শ্রমের মর্যাদা রচনা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক আশা করি আপনারা ভালো আছেন ।আজ আমরা আপনাদের সাথে শ্রমের মর্যাদা রচনা নিয়ে আলোচনা করব। আপনারা যদি শ্রমের মর্যাদা রচনা সম্পর্কে জানতে চান তাহলে অবশ্যই আমাদের আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়বেন। চলুন তাহলে কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক আজকের আর্টিকেলটি।
ভূমিকা:
বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছেন-
….. a hard -working street – cleaner is a batter man than a lazy scholar.’’
অনু থেকে অট্টালিকা পর্যন্ত, বিশ্বসভ্যতার প্রতিটি সৃষ্টির মূলে রয়েছে শ্রম। জন্ম থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত এই পৃথিবীর সব কাজ- খাদ্য,, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা- যা কিছু দৃশ্য সবি অর্জিত হয়েছে শ্রম দ্বারা। পবিত্র কুরআনে ঘোষিত হয়েছে, লাইসা লিল ইন্সানে ইল্লাহ মা সত্তা। অর্থাৎ,, মানুষের জন্য শ্রম ব্যতিরেকে কিছুই নেই। জ্ঞানীর , জ্ঞান, অজ্ঞানের আবিষ্কার, ধর্ম সাধকের আত্মোপলব্ধি, ধোনির ধৈর্য, যোদ্ধা যুদ্ধে জয়লাভ সবকিছুই শ্রমলব্ধ। শ্রমের মর্যাদা রচনা মানুষের সমস্ত সম্পদ এবং মানব সভ্যতা রচনা করেছে যে শক্তি তার নাম শ্রম। একদিন প্রকৃতির কোলে পাওয়া পাথরের নুড়ি এর সাহায্যে মানুষ হাতিয়া তৈরি করতে শিখেছিল। তারপর প্রায় ছয় লক্ষ বছর ধরে লাখ কোটি মানুষের তিল তিল শ্রমিক গড়ে উঠেছে সভ্যতার বৃহৎ শুধু।
শ্রমের গুরুত্ব:
man is the architect of his own fate.’’-মানুষ নিজেই তার নিজের ভাগ্যের নির্মাতা। আর এই ভাগ্যকে নির্মাণ করতে হয় নিরলস শ্রম দ্বারা। মানুষের জন্ম দই এর অধীন, কিন্তু কর্ম মানুষের অধীন। যে মানুষ কর্মকেই জীবনের ধ্রুবতারা করেছেন জীবন সংগ্রামে তারাই জয়ী। সাফল্যের চাবিকাঠি হচ্ছে কর্ম। পরিশ্রমী মানুষের যথার্থ হাতিয়ার। সৌভাগ্যের স্বর্ণশিখরে আহরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে শ্রম। পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে শুরু করে বর্তমান সভ্যতা পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই শ্রম নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। শ্রমের মর্যাদা রচনা মানবজীবন অন্তত কর্মমুখর। প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে যুদ্ধ করে তাকে জীবনের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হয়। এজন্য তাকে নিরন্তন কাজ করে যেতে হয়। তাই জগত কর্মশালা আর জীবন মাত্রই পরিশ্রমের ক্ষেত্র।
viegil বলেছেন,-
‘’’the dignity of labour makes a man self – confident and high ambitious. so, the evaluation of labour is essential.’’
