায়ে 25 মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু করে ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড। সেইরাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তানের গ্রেপ্তারের পূর্বে অর্থাৎ 26 মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে 10 এপ্রিল বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তাকে রাষ্ট্রপতি করে গঠিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূর্য উদিত হয়।

দেশে প্রত্যাবর্তন:

1971 সালের 16 ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করে 1972 সালের 10 জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করে। 12 জানুয়ারি তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে নতুনভাবে গড়ে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করেন।

মৃত্যু:

বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করলে ও স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকের দল তার সাফল্য ও বাঙালির উত্থানকে মেনে নিতে পারেনি। তাই আবার শুরু হয় ষড়যন্ত্র। দেশ যখন সকল বাধা দূর করে এগিয়ে যাচ্ছিল তখন তিনি দেশীয় ষড়যন্ত্রকারী আন্তর্জাতিক শিকারে পরিণত হন। 1975 সালের 15 আগস্ট বাঘিনীর কিছু বিপদগামী সদস্যের হতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন।

উপসংহার:

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে একটি অনন্য নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী এবং স্বাধীন বাংলাদেশের জাতির জনক। তার দূরদর্শী বিচক্ষণ এবং সঠিক নেতৃত্বের বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। তিনি সবসময় জাতির কল্যাণে কাজ করে গেছেন। সমস্ত জাতিকে তিনি মুক্তি ও স্বাধীনতার চেতনায় ঐক্যবদ্ধ ও উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। তার  আত্মত্যাগ জাতিকে মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছেন। তাই আজও তিনি দেশ প্রেমিক প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে চির অম্লান হয়ে রয়েছে।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x