তাই শ্রম এর সফলতা,শ্রমিক সুখ , শ্রম জীবন, আমরা সবাই সৈনিক।
শ্রম এর প্রয়োজনীয়তা:
শ্রমজীবীদের প্রতি সমাজের উপর তলার মানুষের অবহেলা অবজ্ঞা দেখে একালের কবিতা ঘোষণা করেন –
‘আমি কবি যত কামারের, মাঠে মজুরের
আমি কবি যত ইতরের।’
মানুষ মরণশীল প্রাণী কিন্তু কর্মের মাধ্যমে অমর হতে পারে। মানুষের কর্মই আগামীদিনের মানুষকে নতুন করে উজ্জীবিত করে নতুন নতুন অগ্রগতি সাধন ব্রতী করে। তাই মানুষ কেবল জীবনযাপনেই বাসে না, শ্রমের শক্তিতেই বেঁচে থাকে। আমি মানুষকে করে তোলে অমর। তাই প্রত্যাখ্যান লেখক বলেছেন-
শ্রম ও সৃজন এর চেয়ে গরীয়ান আর কিছু দুনিয়ায় নেই।’’
পরিশ্রম না করলে কোন কিছুই পাওয়া যায় না। এই শ্রম শারীরিক বা মানসিক উভয় প্রকার হতে পারে। কৃষক কষ্ট করে জমি চাষ করে ফসল ফলাতে, জেলের জাল ফেলে, তাঁতী কাপড় বুনছে, মিস্ত্রি ঘরবাড়ি ও জিনিসপত্র তৈরি করছে। এদের সাথে শারীরিক শ্রম। আবার শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক, লেখক-সাংবাদিক বৈজ্ঞানিক এদের শ্রম হচ্ছে মানসিক শ্রম। শ্রমের মর্যাদা রচনাদুই প্রকার শ্রমের বিনিময়ে আমরা পাচ্ছি আমাদের সব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য।
ছাত্রজীবনে শ্রমের গুরুত্ব:
জীবনযাত্রা জন্য সমাজ ও জাতির জন্য চরম এক অপরিহার্য উপাদান। শিকার করে নিয়ে সমাজের অবশ্যই শ্রমকে যথাযথ মর্যাদা ও স্বীকৃতি দিতে হবে। একটা গাছের শিকড় শাখা-প্রশাখা ফল-ফুল সবার কাজ আলাদা কিন্তু সব মিলিয়ে গাছের পূর্ণতা বা বৃদ্ধি। তেমনি সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে, বিভিন্ন স্তরে, বিভিন্ন পেশা লোকের পার্থক্য থাকলে ও সামাজিক প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী কোনটির গুরুত্ব কম নয়- তাসের দৈহিক শ্রমিক কিংবা মানসিক শ্রমিক। মজুর এবং ম্যানেজার কৃষক এবং কৃষি অফিসার এবং রাষ্ট্রনায়ক শিক্ষক এবং শিল্পী কাজী সমাজে অপ্রয়োজনীয় নয়। প্রত্যেকটি লোক যথাযথভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করলে সমাজের অগ্রগতি সাধিত হয়।শ্রমের মর্যাদা রচনা বলা হয়েছে যে যত বেশি শ্রম করবে সে তত বেশি সাফল্য পাবে।
শ্রম এর প্রকারভেদ;
শ্রমকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন:
১/ মানসিক শ্রম
২/ শারীরিক শ্রম
এই উভয় প্রকার শ্রমের গুরুত্ব অপরিসীম।
মানসিক শ্রম:
মানসিক শ্রম ছাড়া মানসিক উন্নতি সম্ভব নয়। কথায় বলে- অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা ।’’ শ্রম বিমুখ ব্যক্তির মনে কখনো সুচিন্তা ও উদয় হয় না।পক্ষান্তর পরিশ্রমী ব্যক্তির মন ও মস্তিষ্কের সবসময় কুচিন্তা থেকে দূরে থাকে।শ্রমের মর্যাদা রচনা বৈজ্ঞানিক, দার্শনিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, অর্থনীতিবীদ, সমাজতত্ত্ববিদ ও শিল্পীর পরিশ্রম ও মানসিক। তবে তাদের এই মানসিক রোগীকে বাস্তবে রূপায়িত করতে গিয়ে তারা কায়িক শ্রম ও করে থাকেন।
শারীরিক শ্রম বা কায়িক শ্রম:
জগতের সকল জীবনে বেঁচে থাকার জন্য কমবেশি শারীরিক ও মানসিক শ্রম দিতে হয়। একটা কাজের উদয় করে আর শারীরিক শ্রম বা সমাধা করে।শ্রমের মর্যাদা রচনা সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে শারীরিক শ্রমের নিমিত্তে হাত পা ইত্যাদি অঙ্গ প্রতঙ্গ দিয়েছেন। শারীরিক শ্রম আইনের পরিপন্থী নয় বরং সমাজের প্রতিষ্ঠান প্রধান উপায়। কৃষক ,শ্রমিক, কুলি, মজুর- এরা এরা দেশ ও জাতিকে রক্ষার মহান দায়িত্ব নিয়ে শারীরিক শ্রমের অবতীর্ণ হয়। তাই কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাদের বন্দনা করেছেন’’-
‘’ শ্রম- কঠিন যাদের নির্দয় মুঠি – তলে
ইফতা ধরণী নজরানা দেয় ডালি ভরে ফুলে ফলে।’
শ্রমিক লাঞ্ছনা:
সমাজের উচ্চ স্তরের মানুষ যারা , তাড়া করছে সম্মানের কাজ, গৌরব এর কাজ। কাজের সুযোগ নিজেদের কুক্ষিগত তথাকথিক নিচু শ্রেণীর নিক্ষেপ করছে অপমান ঘৃণা বঞ্চনার অন্ধকারে। অথচ শ্রমের মর্যাদা রচনা সে শ্রমিকরা চিরকাল নদীর ঘাটে ঘাটে ফসল বুনছে , পাকা ধান ফুলিয়ে সে। তারা ধরি বক্ষ বিদীর্ণ করেসোনার ফসল ফলাতে-
’’ তাঁতি বসে তাঁত বুনে , জেলে ধরে মাছ,
’বহুদূর প্রসারিত এদের বিচিত্র কর্মভার।’’
’তার ‘ পরে ভর দিয়ে চলে সমস্ত সংসার,,
’ অথচ তারাই পাইনি যথার্থ মানুষের সম্মান।’’
শ্রমশীল ব্যক্তির উদাহরণ:
শ্রমের মর্যাদা রচনা বিশ্ব বরেণ্য ব্যক্তি ও মনীষীগণ এর জীবন সাধনা ও সাফল্যের কারণ নিরলস পরিশ্রম। জর্জ ওয়াশিংটন, আব্রাহাম লিংকন, বৈজ্ঞানিক আইনস্টাইন প্রমুখ ব্যক্তিবর্গের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ কঠোর পরিশ্রমী ছিলেন। তিনি বলেছেন-
‘’ নিজ হাতে কাজ করার মত পবিত্র জিনিস আর কিছু নেই।’’
শ্রম বিমুখতা:
শ্রম বিমুখতা ও অলসতা জীবনে বয়ে আনেনি দারুন অভিশাপ।ভূমিহীন জীবনকে ব্যর্থতা এসে অক্টোপাসের মতো ঘিরে ফেলে। কথায় বলে,-
‘ আলস্য আনে দারিদ্রতা,
পাপে আনে দুঃখ ।
পরিশ্রম আনে ধন।
পুণ্যে আসে সুখ।’
একথা তর্কাতীত ভাবে সত্ত।শ্রমের মর্যাদা রচনা যে ব্যক্তি অবজ্ঞা করে, তার শ্রম সম্বন্ধে কোনো অভিজ্ঞতা নেই, তার জীবনের কোন মূল্য নেই। বিখ্যাত মনীষী বলেছেন-আমি মাত্র দুই প্রকৃতির লোক কে সম্মান করি। প্রথমত কৃষক এবং দ্বিতীয়ত যিনি জ্ঞানধর্ম অনুশীলন বাড়িত আসেন। সুতরাং একমাত্র নির্বোধেরা অজ্ঞতা করে।
উপসংহার:
পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রতিশ্রুতি।’শ্রমের গৌরব ঘোষণা আজ দিকে দিকে। একমাত্র শ্রম শক্তির মাধ্যমে অর্জিত হয় কাঙ্ক্ষিত সাফল্য, স্থিতি ও পরিপূর্ণ তা। নিরলস শ্রম সাধনায় সাফল্য অর্জন করে জীবজগতের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব দখল করেছে। সুতরাং জীবনকে সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে বাঁচিয়ে রাখার জন্য শ্রম ব্যতীত অন্য কোনো সহজ উপায় নেই। শ্রমের মর্যাদা রচনা শ্রমের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া ব্যক্তিগত তথা জাতিগতভাবে প্রয়োজন। কবি অক্ষয়কুমার বড়াল তার মানব- বন্দনায়’ সভ্যতার শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত সকল শ্রমশীল ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে বন্দনা করেছেন-
‘’ নমি কৃষি- অন্ত জীব, স্থাপতি, তক্ষক, কর্ম, চর্মকার/,,
পরিশেষে বলা যায় যে শ্রমের মর্যাদা রচনা সম্পর্কে আমরা আমাদের যথেষ্ট ধারণা দিতে পেরেছি। আশা করছি আপনারা যদি আমাদের এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েন তাহলে আপনারা শ্রমের মর্যাদা রচনা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন। আর শ্রমের মর্যাদা রচনা সম্পর্কে যদি আরো কোন টপিক আপনাদের জানার বাকি থাকে তাহলে আপনারা আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন আমরা আপনাদের সঠিক তথ্য দিয়ে থাকবো